নিউইয়র্ক ০৮:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রেমিট্যান্স প্রবাহে কাটছে না মন্থর গতি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩১:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০২২
  • / ১ বার পঠিত

মন্থর গতি কাটছে না রেমিট্যান্স প্রবাহে। এ জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকিং চ্যানেলে ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে প্রবাসী আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ২৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৫ কোটি যুক্তরাষ্ট্রের ডলার। তবে যে হারে রেমিট্যান্স আসছে তা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে ১৬০ কোটি ডলার পার হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। হুন্ডি প্রতিরোধে ইতোমধ্যে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়নে প্রতিরোধে গঠন করা হয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে প্রেরিত রেমিট্যান্সের ২৩০ জন বেনিফিশিয়ারির হিসাবে সাময়িকভাবে উত্তোলন স্থগিত করে বিএফআইইউ। বলা হয়, ভবিষ্যতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলে হিসাবগুলো খুলে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈধ পথে প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। অর্থনীতির অন্যতম এ সূচকটির নেতিবাচক গতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সরকারকে। এমন পরিস্থিতিতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে বিভিন্ন শর্ত শিথিল, চার্জ ফি মওকুফসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। ব্যাংকিং চ্যানেলে বাড়ছে না রেমিট্যান্স প্রবাহ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, নভেম্বরের ২৫ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার এসেছে। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে এসেছে ৯ কোটি ৬ লাখ, ডাচবাংলা ব্যাংকে ৮ কোটি ৫৫ লাখ, সোনালী ব্যাংক ৮ কোটি ১৪ লাখ এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এসেছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার প্রবাসী আয়।

এ দিকে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানোর অন্যতম উৎস রেমিট্যন্স সরবরাহ আরো কমে গেল। আগের মাসের ধারাবাহিকতায় গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৭.৩৭ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে যেখানে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৪ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো চাপে পড়ে গেল। কারণ আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দায় দেড় বিলিয়ন ডলারের ওপরে পরিশোধ করতে হবে। গতকাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার। দেড় বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়নের ঘরে নেমে যাবে। আর ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের হিসেব পদ্ধতি অনুসরণ করে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ (১.৪৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এরপর আট মাস পর সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আসে গত অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে। গত জুলাইতে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৯ কোটি মার্কিন ডলার। এর পরের মাস থেকে কমতে শুরু করে। গত আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। সেপ্টেম্বরে এক ধাক্কায় কমে ১৬৪ কোটি ডলারে নেমে যায়। আর অক্টোবরে তা আরো কমে নামল ১৫২ কোটি ডলারে।

কেন রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে, এমন প্রশ্নের জবাবে একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ডলারের মূল্য কমিয়ে আনার জন্য রেমিট্যান্সের ডলারের মূল্য বেঁধে দেয়া হয়। প্রথমে ১০৮ টাকা করা হয় প্রতি ডলার, যার আগের দিন ছিল ১১৫ টাকা। পরে তা দুই দফায় এক টাকা কমিয়ে ১০৭ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি বলে মনে করা হচ্ছে। অপর দিকে করোনার মধ্যে হুন্ডি তৎপরতা কমে গিয়েছিল। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হুন্ডি তৎপরতা আরো বেড়ে গেছে। সবমিলেই রেমিট্যান্সের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক কমায় রিজার্ভ নেমেছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে। গতকাল রোববার দিন শেষে ৩৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। তবে পরপর দুই দিন ব্যাংকগুলোর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহে ব্যাংকগুলোর যে চাহিদা রয়েছে তাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হবে। এতে রিজার্ভ আরো কমে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

রেমিট্যান্স প্রবাহে কাটছে না মন্থর গতি

প্রকাশের সময় : ১২:৩১:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০২২

মন্থর গতি কাটছে না রেমিট্যান্স প্রবাহে। এ জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকিং চ্যানেলে ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে প্রবাসী আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ২৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৫ কোটি যুক্তরাষ্ট্রের ডলার। তবে যে হারে রেমিট্যান্স আসছে তা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে ১৬০ কোটি ডলার পার হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। হুন্ডি প্রতিরোধে ইতোমধ্যে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়নে প্রতিরোধে গঠন করা হয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে প্রেরিত রেমিট্যান্সের ২৩০ জন বেনিফিশিয়ারির হিসাবে সাময়িকভাবে উত্তোলন স্থগিত করে বিএফআইইউ। বলা হয়, ভবিষ্যতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলে হিসাবগুলো খুলে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈধ পথে প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। অর্থনীতির অন্যতম এ সূচকটির নেতিবাচক গতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সরকারকে। এমন পরিস্থিতিতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে বিভিন্ন শর্ত শিথিল, চার্জ ফি মওকুফসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। ব্যাংকিং চ্যানেলে বাড়ছে না রেমিট্যান্স প্রবাহ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, নভেম্বরের ২৫ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার এসেছে। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে এসেছে ৯ কোটি ৬ লাখ, ডাচবাংলা ব্যাংকে ৮ কোটি ৫৫ লাখ, সোনালী ব্যাংক ৮ কোটি ১৪ লাখ এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এসেছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার প্রবাসী আয়।

এ দিকে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানোর অন্যতম উৎস রেমিট্যন্স সরবরাহ আরো কমে গেল। আগের মাসের ধারাবাহিকতায় গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৭.৩৭ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে যেখানে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৪ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো চাপে পড়ে গেল। কারণ আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দায় দেড় বিলিয়ন ডলারের ওপরে পরিশোধ করতে হবে। গতকাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার। দেড় বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়নের ঘরে নেমে যাবে। আর ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের হিসেব পদ্ধতি অনুসরণ করে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ (১.৪৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এরপর আট মাস পর সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আসে গত অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে। গত জুলাইতে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৯ কোটি মার্কিন ডলার। এর পরের মাস থেকে কমতে শুরু করে। গত আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। সেপ্টেম্বরে এক ধাক্কায় কমে ১৬৪ কোটি ডলারে নেমে যায়। আর অক্টোবরে তা আরো কমে নামল ১৫২ কোটি ডলারে।

কেন রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে, এমন প্রশ্নের জবাবে একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ডলারের মূল্য কমিয়ে আনার জন্য রেমিট্যান্সের ডলারের মূল্য বেঁধে দেয়া হয়। প্রথমে ১০৮ টাকা করা হয় প্রতি ডলার, যার আগের দিন ছিল ১১৫ টাকা। পরে তা দুই দফায় এক টাকা কমিয়ে ১০৭ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি বলে মনে করা হচ্ছে। অপর দিকে করোনার মধ্যে হুন্ডি তৎপরতা কমে গিয়েছিল। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হুন্ডি তৎপরতা আরো বেড়ে গেছে। সবমিলেই রেমিট্যান্সের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক কমায় রিজার্ভ নেমেছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে। গতকাল রোববার দিন শেষে ৩৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। তবে পরপর দুই দিন ব্যাংকগুলোর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহে ব্যাংকগুলোর যে চাহিদা রয়েছে তাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হবে। এতে রিজার্ভ আরো কমে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।