নিউইয়র্ক ০৯:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ওবামা’র নির্বাহী আদেশে খুব বেশি লাভবান হবে না বাংলাদেশীরা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৫১:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪
  • / ১০৯৫ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের ইমিগ্রেশন বিষয়ক টাউন হল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে জুইস সেন্টারে। টাউন হল মিটিংয়ে ইমিগ্রেশন এটর্নী ও আইনজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইমিগ্রেশন এটর্নী শেখ সেলিম ও এটর্নী মঈন চৌধুরী এবং ইমিগ্র্যান্টস কনসালটেন্ট ও প্যারালিগ্যাল মঈনুদ্দীন নাসের, জর্জ এবাদ প্রমুখ। এই টাউন হল মিটিংয়ে এটর্নীদ্বয় বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষিত নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশীরা খুব বেশি লাভবান হবে না। এমন নির্বাহী আদেশ জারী করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আশেপাশের দেশের অভিবাসীদের স্বার্থকে লক্ষ্য রেখে। ২০ থেকে ২৫ হাজার বাংলাদেশী এই আদেশের সুবিধাভোগ করতে পারেন বলে তারা ধারনা করছেন। তারা আরো বলেন, অনেক বছর যাবত অবৈধ অভিবাসীদের স্বার্থে কোন আইন বা অধ্যাদেশ জারী হচ্ছিলো না। প্রেসিডেন্ট ওবামার এই নির্বাহী আদেশ গুমোট পরিস্থিতিতে এক পশলা স্বস্থির বৃষ্টির মত। তবে অবৈধ অভিবাসীরা আরো অভিবাসী বান্ধব বিল কংগ্রেস ও সিনেটে পাশ হবে বলে স্বপ্ন দেখছেন। তারা হুশিয়ার করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতে হলে কোনভাবে ভুল তথ্য দেয়া যাবে না ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। কোন অপরাধও করা যাবে না। অতীতে যারা ভুল তথ্য দিয়েছেন, তাদের অনেককেই তলব করা হচ্ছে। একাধিক নাম ব্যবহারকারীরা মার্কিন সিটিজেন হয়ে গেলেও তাদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অতীতের সকল তথ্য ডিজিটাইজড করছে। এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় অতীতে অনেকের একাধিক নাম ব্যবহারে রেকর্ড বেরিয়ে আসছে। তাদের ওপর নেমে আসছে আইনী খড়গ। কখনও কখনও দেশ থেকে ফেরার পথে ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে একাধিক নাম ব্যবহারকারীদের দেশে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছ্।ে এই এটর্নীদ্বয় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এটর্নীদ্বয় বলেন, ওবামা ঘোষিত নির্বাহী আদেশ নিয়ে বিস্তারিত এখনই কিছু বলা যাবে না।
টাউন হল মিটিংয়ে এটর্নী, আইনজীবী ও প্যারেলিগ্যাল পেশায় নিয়োজিতরা তাদের বক্তব্য ওবামার নির্বাহী আদেশসহ ইমিগ্রেশন বিষয়ের নানাদিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর সমবেতদের মধ্য থেকে বিভিন্ন জনের প্রশ্নের জবাব দেন তারা। প্রশ্নকর্তাদের প্রশ্নের জবাবে তারা স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে বাস, ইনভেস্টম্যান্ট ভিসায় বৈধতার উপায়, এল ওয়ান ভিসার প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক আশ্রয়ের নানাদিক, অতীতে ঘোষিত সিএসএ লুলাক-এর সঠিক ব্যবহার করতে না পারার কারণসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। টাউন হল মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল আহসান এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক দর্পণ কবীর ও যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ।
টাউন হল মিটিংয়ে এটর্নী শেখ সেলিম বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা যে নির্বাহী আদেশ ঘোষণা করেছেন, তা অভিবাসীদের জন্য বিরাট কোন সু-সংবাদ নয়। এই আদেশে শর্তপূরণকারী অীবাসীদের ৩ বছরের জন্য অস্থায়ী স্ট্যাটাজ দেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রে যাদের শিকড় আছে, তারাই এই সুযোগ পাবেন। এরপর এই প্রোগ্রামের ভবিষ্যত কি হবে, তা কেউ জানে না। এই আদেশ ঘোষণার পর কমিউনিটিতে অনেকে অনেক রকম কথা বলছেন। তিনি এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান এবং প্রতারিত না হবার জন্য বুঝে-শুনে সঠিক এটর্নী ও এটর্নীর প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অতীতেও ইমিগ্রেশন বিষয়ে অনেক প্রতারণা হয়েছে। যেমন সিএসএ লুলাক-এ হয়েছে। ভুল ও প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে অনেক লোক এখন সাফার করছেন। তাদের একাধিক নাম ছিল। তারা সিটিজিন হয়েও এখন সাফার করছে। এমন কিছু ঘটনা আমার জানা আছে। আমি তাদের পক্ষে আইনী লড়াইও করছি। তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অতীতের সকল ফাইল ডিজিটাইজড করছে। এরমধ্য দিয়ে ফাইলের তদন্তও হচ্ছে। অনেকের নাম ও ছবি বের হয়ে আসছে। ছবি এক, নাম একাধিক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। দালালদের খপ্পড়ে পড়ে অতীতে যারা এ ধরনের ভুল করেছেন, তাদের জীবনে দুর্যোগ নেমে আসছে। তিনি বাংলাদেশ থেকে ফেরার পথে মধ্যপ্রচ্যের একটি দেশে একটি পরিবারের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না পারার ঘটনা উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, যাদের গ্রীনকার্ড আছে, তাদের অতীতে একাধিক নাম প্রকাশ পেলে ঐ অভিবাসীর গ্রীনকার্ড বাতিলের দাবি তুলছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। তিনি নতুন অভিবাসীদের কোথাও ভুল তথ্য প্রদান না করার আহবান জানান।
এটর্নী মঈন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশীদের অধিকাংশজন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন স্টুডেন্ট ভিসা বা ট্যুরিষ্ট ভিসা নিয়ে। তারা এ দেশে এসেই তড়িঘড়ি করে রাজনৈতিক আশ্রয় (এসাইলাম) দাখিল করেন। এসাইলাম ছাড়াও যে আরো একাধিক পদ্ধতিতে বৈধ হওয়া যায়, এ কথা তারা হয় জানেন না। বা জানলেও সেদিকে যান না। সর্বনি¤œ ৬০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেও এ দেশে বৈধ হবার আইনী পথ রয়েছে। এল ওয়ান ভিসায় বৈধ  হওয়া যায়। একজন অভিবাসী ভাষা শিখার কোর্সে ভর্তি হয়ে ৮ বছর পর্যন্ত তার স্ট্যটাস ঠিক রাখতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশীদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা দেখি না।
এটর্নী মঈন চৌধুরী আরো বলেন, কেউ যেন প্রতারিত না হয়-এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যেন সক্রিয় ভূমিকা রাখেন-এই অনুরোধ করেন তিনি। তিনিও বলেন, অতীতে সিএসএ লুলাক অংশ নিয়ে ভুল করেছিলেন অনেক আবেদনকারীরা। ফলে তারা এর সুফল লাভ করতে পারেননি। এমন ভুল যেন আর না হয়।
টাউন হলে মিটিংয়ে এটর্নীরা এক প্রশ্নের জবাবে জানান, যারা ফ্যামিলী ইমিগ্রেশন ভিসা লাভ করে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের একদিন আগে বিয়ে করলেও পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তি স্পাউস এর জন্য আবেদন করে সফল হবেন না। বরং তার গ্রীনকার্ড বাতিল হয়ে যাবে। অনেকে এই ভুল করে থাকেন।
এ ছাড়া কোন গ্রীনকার্ডধারী নিজের দেশে গিয়ে নানা কৌশলে এরাইভাল ডেট গোপন করতে সক্ষম হলে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে দেশে থাকার তথ্য ভুল দিয়ে-এর কারণেও ঐ ব্যক্তির গ্রীনকার্ড বাতিল করে দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সিটিজেন হলেও তাও বাতিল হয়ে যাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, কোন ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে এসাইলামসহ অন্য কোন কর্মসূচী গ্রহণ করার পাশাপাশি নিজের ভাই ও বোনের দায়ের করা ন্যাচারাইজেশন প্রক্রিয়ায় থাকতে পারেন। দুটি প্রক্রিয়া সমান্তরাল চলতে পারে। পরবর্তীতে যে কোন একটিতে এডজাষ্ট করা সম্ভব। তবে নিজের স্ট্রাটাজ না থাকলে এর জন্য নিজেকে এডজাষ্ট করতে হবে নিজের দেশে ফেরত গিয়ে। কোর্ট থেকে ওয়েভার না পেলে দেশে গেলে স্টাটাজ হারিয়ে ফেলার কারণে ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ইমিগ্যান্টস ভিসা তিনি না-ও পেতে পারেন। নিয়মানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার মেয়াদ ৬ মাস পেরিয়ে গেলে ৩ বছর ও ১ বছর পেরিয়ে গেলে ১০ বছর পর্যন্ত দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ঐ ভিসাপ্রার্থীকে ভিসা দেবে না। কোর্টের ওয়েভার থাকলে এই খড়গ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
সাংবাদিক মঈনুদ্দীন নাসের বলেন, ওবামার নির্বাহী আদেশে আমি খুশি। কারণ, অনেকদিন যাবত কিছুই হচ্ছিলো না। এর মধ্য দিয়ে কিছু একটা হচ্ছে। তবে এই আদেশে বাংলাদেশিরা খুব লাভবান হবেন না। বাংলাদেশীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশি থাকেন না। ব্যাচালররাই বেশি থাকেন। তাই তারা এই আদেশের সুবিধা তেমন পাবেন না। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বড়জোর ২০/২৫ হাজার বাংলাদেশী এই আদেশের সুবিধা পেতে পারেন বলে আমি মনে করি।
প্যারালিগ্যাল জর্জ এবাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য আনডকুমেন্ট অভিবাসীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ওয়ার্ক পারমিট প্রাপ্তি। একবার ওয়ার্ক পারমিট লাভ করলে ঐ অভিবাসী বৈধতার পথে ধাবিত হয়। বৈধতা লাভে তাদের অধিকার জন্ম নেয়। তাই ওবামার নির্বাহী আদেশে যারা ওযার্ক পারমিট পাবেন, তাদের জন্য এটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করি।
টাউন হল মিটিং উপলক্ষে প্রেসক্লাব একটি ইমিগ্রেশন বিষয়ক তথ্যমূলক ম্যাগাজিন প্রকাশ করে আগতদের মাঝে তা বিতরণ করা হয়।
টাউন হলে মিটিংয়ে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সাবেক সভাপতি নর্গিস আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিুকুর রহমান ও তার স্ত্রী শাহানারা রহমান, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সভাপতি ফিরোজ পাটোয়ারী, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাষ্টি সদস্য আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বদরুন্নাহার খান মিতা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল হাসেন দেলোয়ার, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ছদরুন নূর, বাংলাদেশ সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাদী মিন্টু, বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ এ খান, বর্ণমালা পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক জাভেদ খসরু, ঠিকানা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মিজানুর রহমান ও প্রতিবেদক আবুল কাশেম, রানার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মাহমুদ খান তাসের ও সম্পাদক এনামুল রেজা, নির্বাহী সম্পাদক আশরাফুল আলম বুলবুল, বাংলা টাইমস পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সঞ্জীবন কুমার, এনটিভি ইউএস এর প্রযোজক তাওহীদুল ইসলাম, ইটিভি’র সাংবাদিক ইমরান আনসারী ও মল্লিকা খান মুনা, আজকাল পত্রিকার সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকি ও মঞ্জুরুল হক, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আলী ইমাম, নর্থবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান, হাজী নুরুল ইসলাম, মুক্তধারা ফাউনেডশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিৎ সাহা, যাদু শিল্পী খান শওকত, নূরে আজম বাবু, প্রদ্বীপ কে গুণ, আনোয়ার হোসেন, রেজাউল করিম চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, লুৎফর ররহমান লাতু, গোলাম কিবরিয়া অনু, সাংবাদিক মুজাহিদ আনসারী, বাংলা প্রেস-এর সম্পাদক সাবেদ সাথী, নিহার সিদ্দিকী, কবি কাউছার মুমিন, বিডি নিউজ-২৪ এর প্রতিনিধি তফাজ্জল লিটন, শিপার চৌধুরী, বাংলা টিভি’র প্রতিনিধি রিজু মোহাম্মদ, সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

ওবামা’র নির্বাহী আদেশে খুব বেশি লাভবান হবে না বাংলাদেশীরা

প্রকাশের সময় : ১২:৫১:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

নিউইয়র্ক: আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের ইমিগ্রেশন বিষয়ক টাউন হল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে জুইস সেন্টারে। টাউন হল মিটিংয়ে ইমিগ্রেশন এটর্নী ও আইনজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইমিগ্রেশন এটর্নী শেখ সেলিম ও এটর্নী মঈন চৌধুরী এবং ইমিগ্র্যান্টস কনসালটেন্ট ও প্যারালিগ্যাল মঈনুদ্দীন নাসের, জর্জ এবাদ প্রমুখ। এই টাউন হল মিটিংয়ে এটর্নীদ্বয় বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষিত নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশীরা খুব বেশি লাভবান হবে না। এমন নির্বাহী আদেশ জারী করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আশেপাশের দেশের অভিবাসীদের স্বার্থকে লক্ষ্য রেখে। ২০ থেকে ২৫ হাজার বাংলাদেশী এই আদেশের সুবিধাভোগ করতে পারেন বলে তারা ধারনা করছেন। তারা আরো বলেন, অনেক বছর যাবত অবৈধ অভিবাসীদের স্বার্থে কোন আইন বা অধ্যাদেশ জারী হচ্ছিলো না। প্রেসিডেন্ট ওবামার এই নির্বাহী আদেশ গুমোট পরিস্থিতিতে এক পশলা স্বস্থির বৃষ্টির মত। তবে অবৈধ অভিবাসীরা আরো অভিবাসী বান্ধব বিল কংগ্রেস ও সিনেটে পাশ হবে বলে স্বপ্ন দেখছেন। তারা হুশিয়ার করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতে হলে কোনভাবে ভুল তথ্য দেয়া যাবে না ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। কোন অপরাধও করা যাবে না। অতীতে যারা ভুল তথ্য দিয়েছেন, তাদের অনেককেই তলব করা হচ্ছে। একাধিক নাম ব্যবহারকারীরা মার্কিন সিটিজেন হয়ে গেলেও তাদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অতীতের সকল তথ্য ডিজিটাইজড করছে। এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় অতীতে অনেকের একাধিক নাম ব্যবহারে রেকর্ড বেরিয়ে আসছে। তাদের ওপর নেমে আসছে আইনী খড়গ। কখনও কখনও দেশ থেকে ফেরার পথে ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে একাধিক নাম ব্যবহারকারীদের দেশে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছ্।ে এই এটর্নীদ্বয় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এটর্নীদ্বয় বলেন, ওবামা ঘোষিত নির্বাহী আদেশ নিয়ে বিস্তারিত এখনই কিছু বলা যাবে না।
টাউন হল মিটিংয়ে এটর্নী, আইনজীবী ও প্যারেলিগ্যাল পেশায় নিয়োজিতরা তাদের বক্তব্য ওবামার নির্বাহী আদেশসহ ইমিগ্রেশন বিষয়ের নানাদিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর সমবেতদের মধ্য থেকে বিভিন্ন জনের প্রশ্নের জবাব দেন তারা। প্রশ্নকর্তাদের প্রশ্নের জবাবে তারা স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে বাস, ইনভেস্টম্যান্ট ভিসায় বৈধতার উপায়, এল ওয়ান ভিসার প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক আশ্রয়ের নানাদিক, অতীতে ঘোষিত সিএসএ লুলাক-এর সঠিক ব্যবহার করতে না পারার কারণসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। টাউন হল মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল আহসান এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক দর্পণ কবীর ও যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ।
টাউন হল মিটিংয়ে এটর্নী শেখ সেলিম বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা যে নির্বাহী আদেশ ঘোষণা করেছেন, তা অভিবাসীদের জন্য বিরাট কোন সু-সংবাদ নয়। এই আদেশে শর্তপূরণকারী অীবাসীদের ৩ বছরের জন্য অস্থায়ী স্ট্যাটাজ দেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রে যাদের শিকড় আছে, তারাই এই সুযোগ পাবেন। এরপর এই প্রোগ্রামের ভবিষ্যত কি হবে, তা কেউ জানে না। এই আদেশ ঘোষণার পর কমিউনিটিতে অনেকে অনেক রকম কথা বলছেন। তিনি এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান এবং প্রতারিত না হবার জন্য বুঝে-শুনে সঠিক এটর্নী ও এটর্নীর প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অতীতেও ইমিগ্রেশন বিষয়ে অনেক প্রতারণা হয়েছে। যেমন সিএসএ লুলাক-এ হয়েছে। ভুল ও প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে অনেক লোক এখন সাফার করছেন। তাদের একাধিক নাম ছিল। তারা সিটিজিন হয়েও এখন সাফার করছে। এমন কিছু ঘটনা আমার জানা আছে। আমি তাদের পক্ষে আইনী লড়াইও করছি। তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অতীতের সকল ফাইল ডিজিটাইজড করছে। এরমধ্য দিয়ে ফাইলের তদন্তও হচ্ছে। অনেকের নাম ও ছবি বের হয়ে আসছে। ছবি এক, নাম একাধিক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। দালালদের খপ্পড়ে পড়ে অতীতে যারা এ ধরনের ভুল করেছেন, তাদের জীবনে দুর্যোগ নেমে আসছে। তিনি বাংলাদেশ থেকে ফেরার পথে মধ্যপ্রচ্যের একটি দেশে একটি পরিবারের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না পারার ঘটনা উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, যাদের গ্রীনকার্ড আছে, তাদের অতীতে একাধিক নাম প্রকাশ পেলে ঐ অভিবাসীর গ্রীনকার্ড বাতিলের দাবি তুলছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। তিনি নতুন অভিবাসীদের কোথাও ভুল তথ্য প্রদান না করার আহবান জানান।
এটর্নী মঈন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশীদের অধিকাংশজন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন স্টুডেন্ট ভিসা বা ট্যুরিষ্ট ভিসা নিয়ে। তারা এ দেশে এসেই তড়িঘড়ি করে রাজনৈতিক আশ্রয় (এসাইলাম) দাখিল করেন। এসাইলাম ছাড়াও যে আরো একাধিক পদ্ধতিতে বৈধ হওয়া যায়, এ কথা তারা হয় জানেন না। বা জানলেও সেদিকে যান না। সর্বনি¤œ ৬০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেও এ দেশে বৈধ হবার আইনী পথ রয়েছে। এল ওয়ান ভিসায় বৈধ  হওয়া যায়। একজন অভিবাসী ভাষা শিখার কোর্সে ভর্তি হয়ে ৮ বছর পর্যন্ত তার স্ট্যটাস ঠিক রাখতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশীদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা দেখি না।
এটর্নী মঈন চৌধুরী আরো বলেন, কেউ যেন প্রতারিত না হয়-এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যেন সক্রিয় ভূমিকা রাখেন-এই অনুরোধ করেন তিনি। তিনিও বলেন, অতীতে সিএসএ লুলাক অংশ নিয়ে ভুল করেছিলেন অনেক আবেদনকারীরা। ফলে তারা এর সুফল লাভ করতে পারেননি। এমন ভুল যেন আর না হয়।
টাউন হলে মিটিংয়ে এটর্নীরা এক প্রশ্নের জবাবে জানান, যারা ফ্যামিলী ইমিগ্রেশন ভিসা লাভ করে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের একদিন আগে বিয়ে করলেও পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তি স্পাউস এর জন্য আবেদন করে সফল হবেন না। বরং তার গ্রীনকার্ড বাতিল হয়ে যাবে। অনেকে এই ভুল করে থাকেন।
এ ছাড়া কোন গ্রীনকার্ডধারী নিজের দেশে গিয়ে নানা কৌশলে এরাইভাল ডেট গোপন করতে সক্ষম হলে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে দেশে থাকার তথ্য ভুল দিয়ে-এর কারণেও ঐ ব্যক্তির গ্রীনকার্ড বাতিল করে দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সিটিজেন হলেও তাও বাতিল হয়ে যাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, কোন ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে এসাইলামসহ অন্য কোন কর্মসূচী গ্রহণ করার পাশাপাশি নিজের ভাই ও বোনের দায়ের করা ন্যাচারাইজেশন প্রক্রিয়ায় থাকতে পারেন। দুটি প্রক্রিয়া সমান্তরাল চলতে পারে। পরবর্তীতে যে কোন একটিতে এডজাষ্ট করা সম্ভব। তবে নিজের স্ট্রাটাজ না থাকলে এর জন্য নিজেকে এডজাষ্ট করতে হবে নিজের দেশে ফেরত গিয়ে। কোর্ট থেকে ওয়েভার না পেলে দেশে গেলে স্টাটাজ হারিয়ে ফেলার কারণে ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ইমিগ্যান্টস ভিসা তিনি না-ও পেতে পারেন। নিয়মানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার মেয়াদ ৬ মাস পেরিয়ে গেলে ৩ বছর ও ১ বছর পেরিয়ে গেলে ১০ বছর পর্যন্ত দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ঐ ভিসাপ্রার্থীকে ভিসা দেবে না। কোর্টের ওয়েভার থাকলে এই খড়গ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
সাংবাদিক মঈনুদ্দীন নাসের বলেন, ওবামার নির্বাহী আদেশে আমি খুশি। কারণ, অনেকদিন যাবত কিছুই হচ্ছিলো না। এর মধ্য দিয়ে কিছু একটা হচ্ছে। তবে এই আদেশে বাংলাদেশিরা খুব লাভবান হবেন না। বাংলাদেশীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশি থাকেন না। ব্যাচালররাই বেশি থাকেন। তাই তারা এই আদেশের সুবিধা তেমন পাবেন না। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বড়জোর ২০/২৫ হাজার বাংলাদেশী এই আদেশের সুবিধা পেতে পারেন বলে আমি মনে করি।
প্যারালিগ্যাল জর্জ এবাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য আনডকুমেন্ট অভিবাসীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ওয়ার্ক পারমিট প্রাপ্তি। একবার ওয়ার্ক পারমিট লাভ করলে ঐ অভিবাসী বৈধতার পথে ধাবিত হয়। বৈধতা লাভে তাদের অধিকার জন্ম নেয়। তাই ওবামার নির্বাহী আদেশে যারা ওযার্ক পারমিট পাবেন, তাদের জন্য এটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করি।
টাউন হল মিটিং উপলক্ষে প্রেসক্লাব একটি ইমিগ্রেশন বিষয়ক তথ্যমূলক ম্যাগাজিন প্রকাশ করে আগতদের মাঝে তা বিতরণ করা হয়।
টাউন হলে মিটিংয়ে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সাবেক সভাপতি নর্গিস আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিুকুর রহমান ও তার স্ত্রী শাহানারা রহমান, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সভাপতি ফিরোজ পাটোয়ারী, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাষ্টি সদস্য আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বদরুন্নাহার খান মিতা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল হাসেন দেলোয়ার, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ছদরুন নূর, বাংলাদেশ সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাদী মিন্টু, বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ এ খান, বর্ণমালা পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক জাভেদ খসরু, ঠিকানা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মিজানুর রহমান ও প্রতিবেদক আবুল কাশেম, রানার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মাহমুদ খান তাসের ও সম্পাদক এনামুল রেজা, নির্বাহী সম্পাদক আশরাফুল আলম বুলবুল, বাংলা টাইমস পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সঞ্জীবন কুমার, এনটিভি ইউএস এর প্রযোজক তাওহীদুল ইসলাম, ইটিভি’র সাংবাদিক ইমরান আনসারী ও মল্লিকা খান মুনা, আজকাল পত্রিকার সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকি ও মঞ্জুরুল হক, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আলী ইমাম, নর্থবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান, হাজী নুরুল ইসলাম, মুক্তধারা ফাউনেডশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিৎ সাহা, যাদু শিল্পী খান শওকত, নূরে আজম বাবু, প্রদ্বীপ কে গুণ, আনোয়ার হোসেন, রেজাউল করিম চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, লুৎফর ররহমান লাতু, গোলাম কিবরিয়া অনু, সাংবাদিক মুজাহিদ আনসারী, বাংলা প্রেস-এর সম্পাদক সাবেদ সাথী, নিহার সিদ্দিকী, কবি কাউছার মুমিন, বিডি নিউজ-২৪ এর প্রতিনিধি তফাজ্জল লিটন, শিপার চৌধুরী, বাংলা টিভি’র প্রতিনিধি রিজু মোহাম্মদ, সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।।