নিউইয়র্ক ০৮:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করলে মূল সমস্যার সমাধান হয়ে যায়

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:০০:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ মার্চ ২০১৫
  • / ৪৯৩ বার পঠিত

ঢাকা: রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম বা দাবি আদায়ের সর্বোচ্চ অস্ত্র হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিই চলছে ৬৭ দিন ধরে। গত ৬ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া অবরোধের পাশাপাশি চলছে সপ্তাহে ৫ দিন হরতাল। বর্তমান আন্দোলন-সংগ্রামে কার্যত দেশ অচল হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমদানি-রফতানি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণেও মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এই সঙ্কট সমাধানে দেশের অভ্যন্তরে সকল রাজনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজের পাশাপাশি বিদেশী কূটনীতিকরাও সংলাপের মাধ্যমে পথ খোঁজার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০ দলীয় জোট তাতে ইতিবাচক সাড়া দিলেও সরকারের অনড় অবস্থানের কারণে সমাধান হচ্ছে না বরং তা ঘনীভূত হচ্ছে। এই অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) সাংবাদিক সম্মেলনে যে তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছেন তা সর্বমহলে যেমন প্রশংসিত হয়েছে তেমনি সঙ্কট উত্তরণে এটাকে মাইলফলক বলে অভিহিত করছেন পর্যবেক্ষক মহল। তারা বলছেন, সঙ্কট যেখানে শুরু বেগম জিয়া সেখানেই হিট করেছেন। তারা বলছেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী যে একতরফা নির্বাচন করা হয়েছিল তাকে কেন্দ্র করেই সঙ্কট শুরু। তাই বেগম জিয়া আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সংবিধানের ১৫শ সংশোধনী বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘তথাকথিত হলেও একটি সংসদের অধিবেশন চলছে। একতরফাভাবে যে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী তারা পাস করেছে, তা তারা বাতিলও করে দিতে পারে। তাতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ খুলবে। এই সংশোধনীর পর বর্তমান ক্ষমতাসীনরা পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই সঙ্কটের অবসান ঘটবে।’ সঙ্কট সমাধানে তিনি যে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, প্রথমত; জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ করতে হবে। পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত; সভা, সমাবেশ, মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর আরোপিত সব ধরনের বিধি নিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। তৃতীয়ত; সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
খালেদা জিয়া এই তিন দফা প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস এই প্রক্রিয়াতেই আমরা সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারবো। আন্দোলনকে দ্রুত নিয়ে আসতে পারবো শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে।
ওদিকে কোনো অবস্থাতেই ক্ষমতা না ছাড়ার সিদ্ধান্তে পুরোপুরি অনড় ক্ষমতাসীনরা। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা তো বটেই, এমনকি ১৪ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা, সরকার ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো মাত্রই ভয়ঙ্কর এক প্রতিশোধের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবেন তারা। অতএব যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকাই তাদের প্রধান এজেন্ডা। আর সে কারণেই আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের তরফ থেকে অব্যাহত তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও সরকার প্রসঙ্গটিকে পুরোপুরিই অগ্রাহ্য করে চলেছে। একইসঙ্গে সরকার বিরোধী পক্ষের তৎপরতা দমনে কঠোর থেকে কঠোরতর হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের প্রতি সংলাপের যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে একটি পেশাজীবী সমাবেশে খালেদা জিয়াকে জঙ্গিদের নেত্রী হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানন্ত্রী বলেছেন, উনি হলেন জঙ্গি নেত্রী। তার হাতে মানুষ পোড়ার গন্ধ। এই জঙ্গি নেত্রীর সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে মানুষকে পুড়িয়ে মারে, শিশুকে পুড়িয়ে মারে, যার হাতে মানুষের রক্তের দাগ তার সঙ্গে কোন সংলাপ বা আলোচনা নয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, কার সাথে সংলাপ। সরকারকে জিম্মি করে কোন সংলাপ হবে না। আমরা নির্বাচিত সরকার। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্য থেকে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে আগামীতেও হবে। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আসুক আর না আসুক নির্বাচন একইভাবে হবে। শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ এ কথা বলেন। খালেদা জিয়ার দেয়া সংলাপ ও নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করবো অবরোধ প্রত্যাহার করুন। এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করুন। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করেন। স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করেই দাবি নিয়ে কথা বলুন।
শুক্রবার বেগম জিয়ার সাংবাদিক সম্মেলনের পরপরই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেগম জিয়ার সংলাপ প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বেগম জিয়ার প্রস্তাব সরকার ফিরিয়ে দিলেও সঙ্কট সমাধানের ক্ষেত্রে এর বিকল্প নেই। তাদের মতে, এই সঙ্কটের জন্মদাতা যেহেতু সরকার নিজে সেহেতু সমাধানের রাস্তাও তাকেই বের করতে হবে। এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া সমাধানের রাস্তা বলে দিয়ে কার্যত বল সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন। এখন সব দায় সরকারের। তাদেরকে বুঝতে হবে, জনগণের রাজনীতি করলে জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝতে হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তারা হেরে যাবে-এই শঙ্কা থেকেই তারা সেপথে হাঁটছে না। জোর করে ক্ষমতায় থাকার প্রক্রিয়া কখনো চিরস্থায়ী হয় না। সাময়িকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে লাভবান হওয়া আর জনগণের সমর্থন নিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া এক কথা নয়। জনগণ যদি কখনো প্রত্যাখ্যান করে তাহলেও তাদের রায়কে শ্রদ্ধা করা গণতন্ত্রেরই কথা। কারণ যে জনগণ আজ আপনাকে প্রত্যাখ্যান করছে কাল তারাই আপনাকে আবার ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। এজন্যই পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে সংসদের চলতি অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধন করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। দেশ এবং দেশবাসী এই অবস্থা আর চায় না। তারা শান্তি চায়। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক-এটাই সকলের কাম্য। (দৈনিক সংগ্রাম)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করলে মূল সমস্যার সমাধান হয়ে যায়

প্রকাশের সময় : ০৯:০০:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ মার্চ ২০১৫

ঢাকা: রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম বা দাবি আদায়ের সর্বোচ্চ অস্ত্র হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিই চলছে ৬৭ দিন ধরে। গত ৬ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া অবরোধের পাশাপাশি চলছে সপ্তাহে ৫ দিন হরতাল। বর্তমান আন্দোলন-সংগ্রামে কার্যত দেশ অচল হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমদানি-রফতানি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণেও মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এই সঙ্কট সমাধানে দেশের অভ্যন্তরে সকল রাজনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজের পাশাপাশি বিদেশী কূটনীতিকরাও সংলাপের মাধ্যমে পথ খোঁজার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০ দলীয় জোট তাতে ইতিবাচক সাড়া দিলেও সরকারের অনড় অবস্থানের কারণে সমাধান হচ্ছে না বরং তা ঘনীভূত হচ্ছে। এই অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) সাংবাদিক সম্মেলনে যে তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছেন তা সর্বমহলে যেমন প্রশংসিত হয়েছে তেমনি সঙ্কট উত্তরণে এটাকে মাইলফলক বলে অভিহিত করছেন পর্যবেক্ষক মহল। তারা বলছেন, সঙ্কট যেখানে শুরু বেগম জিয়া সেখানেই হিট করেছেন। তারা বলছেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী যে একতরফা নির্বাচন করা হয়েছিল তাকে কেন্দ্র করেই সঙ্কট শুরু। তাই বেগম জিয়া আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সংবিধানের ১৫শ সংশোধনী বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘তথাকথিত হলেও একটি সংসদের অধিবেশন চলছে। একতরফাভাবে যে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী তারা পাস করেছে, তা তারা বাতিলও করে দিতে পারে। তাতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ খুলবে। এই সংশোধনীর পর বর্তমান ক্ষমতাসীনরা পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই সঙ্কটের অবসান ঘটবে।’ সঙ্কট সমাধানে তিনি যে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, প্রথমত; জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ করতে হবে। পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত; সভা, সমাবেশ, মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর আরোপিত সব ধরনের বিধি নিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। তৃতীয়ত; সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
খালেদা জিয়া এই তিন দফা প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস এই প্রক্রিয়াতেই আমরা সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারবো। আন্দোলনকে দ্রুত নিয়ে আসতে পারবো শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে।
ওদিকে কোনো অবস্থাতেই ক্ষমতা না ছাড়ার সিদ্ধান্তে পুরোপুরি অনড় ক্ষমতাসীনরা। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা তো বটেই, এমনকি ১৪ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা, সরকার ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো মাত্রই ভয়ঙ্কর এক প্রতিশোধের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবেন তারা। অতএব যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকাই তাদের প্রধান এজেন্ডা। আর সে কারণেই আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের তরফ থেকে অব্যাহত তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও সরকার প্রসঙ্গটিকে পুরোপুরিই অগ্রাহ্য করে চলেছে। একইসঙ্গে সরকার বিরোধী পক্ষের তৎপরতা দমনে কঠোর থেকে কঠোরতর হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের প্রতি সংলাপের যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে একটি পেশাজীবী সমাবেশে খালেদা জিয়াকে জঙ্গিদের নেত্রী হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানন্ত্রী বলেছেন, উনি হলেন জঙ্গি নেত্রী। তার হাতে মানুষ পোড়ার গন্ধ। এই জঙ্গি নেত্রীর সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে মানুষকে পুড়িয়ে মারে, শিশুকে পুড়িয়ে মারে, যার হাতে মানুষের রক্তের দাগ তার সঙ্গে কোন সংলাপ বা আলোচনা নয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, কার সাথে সংলাপ। সরকারকে জিম্মি করে কোন সংলাপ হবে না। আমরা নির্বাচিত সরকার। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্য থেকে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে আগামীতেও হবে। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আসুক আর না আসুক নির্বাচন একইভাবে হবে। শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ এ কথা বলেন। খালেদা জিয়ার দেয়া সংলাপ ও নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করবো অবরোধ প্রত্যাহার করুন। এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করুন। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করেন। স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করেই দাবি নিয়ে কথা বলুন।
শুক্রবার বেগম জিয়ার সাংবাদিক সম্মেলনের পরপরই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেগম জিয়ার সংলাপ প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বেগম জিয়ার প্রস্তাব সরকার ফিরিয়ে দিলেও সঙ্কট সমাধানের ক্ষেত্রে এর বিকল্প নেই। তাদের মতে, এই সঙ্কটের জন্মদাতা যেহেতু সরকার নিজে সেহেতু সমাধানের রাস্তাও তাকেই বের করতে হবে। এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া সমাধানের রাস্তা বলে দিয়ে কার্যত বল সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন। এখন সব দায় সরকারের। তাদেরকে বুঝতে হবে, জনগণের রাজনীতি করলে জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝতে হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তারা হেরে যাবে-এই শঙ্কা থেকেই তারা সেপথে হাঁটছে না। জোর করে ক্ষমতায় থাকার প্রক্রিয়া কখনো চিরস্থায়ী হয় না। সাময়িকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে লাভবান হওয়া আর জনগণের সমর্থন নিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া এক কথা নয়। জনগণ যদি কখনো প্রত্যাখ্যান করে তাহলেও তাদের রায়কে শ্রদ্ধা করা গণতন্ত্রেরই কথা। কারণ যে জনগণ আজ আপনাকে প্রত্যাখ্যান করছে কাল তারাই আপনাকে আবার ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। এজন্যই পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে সংসদের চলতি অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধন করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। দেশ এবং দেশবাসী এই অবস্থা আর চায় না। তারা শান্তি চায়। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক-এটাই সকলের কাম্য। (দৈনিক সংগ্রাম)