বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দল আর জনসেবাই আমার রাজনীতির লক্ষ্য
- প্রকাশের সময় : ০৫:৪৯:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
- / ২৪৭২ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বিশিষ্ট রাজনীতিক, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেছেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন আমাদের বাঙালী জাতিসত্তার শেকড় আর মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার, গৌরব। যে গৌরবের বীর সেনানী, ‘জাতির জনক’ স্বাধীনতার স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রিয় দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর জনসেবাই আমার রাজনীতির মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কণ্যা, গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে দেশে-প্রবাসে ছড়িয়ে দিতে আমি বদ্ধ পরিকর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, বিএনপি-জামায়াতের চরম বিরোধীতার পরও দেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে, জাতিসংঘসহ বহি:বিশ্বের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফারুক আহমেদ বলেন, আমাদের বড় পরিচয় আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কিন্তু রাজনীতির মূল লক্ষ্য যেখানে জনসেবা, সেখানে জনসেবার জন্য প্রয়োজন ক্ষমতা। আর ক্ষতার জন্য জনগণের রায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই জনসেবক হওয়ার যোগ্য। সেই লক্ষ্যে আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রবাস থেকে দেশে ফিরে বিগত সময়ে উপজেলা ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আলোচিত হয়েছি, জনগণের ভালোবাসা পেয়েছি, রাজনীতি করার উৎসাহ পেয়েছি। যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আমার আগামী দিনের রাজনীতির পাথেয় হয়ে থাকবে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব আমেরিকা (ইউএনএ)-কে ১৬ সেপ্টেম্বর দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ উপরোক্ত কথা বলেন। ইউএনএ’র সাথে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান, দেশে-প্রবাসে তার রাজনীতি, বিগত সময়ে নিজ এলাকায় উপজেলা ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন, ভবিষ্যত কর্মসূচী প্রভৃতি বিষয়ে কথা বলেন।
বাংলাদেশ ও প্রবাস জীবনের রাজনীতি সম্পর্কে ফারুক আহমেদ বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি। সেই রাজনীতির ধারাবাহিকতায় প্রবাসেও বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সাথে ওতোপ্রতাভাবে জড়িয়ে আছি। যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে আমার শ্রম, মেধা আর যোগ্যতায় দল আমাকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরাতন বড় রাজনৈতিক দল। বলতে দ্বিধা নেই, সেকারণেই দেশের মতো এই প্রবাসেও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। নেতৃত্বের এই প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক। সেই প্রতিযোগিতার রেশ ধরেই কেউ কেউ কারো প্রতি এমন আচরণ করেন যা প্রতিহিংসায় পরিণত হয়। কিন্তু আমি প্রতিহিংসার রাজনীতি না করলেও কারণে-অকারণে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পড়ি। যা আমাকে ব্যথিত করে। তিনি বলেন, দেশ ও প্রবাসে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আমার ঈর্ষনীয় সাফল্যের কারণে কেউ কেউ বিরোধীতা করছেন, অপ্রপ্রচার চালাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান এবং তাঁর নিউইয়র্ক সফর সম্পর্কে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এবারের নিউইয়র্ক সফর ঐতিহাসিক সফর হবে। কেননা, অতীতের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কারের মতো বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবারো তিনি জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পদক ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পাচ্ছেন। সবমিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ ও নিউইয়র্ক সফরের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘসহ বহি:বিশ্বের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি পাবে, উজ্জল হবে। প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সর্বজনীন সম্বর্ধনা জানানো হবে। এজন্য দলের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। আমি প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফরের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ফারুক আহমেদ বলেন, বিগত ২০০৯ সালের উপজেলা ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর সংসদ সদস্য নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে আমি দলকে চ্যালেঞ্জ নয়, বরং দলকে সহযোগিতাই করেছি। কেননা, ঐ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষনা দিয়েছিলো। আমি আমার এলাকার জনগণের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ঐসময় দলীয় প্রার্থী ইমরান আহমদের সাথে একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। এই নির্বাচনের ফলে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশ ইতিমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর পরিকল্পনাও এগিয়ে চলছে। কিন্তু দেশ ও প্রবাসে আমার দলের কোন কোন রাজনৈতিক সহকর্মী সেই নির্বাচন নিয়ে অহেতুক নানা প্রশ্ন তুলে আমার ইমেজ নষ্ট করার অপতৎপরায় লিপ্ত রয়েছেন।
প্রসঙ্গত ফারুক আহমেদ বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের প্রতিবন্ধকতার কারণে ঐ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকার পরও নির্বাচনে আমি ২৪,২৭৮ ভোট পেয়েছি। আর নির্বাচন বিজয়ী ঘোষিত ইমরান আহমেদ পান ৬৩,৩২৩ ভোট। এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলো ৩,২৭,২০২জন।
ফারুক আহমেদ বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রবাস থেকে ২০/২৫ জনের মতো আওয়ামী লীগ নেতা দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউই মনোনয়ন পাননি। পরবর্তীতে এলাকাবাসীদের দাবীর প্রেক্ষিতে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেই। কিন্তু ঐ নির্বাচনে সুকৌশলে আমাকে পরাজিত করা হয়। একই পরিণতির শিকার হই ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনেও।
‘দৈনিক সিলেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের উদ্বৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নুরুন নবী কর্তৃক প্রচারিত অভিযোগ সম্পর্কে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ন মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, ভুয়া ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত’। আমার নির্বাচন পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য বিকৃত আকারে এবং অন্য একজন প্রার্থীর বক্তব্য একইসাথে আমার বক্তব্য হিসেবে প্রকাশিত হওয়ায় জনমনে ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। যা নিয়ে কমান্ডার নবী ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা’ করছেন। নির্বাচন পরবর্তী ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে আমি দল বা সরকার সম্পর্কে কোন অভিযোগ করিনি। শুধুমাত্র আমার নির্বাচনী এলাকায় সৃষ্ট কিছু অনাকাংখিত অনিয়মের অভিযোগ করেছি মাত্র।
উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও পরাজয়ের কারণ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে ফারুক আহমেদ বলেন, ২০০৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নির্দলীয় নির্বাচন হিসেবে আমিসহ আওয়ামী লীগের আরো তিনজন ঐ নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে বিএনপির এককপ্রার্থী থাকায় এবং আমাকে হারাতে আমার দলের তিনজন প্রার্থী দাঁড়ালেও ভোটের হিসেবে দেখা যায় আমি বিজয়ী হতাম। তিনি বলেন এই নির্বাচনে এককভাবে আমি ভোট পেয়েছি আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীর সমান ভোট। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী প্রার্থীর কাছে আমি মাত্র দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হই। সেই নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল হাকিম চৌধুরী পান সর্বমোট ২৮,৪৮৬ ভোট। আর আমি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের মধ্যেও পাই ২৬,৫০৬ ভোট। যা ছিলো আমার অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তার প্রামাণ। একই নির্বাচনে গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহীম (দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত) ৪,৮৯০ ভোট এবং একই দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরীয়া হেলালের প্রাপ্ত ভোট ছিলো ১৩,৩৯০ এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য লুৎফুর রহমান লেবু পান ১৪,১৫২ ভোট।
নির্বাচনের শেষ সময়ে আমাকে হারানোর জন্য বিএনপির প্রার্থীর পক্ষেও আওয়ামী লীগের অনেকে ভোট দিয়েছেন। অন্যথায় আমার বিজয় ছিলো নিশ্চিত। আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারতো না, ভোটের হিসাব তাই প্রামাণ করে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ফারুক আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রায় সকল কর্মসূচীতেই সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি যা ছিলো দল ও নেত্রীর প্রতি আমার আনুগত্যের বহি:প্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুদিনে-দূর্দিনে আমার বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত। সেই হিসেবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমি দলীয় মনোনয়ন পেলে আমার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের বিজয়কে কেউ আটকাতে পারবে না বলেই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যা আমি বিগত উপজেলা ও জাতীয় নির্বাচনে (সংসদ সদস্য) প্রমাণ করেছি। আমার নির্বাচনী এলাকার মাটি আর মানুষের হৃদয়ের সাথে আমার যে নিবিড় সম্পর্ক সেটা জরিপ করলেই দেখা যাবে আমি যোগ্য প্রার্থী কিনা। আমি প্রবাসে থাকলেও আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আমি তাদের সুখ-দু:খের সাথী। বিভিন্নভাবে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে গোয়াইঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানীগঞ্জবাসীদের সাথে। আমি আগামী দিনে দলের মনোনয়ন নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করতে চাই। আর সেই সুযোগ পেলে আমার বিশ্বাস মানুষ উপকৃত হবে, দল যোগ্য নেতৃত্ব পাবে আর আমিও মানুষের আর্শীবাদে নিজেকে ধন্য করার সুযোগ পাবো। #