টক অব দ্য কমিউনিটি ‘একাত্তরের কন্ঠযোদ্ধা’ সঙ্গীতানুষ্ঠান
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪০:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫
- / ৮৭৭ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: আমাদের মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ সময়কালের তথা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চার কন্ঠশিল্পীর বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘একাত্তরের কন্ঠযোদ্ধা’। তাও আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তার এই আয়োজন প্রশংসিত হলো পুরো কমিউনিটিতে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধা যথাক্রমে রথীন্দ্রনাথ রায়, শহীদ হাসান, কাদেরী কিবরীয়া আর মঞ্জুর আহমেদ যারা এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তাদের গান নিয়েই আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। ‘একাত্তরের কন্ঠযোদ্ধা’ সঙ্গীতানুষ্ঠান শেষে কমিউনিটিতে প্রশ্ন কিভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে এমন সুন্দর ও ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হলো। অনুষ্ঠানে এতো লোকের উপস্থিতি তথা সমাবেশ ঘটলো কিভাবে। এর নেপথ্যেই বা কি ছিলো। ব্যক্তি উদ্যোগে এমন অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব? এমন আরো অনেক প্রশ্ন। ছোট-খাটো দু’চারটি ভুল-ত্রুটি বাদ দিলে অনুষ্ঠানটি পুরোটাই সফল ও স্বার্থক হয়েছে বলে প্রবাসীদের মন্তব্য করতে শুনা গেছে। যা এখন ‘টক অব দ্য কমিউনিটি’।
কে এই মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন? লম্বা-পাতলা গড়নের হাস্যোজ্জল, স্বল্পভাষী, প্রচার বিমুখ একজন মানুষ। যতদূর জানা যায়- নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় স্ত্রী-কণ্যা পরিবার-পরিজন নিয়ে তার বসবাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী একজন দেশপ্রেমিক মানুষ তিনি। পেশায় রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর। প্রিয় বাংলাদেশকে ভালবেসে দীর্ঘ দিনেও গ্রহণ করেননি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট। ইউএস গ্রীনকার্ড নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট। জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, ব্রঙ্কসের অপেক্ষাকৃত বড় আর ভালো অনুষ্ঠানে তার পৃষ্ঠপোষকতার জুড়ি নেই। শুধু প্রবাসেই নয়, দেশেও সাধ্যমত সেবাকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ তার ‘একাত্তরের কন্ঠযোদ্ধা’
‘একাত্তরের কন্ঠযোদ্ধা’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আয়োজক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান পেলেও কন্ঠযোদ্ধারা যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না। তাঁদের সম্মানিত করতেই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন। তিনি কন্ঠযোদ্ধাদের দেশের জাতীয় বীর আখ্যায়িত করে বলেন, তাদের সম্মান জানানো ছাড়া আমাদের দেবার আর কিছুই নেই। তাদের সম্মান জানানো, স্মরণ করা, স্মরণ রাখা আমাদের কর্তব্য। তিনি বলেন, প্রবাস থেকেও দেশের জন্য আমাদের অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। অনুষ্ঠানটি সফল করায় তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য পর্ব ছিলো চার কন্ঠযোদ্ধাদের নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক আলাপচারিতাও ছিলো অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষন। অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে শিল্পী সুবীর নন্দীসহ একাত্তরের কন্ঠযোদ্ধাদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সম্মিলিতকন্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
অনুষ্ঠানে কন্ঠযোদ্ধাদের সেই দিনের গানে শত শত দর্শক-শ্রোতা ফিরে যান ৭১-এর বাংলাদেশে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল ছাড়াও দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আর কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সহ সকল শ্রেণীর পেশাজীবী, কবি-সাহিত্যক, সম্পাদক-সাংবাদিক, শিল্পী নর-নারীর ঢল নামে অনুষ্ঠানটিতে। অনেকেই আসেন সপরিবারে। নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর-কিশোরীদেরও উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। বলতে গেলে কে আসেনটি অনুষ্ঠানটিতে। সবাই , কমিউনিটির সর্বস্তরের সবাই এসেছেন এই অনুষ্ঠানে। নিউইয়র্কের উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে গত ১৩ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় ‘একাত্তরের কন্ঠযোদ্ধা’ সঙ্গীতানুষ্ঠানের। এর আয়োজক ছিলেন বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশের আরেক জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। কী নোট স্পীকার ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত আরেক জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা জামাল উদ্দীন হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ছাড়াও কমিউনিটির সর্বস্তরের প্রবাসী সপরিবারে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে ড. সিদ্দিকুর রহমান একটি মিডিয়ার কাছে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন- ‘অসাধারণ একিিট অনুষ্ঠান অনুভব করলাম। আমি অনেক দিন ধরেই প্রবাসে অনেক অনুষ্ঠানের সাথেই সম্পৃক্ত ছিলাম। কিন্তু এধরণের একটি হৃদয়গ্রাহী অনুষ্ঠান করতে পারিনি এখনো। আয়োজককে ধন্যবাদ’। ড. সিদ্দিক যথার্থই বলেছেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪৪ বছর হলো। দেশের স্বাধীনতার সময়ে তৎকালীন প্রবাসী বাঙালীরাও স্বাধীনতার পক্ষে এই প্রবাসে ভূমিকা রাখেন। বিচাপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রবাসীরা তখন নানা আন্দোলন গড়ে তুলেন প্রবাসে। বিচাপতি সাঈদ পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। স্বাধীনতার ৪৪ বছরের ইতিহাসে আজ আমরা লাল-সবুজ পতাকার পাসপোর্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশে দেশে লাখো লাখো বাংলাদেশী আজ প্রবাসী। আর এই দীর্ঘ সময়ে প্রবাসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের নিয়ে কোন অনুষ্ঠান হয়েছে বা তাঁদেরকে সম্মানিত করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তাও আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে। আমাদের সৌভাগ্য যে, চার কন্ঠযোদ্ধা আমাদের মতো আজ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তাঁদেরকে সম্মানিত করার মদ্য দিয়ে পুরো কমিউনিটি সম্মানিত হয়েছে। আর এই ভালো আয়োজন আর সম্মানের পথ দেখিয়েছে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। যা অবশ্যই সকলের প্রশংসার দাবী রাখে। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)