বিপুল উৎসাহে নিউইয়র্কে তিন দিনব্যাপী বাংলা উৎসব ও বইমেলা শুরু ॥ ঢাকার ১৩টি, কলকাতার ২টি আর নিউইয়র্কের ৪টি বইয়ের স্টল
![](https://hakkatha.com/wp-content/uploads/2024/05/hakkathafav.png)
- প্রকাশের সময় : ০৯:২০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ মে ২০১৬
- / ১২০৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বিগত চব্বিশ বছরের ধারাবাহিকতায় এবছরও নিউইয়র্কে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী (২০-২২ মে) আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা। জ্যাকসন হাইটসস্থ পিএস-৬৯ স্কুলে ২০ মে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা ২২ মে রোববার পর্যন্ত চলবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অংশ নেন। এদিন বিকেলে বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন। এর আগে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজা থেকে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এছাড়া বইমেলার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মূল মঞ্চে (রফিক আজাদ মঞ্চ) প্রধান অতিথি সহ অতিথিবৃন্দ ২৫টি মোমবাতি প্রজ্জলন করেন।
রং বে রং এর পোষাক, পড়ে, ব্যানার-ফেস্টুন আর পতাকা হাতে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত অতিথি, সংস্কৃতিপ্রেমী ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা শোভাযাত্রাকে বর্ণাঢ্য করে তোলেন। স্থানীয় ৭৩ স্ট্রিট ও ৩৭ এভিনিউ হয়ে শোভাযাত্রা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। এরপর বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যক সেলিনা হোসেন। এসময় দৈনিক ইত্তেফাক-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও অনন্যা সম্পাদক এবং প্রকাশক তাসমিমা হোসেন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসান, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্য ব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দিন হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার, লেখক গুলতেকিন খান, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, সাংবাদিক-লেখক নাজমুন নেসা পিয়ারি, আমীরুল ইসলাম, সৈয়দ আল ফারুক, ত্রিদিব চ্যাটার্জি, প্রকাশক ফরিদ আহমেদ, হুমায়ুন কবীর, অধ্যাপক আব্দুল সেলিম, মেলার আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস, মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলার আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস। এরপর অমন্ত্রিত অতিভিবৃন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। তারা তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের বাইরে এমন ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বইমেলা আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, বাংলা ভাষা, বাঙালী পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন সেখানেই বাংলা বইয়ের পাঠক থাকবেই। বক্তারা বলেন, দেশে দেশে বইমেলা আয়োজনের ফলে বাংলা ভাষা আর বাঙালীরা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজস্ব স্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে।
উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোদ্ধা হিসাবে ড. ডেভিড নেইলিনকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। তাকে মঞ্চে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মেলার অমন্ত্রিত অতিথি তাসমিমা হোসেন ও রামেন্দু মজুমদার। এই পর্বে স্লাইড শো প্রদর্শন করেন ওবায়দুল্লাহ মামুন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিধন্য এই মার্কিন চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ওয়াশিংটনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সে বছর জুলাই মাসে মেরিল্যান্ডের বালটিমোরে পাকিস্তানী অস্ত্রবাহী জাহাজ পদ্মা বন্দরে প্রবেশ করার বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভে অংশ নেন তাদের মধ্যে ড. নেইলিন ছিলেন অন্যতম। আরো উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে ঢাকার কলেরা হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায়, তরুণ চিকিৎসক নেইলিন কলেরার প্রতিষেধক হিসাবে অরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি আবিষ্কার করেন।
বইমেলার উদ্বোধনী দিনে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান ‘নতুনের কেতন’। এতে অংশ নেন নতুন প্রজন্মের নুহা কাওসার, লিওনা মুহিত, রোহানা মিশ্র, প্রিয়া সাহা ও দেবলীনা চন্দ্র। এই পর্বে নবীন শিল্পীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন গুলতেকিন খান।
এছাড়া ‘মুক্তধারার পচিশ বছর : ফিরে দেখা’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ড. নূরন নবী ও আনিসুল হক। উপস্থাপনায় ছিলেন নামিসুন্নাহার নিনি এবং স্লাইড শো প্রদর্শন করেন ওবায়াদুল্লাহ মামুন। রাত সোয়া ১০টায় শুরু হয় ফেরদৌস আরার সঙ্গীতানুষ্ঠান। তাকে মঞ্চে পরিচয় দেন মেলার অন্যতম স্পন্সর ও বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
এদিকে বইমেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শনকালে দেখা গেছে দর্শকদের প্রধান আকর্ষণ সেলিনা হোসেন ও গুলতেকিন খান। তাদের ঘিরে চলছে নানা কথা, শুভেচ্ছা বিনিময়, সেলফি তোলা ইত্যাদি। পাশাপাশি আনিসুল হক, রামেন্দু মজুমদার, রোকেয়া হায়দার, লুৎফর রহমান রিটন প্রমুখকে ঘিরেও দেখা যায় ভক্ত-শ্রোতা-দর্শকদের শুভেচ্ছা বিনিময় আর আড্ডা।
বইমেলার মূল উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা জানান, এবারের বইমেলায় ঢাকার ১৩টি, কলকাতার ২টি আর নিউইয়র্কের ৪টি প্রতিষ্ঠান বইয়ের স্টল ছাড়াও দর্শকদের সুবিধার্থে খাবার সহ পোশাক-পরিচ্ছেদের স্টল রয়েছে। তবে উদ্বোধনী দিনে ১০/১২টি স্টল ছাড়া অন্য স্টলগুলো পরিপূর্ণ সাজানো দেখা যায়নি। উদ্যোক্তারা জানান, মেলার বাকী দু’দিন সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে এবং জমে উঠবে।
তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে প্রাণ গ্রুপ, চ্যানেল আই, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক (এসএফআইবি), ইত্যাদি গ্রুপ, খাবার বাড়ি, সাগর চাইনিজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান।