নিউইয়র্ক ০৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে আরেক বাংলাদেশী খুন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৩১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • / ৬৬৭ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: ইমামসহ দুই বাংলাদেশী হত্যার পর এবার দূর্বৃত্তের ছরিকাঘাতে কুন হলেন নামা খানম নামের অপর এক বাংলাদেশী। বাংলাদেশী অধ্যুষিত নিউইয়র্ক কুইন্স বরোর জ্যামাইকা এলাকায় ৩১ আগষ্ট বুধবার রাতে তিনি হত্যার শিকার হন। তিনি জ্যামাইকা এলাকায়ই বসবাস করছিলেন। সাবেক স্কুল শিক্ষিকা নামজা খানমের বাড়ী শরিয়তপুর জেলায়। তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নামে এসেছে। শোকের মাতম বইছে তার গ্রামের বাড়ীতে। এদিকে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ নাজমা খানমের খুনীদের গ্রেফতারের জন্য সকল মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন। পুলিশ বিভাগ ঘাতদের ধরে দিতে আড়াই হাজার ডলার পুরষ্কারও ঘোষণা করেছে। এজন্য নাজমা খানমের ছবি সম্বলিত পোষ্টার ছাড়ানা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
এনআরবি নিউজ’র খবরে নিউইয়র্কে দূরর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল আরেক বাংলাদেশীর। ৬০ বছর বয়েসী বাংলাদেশী নাজমা খানমকে উপর্যূপরি ছুরিকাঘাতে খুনের এ নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে ৩১ আগষ্ট বুধবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ৯টা (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৭টা)য় নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে জ্যামাইকা হিল্্স এলাকায়। নিজ বাসার দু’ব¬কের মধ্যে ১৬০-১২ নরম্যাল রোডে নাজমা খানমকে হত্যা করা হয়। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় নাজমা খানম আক্রান্ত হন। শতগজ পেছনেই হাঁটছিলেন তার স্বামী।
পুুলিশ জানায়, ‘আমাকে মেরে ফেললো, বাঁচাও-বাঁচাও’ নাজমা খানমের এমন আর্ত চিৎকারে স্বামী দৌড়ে কাছে আসার আগেই দুর্বৃত্ত কেটে পড়ে। তার স্বামী ভেবেছিলেন যে, তার স্ত্রী হয়তো ছিনতাইকারির কবলে পড়েছেন। কিন্তু কাছে এসে দেখতে পান যে, বুক থেকে রক্ত গড়াচ্ছে। সাথে সাথে ফোন করেন পুলিশকে। দ্রুত এ্যাম্বুলেন্সসহ পুলিশ এসে নাজমা খানকে নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন।
নিউইয়র্ক মুসলিম পুলিশ অফিসার এসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ কবিরের খালা নাজমা খানমের ঘাতকের সন্ধানে পুলিশ মাঠে নেমেছে বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে।
নাজমা খানম ৩ সন্তানের মা। তার এক সন্তান নিউইয়র্কে এবং অপর দু’জন থাকেন বাংলাদেশে। গত ১৩ আগস্ট এই এলাকার কাছাকাছি দূরত্বে ওজনপার্কে গুলি করে হত্যা করা হয় বাংলাদেশী ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি (৫৫) এবং তার সাথী তারা মিয়া (৬৪)কে। ঐ হত্যাকান্ডের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে অস্কার মরেল (৩৫) নামক এক হিসপ্যানিককে।
নাজমা খানমের আরেক ভাগ্নে মোহাম্মদ রহমান দাবি করেন, ‘তার খালাকেও ধর্মীয় বিদ্বেষমূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটিও হেইট ক্রাইম।’ ‘কারণ তিনি মুসলিম পোশাকে হাঁটছিলেন। এছাড়া, তার কাছে থেকে কিছুই নেয়নি দুর্বৃত্তটি।’ তদন্ত কর্মকর্তারা অবশ্য তা স্বীকার করেননি। তারা বলেছেন, ‘এক্ষুণি হেইট ক্রাইম’ হিসেবে অভিহিত করার মত কিছুই উদঘাটিত হয়নি।’ উল্লে¬খ্য, এখন পর্যন্ত ইমামসহ দুই বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনাকেও ‘হেইট ক্রাইম’ হিসেবে উলে¬খ করা হয়নি। এ নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীসহ মুসলিম আমেরিকানরা ক্ষুব্ধ। তারা প্রবাসীদের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।
অকুস্থলে এবং তার আশপাশের সিসিটিভিসহ সবকিছু পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে জানা গেছে।
নাজমা খানমের নৃশংস হত্যাকান্ডের সংবাদ মূলধারার সবকটি টিভি এবং জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে। ইমাম হত্যাকান্ডের ১৭ দিনের ব্যবধানে অকারণে আরেক বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনায় প্রবাসীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কুইন্সের জ্যামাইকা এবং ওজনপার্ক এলাকায় লক্ষাধিক বাংলাদেশী বাস করছেন। সকলেই বাংলাদেশী পোশাকে চলাফেরা করেন। জাতিগতভাবে বাঙালীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও নিজেদের অবস্থানের সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। ‘এতদসত্বেও চোরাগুপ্তা হামলার শিকার হওয়ায় কেউই এখন নিরাপদ বোধ করছেন না’-মন্তব্য কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আকবর হোসেনের। এই এলাকায় ১৫ বছর যাবত বসবাস করছেন আকবর। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম, এটি আমাদের নিরাপদ আবাস। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনায় একেবারেই অপরিচিত লাগছে এলাকাটি।’
নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, ঘাতকের গ্রেফতারে সহায়তার জন্যে। কেউ কিছু জানলে তা যেন ১-৮০০-৫৭৭-৮৪৭৭ নম্বরে ফোন করে জানান, সে আহবানও জানানো হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে আরেক বাংলাদেশী খুন

প্রকাশের সময় : ০৭:৩১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিউইয়র্ক: ইমামসহ দুই বাংলাদেশী হত্যার পর এবার দূর্বৃত্তের ছরিকাঘাতে কুন হলেন নামা খানম নামের অপর এক বাংলাদেশী। বাংলাদেশী অধ্যুষিত নিউইয়র্ক কুইন্স বরোর জ্যামাইকা এলাকায় ৩১ আগষ্ট বুধবার রাতে তিনি হত্যার শিকার হন। তিনি জ্যামাইকা এলাকায়ই বসবাস করছিলেন। সাবেক স্কুল শিক্ষিকা নামজা খানমের বাড়ী শরিয়তপুর জেলায়। তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নামে এসেছে। শোকের মাতম বইছে তার গ্রামের বাড়ীতে। এদিকে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ নাজমা খানমের খুনীদের গ্রেফতারের জন্য সকল মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন। পুলিশ বিভাগ ঘাতদের ধরে দিতে আড়াই হাজার ডলার পুরষ্কারও ঘোষণা করেছে। এজন্য নাজমা খানমের ছবি সম্বলিত পোষ্টার ছাড়ানা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
এনআরবি নিউজ’র খবরে নিউইয়র্কে দূরর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল আরেক বাংলাদেশীর। ৬০ বছর বয়েসী বাংলাদেশী নাজমা খানমকে উপর্যূপরি ছুরিকাঘাতে খুনের এ নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে ৩১ আগষ্ট বুধবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ৯টা (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৭টা)য় নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে জ্যামাইকা হিল্্স এলাকায়। নিজ বাসার দু’ব¬কের মধ্যে ১৬০-১২ নরম্যাল রোডে নাজমা খানমকে হত্যা করা হয়। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় নাজমা খানম আক্রান্ত হন। শতগজ পেছনেই হাঁটছিলেন তার স্বামী।
পুুলিশ জানায়, ‘আমাকে মেরে ফেললো, বাঁচাও-বাঁচাও’ নাজমা খানমের এমন আর্ত চিৎকারে স্বামী দৌড়ে কাছে আসার আগেই দুর্বৃত্ত কেটে পড়ে। তার স্বামী ভেবেছিলেন যে, তার স্ত্রী হয়তো ছিনতাইকারির কবলে পড়েছেন। কিন্তু কাছে এসে দেখতে পান যে, বুক থেকে রক্ত গড়াচ্ছে। সাথে সাথে ফোন করেন পুলিশকে। দ্রুত এ্যাম্বুলেন্সসহ পুলিশ এসে নাজমা খানকে নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন।
নিউইয়র্ক মুসলিম পুলিশ অফিসার এসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ কবিরের খালা নাজমা খানমের ঘাতকের সন্ধানে পুলিশ মাঠে নেমেছে বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে।
নাজমা খানম ৩ সন্তানের মা। তার এক সন্তান নিউইয়র্কে এবং অপর দু’জন থাকেন বাংলাদেশে। গত ১৩ আগস্ট এই এলাকার কাছাকাছি দূরত্বে ওজনপার্কে গুলি করে হত্যা করা হয় বাংলাদেশী ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি (৫৫) এবং তার সাথী তারা মিয়া (৬৪)কে। ঐ হত্যাকান্ডের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে অস্কার মরেল (৩৫) নামক এক হিসপ্যানিককে।
নাজমা খানমের আরেক ভাগ্নে মোহাম্মদ রহমান দাবি করেন, ‘তার খালাকেও ধর্মীয় বিদ্বেষমূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটিও হেইট ক্রাইম।’ ‘কারণ তিনি মুসলিম পোশাকে হাঁটছিলেন। এছাড়া, তার কাছে থেকে কিছুই নেয়নি দুর্বৃত্তটি।’ তদন্ত কর্মকর্তারা অবশ্য তা স্বীকার করেননি। তারা বলেছেন, ‘এক্ষুণি হেইট ক্রাইম’ হিসেবে অভিহিত করার মত কিছুই উদঘাটিত হয়নি।’ উল্লে¬খ্য, এখন পর্যন্ত ইমামসহ দুই বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনাকেও ‘হেইট ক্রাইম’ হিসেবে উলে¬খ করা হয়নি। এ নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীসহ মুসলিম আমেরিকানরা ক্ষুব্ধ। তারা প্রবাসীদের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।
অকুস্থলে এবং তার আশপাশের সিসিটিভিসহ সবকিছু পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে জানা গেছে।
নাজমা খানমের নৃশংস হত্যাকান্ডের সংবাদ মূলধারার সবকটি টিভি এবং জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে। ইমাম হত্যাকান্ডের ১৭ দিনের ব্যবধানে অকারণে আরেক বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনায় প্রবাসীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কুইন্সের জ্যামাইকা এবং ওজনপার্ক এলাকায় লক্ষাধিক বাংলাদেশী বাস করছেন। সকলেই বাংলাদেশী পোশাকে চলাফেরা করেন। জাতিগতভাবে বাঙালীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও নিজেদের অবস্থানের সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। ‘এতদসত্বেও চোরাগুপ্তা হামলার শিকার হওয়ায় কেউই এখন নিরাপদ বোধ করছেন না’-মন্তব্য কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আকবর হোসেনের। এই এলাকায় ১৫ বছর যাবত বসবাস করছেন আকবর। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম, এটি আমাদের নিরাপদ আবাস। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনায় একেবারেই অপরিচিত লাগছে এলাকাটি।’
নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, ঘাতকের গ্রেফতারে সহায়তার জন্যে। কেউ কিছু জানলে তা যেন ১-৮০০-৫৭৭-৮৪৭৭ নম্বরে ফোন করে জানান, সে আহবানও জানানো হয়েছে।