নিউইয়র্ক ০৮:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মাদক সরবরাহ বন্ধ না করেই ডোপ টেস্ট?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৩৭:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুন ২০২২
  • / ১ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : গাড়ি চালকদের পর এবার সরকারি চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের চিন্তা করছে সরকার৷ কিন্তু মাদকের সরবরাহ বন্ধ না করে এই ধরনের ডোপ টেস্ট কতটা ফল দেবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক নির্মূলেঅনেকগুলো প্রক্রিয়ার একটি ডোপ টেস্ট৷ শুধু ডোপ টেস্ট দিয়ে কোন ফল মিলবে না৷ সরকারের সবগুলো সংস্থাকে একসঙ্গে মাদক নির্মূলে কাজ করতে হবে৷
রোববার ছিল আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস৷ সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে দিবসটি৷ প্রতি বছরই ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়৷ এবারের প্রতিপাদ্য, ‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি৷’
দিবসটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে দেশেও৷ কারণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাদক সেবন, ব্যবসা ও পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশ অন্যতম৷ মাদকের ভয়াল গ্রাস দেশে ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আজিজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব ধরনের মাদকের বিষয়ে আমাদের সতর্কতা রয়েছে৷ পাশাপাশি নতুন নতুন মাদক নিয়েও আমরা গবেষণা করছি৷ যখন যে মাদকটি সামনে আসছে সেটার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷”
মাদক বিরোধী দিবসের এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সরকারি চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে শিগগিরই আইন হচ্ছে৷ একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রেও ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে আইন সংশোধন করা হচ্ছে৷ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দাবি করেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে৷ শুধু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ নয়, যুব সমাজকে মাদকদ্রব্যের ছোবল থেকে রক্ষার কাজও করছে বাহিনীগুলো৷
প্রতিবেশী দেশ থেকেমাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতেও কাজ করছে সরকার৷ ভয়ঙ্কর ইয়াবা ও আইস মিয়ানমার থেকে আসছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘সে দেশকে (মিয়ানমার) অনুরোধ করেছি, তারা কথা রাখেন না৷ ইয়াবা সাপ্লাই বন্ধ করতে বলেও কাজ হয়নি৷ তবে ভারত সরকার ইতোমধ্যে সীমান্তঘেঁষা ফেনসিডিল কারখানাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে৷”
রোহিঙ্গাদের অনেকেই মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, তারা মিয়ানমার থেকে এ দেশে মাদক নিয়ে আসে৷ মিয়ানমার সীমান্তে ইতোমধ্যে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে৷ মাদকের সঙ্গে যারাই জড়িত, প্রশাসন বা রাজনীতিক সবাইকে আইনের মুখোমুখি করা হচ্ছে৷ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে৷ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না৷
বর্তমানে গাড়ি চালকদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স পেতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ এ নিয়েও চালকদের ভোগান্তির শেষ নেই৷ আইন করে বাধ্যতামূলক করলেও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও আরেকটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও টেস্ট হচ্ছে না৷ ফলে এই দু’টি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার জন্য চালকদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷ এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা৷
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সবগুলো হাসপাতালে গাড়ি চালকদের ডোপ টেস্টের নির্দেশনা দেওয়া হলেও এখনও চালু হয়নি৷ আর মাদক নির্মূলে অনেকগুলো প্রক্রিয়ার একটি ডোপ টেস্ট৷ শুধু ডোপ টেস্ট দিয়ে হবে না৷ সবকিছু মিলিয়ে চেষ্টা করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে৷”
জানা গেছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ মাদক সংশ্লিষ্ট ২০ হাজারেরও বেশি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে৷ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে সব সংস্থা মিলে ইয়াবা জব্দ করেছে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮১ হাজার৷ ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৮ হাজার বোতল৷ কোকেন জব্দ করা হয় প্রায় ৪ কেজি, হেরোইন ২১০ কেজি৷ ২০২১ সালে মাদক-সংক্রান্ত ৪৭ শতাংশ মামলায় আসামির সাজা হয়েছে৷ এই হার ২০২০ সালে ছিল ৪৩ শতাংশ৷
এদিকে, ফেনসিডিল ও ইয়াবার পর নেশা হিসেবে এখন ক্রিস্টাল মেথ বা আইস ‘জনপ্রিয়’ হয়ে উঠছে৷ প্রায়ই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জব্দ হচ্ছে আইস৷ দেশে যেসব রুট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে, তার প্রায় সব ক’টি দিয়ে আইসও আসছে৷ দেশের যে কোনো প্রান্তে হাত বাড়ালেই এখনও মিলছে ইয়াবা ও ফেনসিডিল৷ একইভাবে আইসও ছড়িয়ে পড়ছে৷ এদেশে তুলনামূলক নতুন এই মাদক ঠেকানোকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা৷
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এতদিন আইস আসত বিমানে৷ ফলে দেশে আইসের প্রভাব কম ছিল৷ কিন্তু সম্প্রতি একটা চালান ধরার পর জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকেও আইস আসছে৷ ফলে এখন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এটা ছড়িয়ে পড়ার৷ আমরা সব ধরনের মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি৷”
গত বছর মাদক বহনের দায়ে ১৩ হাজার ৯০৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫ হাজার ২০৬ জনকে গ্রেপ্তার করে সাজা দেওয়া হয়৷ ২০২০ সালে ২৩ হাজার ১৯৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ড দেওয়া হয় ১০ হাজার ৪৯৮ জনকে৷ এ ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও টেকনাফের জন্য গঠন করা হয়েছে বিশেষ টাস্কফোর্স৷ এর আওতায় সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে৷
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনেও আইসের ক্ষতিকর দিক উঠে এসেছে৷ এতে বলা হয়, এটি শক্তিশালী আসক্তি সৃষ্টিকারী মাদক৷ এতে আসক্ত ব্যক্তির ক্ষুধামান্দ্য ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়৷ অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরি করে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ এ কারণে অনেকে সহিংস আচরণও করেন৷ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাদক নিয়ন্ত্রণে আন্তঃবাহিনী ও সংস্থার সমন্বয় নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ৷ মাদকের চাহিদা, সরবরাহ ও ক্ষতি হ্রাস এবং নানামুখী কাজে ১১টি মন্ত্রণালয় জড়িত৷
২০১৮ সালের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেছিল র‌্যাব৷ এরপর পৃথকভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালায় পুলিশ, বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ একের পর এক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে৷ অনেকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’-কে মাদক নির্মূলে শেষ ভরসা মনে করলেও এটা খুব ফলপ্রসূ হয়নি৷ খবর ডয়চে
হককথা/এমউএ

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

মাদক সরবরাহ বন্ধ না করেই ডোপ টেস্ট?

প্রকাশের সময় : ০১:৩৭:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুন ২০২২

বাংলাদেশ ডেস্ক : গাড়ি চালকদের পর এবার সরকারি চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের চিন্তা করছে সরকার৷ কিন্তু মাদকের সরবরাহ বন্ধ না করে এই ধরনের ডোপ টেস্ট কতটা ফল দেবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক নির্মূলেঅনেকগুলো প্রক্রিয়ার একটি ডোপ টেস্ট৷ শুধু ডোপ টেস্ট দিয়ে কোন ফল মিলবে না৷ সরকারের সবগুলো সংস্থাকে একসঙ্গে মাদক নির্মূলে কাজ করতে হবে৷
রোববার ছিল আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস৷ সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে দিবসটি৷ প্রতি বছরই ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়৷ এবারের প্রতিপাদ্য, ‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি৷’
দিবসটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে দেশেও৷ কারণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাদক সেবন, ব্যবসা ও পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশ অন্যতম৷ মাদকের ভয়াল গ্রাস দেশে ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আজিজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব ধরনের মাদকের বিষয়ে আমাদের সতর্কতা রয়েছে৷ পাশাপাশি নতুন নতুন মাদক নিয়েও আমরা গবেষণা করছি৷ যখন যে মাদকটি সামনে আসছে সেটার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷”
মাদক বিরোধী দিবসের এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সরকারি চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে শিগগিরই আইন হচ্ছে৷ একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রেও ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে আইন সংশোধন করা হচ্ছে৷ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দাবি করেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে৷ শুধু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ নয়, যুব সমাজকে মাদকদ্রব্যের ছোবল থেকে রক্ষার কাজও করছে বাহিনীগুলো৷
প্রতিবেশী দেশ থেকেমাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতেও কাজ করছে সরকার৷ ভয়ঙ্কর ইয়াবা ও আইস মিয়ানমার থেকে আসছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘সে দেশকে (মিয়ানমার) অনুরোধ করেছি, তারা কথা রাখেন না৷ ইয়াবা সাপ্লাই বন্ধ করতে বলেও কাজ হয়নি৷ তবে ভারত সরকার ইতোমধ্যে সীমান্তঘেঁষা ফেনসিডিল কারখানাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে৷”
রোহিঙ্গাদের অনেকেই মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, তারা মিয়ানমার থেকে এ দেশে মাদক নিয়ে আসে৷ মিয়ানমার সীমান্তে ইতোমধ্যে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে৷ মাদকের সঙ্গে যারাই জড়িত, প্রশাসন বা রাজনীতিক সবাইকে আইনের মুখোমুখি করা হচ্ছে৷ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে৷ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না৷
বর্তমানে গাড়ি চালকদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স পেতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ এ নিয়েও চালকদের ভোগান্তির শেষ নেই৷ আইন করে বাধ্যতামূলক করলেও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও আরেকটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও টেস্ট হচ্ছে না৷ ফলে এই দু’টি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার জন্য চালকদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷ এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা৷
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সবগুলো হাসপাতালে গাড়ি চালকদের ডোপ টেস্টের নির্দেশনা দেওয়া হলেও এখনও চালু হয়নি৷ আর মাদক নির্মূলে অনেকগুলো প্রক্রিয়ার একটি ডোপ টেস্ট৷ শুধু ডোপ টেস্ট দিয়ে হবে না৷ সবকিছু মিলিয়ে চেষ্টা করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে৷”
জানা গেছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ মাদক সংশ্লিষ্ট ২০ হাজারেরও বেশি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে৷ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে সব সংস্থা মিলে ইয়াবা জব্দ করেছে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮১ হাজার৷ ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৮ হাজার বোতল৷ কোকেন জব্দ করা হয় প্রায় ৪ কেজি, হেরোইন ২১০ কেজি৷ ২০২১ সালে মাদক-সংক্রান্ত ৪৭ শতাংশ মামলায় আসামির সাজা হয়েছে৷ এই হার ২০২০ সালে ছিল ৪৩ শতাংশ৷
এদিকে, ফেনসিডিল ও ইয়াবার পর নেশা হিসেবে এখন ক্রিস্টাল মেথ বা আইস ‘জনপ্রিয়’ হয়ে উঠছে৷ প্রায়ই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জব্দ হচ্ছে আইস৷ দেশে যেসব রুট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে, তার প্রায় সব ক’টি দিয়ে আইসও আসছে৷ দেশের যে কোনো প্রান্তে হাত বাড়ালেই এখনও মিলছে ইয়াবা ও ফেনসিডিল৷ একইভাবে আইসও ছড়িয়ে পড়ছে৷ এদেশে তুলনামূলক নতুন এই মাদক ঠেকানোকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা৷
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এতদিন আইস আসত বিমানে৷ ফলে দেশে আইসের প্রভাব কম ছিল৷ কিন্তু সম্প্রতি একটা চালান ধরার পর জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকেও আইস আসছে৷ ফলে এখন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এটা ছড়িয়ে পড়ার৷ আমরা সব ধরনের মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি৷”
গত বছর মাদক বহনের দায়ে ১৩ হাজার ৯০৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫ হাজার ২০৬ জনকে গ্রেপ্তার করে সাজা দেওয়া হয়৷ ২০২০ সালে ২৩ হাজার ১৯৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ড দেওয়া হয় ১০ হাজার ৪৯৮ জনকে৷ এ ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও টেকনাফের জন্য গঠন করা হয়েছে বিশেষ টাস্কফোর্স৷ এর আওতায় সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে৷
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনেও আইসের ক্ষতিকর দিক উঠে এসেছে৷ এতে বলা হয়, এটি শক্তিশালী আসক্তি সৃষ্টিকারী মাদক৷ এতে আসক্ত ব্যক্তির ক্ষুধামান্দ্য ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়৷ অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরি করে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ এ কারণে অনেকে সহিংস আচরণও করেন৷ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাদক নিয়ন্ত্রণে আন্তঃবাহিনী ও সংস্থার সমন্বয় নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ৷ মাদকের চাহিদা, সরবরাহ ও ক্ষতি হ্রাস এবং নানামুখী কাজে ১১টি মন্ত্রণালয় জড়িত৷
২০১৮ সালের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেছিল র‌্যাব৷ এরপর পৃথকভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালায় পুলিশ, বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ একের পর এক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে৷ অনেকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’-কে মাদক নির্মূলে শেষ ভরসা মনে করলেও এটা খুব ফলপ্রসূ হয়নি৷ খবর ডয়চে
হককথা/এমউএ