হককথা রিপোর্ট : নিউইয়র্কে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, গাজায় ইসরাইলের হাতে এতো নিরপরাধ ফিলিস্তিনী মারা যাচ্ছে জাতিসংঘ কি করছে? আসলে জাতিসংঘের কাজ কি? জাতিসংঘের কাজ কি শুধু মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ রক্ষা করা? বক্তারা বলেন, দেশে দেশে এতো মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে জাতিসংঘ কি করছে? বক্তারা জাতিসংঘকে সত্যিকারার্থে বিশ্বাসীর জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে এর বলিষ্ঠ ভূমিকা কামনা করেন। এজন্য জাতিসংঘের ভিতর থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সভায় সকলের জন্য বাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গঠনের আহবান জানান বক্তারা।

নিউইয়র্কের জয়া পার্টি হলে গত ৮ এপ্রিল, সোমবার সন্ধ্যায় সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত ‘ডিসকাশন অব ইউএন রুল অন ওয়ার্ল্ড পিস এন্ড ইন্টার ফেইথ ইফতার ইন অনার অব ইউএন অফিসিয়ালস’ শীর্ষক এক আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন। উল্লেখ্য, এনআরবি সেন্টারের ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২৪ এর অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি খিজির আহমদ, নিউইয়র্ক কুইন্স কোর্টের জাজ সোমা সাঈদ, জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত ও জি ১০০ গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি সীমা কারাতনায়া, রাষ্ট্রদূত ড. আন্দ্রেই বাস ও নিউইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী এবং অথর্নৈতিক বিষয়ক অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। আলোচনা, ইফতার ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিক প্রবাসী বাংলাদেশী, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, পেশাজীবী, সামাজিক নেতৃবৃন্দ অংগ্রহন করেন। এদিকে সেন্টার ফর এনআরবি’র এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক ইসলামী স্কলার ইন্দোনেশিয়ার ড. শামসী আলী, খৃষ্টানিটি স্কলার ড. ফ্রানক কাউফম্যান, জাতিসংঘের সাবেক সুপারিনডেন্ট মোহামেদ সুলায়মান ইয়ার, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের নিরাপত্তা প্রধান হুমায়ুন কবির, টিবিএন ২৪ চ্যানেলের এএফএম মিসবাহউজজামান, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের নির্বাহী সদস্য জুলকার হায়দার, বাংলাদেশী-আমেরিকান পেশাজীবী ব্যাংকার ওয়াসেফ চৌধুরী, সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর আহমদ, এটর্নী জিনাত জাহান ও অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত প্রবাসী সানওয়ার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বিচারপতি খিজির আহমদ বলেন, যথেষ্ট হয়েছে আর না, এবার বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে রাজনীতিবিদদের, হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা বলেন, রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, করণীয় ঠিক করে দিতে হবে তবেই না আমরা কুটনীতিকরা দায়িত্ব পালন করতে পারবো। জাতিসংঘ তার সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয় সুতরাং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ড. শামসী আলী বলেন, একজন মানুষের মৃত্যু মানে মানবতার মৃত্যু, সুতরাং মৃত্যু রোধ করতে না পারলে মানবতা বিপন্ন হবে। ড. ফ্রাঙ্ক কাউফম্যান বলেন, কোন মৃত্যু গ্রহন যোগ্য হতে পারেনা। সানওয়ার চৌধুরী বলেন, দেশে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি উন্নয়নে আমার সামান্য অবদান রাখতে পেরে আমি খুশী, এই অ্যাওয়ার্ড আমাকে আরো ভূমিকা রাখতে অনুপ্রাণিত করবে ।

সভাপতির বক্তব্যে এনআরবি চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, দেশে দেশে সংঘাত, সংখ্যা লঘুদের নির্মূল প্রয়াস, ধর্মীয় বিরোধ, জাতিগত দাঙ্গা ও ক্ষমতাবানদের অত্যাচার বন্ধে জাতিসংঘের বলিষ্ট ভূমিকা নিতে হবে। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে দূবর্লদের অত্যাচার নিরসনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা ও পরামর্শ পালনে শক্তিমানদের বাধ্য করতে সকলকে একযোগে কায্যর্কর পদক্ষেপ গ্রহনে করতে হবে। সকলের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে ধর্মীয় ও বিভিন্ন জাতিগোষ্টি এবং সম্প্রদায়গুলোকে পরষ্পরের প্রতি সহনশীল ও ন্যায্য আচরণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের লাগসই ও ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতিসংঘ তার করণীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সবলের অত্যাচারে বিশ্বময় সুশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়বে। বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের কাযর্ক্রম ও কর্মীদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবাইকে ঐকমত্যে আসতে হবে যাতে উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কাজ নির্বিগ্নে পালন করা যায়।