যথাযোগ্য মর্যাদা আর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত

- প্রকাশের সময় : ০৯:৫১:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জুলাই ২০১৫
- / ৬৮৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বিপুল উৎসাহে যথাযোগ্য মর্যাদা আর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় গত ১৭ জুলাই শুক্রবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধানার পর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিশেষ আনন্দের দিন পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। চমৎকার আবহাওয়ায় নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকার একাধিক খোলা মাঠ, মসজিদ আর কমিউনিটি সেন্টারে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হয়। ঈদের জামাত শেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মুনাজাতে সমগ্র মুসলিম উম্মাসহ দেশ-জাতির মঙ্গল ও সমৃদ্ধি এবং দেশে দেশে নিপীড়িত-নির্যাতিত মুসলমানদের বিশেষ করে গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলের হামলা থেকে রক্ষায় মহান আল্লাহতায়ালার রহমত ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করা হয়। নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত বৃহত্তম মসজিদগুলোর অন্যতম কুইন্স বরোর জ্যামাইকায় অবস্থিত জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর উদ্যোগে স্থানীয় জ্যামাইকা হাই স্কুল মাঠে সকাল সোয়া ৯টায় উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সর্বস্তরের ১২/১৫ হাজার মুসলিম নর-নারী একত্রে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। এই জামাতে ইমামতি ও বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন জেএমসি’র খতিব আলহাজ মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। এছাড়া খুৎবা পড়েন ইমাম শামসে আলী।
নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান জ্যামাইকা হাইস্কল মাঠে ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন। জেএমসি আয়োজিত ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে জেএমসি’র কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুর রহমান, আখতার হোসেন ও মূলধারার রাজনীতিক নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বীম্যান ডেভিড ওয়েপ্রীন, সাবেক কম্প্রট্রোলার জন ল্যু, সিটি কাউন্সিলম্যান ররি ল্যান্সম্যান প্রমুখ উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
জ্যামাইকার আল আরাফা মসজিদ কমিটির উদ্যোগে এই প্রথমবারের মতো খোলা আকাশের নীচে স্থানীয় সুসান বি এন্থনী স্কুলের খেলার মাঠে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে কয়েক হাজার শিশু কিশোর-কিশোরীসহ নর-নারী ঈদের নামাজ আদায় করেন।
এদিকে কানাডা ও ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী, কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জেনিয়া, ওয়াহিও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোরিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব অঙ্গরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এলাকার মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার ও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
প্রতিটি ঈদের জামাত শেষে নবীন-প্রবীণ, ছোট-বড় সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করতে দেখা যায়। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে সর্বত্রই নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেই সাথে সিটি প্রশাসনেরও বিশেষ নিরাপত্তা লক্ষ্য করা যায়। ঈদের নামাজ আদায়ের স্থানগুলোর আশপাশের রাস্তায় ফ্রি গাড়ী পার্কিং এর ব্যবস্থা থাকায় দূর দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা সপরিবারে ঈদের নামাজে শরীক হন। রং বেরং এর বাহারী পোশাক গায়ে নামাজিদের একত্রে ঈদের নামাজ আদায় ভীন দেশীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। সেই সাথে ঈদের মাঠে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদের দিনটি উইক ডে সোমবার থাকার পরও ঈদের নামাজের জায়াতগুলোতে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলিম নর-নারীকে যোগ দিতে দেখা যায়। অনেকে স্বপরিবারে আবার অনেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘনিষ্টজনদের বাসা-বাড়ীতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়া প্রবাসীরা ফোনে বাংলাদেশে ফোন করে স্বজনদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
নিউইয়র্কের উল্লেখযোগ্য ঈদের জামাতগুলোর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ ষ্ট্রীট ও ব্রডওয়ের কর্ণারে ডাইভারসিটি প্লাজায় খোলা রাস্তার উপর ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সিটির ইষ্ট এলমহার্স্ট জামে মসজিদ এন্ড মুসলিম সেন্টার, কুইন্সের জ্যামাইকার হাজী ক্যাম্প মসজিদ, দারুস সালাম মসজিদ, হিলসাইড ইসলামিক সেন্টার, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার এন্ড মসজিদ, জ্যাকসন হাইটসের জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টার, মসজিদ আবু হুরায়রা, মোহাম্মদী সেন্টার, ওজনপার্কের আল আমান জামে মসজিদ, দারুস সুন্নাহ মসজিদ, আল ফোরকান মসজিদ, ব্রæকলীনের বাংলাদেশ মসুলিম সেন্টার, বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ, ম্যানহাটানের মদিনা মসজিদ, আসসাফা মসজিদ, আমেরিকান মুসলিম সেন্টার, এস্টোরিয়ার আল আমীন মসজিদ, গাউছিয়া মসজিদ, ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার জামে মসজিদ, বাংলাবাজার জামে মসজিদ, নর্থ ব্রঙ্কস জামে মসজিদ প্রভৃতি মসজিদের উদ্যোগে খোলা মাঠে বা মসজিদ ভবনে ঈদুল ফিতরের একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়।