নিউইয়র্ক ০৯:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ডলারের দাম লাগামছাড়া, ব্যয় বাড়বে জীবনযাত্রায়

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৫:২১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪
  • / ১৭৫ বার পঠিত

আইএমএফের পরামর্শে ডলার বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু হিতে বিপরীত হয়েছে। এর প্রভাবে খোলাবাজারে বৃহস্পতিবার এক লাফে ৮ টাকা পর্যন্ত দর বেড়েছে ডলারের। মানি এক্সচেঞ্জ এবং এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রতি ডলার ১২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এর পরও অনেকে ডলার পাননি। খোলাবাজারের পাশাপাশি ব্যাংকে আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স, আন্তঃব্যাংকসহ সব পর্যায়ে ডলারের দর বেড়েছে।

গতকাল আমদানিতে ৪ টাকার বেশি বেড়ে দর ওঠে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে ডলারের দর বৃদ্ধি পণ্যমূল্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং আরেক দফা জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত মানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুধবার প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা ঠিক করে। একই সঙ্গে ‘স্মার্ট’ ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়। বাড়ানো হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার দেওয়ার সুদহার বা নীতি সুদহার।

অবৈধ হলেও মানিচেঞ্জারের সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিনিধিরা সাধারণত রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ডলার কেনাবেচা করেন। সোলায়মান শেখ নামের এক প্রতিনিধি বলেন, ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে সব সময় ডলারের দর বেশি। বুধবার সকালের দিকে আমরা ১১৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকায় ডলার বিক্রি করি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণার পর তা বেড়ে ১১৯ টাকা হয়। আর বৃহস্পতিবার তা ১২৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে। যদিও সকালের দিকে ছিল ১২৩ টাকা। হুজুগে এভাবে এক দিনে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দর আরও বাড়বে– এমন ধারণা থেকে অনেকে বিক্রি করেননি। ফলে বেচাকেনা কম হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিদেশ ভ্রমণের জন্য ডলার কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, যোগাযোগ ছাড়া সাধারণত ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করে না। এ কারণে কয়েকটি মানিচেঞ্জার ঘুরলেও কেউই দিতে রাজি হয়নি। একটি মানিচেঞ্জার ১২৫ টাকায় ডলার দিতে চেয়ে বসিয়ে রাখলেও শেষ পর্যন্ত দেয়নি।

বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে ঢাকায় আইএমএফ মিশনের সঙ্গে বৈঠকের শেষ দিনে চালু হয় ‘ক্রলিং পেগ’। এটি এমন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করে তা একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করতে বলা হয়। ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আগের এ পদ্ধতিতে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আইএমএফের পরামর্শে বিভিন্ন দেশ এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করেছে। কোথাও সাফল্য এসেছে, কোথাও ব্যর্থ হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ডিলারদের সংগঠন বাফেদা ডলারের একটি আনুষ্ঠানিক দর ঘোষণা করত। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি দরে লেনদেন হতো। নতুন পদ্ধতি চালুর আগে সর্বশেষ ঘোষিত দর ছিল ১১০ টাকা। কিন্তু প্রকৃত দর ছিল এরও বেশি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ১১৭ টাকা ঘোষণা করে মৌখিকভাবে ব্যাংকগুলোকে এক টাকা কম-বেশি করার নির্দেশ দিয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বিনিময় হারে নতুন পদ্ধতি চালুর কারণে সাময়িক অস্থিরতা দেখা দিলেও সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে স্থিতিশীল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ক্রলিং পেগ ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার আগের ধাপ। সুদহার ৯ মাস ‘স্মার্ট’ নামে পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ধারণ করে এখন পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও তাই হবে। এতদিন একটি দর ঘোষণা করে আরেক দরে ডলার বেচাকেনা হচ্ছিল। এখন সব ব্যাংক একই রকম দরে বিক্রি করবে। এর মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

জানা গেছে, বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে গতকাল ব্যাংকগুলো ১১৭ টাকা ৪০ পয়সা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনেছে। নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে কিনেছে ১১৭ টাকায়, যা আগের দিন ছিল ১১২ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ১১৫ টাকা। আবার রপ্তানিকারকরাও এখন থেকে ১১৭ টাকা পাবেন। এর আগে পাচ্ছিলেন ১১২ থেকে ১১৫ টাকা।

এদিকে এক দিনে ৪ টাকা বেড়ে আমদানিকারকদের গতকাল ডলার কিনতে হয়েছে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সায়। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ডলারের দর বৃদ্ধির ফলে আমদানি করা সব ধরনের পণ্যের দর বাড়বে। কেননা, এতদিন তারা ১১২ থেকে ১১৫ টাকায় ডলার পাচ্ছিলেন। এখন কোনো ব্যাংক আর ১১৭ টাকার নিচে বিক্রি করবে না। দর আরও বাড়তে পারে।

ডলারের সঙ্গে অন্য সব বৈদেশিক মুদ্রার দরও বেড়েছে। হজ মৌসুমে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে সৌদি রিয়ালের। এক দিনে প্রতি সৌদি রিয়ালে ১ টাকা ৭০ পয়সা বেড়ে গতকাল খোলাবাজারে ৩২ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। আগের দিন যা ছিল ৩০ টাকা ৫০ পয়সা। অন্যদিকে, নগদ ডলার ব্যাংকে রাখায় উৎসাহিত করতে সুদহার বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল আলাদা নির্দেশনার মাধ্যমে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) ও নন-রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (এনএফসিডি) অ্যাকাউন্টের সুদহার আরও বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচ সামান্য বাড়বে। এতে আমদানি আরও নিরুৎসাহিত হবে। বৈধপথে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে উৎসাহিত হবেন ব্যবসায়ীরা। এভাবে ডলারের প্রবাহ বেড়ে সংকট কেটে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের দর নিয়ে এখন আর লুকোচুরি থাকবে না। এতদিন এক দরে রিপোর্ট করে আরেক দরে বেচাকেনা হচ্ছিল। এখন তা আর হবে না।

তিনি অরও বলেন, আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপসহ বিভিন্ন ব্যবস্থার পরও গত আড়াই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমছে। বুধবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে হয়েছে ১৯ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে যা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকভেদে ডলারের দর ভিন্ন ছিল। তারা এতদিন আমদানিকারকদের কাছ থেকে ১১৩ থেকে ১১৪ টাকায় নিতেন। বৃহস্পতিবার সব ব্যাংক মোটামুটিভাবে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করেছে। এখন সব ব্যাংক যদি একই নিয়মে চলে, শিগগির অস্থিরতা কেটে যাবে। রিজার্ভের উন্নতি হবে। আরেকটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, আমদানি দায় নিষ্পত্তিতে বুধবার তারা ১১৫ থেকে ১১৬ টাকায় ডলার নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তা ১১৭ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। যদিও তারা এদিন কোনো দায় পরিশোধ করেননি। আপাতত বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। সূত্র: সমকাল।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ডলারের দাম লাগামছাড়া, ব্যয় বাড়বে জীবনযাত্রায়

প্রকাশের সময় : ০৫:২১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪

আইএমএফের পরামর্শে ডলার বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু হিতে বিপরীত হয়েছে। এর প্রভাবে খোলাবাজারে বৃহস্পতিবার এক লাফে ৮ টাকা পর্যন্ত দর বেড়েছে ডলারের। মানি এক্সচেঞ্জ এবং এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রতি ডলার ১২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এর পরও অনেকে ডলার পাননি। খোলাবাজারের পাশাপাশি ব্যাংকে আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স, আন্তঃব্যাংকসহ সব পর্যায়ে ডলারের দর বেড়েছে।

গতকাল আমদানিতে ৪ টাকার বেশি বেড়ে দর ওঠে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে ডলারের দর বৃদ্ধি পণ্যমূল্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং আরেক দফা জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত মানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুধবার প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা ঠিক করে। একই সঙ্গে ‘স্মার্ট’ ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়। বাড়ানো হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার দেওয়ার সুদহার বা নীতি সুদহার।

অবৈধ হলেও মানিচেঞ্জারের সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিনিধিরা সাধারণত রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ডলার কেনাবেচা করেন। সোলায়মান শেখ নামের এক প্রতিনিধি বলেন, ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে সব সময় ডলারের দর বেশি। বুধবার সকালের দিকে আমরা ১১৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকায় ডলার বিক্রি করি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণার পর তা বেড়ে ১১৯ টাকা হয়। আর বৃহস্পতিবার তা ১২৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে। যদিও সকালের দিকে ছিল ১২৩ টাকা। হুজুগে এভাবে এক দিনে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দর আরও বাড়বে– এমন ধারণা থেকে অনেকে বিক্রি করেননি। ফলে বেচাকেনা কম হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিদেশ ভ্রমণের জন্য ডলার কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, যোগাযোগ ছাড়া সাধারণত ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করে না। এ কারণে কয়েকটি মানিচেঞ্জার ঘুরলেও কেউই দিতে রাজি হয়নি। একটি মানিচেঞ্জার ১২৫ টাকায় ডলার দিতে চেয়ে বসিয়ে রাখলেও শেষ পর্যন্ত দেয়নি।

বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে ঢাকায় আইএমএফ মিশনের সঙ্গে বৈঠকের শেষ দিনে চালু হয় ‘ক্রলিং পেগ’। এটি এমন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করে তা একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করতে বলা হয়। ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আগের এ পদ্ধতিতে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আইএমএফের পরামর্শে বিভিন্ন দেশ এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করেছে। কোথাও সাফল্য এসেছে, কোথাও ব্যর্থ হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ডিলারদের সংগঠন বাফেদা ডলারের একটি আনুষ্ঠানিক দর ঘোষণা করত। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি দরে লেনদেন হতো। নতুন পদ্ধতি চালুর আগে সর্বশেষ ঘোষিত দর ছিল ১১০ টাকা। কিন্তু প্রকৃত দর ছিল এরও বেশি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ১১৭ টাকা ঘোষণা করে মৌখিকভাবে ব্যাংকগুলোকে এক টাকা কম-বেশি করার নির্দেশ দিয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বিনিময় হারে নতুন পদ্ধতি চালুর কারণে সাময়িক অস্থিরতা দেখা দিলেও সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে স্থিতিশীল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ক্রলিং পেগ ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার আগের ধাপ। সুদহার ৯ মাস ‘স্মার্ট’ নামে পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ধারণ করে এখন পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও তাই হবে। এতদিন একটি দর ঘোষণা করে আরেক দরে ডলার বেচাকেনা হচ্ছিল। এখন সব ব্যাংক একই রকম দরে বিক্রি করবে। এর মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

জানা গেছে, বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে গতকাল ব্যাংকগুলো ১১৭ টাকা ৪০ পয়সা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনেছে। নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে কিনেছে ১১৭ টাকায়, যা আগের দিন ছিল ১১২ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ১১৫ টাকা। আবার রপ্তানিকারকরাও এখন থেকে ১১৭ টাকা পাবেন। এর আগে পাচ্ছিলেন ১১২ থেকে ১১৫ টাকা।

এদিকে এক দিনে ৪ টাকা বেড়ে আমদানিকারকদের গতকাল ডলার কিনতে হয়েছে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সায়। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ডলারের দর বৃদ্ধির ফলে আমদানি করা সব ধরনের পণ্যের দর বাড়বে। কেননা, এতদিন তারা ১১২ থেকে ১১৫ টাকায় ডলার পাচ্ছিলেন। এখন কোনো ব্যাংক আর ১১৭ টাকার নিচে বিক্রি করবে না। দর আরও বাড়তে পারে।

ডলারের সঙ্গে অন্য সব বৈদেশিক মুদ্রার দরও বেড়েছে। হজ মৌসুমে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে সৌদি রিয়ালের। এক দিনে প্রতি সৌদি রিয়ালে ১ টাকা ৭০ পয়সা বেড়ে গতকাল খোলাবাজারে ৩২ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। আগের দিন যা ছিল ৩০ টাকা ৫০ পয়সা। অন্যদিকে, নগদ ডলার ব্যাংকে রাখায় উৎসাহিত করতে সুদহার বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল আলাদা নির্দেশনার মাধ্যমে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) ও নন-রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (এনএফসিডি) অ্যাকাউন্টের সুদহার আরও বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচ সামান্য বাড়বে। এতে আমদানি আরও নিরুৎসাহিত হবে। বৈধপথে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে উৎসাহিত হবেন ব্যবসায়ীরা। এভাবে ডলারের প্রবাহ বেড়ে সংকট কেটে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের দর নিয়ে এখন আর লুকোচুরি থাকবে না। এতদিন এক দরে রিপোর্ট করে আরেক দরে বেচাকেনা হচ্ছিল। এখন তা আর হবে না।

তিনি অরও বলেন, আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপসহ বিভিন্ন ব্যবস্থার পরও গত আড়াই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমছে। বুধবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে হয়েছে ১৯ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে যা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকভেদে ডলারের দর ভিন্ন ছিল। তারা এতদিন আমদানিকারকদের কাছ থেকে ১১৩ থেকে ১১৪ টাকায় নিতেন। বৃহস্পতিবার সব ব্যাংক মোটামুটিভাবে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করেছে। এখন সব ব্যাংক যদি একই নিয়মে চলে, শিগগির অস্থিরতা কেটে যাবে। রিজার্ভের উন্নতি হবে। আরেকটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, আমদানি দায় নিষ্পত্তিতে বুধবার তারা ১১৫ থেকে ১১৬ টাকায় ডলার নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তা ১১৭ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। যদিও তারা এদিন কোনো দায় পরিশোধ করেননি। আপাতত বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। সূত্র: সমকাল।