নিউইয়র্ক ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশী মোস্তাফিজের আমেরিকা জয়

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৩৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৪
  • / ২০৩৩ বার পঠিত

অবশেষে বাংলাদেশী মোস্তাফিজ আমেরিকার মাটিতে পা রাখলেন। এটা তার স্বপ্ন পূরনের প্রথম ধাপ। কিন্তু তার এই আমেরিকা অভিযান গল্প উপন্যাসের কাহিনীকেও হার মানায়। জীবন বাজি রেখে এই বাংলাদেশী যুবক চলতি বছরের ৫ মে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছিলেন সোনার হরিণের দেশ আমেরিকায় ভাগ্যান্বেষনের আশায়। পথে নানা বঞ্চনা আর আশা ভঙ্গের কাহিনী ছিল তার নিত্যদিনের সাথী। তার পরও বুক ভরা সাহস, অনিশ্চিতকে জয় করার অদম্য বাসনা, আর অসীম মনোবল তাকে অর্ধ পৃথিবী পরিভ্রমণ করে নিয়ে আসে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়।
এজন্য তাকে মূল্য দিতে হয়েছে অনেক। দীর্ঘ ছয় মাস কাটাতে হয়েছে পথে পথে। রাতের পর রাত পথ কাটিয়েছেন জঙ্গলে। ট্রাকের কন্টেইনারে দমবন্ধ ভাবে শুয়ে পাড়ি দিয়েছেন সুদীর্ঘ পথ। সাঁতরে পাড়ি দিয়েছেন শ্বাপদসংকুল নদী। ২২ দিন কেটেছে জেলে। রোজার ঈদ কেটেছে পানামা আর কোরবানীর ঈদ ফ্লোরিডার মায়ামি জেলে। অবশেষে ভাগ্যদেবী তার প্রতি সুপ্রসন্ন হয়। সমস্ত বাধা বিপত্তি আর ঝড় ঝাপটার অবসান ঘটিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় মুক্ত মানুষ হিসাবে তিনি পা রাখেন নিউইয়র্কের মাটিতে।
ফ্লোরিডার মায়ামি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে গত ৯ অক্টোবর রাতের ফ্লাইটে নিউইয়র্ক ফিরছি। টেক অফের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান। ফোনে কথা বলছিলাম আমেরিকার সর্বদক্ষিণ শহর ‘কী ওয়েষ্ট’ এ বসবাসরত আমার এক বন্ধুর সাথে। আমেরিকান এয়ার লাইনস এর এই ফ্লাইটটিতে অর্ধেক আসনই ছিলো খালি। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা। আমিও খালি তিন সীটের একটিতে বসে ফোনালাপে মগ্ন। এর মাঝে সামনের সীট থেকে মাথা উঁচু করে একজন জানতে চাইলেন- ভাই কি বাংলাদেশী?
বন্ধুকে ফোনে অপেক্ষমান রেখে একটু বিরক্তের স্বরেই বল্লাম, শুনতেই পাচ্ছেন বাংলায় কথা বলছি। এর পরেও কি মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলতে হবে আমি কোন দেশের লোক?
আমার ধমকের সুরে কথা শুনে ভদ্রলোকটি যেন মিইয়ে গেলেন। সীটে বসতে বসতে মৃদু কণ্ঠে বল্লেন, ভাই আমি আজই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি। বহুদিন বাংলায় কথা বলিনা। তাছাড়া দেশের সাথেও যোগাযোগ নেই। আপনার কথা শুনে ভাবলাম একটু আলাপ করি এবং দেশের খবরাখবর নিই।
তার সাথে রূঢ় ব্যবহারের জন্য নিজেই লজ্জিত হলাম। ফোন লাইনটা কাট করে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে বল্লাম আমার পাশে এসে বসতে। সাথে সাথে তিনি চলে এলেন। এতক্ষণে তাকে ভালো করে দেখার সুযোগ হলো। বয়স ২৫ থেকে ২৮ এর কোটায়। গায়ে একটা মলিন জিনসের শার্ট ও প্যান্ট, মাথায় স্পেনিশদের মত বাটি ছাট চুল এবং রুক্ষ চেহারায় মলিনতার ছাপ। ডান কব্জিতে একটা বালার মত পরা আর হাতে একটা হলুদ বড় খাম।
তার কাছে জানতে চাইলাম দেশের বাড়ী কোথায়, ফ্লোরিডায় কবে এসেছেন, নিউইয়র্কে কার কাছে যাচ্ছেন ইত্যাদি। একজন আগ্রহী শ্রোতা পেয়ে তিনি মনের আগল খুলে দিলেন।
বল্লেন নাম মোস্তাফিজুর রহমান। দেশের বাড়ী নোয়াখালি জেলার সোনামুড়ি থানায়। ৮ বছর চাকুরি করেছেন দুবাইতে। আমেরিকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এ বছর ৫ জানুয়ারী দেশে আসেন। তারপর দালালের সাথে ২৭ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। সে আমেরিকা ঢুকিয়ে দেবে। বাকি দায়িত্ব নিজের।
মোস্তাফিজ বলেন, আমি এতে রাজি হই। তারপর দালাল বাংলাদেশের এক মন্ত্রীর সাথে একটি ডেলিগেটের সদস্য করে আমাকে শ্রীলংকা পাঠিয়ে দেয়। মন্ত্রীর সাথে একই বিমানে শ্রীলংকা আসি। তারপর দালালের নির্দেশমত মালয়শিয়া-দুবাই-ব্রাজিল-ইকুয়েডর-পেরু-কোস্টারিকা-নিকারাগুয়া-কলম্বিয়া হয়ে মেক্সিকো। সেখান থেকে নদী সাঁতরে টেক্সাস। ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। এর আগেও পানামায় জেল কেটেছি কিছুদিন। টেক্সাসের ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে নিয়ে একটি ঠান্ডা ঘরে আটকে রাখে। মনে হচ্ছিলো ঠান্ডায় জমে মারা যাবো। তিনদিন পরে রুম থেকে বের করে আনে এবং পাঠিয়ে দেয় ফ্লোরিডার মায়ামী জেলে। কিছুদিন জেলে রাখার পর পুলিশ আমাকে নিয়ে আসে কোর্টে জাজের কাছে। জাজ আমাকে ১৫০০ ডলারের বন্ডে জামিন দেয় ৯ অক্টোবর সকালে।
বিমানের টিকিট কিভাবে কাটলেন জানতে চাইলে মোস্তাফিজ বলেন, আমি আমার আত্মীয়ের সাথে জেল থেকেই ফোনে যোগাযোগ করি তিনি ব্রুকলীনে থাকেন। তিনিই ইমিগেশনের সাথে যোগাযোগ করে টিকিটের ব্যবস্থা করেন।
এয়ারপোর্টে ঢুকতে ইমিগ্রেশনকে আইডি দেখাতে হয়। আপনার তো পাসপোর্ট আইডি কিছুই নেই কিভাবে ঢুকলেন। আমার প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজ জানান, হাতে বালার মত যা আছে তাতে স্ক্যানিং করলেই সব তথ্য এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ জানতে পারবে আমাকে ইমিগ্রেশন অফিসার তাই জানিয়েছিল। তারা এভাবেই চেক করে আমাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়। আমার সাথে কিছু ডলার ছিল তা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ব্যাংকে রেখে দিয়েছে আমার নামে। হাতের বালাটা ব্যাংকে দেখালে তা স্ক্যান করে সে অর্থও আমাকে দিয়ে দেবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
কোর্টে জাজ কিছু জিজ্ঞাসা করেছিলো কিনা জানতে চাইলে মোস্তাফিজ বলেন, আমাকে দালাল বলে দিয়েছিল জাজের সামনে গেলে চেহারায় কাঁদো কাঁদো ভাব রাখতে হবে। তাহলে জাজের দয়া হবে। আমি তাই করেছি। আমি জাজকে বলেছি আমাকে দেশে গেলে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ (আওয়ামীলীগের ক্যাডাররা) মেরে ফেলবে। আমাকে আপনারা এদেশে মেরে ফেলুন তবুও দেশে যাবো না। আমার কথা শুনে একটু হেসে জাজ আমাকে জামিন দিয়ে দেন।
মোস্তাফিজ বলেন ভাই আমেরিকা দেশটা বড় ভালো। পুলিশ আমাকে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে জেলে নিয়ে আসে। তবে গাড়ী থেকে নামার সময় বলে- স্যার নামেন। পথে তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে মোস্তাফিজ জানান, জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হয়েছে দিনের পর দিন। কলাম্বিয়া থেকে পানামা আসার পথে ২০ জনের জায়গা ধরে এমন ট্রাকে ৪০ জন গাদাগাদি করে এনেছিল দালালরা। দম বন্ধ হয়ে মারা যাবার অবস্থা। এর মাঝে ৫ জন ছিল মেয়ে। রাস্তায় একটা খাল পার হতে হয়েছে সেখানে কুমির ও সাপ ছিল পানিতে।
মোস্তাফিজ জানান, নিউইয়র্কে আমার আত্মীয়রা আছেন। আমার মুক্তি পেতে তারা সহায়তা করেছেন। আশা করি তাদের সহযোগীতায় আমি নিউইয়র্কে গিয়ে এসাইলাম কেস ফাইল করতে পারবো।
রাত তখন ১২টা। আমেরিকান এয়ার লাইনসের বিমানটা নিউইয়র্কের মাটি ছুঁতে শুরু করেছে। মোস্তাফিজ বিমানের জানালা দিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন আলোকজ্জল শহরের দিকে যেখানে তিনি খুঁজতে চাইছেন তার স্বপ্নের ঠিকানা।

সূত্র: বাংলা পত্রিকা

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বাংলাদেশী মোস্তাফিজের আমেরিকা জয়

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৪

অবশেষে বাংলাদেশী মোস্তাফিজ আমেরিকার মাটিতে পা রাখলেন। এটা তার স্বপ্ন পূরনের প্রথম ধাপ। কিন্তু তার এই আমেরিকা অভিযান গল্প উপন্যাসের কাহিনীকেও হার মানায়। জীবন বাজি রেখে এই বাংলাদেশী যুবক চলতি বছরের ৫ মে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছিলেন সোনার হরিণের দেশ আমেরিকায় ভাগ্যান্বেষনের আশায়। পথে নানা বঞ্চনা আর আশা ভঙ্গের কাহিনী ছিল তার নিত্যদিনের সাথী। তার পরও বুক ভরা সাহস, অনিশ্চিতকে জয় করার অদম্য বাসনা, আর অসীম মনোবল তাকে অর্ধ পৃথিবী পরিভ্রমণ করে নিয়ে আসে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়।
এজন্য তাকে মূল্য দিতে হয়েছে অনেক। দীর্ঘ ছয় মাস কাটাতে হয়েছে পথে পথে। রাতের পর রাত পথ কাটিয়েছেন জঙ্গলে। ট্রাকের কন্টেইনারে দমবন্ধ ভাবে শুয়ে পাড়ি দিয়েছেন সুদীর্ঘ পথ। সাঁতরে পাড়ি দিয়েছেন শ্বাপদসংকুল নদী। ২২ দিন কেটেছে জেলে। রোজার ঈদ কেটেছে পানামা আর কোরবানীর ঈদ ফ্লোরিডার মায়ামি জেলে। অবশেষে ভাগ্যদেবী তার প্রতি সুপ্রসন্ন হয়। সমস্ত বাধা বিপত্তি আর ঝড় ঝাপটার অবসান ঘটিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় মুক্ত মানুষ হিসাবে তিনি পা রাখেন নিউইয়র্কের মাটিতে।
ফ্লোরিডার মায়ামি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে গত ৯ অক্টোবর রাতের ফ্লাইটে নিউইয়র্ক ফিরছি। টেক অফের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান। ফোনে কথা বলছিলাম আমেরিকার সর্বদক্ষিণ শহর ‘কী ওয়েষ্ট’ এ বসবাসরত আমার এক বন্ধুর সাথে। আমেরিকান এয়ার লাইনস এর এই ফ্লাইটটিতে অর্ধেক আসনই ছিলো খালি। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা। আমিও খালি তিন সীটের একটিতে বসে ফোনালাপে মগ্ন। এর মাঝে সামনের সীট থেকে মাথা উঁচু করে একজন জানতে চাইলেন- ভাই কি বাংলাদেশী?
বন্ধুকে ফোনে অপেক্ষমান রেখে একটু বিরক্তের স্বরেই বল্লাম, শুনতেই পাচ্ছেন বাংলায় কথা বলছি। এর পরেও কি মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলতে হবে আমি কোন দেশের লোক?
আমার ধমকের সুরে কথা শুনে ভদ্রলোকটি যেন মিইয়ে গেলেন। সীটে বসতে বসতে মৃদু কণ্ঠে বল্লেন, ভাই আমি আজই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি। বহুদিন বাংলায় কথা বলিনা। তাছাড়া দেশের সাথেও যোগাযোগ নেই। আপনার কথা শুনে ভাবলাম একটু আলাপ করি এবং দেশের খবরাখবর নিই।
তার সাথে রূঢ় ব্যবহারের জন্য নিজেই লজ্জিত হলাম। ফোন লাইনটা কাট করে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে বল্লাম আমার পাশে এসে বসতে। সাথে সাথে তিনি চলে এলেন। এতক্ষণে তাকে ভালো করে দেখার সুযোগ হলো। বয়স ২৫ থেকে ২৮ এর কোটায়। গায়ে একটা মলিন জিনসের শার্ট ও প্যান্ট, মাথায় স্পেনিশদের মত বাটি ছাট চুল এবং রুক্ষ চেহারায় মলিনতার ছাপ। ডান কব্জিতে একটা বালার মত পরা আর হাতে একটা হলুদ বড় খাম।
তার কাছে জানতে চাইলাম দেশের বাড়ী কোথায়, ফ্লোরিডায় কবে এসেছেন, নিউইয়র্কে কার কাছে যাচ্ছেন ইত্যাদি। একজন আগ্রহী শ্রোতা পেয়ে তিনি মনের আগল খুলে দিলেন।
বল্লেন নাম মোস্তাফিজুর রহমান। দেশের বাড়ী নোয়াখালি জেলার সোনামুড়ি থানায়। ৮ বছর চাকুরি করেছেন দুবাইতে। আমেরিকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এ বছর ৫ জানুয়ারী দেশে আসেন। তারপর দালালের সাথে ২৭ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। সে আমেরিকা ঢুকিয়ে দেবে। বাকি দায়িত্ব নিজের।
মোস্তাফিজ বলেন, আমি এতে রাজি হই। তারপর দালাল বাংলাদেশের এক মন্ত্রীর সাথে একটি ডেলিগেটের সদস্য করে আমাকে শ্রীলংকা পাঠিয়ে দেয়। মন্ত্রীর সাথে একই বিমানে শ্রীলংকা আসি। তারপর দালালের নির্দেশমত মালয়শিয়া-দুবাই-ব্রাজিল-ইকুয়েডর-পেরু-কোস্টারিকা-নিকারাগুয়া-কলম্বিয়া হয়ে মেক্সিকো। সেখান থেকে নদী সাঁতরে টেক্সাস। ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। এর আগেও পানামায় জেল কেটেছি কিছুদিন। টেক্সাসের ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে নিয়ে একটি ঠান্ডা ঘরে আটকে রাখে। মনে হচ্ছিলো ঠান্ডায় জমে মারা যাবো। তিনদিন পরে রুম থেকে বের করে আনে এবং পাঠিয়ে দেয় ফ্লোরিডার মায়ামী জেলে। কিছুদিন জেলে রাখার পর পুলিশ আমাকে নিয়ে আসে কোর্টে জাজের কাছে। জাজ আমাকে ১৫০০ ডলারের বন্ডে জামিন দেয় ৯ অক্টোবর সকালে।
বিমানের টিকিট কিভাবে কাটলেন জানতে চাইলে মোস্তাফিজ বলেন, আমি আমার আত্মীয়ের সাথে জেল থেকেই ফোনে যোগাযোগ করি তিনি ব্রুকলীনে থাকেন। তিনিই ইমিগেশনের সাথে যোগাযোগ করে টিকিটের ব্যবস্থা করেন।
এয়ারপোর্টে ঢুকতে ইমিগ্রেশনকে আইডি দেখাতে হয়। আপনার তো পাসপোর্ট আইডি কিছুই নেই কিভাবে ঢুকলেন। আমার প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজ জানান, হাতে বালার মত যা আছে তাতে স্ক্যানিং করলেই সব তথ্য এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ জানতে পারবে আমাকে ইমিগ্রেশন অফিসার তাই জানিয়েছিল। তারা এভাবেই চেক করে আমাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়। আমার সাথে কিছু ডলার ছিল তা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ব্যাংকে রেখে দিয়েছে আমার নামে। হাতের বালাটা ব্যাংকে দেখালে তা স্ক্যান করে সে অর্থও আমাকে দিয়ে দেবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
কোর্টে জাজ কিছু জিজ্ঞাসা করেছিলো কিনা জানতে চাইলে মোস্তাফিজ বলেন, আমাকে দালাল বলে দিয়েছিল জাজের সামনে গেলে চেহারায় কাঁদো কাঁদো ভাব রাখতে হবে। তাহলে জাজের দয়া হবে। আমি তাই করেছি। আমি জাজকে বলেছি আমাকে দেশে গেলে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ (আওয়ামীলীগের ক্যাডাররা) মেরে ফেলবে। আমাকে আপনারা এদেশে মেরে ফেলুন তবুও দেশে যাবো না। আমার কথা শুনে একটু হেসে জাজ আমাকে জামিন দিয়ে দেন।
মোস্তাফিজ বলেন ভাই আমেরিকা দেশটা বড় ভালো। পুলিশ আমাকে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে জেলে নিয়ে আসে। তবে গাড়ী থেকে নামার সময় বলে- স্যার নামেন। পথে তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে মোস্তাফিজ জানান, জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হয়েছে দিনের পর দিন। কলাম্বিয়া থেকে পানামা আসার পথে ২০ জনের জায়গা ধরে এমন ট্রাকে ৪০ জন গাদাগাদি করে এনেছিল দালালরা। দম বন্ধ হয়ে মারা যাবার অবস্থা। এর মাঝে ৫ জন ছিল মেয়ে। রাস্তায় একটা খাল পার হতে হয়েছে সেখানে কুমির ও সাপ ছিল পানিতে।
মোস্তাফিজ জানান, নিউইয়র্কে আমার আত্মীয়রা আছেন। আমার মুক্তি পেতে তারা সহায়তা করেছেন। আশা করি তাদের সহযোগীতায় আমি নিউইয়র্কে গিয়ে এসাইলাম কেস ফাইল করতে পারবো।
রাত তখন ১২টা। আমেরিকান এয়ার লাইনসের বিমানটা নিউইয়র্কের মাটি ছুঁতে শুরু করেছে। মোস্তাফিজ বিমানের জানালা দিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন আলোকজ্জল শহরের দিকে যেখানে তিনি খুঁজতে চাইছেন তার স্বপ্নের ঠিকানা।

সূত্র: বাংলা পত্রিকা