নিউইয়র্কের সবার একই কথা : ‘এ ধরনের তুষার ঝড় আগে কখনও দেখিনি’
- প্রকাশের সময় : ০২:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৬
- / ১০৫১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: ‘আমি এক যুগ ধরে নিউইয়র্কে বসবাস করি, কিন্তু কোন বছর এ ধরনের তুষার ঝড় দেখিনি। আমেরিকা তুষারের দেশ হলেও শনিবারের তুষার ঝড় দেখে আমি রীতিমতো বিস্মিত। ঘন্টায় তিন ইঞ্চি করে তুষার রাস্তায় জমা হওয়ার দৃশ্য সত্যিই অবাক করেছে। শুধু আমি নয় নিশ্চই আমার মত অনেকেই একই কথা বলবেন’। কথাগুলো বলছিলেন লং আইল্যান্ড সিটির স্টাইনওয়েতে বসবাসকারী মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৩ সালে নিউইয়র্কে অভিবাসীর খাতায় নাম লেখায়। সে বছর আমি এসেছিলাম মে মাসের শেষ দিকে। খুবই আগ্রহ ছিল তুষার দেখবো, বরফ দেখবো। ওই বছর অক্টোবরের শেষ দিকে তুষারের দেখা মেলে। তুষারপাতকে ঘিরে তখন কি যে প্রস্তুতি ছিল। বিশেষ করে কি ধরনের পোশাক পরিধান করতে হবে, স্নো শো কি রকম হবে সব চিন্তা ছিল। এখনও আমার মনে আছে আমি অন্তত সাড়ে তিনশ ডলার খরচ করে স্নো জ্যাকেট এবং স্নো জুতা কিনেছিলাম। সেই থেকে প্রতিবছর স্নো মোকাবেলা করছি। প্রায় প্রতি বছরই অক্টোবর বা নভেম্বর মাসের স্নোর দেখা মিলেছে। গত বছরও অবশ্যই ব্যতিক্রম হয়েছে। আগে আসা স্নো বেশ ভোগান্তিতে ফেলেছিলো সবাইকে। কিন্তু গেল শনিবারের (২৩ জানুয়ারী) তুষার ঝড়ের তুলনায় গত বছরের স্নোকে আমি কিছুই বলতে চাইনা।
মারুফ হোসেন বলেন, শনিবারের তুষার ঝড়ের যেটি উল্লেখ করার বিষয় ছিল, সেটি হল বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেগে। যা অন্য বছরের ছেয়ে ভিন্ন বলা চলে। এ জন্য জরুরী কাজ ছাড়া কেউ বের হননি। অন্য বছর স্নো পরা অব্যাহত থাকলেও লোকজন কাজে বা জরুরী প্রয়োজনে স্বাচ্ছন্দ্যে বের হতে পেরেছে। তবে শনিবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাতাসের সঙ্গে ঘন্টায় তিন ইঞ্চির তুষারপাত রীতিমতো নগরবাসীকে কপোকাত করে ফেলেছে।
মারুফ হোসেনের মতে জ্যাকসন হাইটসের একটি গ্রোসারী দোকানে কর্মরত আলা উদ্দিন বলেন, আমি তিন বছর ধরে নিউইয়র্কে বসবার করি। দুই বছর যে স্নো দেখেছি তার মতো হবে এ বছর ভেবেছিলাম। কিন্তু দিনভর ঘন্টায় তিন ইঞ্চি করে তুষার জমা পড়ার বিষয়টি ছিল উল্লেখ করার মতো। এ কারণে দ্রুততার সঙ্গে ঘোষণা করতে হয়েছে জরুরী অবস্থা, বন্ধ করে দিতে হয়েছে সাবওয়ের অনেক ট্রেন।
নিউইয়র্কে বসবাস করেন দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটি ও রাজনৈতিক নেতা আবু তালেব চৌধুরী চান্দু। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতে রীতিমতো অবাক। এভাবে স্নো পড়বে বা তা ভাবতেই পারিনি। তবে বলার বিষয় হলো পুরো দিনই লোকজনকে ঘরে বন্ধি থাকতে হয়েছে।
এস্টোরিরার ৩৪ স্টিট্রের বাসিন্দা কাজী স্বপন বলেন, নিউইয়র্কের আবহাওয়া পরিবর্তনশীল সেটা সবাই বলে। কিন্তু এভাবে পরিবর্তনশীল হবে তা ভাবার ছিল না। আমি বলবো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের কারণে প্রকৃিত বদলাচ্ছে। তার প্রভাব নিউইয়কবাসী শনিবার বুঝতে পেরেছে।
শতাব্দির ভয়াবহ তুষারঝড় শুরু হয় শুক্রবার রাত থেকে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিউইয়র্ক’সহ ইস্টকোস্ট বা পূর্বের রাজ্যগুলিতে ২ ধরনের এলার্ট দেয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘ব্লিজার্ড ওয়াচে’র পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত ভারী সতর্কতা ‘উইন্টার স্ট্রোম ওয়াচ’ জারি করায় সংশ্লিষ্ট সিটি ও রাজ্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোরে শোরে করেছেন। অন্তত ১৯ জনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে অবশেষে থেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের তীব্রতম তুষারঝড় রোববার ভোররাতের কিছু আগে। তবে ততক্ষণে তুষারপাতকবলিত রাজ্যগুলোর রাস্তাঘাট, খোলা জায়গা সব গড়ে ৩০ ইঞ্চি সাদা বরফের নিচে ঢাকা পড়ে। অচল হয়ে যায় অন্তত ১২টি রাজ্যের স্বাভাবিক কার্যক্রম। ১১টি রাজ্যে পৃথকভাবে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। দক্ষিণে আরকানসাস থেকে উত্তরে ম্যাসচুসেটস পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষ তুষারঝড়ের সতর্কবার্তার কারণে নিজ নিজ ঘরে আটকা পড়েছিলেন। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)