নিউইয়র্ক ১২:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

থমথমে ভাব সারাদেশে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:০৬:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৯
  • / ২২৫ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: প্রশাসনযন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়, ব্যবসা বাণিজ্য ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ অনেক ক্ষেত্রেই এখন এক ধরনের থমথমে ভাব বিরাজ করছে। নানা প্রশ্নে আলোচনা সমালোচনাও হচ্ছে। মূলত: সরকারি দল আওয়ামী লীগের ঘর থেকে শুরু হওয়া শুদ্ধি তথা দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর থেকে এ ধরনের পরিবেশ কার্যত সারাদেশেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে সাফ জানান, আরেকটি ওয়ান ইলেভেন রুখতেই এই অভিযান। আর এই অভিযান চলবে। সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। র‌্যাব-পুলিশ পৃথকভাবে কখনো যৌথভাবে অভিযানে রয়েছে।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঢাকা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত এক ধরনের ইতিবাচক নেতিবাচক আলোচনা চলছে। তবে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ এই অভিযান পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর ওপর খুশিই হয়েছেন- এমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে দলের অভ্যন্তরে বিশেষ করে যুবলীগ ছাত্রলীগে এ নিয়ে বেশ অস্বস্তি থেকে অসন্তোষই প্রকাশ পাচ্ছে।
প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়ে স্বাভাবিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে এক ধরনের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হচ্ছে। সতর্কতার কথা আলোচিত হলেও কিছু কর্মকর্তা নিজেদের গুটিয়ে রাখছেন তেমনটি নিজেরাই বলছেন। বেশকিছু রুটিন কাজও ফেলে রাখা হচ্ছে। প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব পদের পদোন্নতির সভা মাসখানেক আগে শেষ হলেও আজ পর্যন্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি। বলা হচ্ছে আদর্শিক চিন্তাভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মকর্তার তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কিছুটা সময় যাচ্ছে। কিন্তু জানা যায়, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কিছু কর্মকর্তার পছন্দের ব্যক্তিকে (আওয়ামী বিরোধী) পদোন্নতির তালিকায় ঢুকাতেই যাচাই-বাছাইয়ের নামে সময়ক্ষেপণ চলছে।
সরকারি দল থেকে অনুপ্রবেশকারী বিতাড়নের যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে প্রশাসনে তেমন কিছু ঘটে গেলে তার দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তা। অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে বলেন, দ্রুতই ফল পাওয়া যাবে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বাজারে বিএনপি রয়েছে এমনভাব প্রকাশ করলেও দেশের প্রধান এই বিরোধী পক্ষের বস্তুত কোনো কার্যক্রম নেই। মানববন্ধন, ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে আর দলীয় কার্যালয়ে এক নেতার প্রতিদিনের সংবাদ ব্রিফিংয়ের মধ্যে দলটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। জাতীয় পার্টি (জাপা), ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি (জেপি) ইত্যাদি দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি বলতে যেমনটা ভাবা হয় তেমন কিছু লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
ওপরদিকে ক্যাসিনোয় জুয়া মদের আড্ডায় শুরু হওয়া অভিযান ইতিমধ্যে কার্যত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে রূপ নিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সেনাবাহিনীতে প্রথম কমিশন পাওয়া অফিসারদের উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, ‘অনেক অনুনয় অনুরোধ করেছি-কিন্তু চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আর না, এবার সন্ত্রাসী, কালোবাজারি, মুনাফাখোর, দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করতে হবে’।
অনেকে বলছেন, বঙ্গবন্ধু যেখানে শেষ করেছিলেন এবার সেখান থেকেই তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু করেছেন। এর আরো বিস্তৃতি ঘটবে। তবে পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে।
এরকম বাস্তবতায় সবক্ষেত্রেই এক ধরনের থমথমে পরিবেশ বিদ্যমান। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অস্থিরতা বিদ্যমান। কোনো কারণ ছাড়াই অসময়ে পিঁয়াজের দাম বাড়িয়ে নাগরিক জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না তা নিয়েও আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। ব্যাংক খাত শেয়ারবাজার প্রসঙ্গতো আছেই। সবকিছু মিলিয়ে এক ধরনের অনিশ্চিয়তা আর গল্প গুজবের ডাল পালা গজানোর অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও এটি নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র সব সময়ই নিরাপদ থেকেছে। আর প্রধানমন্ত্রী সেটি স্মরণ করিয়ে দিতে স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন আর ওয়ান ইলেভেন নয় বরং সেটি ঠেকাতেই দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, যে বা যেখানে দুর্নীতি হবে সেখানেই অভিযান চলবে। সেটি ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
এরই মাঝে বালিশকান্ড, পর্দাকান্ড, চার্জার ক্রয়ে কেলেঙ্কারি এবং স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন বেশ তৎপর। পাশাপাশি এই সংস্থার স্বাভাবিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানও চলছে। ইতিমধ্যে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এই সংস্থা গ্রেফতারও করেছে। (ইত্তেফাক)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

থমথমে ভাব সারাদেশে

প্রকাশের সময় : ০৭:০৬:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

হককথা ডেস্ক: প্রশাসনযন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়, ব্যবসা বাণিজ্য ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ অনেক ক্ষেত্রেই এখন এক ধরনের থমথমে ভাব বিরাজ করছে। নানা প্রশ্নে আলোচনা সমালোচনাও হচ্ছে। মূলত: সরকারি দল আওয়ামী লীগের ঘর থেকে শুরু হওয়া শুদ্ধি তথা দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর থেকে এ ধরনের পরিবেশ কার্যত সারাদেশেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে সাফ জানান, আরেকটি ওয়ান ইলেভেন রুখতেই এই অভিযান। আর এই অভিযান চলবে। সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। র‌্যাব-পুলিশ পৃথকভাবে কখনো যৌথভাবে অভিযানে রয়েছে।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঢাকা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত এক ধরনের ইতিবাচক নেতিবাচক আলোচনা চলছে। তবে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ এই অভিযান পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর ওপর খুশিই হয়েছেন- এমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে দলের অভ্যন্তরে বিশেষ করে যুবলীগ ছাত্রলীগে এ নিয়ে বেশ অস্বস্তি থেকে অসন্তোষই প্রকাশ পাচ্ছে।
প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়ে স্বাভাবিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে এক ধরনের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হচ্ছে। সতর্কতার কথা আলোচিত হলেও কিছু কর্মকর্তা নিজেদের গুটিয়ে রাখছেন তেমনটি নিজেরাই বলছেন। বেশকিছু রুটিন কাজও ফেলে রাখা হচ্ছে। প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব পদের পদোন্নতির সভা মাসখানেক আগে শেষ হলেও আজ পর্যন্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি। বলা হচ্ছে আদর্শিক চিন্তাভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মকর্তার তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কিছুটা সময় যাচ্ছে। কিন্তু জানা যায়, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কিছু কর্মকর্তার পছন্দের ব্যক্তিকে (আওয়ামী বিরোধী) পদোন্নতির তালিকায় ঢুকাতেই যাচাই-বাছাইয়ের নামে সময়ক্ষেপণ চলছে।
সরকারি দল থেকে অনুপ্রবেশকারী বিতাড়নের যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে প্রশাসনে তেমন কিছু ঘটে গেলে তার দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তা। অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে বলেন, দ্রুতই ফল পাওয়া যাবে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বাজারে বিএনপি রয়েছে এমনভাব প্রকাশ করলেও দেশের প্রধান এই বিরোধী পক্ষের বস্তুত কোনো কার্যক্রম নেই। মানববন্ধন, ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে আর দলীয় কার্যালয়ে এক নেতার প্রতিদিনের সংবাদ ব্রিফিংয়ের মধ্যে দলটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। জাতীয় পার্টি (জাপা), ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি (জেপি) ইত্যাদি দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি বলতে যেমনটা ভাবা হয় তেমন কিছু লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
ওপরদিকে ক্যাসিনোয় জুয়া মদের আড্ডায় শুরু হওয়া অভিযান ইতিমধ্যে কার্যত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে রূপ নিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সেনাবাহিনীতে প্রথম কমিশন পাওয়া অফিসারদের উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, ‘অনেক অনুনয় অনুরোধ করেছি-কিন্তু চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আর না, এবার সন্ত্রাসী, কালোবাজারি, মুনাফাখোর, দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করতে হবে’।
অনেকে বলছেন, বঙ্গবন্ধু যেখানে শেষ করেছিলেন এবার সেখান থেকেই তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু করেছেন। এর আরো বিস্তৃতি ঘটবে। তবে পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে।
এরকম বাস্তবতায় সবক্ষেত্রেই এক ধরনের থমথমে পরিবেশ বিদ্যমান। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অস্থিরতা বিদ্যমান। কোনো কারণ ছাড়াই অসময়ে পিঁয়াজের দাম বাড়িয়ে নাগরিক জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না তা নিয়েও আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। ব্যাংক খাত শেয়ারবাজার প্রসঙ্গতো আছেই। সবকিছু মিলিয়ে এক ধরনের অনিশ্চিয়তা আর গল্প গুজবের ডাল পালা গজানোর অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও এটি নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র সব সময়ই নিরাপদ থেকেছে। আর প্রধানমন্ত্রী সেটি স্মরণ করিয়ে দিতে স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন আর ওয়ান ইলেভেন নয় বরং সেটি ঠেকাতেই দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, যে বা যেখানে দুর্নীতি হবে সেখানেই অভিযান চলবে। সেটি ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
এরই মাঝে বালিশকান্ড, পর্দাকান্ড, চার্জার ক্রয়ে কেলেঙ্কারি এবং স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন বেশ তৎপর। পাশাপাশি এই সংস্থার স্বাভাবিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানও চলছে। ইতিমধ্যে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এই সংস্থা গ্রেফতারও করেছে। (ইত্তেফাক)