নিউইয়র্ক ১১:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের মৃত্যু : ছয় পুলিশ অভিযুক্ত, বাল্টিমোরে উল্লাস

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:২০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মে ২০১৫
  • / ৭৮৫ বার পঠিত

বাল্টিমোর (মেরিল্যান্ড): যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ফ্রেডি গ্রের (২৫) মৃত্যুর ঘটনায় ছয় পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগ গঠনের পর কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভরত স্থানীয় লোকজন গত শনিবার (২ মে) সকালের দিকে রাস্তা থেকে সরে যায়। মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সহিংসতাপীড়িত শহরটিতে কয়েক দিন ধরে সান্ধ্য আইন বলবৎ রয়েছে। এদিকে গত শুক্রবার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাল্টিমোরের সরকারি আইন কর্মকর্তা মেরিলিন মসবি ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠনের ঘোষণা দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই পুলিশ সদস্যদের কয়েক দশকের কারাদন্ড হতে পারে।
ফ্রেডি গ্রে আটকের সময় আহত হওয়ার পর পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় বাল্টিমোরজুড়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শহরটিতে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যা টানা দুই দিন ধরে চলে। চলে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। দাঙ্গার কারণে শহরজুড়ে বাড়তি পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের পাশাপাশি সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।
যে ছয়জন পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ ও অপর তিনজন শ্বেতাঙ্গ। এঁদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও একজন নারী। অভিযুক্ত সিজার আর গুডসন জুনিয়রের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন লেফটেন্যান্ট ব্রায়ান ডব্লিউ রাইস, সার্জেন্ট এলিসিয়া ডি হোয়াইট ও পুলিশ সদস্য উইলিয়াম জি পোর্টার, গ্যারেট ই মিলার, এডওয়ার্ড এম নিরো। প্রথম অভিযুক্ত গুডসনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর কারাভোগ করতে হবে। শেষের পাঁচজনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত শুক্রবার (১ মে) ছয়জনকেই গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ছয় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর নিহত গ্রের আত্মীয়রা সন্তোষ প্রকাশ করেন। গ্রের সৎবাবা রিচার্ড শিপলে বলেন, ‘ফ্রেডি হত্যার ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি ম্যারিলিন মেজবি বলেন, কোনো ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই আইন কর্মকর্তারা ভাষ্য, ফ্রেডি গ্রের মৃত্যু ছিল একটি হত্যাকান্ড। তাঁকে গ্রেপ্তার করাও ছিল অবৈধ। পুলিশি হেফাজতে তাঁর প্রতি যে আচরণ হযয়েছে, তা হত্যার শামিল।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সান্ধ্য আইন বলবৎ থাকার পরও কিছুসংখ্যক বিক্ষোভকারী রাস্তায় ছিল। পুলিশ গত শুক্রবার পর্যন্ত ৫৩ জনকে আটক করে। এর মধ্যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে সান্ধ্য আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ ছিল। মধ্যরাতের মধ্যে পুরো শহর নির্জন হয়ে পড়ে। অভিযোগ গঠনের খবরে চারদিক থেকে আনন্দ-উল্লাসের শব্দ পাওয়া যায়।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিক্ষুব্ধ জনতাকে খুশি করলেও এতে সন্তুষ্ট নয় পুলিশ ইউনিয়ন। তারা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে। তাদের দাবি, সরকারি আইন কর্মকর্তা মসবি ‘স্বার্থের দ্বন্দ্বের’ কারণে এটি ঘোষণা করতে পারে না। পুলিশের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা না করার জন্যও মসবিকে অভিযুক্ত করে ইউনিয়ন। এর প্রেসিডেন্ট জিন রায়ান বলেন, ‘আজ সকালের এই খবর শুনে আমরা মর্মাহত। আমরা হতাশ এই জন্য যে পুরো তদন্ত সম্পন্ন না হতেই এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’
গত ১২ এপ্রিল ফ্রেডি গ্রেকে গ্রেপ্তারের পর ভ্যানে টেনে তুলেছিল পুলিশ। তখন ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পান গ্রে। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে এক সপ্তাহ অচেতন থাকার পর গত ১৯ এপ্রিল গ্রের মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছে একটি ছুরি পাওয়া গিয়েছিল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের মৃত্যু : ছয় পুলিশ অভিযুক্ত, বাল্টিমোরে উল্লাস

প্রকাশের সময় : ০৪:২০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মে ২০১৫

বাল্টিমোর (মেরিল্যান্ড): যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ফ্রেডি গ্রের (২৫) মৃত্যুর ঘটনায় ছয় পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগ গঠনের পর কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভরত স্থানীয় লোকজন গত শনিবার (২ মে) সকালের দিকে রাস্তা থেকে সরে যায়। মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সহিংসতাপীড়িত শহরটিতে কয়েক দিন ধরে সান্ধ্য আইন বলবৎ রয়েছে। এদিকে গত শুক্রবার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাল্টিমোরের সরকারি আইন কর্মকর্তা মেরিলিন মসবি ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠনের ঘোষণা দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই পুলিশ সদস্যদের কয়েক দশকের কারাদন্ড হতে পারে।
ফ্রেডি গ্রে আটকের সময় আহত হওয়ার পর পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় বাল্টিমোরজুড়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শহরটিতে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যা টানা দুই দিন ধরে চলে। চলে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। দাঙ্গার কারণে শহরজুড়ে বাড়তি পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের পাশাপাশি সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।
যে ছয়জন পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ ও অপর তিনজন শ্বেতাঙ্গ। এঁদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও একজন নারী। অভিযুক্ত সিজার আর গুডসন জুনিয়রের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন লেফটেন্যান্ট ব্রায়ান ডব্লিউ রাইস, সার্জেন্ট এলিসিয়া ডি হোয়াইট ও পুলিশ সদস্য উইলিয়াম জি পোর্টার, গ্যারেট ই মিলার, এডওয়ার্ড এম নিরো। প্রথম অভিযুক্ত গুডসনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর কারাভোগ করতে হবে। শেষের পাঁচজনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত শুক্রবার (১ মে) ছয়জনকেই গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ছয় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর নিহত গ্রের আত্মীয়রা সন্তোষ প্রকাশ করেন। গ্রের সৎবাবা রিচার্ড শিপলে বলেন, ‘ফ্রেডি হত্যার ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি ম্যারিলিন মেজবি বলেন, কোনো ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই আইন কর্মকর্তারা ভাষ্য, ফ্রেডি গ্রের মৃত্যু ছিল একটি হত্যাকান্ড। তাঁকে গ্রেপ্তার করাও ছিল অবৈধ। পুলিশি হেফাজতে তাঁর প্রতি যে আচরণ হযয়েছে, তা হত্যার শামিল।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সান্ধ্য আইন বলবৎ থাকার পরও কিছুসংখ্যক বিক্ষোভকারী রাস্তায় ছিল। পুলিশ গত শুক্রবার পর্যন্ত ৫৩ জনকে আটক করে। এর মধ্যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে সান্ধ্য আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ ছিল। মধ্যরাতের মধ্যে পুরো শহর নির্জন হয়ে পড়ে। অভিযোগ গঠনের খবরে চারদিক থেকে আনন্দ-উল্লাসের শব্দ পাওয়া যায়।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিক্ষুব্ধ জনতাকে খুশি করলেও এতে সন্তুষ্ট নয় পুলিশ ইউনিয়ন। তারা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে। তাদের দাবি, সরকারি আইন কর্মকর্তা মসবি ‘স্বার্থের দ্বন্দ্বের’ কারণে এটি ঘোষণা করতে পারে না। পুলিশের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা না করার জন্যও মসবিকে অভিযুক্ত করে ইউনিয়ন। এর প্রেসিডেন্ট জিন রায়ান বলেন, ‘আজ সকালের এই খবর শুনে আমরা মর্মাহত। আমরা হতাশ এই জন্য যে পুরো তদন্ত সম্পন্ন না হতেই এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’
গত ১২ এপ্রিল ফ্রেডি গ্রেকে গ্রেপ্তারের পর ভ্যানে টেনে তুলেছিল পুলিশ। তখন ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পান গ্রে। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে এক সপ্তাহ অচেতন থাকার পর গত ১৯ এপ্রিল গ্রের মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছে একটি ছুরি পাওয়া গিয়েছিল।