নিউইয়র্ক ০৭:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ঐক্য গড়তে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র প্রতি আহ্বান : ৬৪ জেলাকে ‘আমব্রেলা’র ছায়াতলে আনার পরামর্শ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:০৪:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
  • / ১০১৫ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: উত্তর আমিরকাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা নানা সংগঠনের চালচিত্র নিয়ে বাংলা পত্রিকার ধারাবাহিক প্রতিবেদনে উঠে আসে দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা’সহ বিভিন্ন অঞ্চলের নামে গড়ে অসংখ্য সমিতি ও সংগঠনের নাম। এছাড়াও নানা সময়ে গড়ে উঠা অঞ্চল কিংবা ব্যক্তি নির্ভর এসব সংগঠনের নেপথ্যের খবরও বাংলা পত্রিকার পাঠকের কাছে তুলে ধরা প্রয়াসই ছিল কেবল। কাউকে ছোট করতে কিংবা কোন উদ্দেশ্যে এই প্রতিবেদন করা হয়নি। বরং কমিউনিটির আগামী দিনের স্বপ্ন এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে কী ভাবে তুলে ধরা যায় সে বিষয়টিকে জাগ্রত করতেই স্বাধীন মতামত নেয়া হয়েছে অনেকের। প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যেয়ে সোর্স কিংবা তথ্যের বিভ্রাট নিয়েও নানান জন নানা মতামত দিয়েছেন। যা সবার ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে কোড-আনকোড হিসেবেও প্রকাশিত হয়। আলোচনা-সমালোচনা যাই থাকুক না কেন; এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে বিভাজনের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মহৎ উদ্দেশ্য গুলোকেও তুলে ধরা হয়েছে।
সাংগঠনিক বিভাজনের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেকে প্রতিবাদ করেছেন। কেউ আবার ধন্যবাদও জানিয়েছেন। কমিউনিটিতে বিভিন্ন সময়ে গড়া বিভিন্ন সমিতি ও সংগঠনের ধারাবিহক ঐসব প্রতিবেদনে উঠে আসে অনেক তথ্য ও পরামর্শ। যাতে ফুটে উঠে যুক্তরাষ্ট্র তথা নিউ ইয়র্কে বসবাসকারি বাংলাদেশীরা নিজেদের দেশ-জাতি, সমাজ-সংষ্কৃতি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটা সফলতা অর্জন করলেও; ব্যক্তিস্বার্থ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ক্ষমতার মোহ এবং প্রভাব আর আত্মঅহমিকা বিভাজনের অন্যতম কারণ। ঐক্যের একটি ভীত রচনা করতে যেয়ে জন্ম দিয়েছে অসংখ্য অনৈক্যের বীজ। আর এভাবেই গড়ে উঠে একে একে নানা সংগঠন। যা আগামী প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। বরং অনীহা বাড়ার ফলে ভুলে যেতে থাকবে দেশের কৃষ্টি-কালচার। এমন আশঙ্কার কথাও উঠে আসে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশী-আমেরিকান প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু সৃষ্টকর্ম রেখে যাবার প্রত্যয় নিয়ে এগোতে হলে দরকার হবে ছাড় দেয়ার মানসিকতা’।
সাহিত্যবিদরা বলে গেছেন, ‘ভোগে নয়; ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’। বস্তুত কথাটি প্রবাদেই সীমাবদ্ধ। এর বাস্তব প্রতিফলন খুব একটা চোখে দেখা নেই বললেই চলে। তবুও বাঙালী বীরের জাতি। বাঙালী আশাবাদি। শীক্ত আর সাহসিকতার অনেক নজির রয়েছে। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন’সহ রয়েছে অসংখ্য উদাহরণ। দেশের স্বার্থে আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। আর এ জন্য জাগিয়ে তুলতে হবে বড় ধরণের ত্যাগ কিংবা ছাড় দেড়ার মানসিকতাকে। কথা বলে জানা যায়, ‘ভেদাভেদ কিংবা রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে অন্তত: প্রবাসে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে আসার শুন্যতায় ভুগছে অসংখ্য প্রবাসী। সেই উদ্যোগ নিতে হবে আমব্রেলা থেকে। শুধু দাবিদার হলে হবে না; বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে আমব্রেলার নীচেই সবার ছায়া’।
গেল পর্বে ঢাকা বিভাগীয় অঞ্চল ‘প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ ইন্ক’-এর বর্তমান সভাপতি ফরিদ খান বলেন, ‘আসলে সমিতি কিংবা সংগঠন সৃষ্টি হয় কমিউনিটিকে একটি জায়গা নিয়ে আসার জন্য। পৃথিবীর যে-কোন দেশেই এর নজির আছে। কোন সামাজিক সংগঠন করতে হলে সবার সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। এর মাধ্যমেই তৈরী হয় একটি কমিউনিটি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তার বিপরীত দিকটি ফুটে উঠছে প্রতিনিয়ত। কমিউনিটির স্বার্থে গড়া সংগঠন পৃথক হয়ে বড় থেকে আরো ছোট ছোট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশই। সংগঠন করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা। এর মাধ্যমে কারো ব্যক্তি কিংবা এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি নানা রকম উপকারে আসা যায়। তা না করে উল্টো আমরা বিভাজন এবং দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ি’। তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশ সোসাইটিও। আমরা চাইছি এক হতে। আর এ জন্য উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সোসাইটিকে। একটা ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরী করা আমাদের জন্য খুবই দরকার। কিন্তু বাংলাদেশ সোসাইটি নিজেদের আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন দাবি করলেও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলণ ঘটাতে পারে নি’।
প্রায় একই ভাষায় কথা বলেন কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও সংগঠনের বেশ কয়েকজন সাবেক বর্তমান নেতারা। প্রবাসে সাংগঠনিক বিভাজন নিয়ে বাংলা পত্রিকার ধারাবাহিক প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেন, ‘প্রবাসের সাংগঠনিক বিভাজন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে স্বদিচ্ছা এবং ছাড় দেয়ার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো। আমরা কেউ কারো শত্রু নই। তবু কেন জানি আমরা মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাই। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এর থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই’। তারা আরো বলেন, ‘তবে দীর্ঘ সময়ের এই অনৈক্যের মাঝে ঐক্যের বীজ বফন করতে একটি প্রতিষ্ঠিত চেইনের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যা করতে পারে বাংলাদেশ সোসাইটি। নামে আমব্রেলা হলে চলবে না। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাংলাদেশ ফুটিয়ে তুলতে হবে’।
প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল- প্রায় প্রতিটি বিভাগ জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়কে এক ছাদের নীচে নিয়ে আসা; এটা কী করবে সম্ভব? জবাবে অনেকে জানান, ‘অবশ্যই সম্ভব। উদাহরণ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
বাংলাদেশ সোসাইটি একটি মাদার/আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন। উদাহরণ স্বরূপ সাতটি বিভাগ যেমন বাংলাদেশ সোসাইটি ঢাকা শাখা /চট্টগ্রাম শাখা/সিলেট শাখা/খুলনা শাখা/বরিশাল শাখা/রাজশাহী শাখা/রংপুর শাখা। এভাবেই ৬৪ জেলা এবং শহর-উপশহরের নামের সাথে ‘বাংলাদেশ’ কথাটি লাগিয়ে ‘‘বাংলাদেশ সোসাইটি চাঁদপুর জেলা ইউএসএ ইনক্, বাংলাদেশ সোসাইটি কুমিল্লা, নোয়খালি কিংবা ফরিদপুর শরিয়তপুর, মাদারিপুর, হবিগঞ্জ ইত্যাদি।
পরামর্শের যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এতে করে বিভাজন বন্ধ করা কী সম্ভব? কিংবা নির্বাচন পদ্ধতিই বা কেমন হবে। আলোচনায় উঠে আসে সাংগঠনিক চেইন রক্ষার কিছু পরামর্শ ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়টিও। বিশ্লেষকরা চারটি ধাপের কথা তুলে ধরেছেন:-
প্রথমত: বাংলাদেশ সোসাইটি আমব্রেলা/মাদার সংগঠন।
দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশী সোসাইটি বিভাগীয় (৭টি বিভাগের নাম সংযুক্ত) সংগঠন।
তৃতীয়ত: বাংলাদেশী সোসাইটি জলা ভিত্তিক (৬৪ টি জেলার নাম সংযুক্ত) সংগঠন।
এবং
চতুর্থত: বাংলাদেশী সোসাইটি উপজেলা ভিত্তিক (যতগুলো রয়েছে) সংগঠন।
নির্বাচন পদ্ধতি ও নেতৃত্ব গঠন বিষয়ে পরামর্শে উঠে আসে। বাংলাদেশের উপজেলা ও জেলার (জন্মসূত্রে) প্রবাসী বাসিন্দারা সদস্য হবেন স্ব-স্ব অঞ্চলের। যেখানে সদর জেলা ও উপজেলা অন্তর্ভূক্ত থাকবে। অবস্থানকারি সংগঠনের সদস্যরা এক বা দুই বছরের জন্য তাদের কার্যনির্বাহি প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। এরপর প্রতিটি জেলা (৬৪) বিভাগীয় পর্যায়ের সংগঠনের কার্যনির্বাহি পরিষদ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক’সহ সম্পাদকীয় প্যানেলে একটি ডেলিগেট কোরাম গঠন হতে পারে। যা ৫ থেকে ৭ সদস্যের। ৭টি বিভাগীয় জেলা সংগঠনের ডেলিগেট সদস্যরা হবেন বিভাগীয় সংগঠনের ভোটার। তাদের ভোটেই নির্বাচিত হবে নিজ বিভাগীয় সংগঠনের নেতৃত্ব। এরপর আসবে বাংলাদেশ সোসাইটি। একই কায়দা ৭টি বিভাগীয় সংগঠনের কার্যনির্বাহি কর্তৃক গঠিত ডেলিগেট সদস্যরা (ভোটার) নির্বাচিত করবেন বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃত্ব। আর এভাবেই গড়ে উঠবে একটি ছায়ার নীচে পুরো বাংলাদেশ। যাকে বলা হবে ‘‘একই বৃত্তে পুরাটাই’’। ফলে নির্বাচনীয় ব্যয় কমবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি হবে। মূলধারার রাজনীতিবিদদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এছাড়াও নেতৃত্ব তৈরী হবে আগামী প্রজন্মের।
উল্লেখ্য, শুধুমাত্র সাম্প্রতিক অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ মিলিয়ন তথা ১শ ৫০ হাজার ডলার। নির্বাচন কমিশন ৫০ এবং দু’টি প্যানেলের ৫০ করে ১শ ডলার। সমালোচকরা বলছেন এসব ব্যয়ের কোন যৌক্তিকতা নেই। যা কমিউনিটির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। তাহলেই বিজয় সম্ভব। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহ থাকলে এটা আমাদের কমিউনিটির জন্য একটি মাইল ফলক হিসেবে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলেও আশা করছেন অসংখ্য প্রবাসী ও কমিউনিটি সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, বাংলাদেশের ২১ ফেব্রুয়ারি (মাতৃভাষা দিবস), জাতীয় দিবস কিংবা অন্যান্য দিবসগুলোতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর লোক কিংবা সংগঠনের অভাব নেই এখানে। বিশৃঙ্খল পরিবেশে সবাই কমিউনিটির পত্রিকার শিরোনামে এসেই তৃপ্ত। এসব দিবসকে ঘিরে খন্ড-খন্ড অনুষ্ঠান না করে একটি ব্যানারে সবাই ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে অংশ নিলে কমিউনিটি নয়; আসবে মুলধারা’সহ বিশ্বগণমাধ্যমে। জাগ্রত হবে আমেরিকান প্রশাসন। গুরুত্ব বাড়বে বাংলাদেশী কমিউনিটির। প্রবাসে তাদের কর্মকান্ড ইতিবাচক ভূমিকায় সহায়ক হবে। বাস্তবিকভাবে সবাই একত্রিত হয়ে যেকোন সমস্যার সমাধান করা কিংবা দাবী আদায় করা সহজ। বিধি বাম। দাবি আদায় তো দুরের কথা বিপরীতমুখি মনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী সংগঠনের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে।
অভিযোগ আছে সংগঠন গুলোর কাজ শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করা। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচুর অর্থ অপচয় এবং নির্বাচন এর পর কারচুপির অভিযোগ যেখানে হর-হামেশা। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রের অভিবাসী, নাগরিক কিংবা আবাসিক বাসিন্দা হয়েও বৈশ্বিক মন-মানসিকতা নিজেদের মাঝে জাগ্রত করতে বরাবরই উদাসীন প্রবাসীরা। লক্ষ্য একটাই; কমিউনিটির পত্র-পত্রিকা গুলোতে ছবি ছাপানো এবং সংবাদের শিরোনাম হওয়া। এতগুলো সংগঠনের শুরুটা হয় আনন্দঘন পরিবেশ এবং জনকল্যাণের ব্রত নিয়ে। কিছুদিন পর নেতৃত্বের দ্বন্ধ এবং অর্ন্তকলহের কারণে ভদ্র, ঝামেলামুক্ত সাধারণ নাগরিকরা নিজেকে দুরে সরিয়ে নেন এসব থেকে। যার প্রমাণ অসংখ্য। এছাড়াও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। প্রধানমন্ত্রী অথবা বিরোধীদলীয় নেতা-নেত্রীদের যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ও পরে বিমান বন্দর, জাতিসংঘ মিশন, ওয়াশিংটন ডিসির সংশ্লিষ্ট দূতাবাস ও হোয়াইট হাউজের সামনে কালো পতাকা প্রদর্শন, বিক্ষোভ, পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচী যা নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। যা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মত পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের মধ্যে তা নেই বল্লেই চলে। শুধু তাই নয়; দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। কমিউনিটির এসব রঙ-তামাশা থামাতে কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের হস্তক্ষেপ জাতি হিসেবে আমাদের খাটো করছে কেবল। যা সত্যিই লজ্জার বিষয়। সাধারণ প্রবাসীদের মনে প্রশ্ন জাগে; এসবরে গুরুত্ব কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্র তথা উত্তর আমেরকিাতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠা প্রবাসে বাংলাদেশীদের এসব সংগঠনের উৎপত্তি এবং বিভাজন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া’সহ অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিশিষ্ট প্রবাসীরা। তারা বলেন এসব না করে জনকল্যান মুলক কর্মকান্ড বৃদ্ধিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশনের সাথে অনেকটা ক্ষোভের সাথে সমিতি ও সংগঠনের বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন তারা। বক্তারা বলেন, এখানে গড়ে উঠা বাংলাদেশের আঞ্চলিক সমিতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজনও কম নয়। রাজনৈতিক দল নিয়ে আমাদের বলার কিছু নাই। রাজনীতি তো রাজনীতি। যা এখন এক নোংরা খেলার বাহন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের দিকে তাকালে রাজনীতির শব্দটির আভিধানিক অর্থের সংজ্ঞাটি ভুল প্রমাণিত হয়। সে সব বাদ দিয়ে আমরা বলতে চাই; আড্ডা দেবার, মিলিত হবার তথা সংগঠন করবার প্রবণতা বাংলাদেশীদের মধ্যে খুব বেশী। তবে সব নেতিবাচক দেখলে হবে না। এর রয়েছে ইতিবাচক দিকও। কিন্তু তা হতে হবে বাস্তব সন্মত এবং স্বার্থবিরোধী।
কবি শহীদ কাদরী: বাংলা ভাষার অন্যতম একজন কবি তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে প্রবাসে অবস্থান করছেন। সমিতি ও সাংগঠনিক বিভাজন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা কথা আছে, যখন তিনজন বাঙ্গালী এক সাথে হয় তখন একটি নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়। আবার যখন পাঁচজন বাঙ্গালী এক সাথে হয় তখন নতুন একটি সাহিত্য পত্রিকার জন্ম হয়। বাঙ্গালীরা চিরকালই দলাদলি করতে পছন্দ করে’। প্রখ্যাত কবি শহীদ কাদরী আরো বলেন, ‘এই সব দলাদলিকে সুক্ষ্ম বিচার বোধের পরিচায়ক বলেই আমি মনে করি। সুক্ষ্ম বিচার বোধ দিয়েই বাঙ্গালী, বাংলাদেশীরা এক সময় একতাবদ্ধ হয়ে বাংলার মূখকে আরো উজ্জ্বল করবে। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার বর্গমাইল দুরে পারস্পরিক কলহ-বিবাদ আর দলাদলি ছেড়ে একতা আর ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হবে এটাই প্রত্যাশা’।
হাসান ফেরদৌস: প্রখ্যাত এই কলামিস্ট-লেখক ও সাংবাদিক বলেন, ‘প্রবাসে রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা বাদে অন্য সংগঠনগুলোকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তবে, বর্তমানে এসব সংগঠনের দলাদলি ও কলহতে চরম উদ্বেগ আর বিরক্তি ভোদ করছি। এর থেকে আমাদের দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে’। তিনি আশা করেন, ‘সময় এসেছে পরিবর্তনের। তবে এজন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। একদিন আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতিতে রূপান্তরিত হবো। প্রবাসে বাংলাদেশীদের কমিউনিটির যাত্রা শুরু হয়েছে খুব বেশীদিন হয়নি। চলার পথের এই আবর্জনা এক দিন দুর হবেই হবে’।
এম. এম. শাহীন: কমিউনিটির অতি পরিচিত মুখ এবং সাপ্তাহিক ঠিকানার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি বলেন, ‘যখন আমি প্রথম এদেশে আসি; তখন আমাদের কমিউনিটির সংগঠনিক উৎপত্তি দেখে আসান্বিত হয়েছি। গর্ব করেছি আমরাও পারি। কিন্তু দিনে দিনে দেখি ক্ষমতা, স্বার্থপরতা আর বিভাজন আমাদের আরো পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। যা খুবই হাতাশাজনক। তাই এসব থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমাদের সংগঠনগুলোর ঐক্যের বিকল্প নেই। আর এ জন্য দরকার অনেক বড় ত্যাগ’।
নঈম নিজাম: সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসেন ‘দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এর সম্পাদক নঈম নিজাম। সবার মত তিনিও প্রবাসে গড়ে উঠা রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর বিভাজনে আহত হন। সমিতি ও সংগঠনের কারিগরদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘এখানে দেশের নেতাদের তোষামোদ করার যে সংস্কৃতি চালু রয়েছে তা প্রকারান্তরে দেশের জন্যই ক্ষতিকর। এর ফলে দেশের বিরাজমান সংকট নিরসণে প্রবাসীরা কোন উদ্যোগ নিতে পারবে না। উল্টো দেশ থেকে আসা রাজনৈতিক নেতাদের তোষামদে ব্যস্ত থাকে এসব সংগঠন। এখানে দেশের শান্তি রক্ষায় চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ পাবে কী করে’? এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনী ব্যয় নিয়ে আশ্চার্য্য হন তিনি। বলেন, ‘এত টাকা ব্যয় করে নির্বাচন করছেন। অথচ তা না করে জনকল্যাণে অর্থ সহায়তা করতে পারলে অনেক লাভোবান হতাম আমরা। তবুও আশা করছি এসবের পরিবর্তনে এগিয়ে আসবেন সংশ্লিষ্টরা’।
মুত্তালিব বিশ্বাস: প্রবাসী এই সঙ্গীতজ্ঞ উত্তর আমেরিকায় গড়া প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নামে সংগঠনিক উৎপত্তি ও বিভাজনকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অন্যতম কারন হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরণের সাংগঠনিক বিভাজন আমরা জাতিগত ভাবেই পেয়েছি। একজনকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবার যে প্রবণতা আমাদের মধ্যে বিরাজমান; যা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখানেও ভূতের আছরের মত ভর করেছে। বারো হাত কাকুঁড়ের তের হাত বিচির মত এখানে এত দল, উপ-দল, জেলা ভিত্তিক, ইউনিয়ন ভিত্তিক, সম্প্রদায় ভিত্তিক যা অভাবনীয়। সত্যিই দু:খজনক। এসবে মিলনের লক্ষণ না ভাঙ্গনের লক্ষণ তা আমি বুঝিনা’।
ডক্টর শওকত আলী: লং আইল্যান্ড ইউনির্ভাসিটির এই অধ্যাপক বলেন, ‘অনৈক্যের ভিতরেও ঐক্য গড়া সম্ভব। বিষয়টা হচ্ছে বর্তমানে এখানে বিভিন্ন সংগঠন ও উপ-সংগঠন যাই গড়ে উঠুক না কেন এতে আমি দোষের কিছু দেখছি না। বাংলাদেশের অজপাড়া গাঁ থেকে উঠে আসা একজন মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে পারছেন এর মধ্য দিয়ে। তবে, একটা পর্যায়ে অনেকে সরেও যাচ্ছেন। আমি মনে করি গণতান্ত্রিক অধিকার সবার রয়েছে। প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার বিষয়টি আপেক্ষিক। বস্তুত এসব সংগঠনিক উৎপত্তিতে কমিউনিটির অনেকগুলো মিডিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অভ্যন্তরিণ কোন্দলে না জড়িয়ে আরো সংগঠন গড়ে উঠুক; তাতে কোন সমস্যা নেই। আমি সবার মঙ্গল কামনা করছি’।
মুজিব উর রহমান: বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপিত এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন। সোসাইটির অবস্থান যদি জানতে চান তাহলে বলবো, ‘অতীতে আমরা ভালো ছিলাম এটা হচ্ছে চীরন্তর প্রবাদ। যা অস্বিকার করা কঠিন। আর বিভক্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের চর্চা বন্ধ না হবে; ততদিন এই বিভক্তি থাকবে। বাংলাদেশ ছোট্ট দেশ হলেও বহু সংষ্কৃতির সমন্বয়ে একটি দেশ। অঞ্চল ভেদে সাংস্কৃতিক চর্চার ভিন্নতা যেখানে প্রকট। তাই এই ভিন্ন সংস্কৃতিকে ঐক্যবদ্ধ করা সময়ের ব্যাপার। তবে, আশাবাদি আমরা। পুরো দেশকে একটি ছাদের নীচে আনার কাঠামো করা হলে তা অসম্ভব কিছু না। তবে এ সবার ছাড় দেয়ার মানসিকতা জাগ্রত করতে হবে। তাই আমি বলবো না সাংগঠনিক বিভাজনে বাংলাদেশ সোসাইটি ব্যর্থ। আমি সিটি কাউন্সিলের প্রার্থী হওয়ার ফলে দেখেছি দেশের মানুষ তখন বিভাজন ভুলে সবাই পাশে দাঁড়ায়। এখানেই আশার বানী দেখছি’।
অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী: বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেখুন আসলে আমরা প্রবাসে কাজ করি যারা তাদের সময়ের মুল্য অনেক। এরপরও দেশের সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক চর্চার ব্রত নিয়ে এবং জনসেবার লক্ষ্যে আমরা অনেক কষ্টের বিনিময়ে একটি সংগঠন করি। সংগঠন গড়া যত কঠিন ভাঙ্গা ততটাই সহজ। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বর্তমানে কমিউনিটিতে আমাদের বাংলাদেশীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। মূলত যারা উদ্যোগরা তাদের মাঝে মতানৈক্য থেকে বিভাজনের সূত্রপাত ঘটে। সংগঠনিক এই বিভাজন খুবই কষ্টের এবং বেদনা দায়ক। মেনে নেয়া যায় না। কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত একটা সংগঠন ভেঙ্গে যায় ব্যক্তি স্বার্থ তথা মনের ভেতরের পুষে থাকা মতের অমিল থেকে। তৈরী করা একটা প্লাটফর্ম কোন ব্যক্তিস্বার্থে বিভাজন হয় এটা আামদের আগামী প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আমি মনে করি আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন আনা উচিত। কারণ আমরা সবাই কিন্তু চাইছি ঐক্য। চেষ্টাও যে হয় না তা ঠিক নয়। তবে আরো ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে উদ্যোগী হলে সফলতা অর্জন সম্ভব’।
বাংলাদেশ কমিউনিটির এসব সংগঠনিক বিভাজনকে ভালো চোখে দেখছেন না কূটনীতিকরাও:
শামীম আহসান: নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেটের কনাসাল জেনারেল শামীম আহসান কমিউনিটির এসব সমিতির উত্থান এবং বিভাজন সম্পর্কে বলেন, ‘আসলে আমার বেশি কিছু বলা নেই। কারন এখানে সবাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রাখেন। তবে, যেহেতু আমাদের কমিউনিটির সংখ্যা অনেক বেড়েছে; সে ক্ষেত্রে আমি এই টুকু বলতে পারি কমিউনিটিকে আরো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি মনে করি ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি এনে দিতে পারবে অনেক সফলতা। যা আগামী প্রজন্মের কাছে নজির স্থাপন করবে’।
ডক্টর এ কে আবদুল মোমেন: জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কমিউনিটি সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সভা-সেমনিারে অংশ নেন। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে তার রয়েছে সরব উপস্থিতি। ৪ জানুয়ারী বাংলাদেশ সোসাইটির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবদুল মোমেন। কমিউনিটির স্বার্থে অনেক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের জন্য মূলধারা’সহ জাতিসংঘে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে বলেও জানান আবদুল মোমেন। কমিউনিটির স্বার্থে সংগঠনগুলোকে আরো উদ্যোগী এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার পরামর্শও দেন তিনি।
এছাড়াও বৃহত্তর সিলেট বিভাগ নিয়ে করা আগের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আজমল হোসেন কুনু বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশ সোসাইটির সদস্য সংখ্যা অনেক কম। আমার প্রথম কাজ হবে তা বাড়ানো। এছাড়া জালালাবাদ এসোসিয়েশনের যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাবো’। তবে, সাংগঠনিক বিভাজনের উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, ৪ জানুয়ারী কুইন্স প্যালেসে আয়োজিত বাংলাদেশ সোসাইটির বিদায়ী কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য থেকে শুরু করে নির্বাচিত প্রতিনিদি’সহ সাবেক ও বর্তমান নেতারা। প্রত্যেকের মুখেই উঠে আসে সোসাইটির উদ্যোগেই বাংলদেশীদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র চালু’সহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা। এছাড়াও প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় বিমানের পরিসেবা চালু নিয়েও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয় সেখান থেকে। সোসাইটির ভবন নিয়েও কথা হয়। সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী নিজেই বভনের জন্য অনুদান হিসেবে ৪৫হাজার ডলার সহায়তা দেন বলেও অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন। অন্যদিকে, বিদায়ী সভাপতিও তাঁর বক্তব্যে সোসাইটির উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান। অনুষ্ঠানের সাধারণ প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলা পত্রিকার প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘এখানে উপস্থিত অনেক নেতাই আছেন ভালো কথা বলেন কিন্তু বাস্তবায়ন হলে কমিউনিটির জন্য অনেক ভালো ফল বয়ে আনতো’। সাংগঠনিক বিভাজনে সোসাইটির উদ্যোগী হওয়ার কথাও জানান তারা। বিভিন্ন বিষয়ে সোসাইটির সাবেক বেশ কয়েকজন নেতা নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রাণের সংগঠন হিসেবে সোসাইটিকে আরো গতিশীল করার লক্ষেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই।
এ সব নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার জানান, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম এর ব্যয় কমিয়ে প্রবাসীদের কল্যাণের বিষয়টি আরো গুরুত্ব দেওয়াই তাঁর প্রথম কাজ হবে’। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

ঐক্য গড়তে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র প্রতি আহ্বান : ৬৪ জেলাকে ‘আমব্রেলা’র ছায়াতলে আনার পরামর্শ

প্রকাশের সময় : ০১:০৪:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

নিউইয়র্ক: উত্তর আমিরকাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা নানা সংগঠনের চালচিত্র নিয়ে বাংলা পত্রিকার ধারাবাহিক প্রতিবেদনে উঠে আসে দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা’সহ বিভিন্ন অঞ্চলের নামে গড়ে অসংখ্য সমিতি ও সংগঠনের নাম। এছাড়াও নানা সময়ে গড়ে উঠা অঞ্চল কিংবা ব্যক্তি নির্ভর এসব সংগঠনের নেপথ্যের খবরও বাংলা পত্রিকার পাঠকের কাছে তুলে ধরা প্রয়াসই ছিল কেবল। কাউকে ছোট করতে কিংবা কোন উদ্দেশ্যে এই প্রতিবেদন করা হয়নি। বরং কমিউনিটির আগামী দিনের স্বপ্ন এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে কী ভাবে তুলে ধরা যায় সে বিষয়টিকে জাগ্রত করতেই স্বাধীন মতামত নেয়া হয়েছে অনেকের। প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যেয়ে সোর্স কিংবা তথ্যের বিভ্রাট নিয়েও নানান জন নানা মতামত দিয়েছেন। যা সবার ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে কোড-আনকোড হিসেবেও প্রকাশিত হয়। আলোচনা-সমালোচনা যাই থাকুক না কেন; এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে বিভাজনের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মহৎ উদ্দেশ্য গুলোকেও তুলে ধরা হয়েছে।
সাংগঠনিক বিভাজনের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেকে প্রতিবাদ করেছেন। কেউ আবার ধন্যবাদও জানিয়েছেন। কমিউনিটিতে বিভিন্ন সময়ে গড়া বিভিন্ন সমিতি ও সংগঠনের ধারাবিহক ঐসব প্রতিবেদনে উঠে আসে অনেক তথ্য ও পরামর্শ। যাতে ফুটে উঠে যুক্তরাষ্ট্র তথা নিউ ইয়র্কে বসবাসকারি বাংলাদেশীরা নিজেদের দেশ-জাতি, সমাজ-সংষ্কৃতি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটা সফলতা অর্জন করলেও; ব্যক্তিস্বার্থ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ক্ষমতার মোহ এবং প্রভাব আর আত্মঅহমিকা বিভাজনের অন্যতম কারণ। ঐক্যের একটি ভীত রচনা করতে যেয়ে জন্ম দিয়েছে অসংখ্য অনৈক্যের বীজ। আর এভাবেই গড়ে উঠে একে একে নানা সংগঠন। যা আগামী প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। বরং অনীহা বাড়ার ফলে ভুলে যেতে থাকবে দেশের কৃষ্টি-কালচার। এমন আশঙ্কার কথাও উঠে আসে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশী-আমেরিকান প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু সৃষ্টকর্ম রেখে যাবার প্রত্যয় নিয়ে এগোতে হলে দরকার হবে ছাড় দেয়ার মানসিকতা’।
সাহিত্যবিদরা বলে গেছেন, ‘ভোগে নয়; ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’। বস্তুত কথাটি প্রবাদেই সীমাবদ্ধ। এর বাস্তব প্রতিফলন খুব একটা চোখে দেখা নেই বললেই চলে। তবুও বাঙালী বীরের জাতি। বাঙালী আশাবাদি। শীক্ত আর সাহসিকতার অনেক নজির রয়েছে। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন’সহ রয়েছে অসংখ্য উদাহরণ। দেশের স্বার্থে আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। আর এ জন্য জাগিয়ে তুলতে হবে বড় ধরণের ত্যাগ কিংবা ছাড় দেড়ার মানসিকতাকে। কথা বলে জানা যায়, ‘ভেদাভেদ কিংবা রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে অন্তত: প্রবাসে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে আসার শুন্যতায় ভুগছে অসংখ্য প্রবাসী। সেই উদ্যোগ নিতে হবে আমব্রেলা থেকে। শুধু দাবিদার হলে হবে না; বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে আমব্রেলার নীচেই সবার ছায়া’।
গেল পর্বে ঢাকা বিভাগীয় অঞ্চল ‘প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ ইন্ক’-এর বর্তমান সভাপতি ফরিদ খান বলেন, ‘আসলে সমিতি কিংবা সংগঠন সৃষ্টি হয় কমিউনিটিকে একটি জায়গা নিয়ে আসার জন্য। পৃথিবীর যে-কোন দেশেই এর নজির আছে। কোন সামাজিক সংগঠন করতে হলে সবার সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। এর মাধ্যমেই তৈরী হয় একটি কমিউনিটি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তার বিপরীত দিকটি ফুটে উঠছে প্রতিনিয়ত। কমিউনিটির স্বার্থে গড়া সংগঠন পৃথক হয়ে বড় থেকে আরো ছোট ছোট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশই। সংগঠন করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা। এর মাধ্যমে কারো ব্যক্তি কিংবা এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি নানা রকম উপকারে আসা যায়। তা না করে উল্টো আমরা বিভাজন এবং দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ি’। তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশ সোসাইটিও। আমরা চাইছি এক হতে। আর এ জন্য উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সোসাইটিকে। একটা ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরী করা আমাদের জন্য খুবই দরকার। কিন্তু বাংলাদেশ সোসাইটি নিজেদের আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন দাবি করলেও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলণ ঘটাতে পারে নি’।
প্রায় একই ভাষায় কথা বলেন কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও সংগঠনের বেশ কয়েকজন সাবেক বর্তমান নেতারা। প্রবাসে সাংগঠনিক বিভাজন নিয়ে বাংলা পত্রিকার ধারাবাহিক প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেন, ‘প্রবাসের সাংগঠনিক বিভাজন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে স্বদিচ্ছা এবং ছাড় দেয়ার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো। আমরা কেউ কারো শত্রু নই। তবু কেন জানি আমরা মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাই। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এর থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই’। তারা আরো বলেন, ‘তবে দীর্ঘ সময়ের এই অনৈক্যের মাঝে ঐক্যের বীজ বফন করতে একটি প্রতিষ্ঠিত চেইনের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যা করতে পারে বাংলাদেশ সোসাইটি। নামে আমব্রেলা হলে চলবে না। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাংলাদেশ ফুটিয়ে তুলতে হবে’।
প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল- প্রায় প্রতিটি বিভাগ জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়কে এক ছাদের নীচে নিয়ে আসা; এটা কী করবে সম্ভব? জবাবে অনেকে জানান, ‘অবশ্যই সম্ভব। উদাহরণ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
বাংলাদেশ সোসাইটি একটি মাদার/আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন। উদাহরণ স্বরূপ সাতটি বিভাগ যেমন বাংলাদেশ সোসাইটি ঢাকা শাখা /চট্টগ্রাম শাখা/সিলেট শাখা/খুলনা শাখা/বরিশাল শাখা/রাজশাহী শাখা/রংপুর শাখা। এভাবেই ৬৪ জেলা এবং শহর-উপশহরের নামের সাথে ‘বাংলাদেশ’ কথাটি লাগিয়ে ‘‘বাংলাদেশ সোসাইটি চাঁদপুর জেলা ইউএসএ ইনক্, বাংলাদেশ সোসাইটি কুমিল্লা, নোয়খালি কিংবা ফরিদপুর শরিয়তপুর, মাদারিপুর, হবিগঞ্জ ইত্যাদি।
পরামর্শের যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এতে করে বিভাজন বন্ধ করা কী সম্ভব? কিংবা নির্বাচন পদ্ধতিই বা কেমন হবে। আলোচনায় উঠে আসে সাংগঠনিক চেইন রক্ষার কিছু পরামর্শ ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়টিও। বিশ্লেষকরা চারটি ধাপের কথা তুলে ধরেছেন:-
প্রথমত: বাংলাদেশ সোসাইটি আমব্রেলা/মাদার সংগঠন।
দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশী সোসাইটি বিভাগীয় (৭টি বিভাগের নাম সংযুক্ত) সংগঠন।
তৃতীয়ত: বাংলাদেশী সোসাইটি জলা ভিত্তিক (৬৪ টি জেলার নাম সংযুক্ত) সংগঠন।
এবং
চতুর্থত: বাংলাদেশী সোসাইটি উপজেলা ভিত্তিক (যতগুলো রয়েছে) সংগঠন।
নির্বাচন পদ্ধতি ও নেতৃত্ব গঠন বিষয়ে পরামর্শে উঠে আসে। বাংলাদেশের উপজেলা ও জেলার (জন্মসূত্রে) প্রবাসী বাসিন্দারা সদস্য হবেন স্ব-স্ব অঞ্চলের। যেখানে সদর জেলা ও উপজেলা অন্তর্ভূক্ত থাকবে। অবস্থানকারি সংগঠনের সদস্যরা এক বা দুই বছরের জন্য তাদের কার্যনির্বাহি প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। এরপর প্রতিটি জেলা (৬৪) বিভাগীয় পর্যায়ের সংগঠনের কার্যনির্বাহি পরিষদ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক’সহ সম্পাদকীয় প্যানেলে একটি ডেলিগেট কোরাম গঠন হতে পারে। যা ৫ থেকে ৭ সদস্যের। ৭টি বিভাগীয় জেলা সংগঠনের ডেলিগেট সদস্যরা হবেন বিভাগীয় সংগঠনের ভোটার। তাদের ভোটেই নির্বাচিত হবে নিজ বিভাগীয় সংগঠনের নেতৃত্ব। এরপর আসবে বাংলাদেশ সোসাইটি। একই কায়দা ৭টি বিভাগীয় সংগঠনের কার্যনির্বাহি কর্তৃক গঠিত ডেলিগেট সদস্যরা (ভোটার) নির্বাচিত করবেন বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃত্ব। আর এভাবেই গড়ে উঠবে একটি ছায়ার নীচে পুরো বাংলাদেশ। যাকে বলা হবে ‘‘একই বৃত্তে পুরাটাই’’। ফলে নির্বাচনীয় ব্যয় কমবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি হবে। মূলধারার রাজনীতিবিদদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এছাড়াও নেতৃত্ব তৈরী হবে আগামী প্রজন্মের।
উল্লেখ্য, শুধুমাত্র সাম্প্রতিক অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ মিলিয়ন তথা ১শ ৫০ হাজার ডলার। নির্বাচন কমিশন ৫০ এবং দু’টি প্যানেলের ৫০ করে ১শ ডলার। সমালোচকরা বলছেন এসব ব্যয়ের কোন যৌক্তিকতা নেই। যা কমিউনিটির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। তাহলেই বিজয় সম্ভব। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহ থাকলে এটা আমাদের কমিউনিটির জন্য একটি মাইল ফলক হিসেবে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলেও আশা করছেন অসংখ্য প্রবাসী ও কমিউনিটি সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, বাংলাদেশের ২১ ফেব্রুয়ারি (মাতৃভাষা দিবস), জাতীয় দিবস কিংবা অন্যান্য দিবসগুলোতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর লোক কিংবা সংগঠনের অভাব নেই এখানে। বিশৃঙ্খল পরিবেশে সবাই কমিউনিটির পত্রিকার শিরোনামে এসেই তৃপ্ত। এসব দিবসকে ঘিরে খন্ড-খন্ড অনুষ্ঠান না করে একটি ব্যানারে সবাই ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে অংশ নিলে কমিউনিটি নয়; আসবে মুলধারা’সহ বিশ্বগণমাধ্যমে। জাগ্রত হবে আমেরিকান প্রশাসন। গুরুত্ব বাড়বে বাংলাদেশী কমিউনিটির। প্রবাসে তাদের কর্মকান্ড ইতিবাচক ভূমিকায় সহায়ক হবে। বাস্তবিকভাবে সবাই একত্রিত হয়ে যেকোন সমস্যার সমাধান করা কিংবা দাবী আদায় করা সহজ। বিধি বাম। দাবি আদায় তো দুরের কথা বিপরীতমুখি মনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী সংগঠনের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে।
অভিযোগ আছে সংগঠন গুলোর কাজ শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করা। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচুর অর্থ অপচয় এবং নির্বাচন এর পর কারচুপির অভিযোগ যেখানে হর-হামেশা। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রের অভিবাসী, নাগরিক কিংবা আবাসিক বাসিন্দা হয়েও বৈশ্বিক মন-মানসিকতা নিজেদের মাঝে জাগ্রত করতে বরাবরই উদাসীন প্রবাসীরা। লক্ষ্য একটাই; কমিউনিটির পত্র-পত্রিকা গুলোতে ছবি ছাপানো এবং সংবাদের শিরোনাম হওয়া। এতগুলো সংগঠনের শুরুটা হয় আনন্দঘন পরিবেশ এবং জনকল্যাণের ব্রত নিয়ে। কিছুদিন পর নেতৃত্বের দ্বন্ধ এবং অর্ন্তকলহের কারণে ভদ্র, ঝামেলামুক্ত সাধারণ নাগরিকরা নিজেকে দুরে সরিয়ে নেন এসব থেকে। যার প্রমাণ অসংখ্য। এছাড়াও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। প্রধানমন্ত্রী অথবা বিরোধীদলীয় নেতা-নেত্রীদের যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ও পরে বিমান বন্দর, জাতিসংঘ মিশন, ওয়াশিংটন ডিসির সংশ্লিষ্ট দূতাবাস ও হোয়াইট হাউজের সামনে কালো পতাকা প্রদর্শন, বিক্ষোভ, পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচী যা নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। যা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মত পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের মধ্যে তা নেই বল্লেই চলে। শুধু তাই নয়; দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। কমিউনিটির এসব রঙ-তামাশা থামাতে কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের হস্তক্ষেপ জাতি হিসেবে আমাদের খাটো করছে কেবল। যা সত্যিই লজ্জার বিষয়। সাধারণ প্রবাসীদের মনে প্রশ্ন জাগে; এসবরে গুরুত্ব কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্র তথা উত্তর আমেরকিাতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠা প্রবাসে বাংলাদেশীদের এসব সংগঠনের উৎপত্তি এবং বিভাজন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া’সহ অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিশিষ্ট প্রবাসীরা। তারা বলেন এসব না করে জনকল্যান মুলক কর্মকান্ড বৃদ্ধিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশনের সাথে অনেকটা ক্ষোভের সাথে সমিতি ও সংগঠনের বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন তারা। বক্তারা বলেন, এখানে গড়ে উঠা বাংলাদেশের আঞ্চলিক সমিতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজনও কম নয়। রাজনৈতিক দল নিয়ে আমাদের বলার কিছু নাই। রাজনীতি তো রাজনীতি। যা এখন এক নোংরা খেলার বাহন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের দিকে তাকালে রাজনীতির শব্দটির আভিধানিক অর্থের সংজ্ঞাটি ভুল প্রমাণিত হয়। সে সব বাদ দিয়ে আমরা বলতে চাই; আড্ডা দেবার, মিলিত হবার তথা সংগঠন করবার প্রবণতা বাংলাদেশীদের মধ্যে খুব বেশী। তবে সব নেতিবাচক দেখলে হবে না। এর রয়েছে ইতিবাচক দিকও। কিন্তু তা হতে হবে বাস্তব সন্মত এবং স্বার্থবিরোধী।
কবি শহীদ কাদরী: বাংলা ভাষার অন্যতম একজন কবি তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে প্রবাসে অবস্থান করছেন। সমিতি ও সাংগঠনিক বিভাজন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা কথা আছে, যখন তিনজন বাঙ্গালী এক সাথে হয় তখন একটি নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়। আবার যখন পাঁচজন বাঙ্গালী এক সাথে হয় তখন নতুন একটি সাহিত্য পত্রিকার জন্ম হয়। বাঙ্গালীরা চিরকালই দলাদলি করতে পছন্দ করে’। প্রখ্যাত কবি শহীদ কাদরী আরো বলেন, ‘এই সব দলাদলিকে সুক্ষ্ম বিচার বোধের পরিচায়ক বলেই আমি মনে করি। সুক্ষ্ম বিচার বোধ দিয়েই বাঙ্গালী, বাংলাদেশীরা এক সময় একতাবদ্ধ হয়ে বাংলার মূখকে আরো উজ্জ্বল করবে। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার বর্গমাইল দুরে পারস্পরিক কলহ-বিবাদ আর দলাদলি ছেড়ে একতা আর ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হবে এটাই প্রত্যাশা’।
হাসান ফেরদৌস: প্রখ্যাত এই কলামিস্ট-লেখক ও সাংবাদিক বলেন, ‘প্রবাসে রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা বাদে অন্য সংগঠনগুলোকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তবে, বর্তমানে এসব সংগঠনের দলাদলি ও কলহতে চরম উদ্বেগ আর বিরক্তি ভোদ করছি। এর থেকে আমাদের দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে’। তিনি আশা করেন, ‘সময় এসেছে পরিবর্তনের। তবে এজন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। একদিন আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতিতে রূপান্তরিত হবো। প্রবাসে বাংলাদেশীদের কমিউনিটির যাত্রা শুরু হয়েছে খুব বেশীদিন হয়নি। চলার পথের এই আবর্জনা এক দিন দুর হবেই হবে’।
এম. এম. শাহীন: কমিউনিটির অতি পরিচিত মুখ এবং সাপ্তাহিক ঠিকানার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি বলেন, ‘যখন আমি প্রথম এদেশে আসি; তখন আমাদের কমিউনিটির সংগঠনিক উৎপত্তি দেখে আসান্বিত হয়েছি। গর্ব করেছি আমরাও পারি। কিন্তু দিনে দিনে দেখি ক্ষমতা, স্বার্থপরতা আর বিভাজন আমাদের আরো পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। যা খুবই হাতাশাজনক। তাই এসব থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমাদের সংগঠনগুলোর ঐক্যের বিকল্প নেই। আর এ জন্য দরকার অনেক বড় ত্যাগ’।
নঈম নিজাম: সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসেন ‘দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এর সম্পাদক নঈম নিজাম। সবার মত তিনিও প্রবাসে গড়ে উঠা রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর বিভাজনে আহত হন। সমিতি ও সংগঠনের কারিগরদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘এখানে দেশের নেতাদের তোষামোদ করার যে সংস্কৃতি চালু রয়েছে তা প্রকারান্তরে দেশের জন্যই ক্ষতিকর। এর ফলে দেশের বিরাজমান সংকট নিরসণে প্রবাসীরা কোন উদ্যোগ নিতে পারবে না। উল্টো দেশ থেকে আসা রাজনৈতিক নেতাদের তোষামদে ব্যস্ত থাকে এসব সংগঠন। এখানে দেশের শান্তি রক্ষায় চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ পাবে কী করে’? এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনী ব্যয় নিয়ে আশ্চার্য্য হন তিনি। বলেন, ‘এত টাকা ব্যয় করে নির্বাচন করছেন। অথচ তা না করে জনকল্যাণে অর্থ সহায়তা করতে পারলে অনেক লাভোবান হতাম আমরা। তবুও আশা করছি এসবের পরিবর্তনে এগিয়ে আসবেন সংশ্লিষ্টরা’।
মুত্তালিব বিশ্বাস: প্রবাসী এই সঙ্গীতজ্ঞ উত্তর আমেরিকায় গড়া প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নামে সংগঠনিক উৎপত্তি ও বিভাজনকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অন্যতম কারন হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরণের সাংগঠনিক বিভাজন আমরা জাতিগত ভাবেই পেয়েছি। একজনকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবার যে প্রবণতা আমাদের মধ্যে বিরাজমান; যা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখানেও ভূতের আছরের মত ভর করেছে। বারো হাত কাকুঁড়ের তের হাত বিচির মত এখানে এত দল, উপ-দল, জেলা ভিত্তিক, ইউনিয়ন ভিত্তিক, সম্প্রদায় ভিত্তিক যা অভাবনীয়। সত্যিই দু:খজনক। এসবে মিলনের লক্ষণ না ভাঙ্গনের লক্ষণ তা আমি বুঝিনা’।
ডক্টর শওকত আলী: লং আইল্যান্ড ইউনির্ভাসিটির এই অধ্যাপক বলেন, ‘অনৈক্যের ভিতরেও ঐক্য গড়া সম্ভব। বিষয়টা হচ্ছে বর্তমানে এখানে বিভিন্ন সংগঠন ও উপ-সংগঠন যাই গড়ে উঠুক না কেন এতে আমি দোষের কিছু দেখছি না। বাংলাদেশের অজপাড়া গাঁ থেকে উঠে আসা একজন মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে পারছেন এর মধ্য দিয়ে। তবে, একটা পর্যায়ে অনেকে সরেও যাচ্ছেন। আমি মনে করি গণতান্ত্রিক অধিকার সবার রয়েছে। প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার বিষয়টি আপেক্ষিক। বস্তুত এসব সংগঠনিক উৎপত্তিতে কমিউনিটির অনেকগুলো মিডিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অভ্যন্তরিণ কোন্দলে না জড়িয়ে আরো সংগঠন গড়ে উঠুক; তাতে কোন সমস্যা নেই। আমি সবার মঙ্গল কামনা করছি’।
মুজিব উর রহমান: বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপিত এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন। সোসাইটির অবস্থান যদি জানতে চান তাহলে বলবো, ‘অতীতে আমরা ভালো ছিলাম এটা হচ্ছে চীরন্তর প্রবাদ। যা অস্বিকার করা কঠিন। আর বিভক্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের চর্চা বন্ধ না হবে; ততদিন এই বিভক্তি থাকবে। বাংলাদেশ ছোট্ট দেশ হলেও বহু সংষ্কৃতির সমন্বয়ে একটি দেশ। অঞ্চল ভেদে সাংস্কৃতিক চর্চার ভিন্নতা যেখানে প্রকট। তাই এই ভিন্ন সংস্কৃতিকে ঐক্যবদ্ধ করা সময়ের ব্যাপার। তবে, আশাবাদি আমরা। পুরো দেশকে একটি ছাদের নীচে আনার কাঠামো করা হলে তা অসম্ভব কিছু না। তবে এ সবার ছাড় দেয়ার মানসিকতা জাগ্রত করতে হবে। তাই আমি বলবো না সাংগঠনিক বিভাজনে বাংলাদেশ সোসাইটি ব্যর্থ। আমি সিটি কাউন্সিলের প্রার্থী হওয়ার ফলে দেখেছি দেশের মানুষ তখন বিভাজন ভুলে সবাই পাশে দাঁড়ায়। এখানেই আশার বানী দেখছি’।
অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী: বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেখুন আসলে আমরা প্রবাসে কাজ করি যারা তাদের সময়ের মুল্য অনেক। এরপরও দেশের সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক চর্চার ব্রত নিয়ে এবং জনসেবার লক্ষ্যে আমরা অনেক কষ্টের বিনিময়ে একটি সংগঠন করি। সংগঠন গড়া যত কঠিন ভাঙ্গা ততটাই সহজ। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বর্তমানে কমিউনিটিতে আমাদের বাংলাদেশীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। মূলত যারা উদ্যোগরা তাদের মাঝে মতানৈক্য থেকে বিভাজনের সূত্রপাত ঘটে। সংগঠনিক এই বিভাজন খুবই কষ্টের এবং বেদনা দায়ক। মেনে নেয়া যায় না। কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত একটা সংগঠন ভেঙ্গে যায় ব্যক্তি স্বার্থ তথা মনের ভেতরের পুষে থাকা মতের অমিল থেকে। তৈরী করা একটা প্লাটফর্ম কোন ব্যক্তিস্বার্থে বিভাজন হয় এটা আামদের আগামী প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আমি মনে করি আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন আনা উচিত। কারণ আমরা সবাই কিন্তু চাইছি ঐক্য। চেষ্টাও যে হয় না তা ঠিক নয়। তবে আরো ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে উদ্যোগী হলে সফলতা অর্জন সম্ভব’।
বাংলাদেশ কমিউনিটির এসব সংগঠনিক বিভাজনকে ভালো চোখে দেখছেন না কূটনীতিকরাও:
শামীম আহসান: নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেটের কনাসাল জেনারেল শামীম আহসান কমিউনিটির এসব সমিতির উত্থান এবং বিভাজন সম্পর্কে বলেন, ‘আসলে আমার বেশি কিছু বলা নেই। কারন এখানে সবাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রাখেন। তবে, যেহেতু আমাদের কমিউনিটির সংখ্যা অনেক বেড়েছে; সে ক্ষেত্রে আমি এই টুকু বলতে পারি কমিউনিটিকে আরো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি মনে করি ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি এনে দিতে পারবে অনেক সফলতা। যা আগামী প্রজন্মের কাছে নজির স্থাপন করবে’।
ডক্টর এ কে আবদুল মোমেন: জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কমিউনিটি সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সভা-সেমনিারে অংশ নেন। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে তার রয়েছে সরব উপস্থিতি। ৪ জানুয়ারী বাংলাদেশ সোসাইটির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবদুল মোমেন। কমিউনিটির স্বার্থে অনেক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের জন্য মূলধারা’সহ জাতিসংঘে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে বলেও জানান আবদুল মোমেন। কমিউনিটির স্বার্থে সংগঠনগুলোকে আরো উদ্যোগী এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার পরামর্শও দেন তিনি।
এছাড়াও বৃহত্তর সিলেট বিভাগ নিয়ে করা আগের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আজমল হোসেন কুনু বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশ সোসাইটির সদস্য সংখ্যা অনেক কম। আমার প্রথম কাজ হবে তা বাড়ানো। এছাড়া জালালাবাদ এসোসিয়েশনের যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাবো’। তবে, সাংগঠনিক বিভাজনের উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, ৪ জানুয়ারী কুইন্স প্যালেসে আয়োজিত বাংলাদেশ সোসাইটির বিদায়ী কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য থেকে শুরু করে নির্বাচিত প্রতিনিদি’সহ সাবেক ও বর্তমান নেতারা। প্রত্যেকের মুখেই উঠে আসে সোসাইটির উদ্যোগেই বাংলদেশীদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র চালু’সহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা। এছাড়াও প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় বিমানের পরিসেবা চালু নিয়েও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয় সেখান থেকে। সোসাইটির ভবন নিয়েও কথা হয়। সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী নিজেই বভনের জন্য অনুদান হিসেবে ৪৫হাজার ডলার সহায়তা দেন বলেও অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন। অন্যদিকে, বিদায়ী সভাপতিও তাঁর বক্তব্যে সোসাইটির উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান। অনুষ্ঠানের সাধারণ প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলা পত্রিকার প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘এখানে উপস্থিত অনেক নেতাই আছেন ভালো কথা বলেন কিন্তু বাস্তবায়ন হলে কমিউনিটির জন্য অনেক ভালো ফল বয়ে আনতো’। সাংগঠনিক বিভাজনে সোসাইটির উদ্যোগী হওয়ার কথাও জানান তারা। বিভিন্ন বিষয়ে সোসাইটির সাবেক বেশ কয়েকজন নেতা নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রাণের সংগঠন হিসেবে সোসাইটিকে আরো গতিশীল করার লক্ষেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই।
এ সব নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার জানান, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম এর ব্যয় কমিয়ে প্রবাসীদের কল্যাণের বিষয়টি আরো গুরুত্ব দেওয়াই তাঁর প্রথম কাজ হবে’। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)