নিউইয়র্ক: বিপুল উৎসাহে যথাযোগ্য মর্যাদা আর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্প্রতিবার পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশে হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর ত্যাগের মহিমায় চির ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা। রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ, মৃদু-মন্দ বাতাস আর হালকা ঠান্ডায় চমৎকার আবহাওয়ায় নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকার একাধিক মসজিদ আর কমিউনিটি সেন্টারে বৃহস্প্রতিবার পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করা হয়। ঈদের নামাজে শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সর্বস্তরের হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ নর-নারী অংশ নেন। ঈদের জামাত শেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মুনাজাতে সমগ্র মুসলিম উম্মাসহ দেশ-জাতির মঙ্গল ও সমৃদ্ধি এবং দেশে দেশে নিপীড়িত-নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষায় মহান আল্লাহতায়ালার রহমত ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করা হয়। অন্যান্য বছরের মতো এবছরও জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর আয়োজনে উত্তর আমেরিকায় সর্ববৃহৎ ঈদুল আযহা জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত নিউয়র্কের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পক্ষ থেকে স্থানীয় জ্যামাইকা হাইস্কুল খেলার মাঠে খোলা আকাশের নীচে ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করে। এই জামাতে শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সর্বস্তরের ১০/১২ হাজার মুসলিম নর-নারী ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন। ঈদের জামাতের জন্য জেএমসি সংলগ্ন ১৬৮ স্ট্রীট (গথিক রোড ও ৮৪ এভিনিউ) বন্ধ করে দেয়া হয়। সিটি পুলিশ ১৬৮ স্ট্রীটের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখে। এবারই প্রথমবারের মতো নিউইয়র্ক সিটির সকল পাবলিক স্কুলে সিটি প্রশাসন ঘোষিত ঈদের ছুটি পালিত হয়। ফলে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয় নিউইয়র্ক সিটির মুসলিম পরিবারগুলোতে। উল্লেখ্য, মুসলিম কমিউনিটির দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে সিটি প্রশাসন গত ঈদুল ফিতর থেকে প্রতিবছর দুই ঈদে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) পাবলিক স্কুলসমূহে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিত ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার আয়োজিত জামাতে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন। জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জ্যামাইকা স্কুল মাঠে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজ শেষে অর্থমন্ত্রী মুহিত ও রাষ্ট্রদূত মোমেন মুসল্লীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী মুহিত ও রাষ্ট্রদূত মোমেন সহোদর।
অপরদিকে ওয়াশিংটন ডিসি ও ফ্লোরিডা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিগত তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ সপরিবারে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন ওয়াশিংটন ডিসি ইসলামিক সেন্টারে। অপরদিকে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ সপরিবারে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন ফ্লোরিডার গার্ডেন সিটির ঈদ জামাতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন নিউইয়র্কে।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মোজাহিদুল ইসলাম। ঈদের জামাতের আগে সেন্টারের পক্ষ থেকে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেএমসি’র ট্রাষ্টিবোর্ডেন সভাপতি ডা. এম এম রহমান, জেএমসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. ওয়াহিদুর রহমান, জেএমসি পরিচালিত আল মামুর স্কুল কমিটির সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া প্রমুখ। এই পর্ব পরিচালনা করেন জেএমসি পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী আকতার হোসেন।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটানাস্থ মদিনা মসজিদ, জ্যামাইকাস্থ মসজিদ মিশন সেন্টার (হাজী ক্যাম্প মসজিদ), দারুস সালাম মসজিদ, আসসাফা ইসলামিক সেন্টার, জ্যাকসন হাইটসের মোহাম্মদী সেন্টার ও নিউইয়র্ক ঈদ গাঁ কমিটি, ইস্ট জ্যাকসন হাইটস্থ দারুল ফুরকান মসজিদ, ইস্ট এলমহার্সের বায়তুল হামদ জামে মসজিদ, করনার আল ফালাহ মসজিদ, এলমহার্সের আবু হুরায়রা মসজিদ, এস্টোরিয়ার গাউছিয়া জামে মসজিদ, শাহজালাল জামে মসজিদ, ব্রঙ্কসের পার্কচেষ্টার জামে মসজিদ, বাংলা বাজার জামে মসজিদ, ব্রুকলীনের বায়তুল জামে মসজিদ। এসব স্থানের কোথাও কোথাও একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে কানাডা ও ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী, কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জেনিয়া, ওয়াহিও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোরিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে ২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্প্রতিবার যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিটি ঈদের জামাত শেষে নবীন-প্রবীন, ছোট-বড়, ধনী-গরীব সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করতে দেখা যায়। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে সর্বত্রই নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেই সাথে সিটি প্রশাসনেরও বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষ্য করা যায়। ঈদের নামাজ আদায়ের স্থানগুলোর আশপাশের রাস্তায় ফ্রি গাড়ী পার্কিং এর ব্যবস্থা থাকায় দূর দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা সপরিবারে ঈদের নামাজে শরীক হন। রং বেরং এর বাহারী পোশাক গায়ে নামাজিদের একত্রে ঈদের নামাজ আদায় ভীন দেশীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। সেই সাথে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদের দিনটি উইক ডে (বৃহস্প্রতিবার) থাকায় অনেককেই ঈদের নামাজ আদায় করে কর্মস্থলে যোগ দিতে দেখা যায়। আবার যারা কর্মস্থল থেকে ছুটি পেয়েছেন বা যাদের ছুটি ছিলো তারা স্বপরিবারে আবার অনেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘনিষ্টজনদের বাসা-বাড়ীতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়া প্রবাসীরা ফোনে বাংলাদেশে ফোন করে স্বজনদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শুভেচ্ছা বিনিময় হয় ফেসবুক আর টেক্স ম্যাসেজের মাধ্যমে।
অপরদিকে গ্রোসারীর মাধ্যমে অনেকেই কোরবানীর অর্ডার দেয়ায় ঈদের দিন কোরবানীর মাংস পেতে হিমশিম খেতে হয়। অধিকাংশ কোরবানীদাতাদের মধ্যে যারা খাসী কোরবানী দিয়েছেন তাদের অনেকেই সেই মাংস পেয়েছেন। আর যারা গরু কোরবানী দিয়েছেন তারা গরুর মাংস পেয়েছেন ঈদেরর পর দিন অথবা তারও পরদিন। কোরবানীর মাংস হাতে পাওয়ার পর সেই মাংস আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় বাসায় গিয়ে বিতরণ করা হয়।