নিউইয়র্ক ১০:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বর্জন ও প্রতিরোধে নিউইয়র্কে ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৩৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪
  • / ৯৫২ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: বেশ ক’মাস ধরে নিউইয়র্কে ভূইফোড় সংগঠনের ব্যানারে অ্যাওয়ার্ড বিতরণের ঘটনা ঘটছে। সামাজিক পরিচিতি নেই এমন লোকেরা অর্থের বিনিময়ে এসব অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন বলে স্থানীয় মিডিয়ায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। ঐসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ কেউ অ্যাওয়ার্ড বিতরণকেই জীবিকার ধান্দা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এমনি পরিস্থিতির মধ্যেই ঘোষণা করা হয় আরেকটি ভূইফোড় সংগঠনের নামে ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ এওয়ার্ড’এর। আর এ সংগঠনের নাম হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, ইউএসএ।’ প্রকৃত অর্থে এই সংগঠনের চেয়ারপার্সন হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মহাসচিব এম ফজলুর রহমান (ফ্লোরিডায় বসাসকারী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগেরও সিনিয়র সহ-সভাপতি)।
কয়েক বছর আগে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে এই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের রীতি অনুযায়ী সংগঠনটি সক্রিয় রয়েছে। এরফলে একইনামে হঠাৎ গজিয়ে উঠা ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, ইউএসএ’র প্রচারণায় হতভম্ব হন প্রকৃত বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। আরো হতবাক হওয়ার ঘটনা যে, যে ১৩ জনকে অ্যাওয়ার্ড প্রদানের জন্যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তার মধ্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রুদূত ড. এ কে এ মোমেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সেক্রেটারী সাজ্জাদুর রহমান, মেট্র ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. শাজাহান মাহমুদের নামও রয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী পরিবারে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ‘কারণ, কথিত ঐ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তারা কখনোই আওয়ামী পরিবারের লোক নন। অ্যাওয়ার্ড প্রদানের তালিকায় এমন দু’জন রয়েছেন যারা সরাসরি জামাত-শিবিরের তল্পিবাহক এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে হরদম বক্তব্য-বিবৃতি দেন’-এনআরবি নিউজকে বলেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার। তিনি উল্লেখ করেন, ‘জীবন থাকতে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের কাউকে নিয়ে ব্যবসা করতে দেব না।’
এমন আহবানের পরিপ্রেক্ষিতেই বর্জন এবং প্রতিরোধের মুখে নিরাপত্তা প্রহরী রেখে নিউইয়র্কে ১৩ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণের কথিত অনুষ্ঠান হলো। ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ’ নামক একটি সংগঠনের পক্ষ মোট ১৩ জনকে এই এওয়ার্ড প্রদানের ঘোষণা দেয়া হলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৪ জন। কয়েকজন অনুষ্ঠানস্থলের কাছাকাছি ্এসে প্রতিবাদকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। এর অন্যতম হলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও মেট্র ওয়াাশিংটন আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং বঙ্গবন্ধু একাডেমী ইউএসএ-এর প্রধান উপদেষ্টা নাঈমা খান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে বিরত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, নিউজার্সীর কাউন্সিলম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন্নবী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক নিউইয়র্ক-এর সভাপতি কামাল আহমেদ এবং কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট খোরশেদ আলম। এওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন ইমাম ক্বাজী কাইয়্যুম, সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইটির সভাপতি নাসরিন আহমেদ এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ।
এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে গত কদিন থেকেই এক ধরনের উত্তেজনা চলছিল সমগ্র আমেরিকায়। কারণ হিসেবে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল এবং যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাংশের সেক্রেটারী দরুদ মিয়া রনেল ঐ অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে মিডিয়ার কাছে বলেন যে, ‘বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন সংগঠন হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ।’ এর মহাসচিব হচ্ছেন এম ফজলুর রহমান। কয়েক বছর আগে জয়ের নির্দেশে এ সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। তবে আইনগতভাবে এ সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন এখনও সক্রিয় রয়েছে। এমনি অবস্থায় রাতারাতি গজিয়ে উঠা বঙ্গবন্ধুর নামের কথিত এই বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণের সংবাদে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের সকলেই ক্ষুব্ধ। কথিত এই সংগঠনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা কখনোই আওয়ামী পরিবারের কোন কর্মসূচিতে ছিলেন না অথবা সাংগঠনিকভাবেও সম্পর্কিত নন।’
BB Award-2নূরনবী কমান্ডার অভিযোগ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি আর ধান্দাবাজি চলতে দেয়া যায় না। আমরা এটি বরদাশত করবো না।’ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য জসীমউদ্দিন খান মিঠু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’র নামে যারা ব্যবসা করতে চায় তাদেরকে প্রতিহত করার দায়িত্ব আওয়ামী পরিবারের সকলের।’ মিঠু উল্লেখ করেন, ‘৫০ জনের বসারও জায়গা নেই এমন একটি স্থানে এই অ্যাওয়ার্ড বিতরণের যে তামাশা করা হচ্ছে, তা সত্যি দু:খজনক। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। প্রবেশ পথে সিকিউরিটি গার্ড রেখে অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।’ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের জন্যে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিউইয়র্কে এসেও কেন অনুষ্ঠান বর্জন করলেন-এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে বঙ্গবন্ধু লিডারশী]িপ এওয়ার্ড নেয়ার লোভ কার না থাকে। এছাড়া, এওয়ার্ডপ্রাপ্তদের তালিকায় আরো যাদের নাম দেখেছি প্রায় সকলেই আওয়ামী পরিবারের সদস্য। এজন্যেই এসেছিলাম। কিন্তু নিউইয়র্কে এসে জানলাম যে, আয়োজকরা বিশেষ মতলবে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।’
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি ঐ অনুষ্ঠানে যাইনি। কারণ, আয়োজকদের ব্যাপারে আমার স্বচ্ছ কোন ধারণা নেই। এছাড়া, সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’র উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছি। তবে অন্য কেউ যদি ঐ অনুষ্ঠানে গিয়ে থাকেন সেটি আমার দায়িত্ব নয়। আমি নীতিগত কারণে ঐ অনুষ্ঠানে না যাবার সিদ্ধান্ত নেই।’ ‘এছাড়া, কোন ক্রাইটেরিয়াতে এতগুলো লোককে এওয়ার্ড প্রদান করা হবে-এ নিয়েও আমার মধ্যে প্রশ্ন ছিল’-বলেন ড. সিদ্দিক।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন ১৩ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরেই ফিরেছেন পেরুর রাজধানী লিমা থেকে। জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। ড. মোমেনকে এ এওয়ার্ড প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি এর কিছুই জানি না। আমাকে কেউ কিছু জানাননি বা আমন্ত্রণও করেননি।’
কথিত ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র সভাপতি পীরজাদা নুরল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সালামের তত্বাবধানে সন্ধ্যা ৭টায় ফুডকোর্ট পার্টি হলে শুরু হয় ঐ এওয়ার্ড বিতরণের অনুষ্ঠান। ডজনখানেক শিল্পী এবং ৩/৪ জন সাংবাদিক বাদে অনুষ্ঠানে ছিলেন ১৫ জন সুধী। যাদের অধিকাংশই শিশু শিল্পীদের অভিভাবক। নীচে তখন চলছিল হৈ চৈ। এ সময় অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ৪ জনের মধ্যে একজন প্রতিবাদ থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে সিঁড়িতে উঠার পথে একজন সিকিউরিটি মোতায়েন করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি নুরল আবেদীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এ বছরের ৭ জুলাই আমরা নিউইয়র্ক রাজ্য প্রশাসনে রেজিষ্ট্রেশন করেছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী বলেই বিজয়ের মাসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। অন্য কোন রাজ্যে একই নামে কোন সংগঠন থাকলেও নিউইয়র্কে আমাদেরটিই রয়েছে।’ ‘চাঁদাবাজি এবং ধান্দাবাজি’র অভিযোগ অস্বীকার করেন নূরল আবেদীন।
অপরদিকে, ফ্লোরিডা থেকে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এম, ফজলুর রহমান এনআরবি নিউজের মাধ্যমে কথিত অ্যাওয়ার্ড বিতরণের অনুষ্ঠান প্রায় সকলেই বর্জন করায় সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। – এনআরবি নিউজ।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বর্জন ও প্রতিরোধে নিউইয়র্কে ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

নিউইয়র্ক: বেশ ক’মাস ধরে নিউইয়র্কে ভূইফোড় সংগঠনের ব্যানারে অ্যাওয়ার্ড বিতরণের ঘটনা ঘটছে। সামাজিক পরিচিতি নেই এমন লোকেরা অর্থের বিনিময়ে এসব অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন বলে স্থানীয় মিডিয়ায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। ঐসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ কেউ অ্যাওয়ার্ড বিতরণকেই জীবিকার ধান্দা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এমনি পরিস্থিতির মধ্যেই ঘোষণা করা হয় আরেকটি ভূইফোড় সংগঠনের নামে ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ এওয়ার্ড’এর। আর এ সংগঠনের নাম হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, ইউএসএ।’ প্রকৃত অর্থে এই সংগঠনের চেয়ারপার্সন হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মহাসচিব এম ফজলুর রহমান (ফ্লোরিডায় বসাসকারী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগেরও সিনিয়র সহ-সভাপতি)।
কয়েক বছর আগে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে এই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের রীতি অনুযায়ী সংগঠনটি সক্রিয় রয়েছে। এরফলে একইনামে হঠাৎ গজিয়ে উঠা ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, ইউএসএ’র প্রচারণায় হতভম্ব হন প্রকৃত বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। আরো হতবাক হওয়ার ঘটনা যে, যে ১৩ জনকে অ্যাওয়ার্ড প্রদানের জন্যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তার মধ্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রুদূত ড. এ কে এ মোমেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সেক্রেটারী সাজ্জাদুর রহমান, মেট্র ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. শাজাহান মাহমুদের নামও রয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী পরিবারে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ‘কারণ, কথিত ঐ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তারা কখনোই আওয়ামী পরিবারের লোক নন। অ্যাওয়ার্ড প্রদানের তালিকায় এমন দু’জন রয়েছেন যারা সরাসরি জামাত-শিবিরের তল্পিবাহক এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে হরদম বক্তব্য-বিবৃতি দেন’-এনআরবি নিউজকে বলেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার। তিনি উল্লেখ করেন, ‘জীবন থাকতে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের কাউকে নিয়ে ব্যবসা করতে দেব না।’
এমন আহবানের পরিপ্রেক্ষিতেই বর্জন এবং প্রতিরোধের মুখে নিরাপত্তা প্রহরী রেখে নিউইয়র্কে ১৩ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণের কথিত অনুষ্ঠান হলো। ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ’ নামক একটি সংগঠনের পক্ষ মোট ১৩ জনকে এই এওয়ার্ড প্রদানের ঘোষণা দেয়া হলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৪ জন। কয়েকজন অনুষ্ঠানস্থলের কাছাকাছি ্এসে প্রতিবাদকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। এর অন্যতম হলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও মেট্র ওয়াাশিংটন আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং বঙ্গবন্ধু একাডেমী ইউএসএ-এর প্রধান উপদেষ্টা নাঈমা খান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে বিরত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, নিউজার্সীর কাউন্সিলম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন্নবী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক নিউইয়র্ক-এর সভাপতি কামাল আহমেদ এবং কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট খোরশেদ আলম। এওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন ইমাম ক্বাজী কাইয়্যুম, সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইটির সভাপতি নাসরিন আহমেদ এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ।
এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে গত কদিন থেকেই এক ধরনের উত্তেজনা চলছিল সমগ্র আমেরিকায়। কারণ হিসেবে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল এবং যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাংশের সেক্রেটারী দরুদ মিয়া রনেল ঐ অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে মিডিয়ার কাছে বলেন যে, ‘বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন সংগঠন হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ।’ এর মহাসচিব হচ্ছেন এম ফজলুর রহমান। কয়েক বছর আগে জয়ের নির্দেশে এ সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। তবে আইনগতভাবে এ সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন এখনও সক্রিয় রয়েছে। এমনি অবস্থায় রাতারাতি গজিয়ে উঠা বঙ্গবন্ধুর নামের কথিত এই বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণের সংবাদে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের সকলেই ক্ষুব্ধ। কথিত এই সংগঠনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা কখনোই আওয়ামী পরিবারের কোন কর্মসূচিতে ছিলেন না অথবা সাংগঠনিকভাবেও সম্পর্কিত নন।’
BB Award-2নূরনবী কমান্ডার অভিযোগ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি আর ধান্দাবাজি চলতে দেয়া যায় না। আমরা এটি বরদাশত করবো না।’ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য জসীমউদ্দিন খান মিঠু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’র নামে যারা ব্যবসা করতে চায় তাদেরকে প্রতিহত করার দায়িত্ব আওয়ামী পরিবারের সকলের।’ মিঠু উল্লেখ করেন, ‘৫০ জনের বসারও জায়গা নেই এমন একটি স্থানে এই অ্যাওয়ার্ড বিতরণের যে তামাশা করা হচ্ছে, তা সত্যি দু:খজনক। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধু লিডারশিপ এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। প্রবেশ পথে সিকিউরিটি গার্ড রেখে অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।’ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের জন্যে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিউইয়র্কে এসেও কেন অনুষ্ঠান বর্জন করলেন-এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে বঙ্গবন্ধু লিডারশী]িপ এওয়ার্ড নেয়ার লোভ কার না থাকে। এছাড়া, এওয়ার্ডপ্রাপ্তদের তালিকায় আরো যাদের নাম দেখেছি প্রায় সকলেই আওয়ামী পরিবারের সদস্য। এজন্যেই এসেছিলাম। কিন্তু নিউইয়র্কে এসে জানলাম যে, আয়োজকরা বিশেষ মতলবে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।’
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি ঐ অনুষ্ঠানে যাইনি। কারণ, আয়োজকদের ব্যাপারে আমার স্বচ্ছ কোন ধারণা নেই। এছাড়া, সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’র উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছি। তবে অন্য কেউ যদি ঐ অনুষ্ঠানে গিয়ে থাকেন সেটি আমার দায়িত্ব নয়। আমি নীতিগত কারণে ঐ অনুষ্ঠানে না যাবার সিদ্ধান্ত নেই।’ ‘এছাড়া, কোন ক্রাইটেরিয়াতে এতগুলো লোককে এওয়ার্ড প্রদান করা হবে-এ নিয়েও আমার মধ্যে প্রশ্ন ছিল’-বলেন ড. সিদ্দিক।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন ১৩ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরেই ফিরেছেন পেরুর রাজধানী লিমা থেকে। জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। ড. মোমেনকে এ এওয়ার্ড প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি এর কিছুই জানি না। আমাকে কেউ কিছু জানাননি বা আমন্ত্রণও করেননি।’
কথিত ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র সভাপতি পীরজাদা নুরল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সালামের তত্বাবধানে সন্ধ্যা ৭টায় ফুডকোর্ট পার্টি হলে শুরু হয় ঐ এওয়ার্ড বিতরণের অনুষ্ঠান। ডজনখানেক শিল্পী এবং ৩/৪ জন সাংবাদিক বাদে অনুষ্ঠানে ছিলেন ১৫ জন সুধী। যাদের অধিকাংশই শিশু শিল্পীদের অভিভাবক। নীচে তখন চলছিল হৈ চৈ। এ সময় অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ৪ জনের মধ্যে একজন প্রতিবাদ থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে সিঁড়িতে উঠার পথে একজন সিকিউরিটি মোতায়েন করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি নুরল আবেদীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এ বছরের ৭ জুলাই আমরা নিউইয়র্ক রাজ্য প্রশাসনে রেজিষ্ট্রেশন করেছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী বলেই বিজয়ের মাসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। অন্য কোন রাজ্যে একই নামে কোন সংগঠন থাকলেও নিউইয়র্কে আমাদেরটিই রয়েছে।’ ‘চাঁদাবাজি এবং ধান্দাবাজি’র অভিযোগ অস্বীকার করেন নূরল আবেদীন।
অপরদিকে, ফ্লোরিডা থেকে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এম, ফজলুর রহমান এনআরবি নিউজের মাধ্যমে কথিত অ্যাওয়ার্ড বিতরণের অনুষ্ঠান প্রায় সকলেই বর্জন করায় সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। – এনআরবি নিউজ।