নিউইয়র্ক: বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির হতাশা আর ভুলভ্রান্তি কাটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে, দেশ ও প্রবাসের নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ‘প্রজন্ম বাংলাদেশে’র শীর্ষনেতা মাহি বি চৌধুরী বলেছেন, বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশের শতকরা ৯৩ ভাগ মেধার ব্রেনড্রেন হয়েছে। এটা দেশের জন্য ট্রাজেডী। অপরদিকে দেশের রাজনীতি আর রাজনীতিতে নেই। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের প্রজন্ম আমাদের ভাষা দিয়েছন, ৭১-এর প্রজন্ম স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছেন আর ৯১-এর প্রজন্ম গণতন্ত্র দিয়েছিলেন। তারপর ২০ বছর হলো দেশে আমাদের প্রজন্ম আর কিছু দিতে পারেননি। ৯১-এর গণতন্ত্রও আমরা ধরে রাখতে পারিনি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ধরে রাখতে দরকার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সহনশীলতা আর সহবস্থান। তিনি বলেন, দেশে যে বিভক্তির রাজনীতি চলছে, সেই রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। এজন্য নতুন প্রজন্মকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
সিটির জ্যাকসন হাইটসের খাবার বাড়ি রেস্টুরেন্টের পালকী সেন্টারে গত ৭ জুন রোববার সন্ধ্যায় ‘প্রজন্ম বাংলাদেশ’ আয়োজিত মত বিনিময় সভায় মাহি বি চৌধুরী এসব কথা বলেন। ‘প্রজন্ম বাংলাদেশ’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নেতা মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় প্রবাসের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী পুত্র মাহি বি চৌধুরী। তিনি বিকল্প ধারারও মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য।
‘এ মুভমেন্ট ফর চেঞ্জ’ দ্য জার্নি কন্টিনিউজ শ্লোগান সামনে রেখে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মাহি বি চৌধুরী বলেন, ‘৯০ এর পর গণতন্ত্র পূনঃরুদ্ধার হয়েছে ঠিকই; তবে রাজনীতি হেটেছে ভুল পথে। ক্ষমতার লোভ, রাজনৈতিক বিভাজন আমরা চাইনা। দেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম চায় সমৃদ্ধি ও সু-শাসনের বাংলাদেশ।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশের চলমান রাজনীতির ভুল ভ্রান্তিগুলো কাটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। তরুণ প্রজন্মদের সঠিক রাজনৈতিক চর্চায় আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে-প্রবাসে আমরা কোন বিভাজন নয়, চাই সুস্থ্য ধারার রাজনৈতিক চর্চা। আর এ জন্য দেশ ও প্রবাসী তরুণ প্রজন্মদের এগিয়ে আসতে হবে।’
২০১০ সালে বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে ‘বৃটিশ কাউন্সিল’ পরিচালিত এক জড়িপের বরাত দিয়ে মাহি বি চৌধুরী বলেন, সেই জড়িপে দেশের ৭৪% নতুন প্রজন্মের রাজনীতির প্রতি কোন আগ্রহ নেই, ৮০%-এর রাজনীতিতে কোন ভূমিকা নেই, ১%ও রাজনীতি করতে আগ্রহী নয়। কিন্তু কেন? তিনি বলেন, ৪৪ বছর ধরেই দেশে আবেগ নির্ভর রাজনীতি চলছে। বাঙালী, বাংলাদেশী, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, খোদা হাফেজ এসব নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিব আর জিয়াকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে ‘কর্মসূচী ভিত্তিক’ রাজনীতি নেই। প্রতিহিংসা, বিভক্তি, অনৈক্য, হরতাল-ধর্মঘটের রাজনীতি থেকে আমাদেরকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
মাহি বি. চৌধুরী বলেন, ‘প্রজন্ম বাংলাদেশ’ চারটি বিষয় নিয়ে এগুচ্ছে। এক. সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, দুই. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, তিন. রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সু-শাসন, এবং চার. রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘রাজনীতি আজ ভুল পথে আবর্তিত হচ্ছে। সময় এসেছে নতুন ভাবে সব কিছু ঢেলে সাজানোর। আর এ জন্য প্রয়োজন দেশ ও প্রবাসের নতুন প্রজন্মের উদ্যোগ। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মও চায় দেশের গণতন্ত্রের ভিত যেনো সত্যিকার অর্থেই মজবুত হয়।’ তিনি প্রজন্ম বাংলাদেশের নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন বলেন, ২০১৮ সাল নাগাদ আমরা প্রজন্ম বাংলাদেশের ৫০ হাজার এজেন্ট তৈরী করতে চাই, চাই ৫ লাখ সদস্য। আমরা রক্তপাতহীন পরিবর্তন চাই, বিপ্লব চাই।
পরে তিনি উপস্থিত প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক কলেজ ও লাগোর্ডিয়া কলেজের বাংলাদেশী ছাত্রদের পক্ষ থেকে মাহি বি চৌধুরীকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।