নিউইয়র্ক ১১:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সন্তোষে মানুষের ঢল : ‘দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে মওলানা ভাসানীর মতো দেশপ্রেমিক ও সাহসী হতে হবে’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৫
  • / ৯০০ বার পঠিত

টাঙ্গাইল: স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, আফ্রা-এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার অবিসংবাদিত নেতা, সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদ বিরোধী সোচ্চার কন্ঠস্বর, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় নানা মত ও পথের মানুষের মিলনমেলা। এছাড়া রাজধানীতে ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে ভাসানীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগঠন। একই সাথে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনেতিক দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন এক দুঃসাহসী রাজনীতিবিদ। দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে মওলানা ভাসানীর মতো দেশপ্রেমিক ও সাহসী নাগরিক হতে হবে।
জাতীয় রাজনীতির এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তার মাজার প্রাঙ্গনে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মানুষের ঢল নামে। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় ভাসানীর মাজার। দুই দিন আগে থেকেই ভাসানাীর ভক্ত-মুরিদানরা সন্তোষে আসতে শুরু করেন। ভক্ত-অনুরাগীদের মিলন মেলায় পরিণত হয় গোটা সন্তোষ। বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল কুরআনখানি, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও ভাসানী মেলা। দিনের শুরুতে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মওলানা ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা করেন। এরপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের পক্ষ থেকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এরপর থেকেই মাজারে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মরহুমের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে শুরু করে। যেসব সংগঠন মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাদের মধ্যে রয়েছে বিএনপি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ), জাতীয় পার্টি (জেপি), জেলা আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাগপা, ভাসানী ন্যাপ, টাঙ্গাইল পৌরসভা, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব, ভাসানী ফাউন্ডেশন, ভাসানীর পরিবার, ভাসানী একাডেমি, ভাসানী কলেজ, জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, প্রকৌশল শ্রমিক ইউনিয়ন, বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়ন ইত্যাদি।
কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষে মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। এসময় জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষে মওলানা ভাসানীর মাজারে ফুল দেন দলের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম, জাতীয় পাটির (জেপি) পক্ষে মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দলের অতিরিক্ত মহাসচিব সাদেক সিদ্দিকী।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি, সাবেক এমপি ফজলুর রহমান ফারুক ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা মওলানা ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, মওলানা ভাসানী বৃটিশ শাসন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমান কর্তৃত্ববাদি রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থায় আজ ভাসানী বেঁচে থাকলে ‘খামোশ’ বলে প্রতিবাদ করতেন।
Vasani Pic-1ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল মাওলানা ভাসানীর মাজারে সকাল ৭টায় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন-এর নেতৃত্বে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের পক্ষ থেকেও পুস্পস্তবক অর্পণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল ‘মাওলানা ভাসানীর সংস্কৃতি-ভাবনা‘ শীর্ষক সেমিনার, দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। মূখ্য আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। বিশিষ্ট আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কবি বুলবুল খান মাহবুব। মাওলানা ভাসানী রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মহিউদ্দিন, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মোছা. নুরজাহান খাতুন প্রমুখ আলোচনা করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী স্টাডিজ কোর্সের কোর্স টিচার সৈয়দ ইরফানুল বারী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ মতিউর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসতিয়াক আহম্মেদ।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, এদিন দুপুরে রাজধানীর পল্টনস্থ ফটোর্জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির ব্যানারে আয়োজিত স্মরণসভায় জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আমাদের জাতীয় রাজনীতির অহংকার মওলানা ভাসানী নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে কঠোর সংগ্রামের মধ্যদিয়েই অতিক্রম করেছেন সারাটা জীবন। তিনি যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন তা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪৭ পূর্বে বৃটিশ বিরোধী আযাদি আন্দোলন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার অধিকার আদায়, ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, ভারতীয় পানি আগ্রাসন বিরোধী লংমার্চে নেতৃত্ব দিয়েছেন মওলানা ভাসানী। আমৃত্যু তিনি সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ বিরোধী লড়াই আর সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবতীর্ণ ছিলেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি: বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি‘র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপি’র যুব বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, কল্যাণ পার্টি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম. এম. আমিনুর রহমান, জাতীয় পার্টি (জাফর) যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামিম, এনডিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, জাতীয় দল চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাপ যুগ্ম মহাসচিব যুগ্ম মহাসচিব স্বপন কুমার সাহা প্রমুখ।
সভায় শফিউল আলম প্রধান বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের মানবতাবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে রাজনীতির মাধ্যদিয়ে বিদ্রোহের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন মওলানা ভাসানী। তিনি স্পষ্টত বলতেন উৎপীড়িতের কান্না না থামা পর্যন্ত, সা¤্রাজ্যবাদী ও লুটেরা শক্তির অত্যাচার স্তব্ধ না হওয়া অবধি তার সংগ্রাম চলবে।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, মওলানা ভাসানী রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাননি বটে, তবে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের অনুঘটক ছিলেন। আজ মওলানা ভাসানীকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা জানে না যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মওলানা ভাসানী দেশপ্রেমিক মানুষের হৃদয়ে থাকবেন।
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আপোষহীন রাজনীতি ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো অত্যাচারী শাসকশ্রেণির। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও সাহসী করে তুলেছিলো সাধারণ মানুষকে। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল মানুষকেই অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ করার সংগ্রাম করেছেন আজীবন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে জেবেল রহমান গাণি বলেন, রাজনীতি আর সংগ্রামের মাধ্যমে একটি জাতিকে জাগিয়ে তোলেন যিনি, তিনিই ভাসানী। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে এক প্রবলপ্রাণ বিদ্রোহীর নাম মওলানা ভাসানী। স্বাধীনতা-মুক্তির জন্য দেশবাসীকে জাগিয়েছেন যিনি, মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন যিনি আর সাম্প্রদায়িক শক্তির বিপক্ষে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন যিনি-তিনিই ভাসানী।
উল্লেখ্য, ৯৬ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেশ বরেণ্য নেতা মওলানা ভাসানী মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে দাফন করা হয়। তিনি ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম হাজী শরাফত আলী খান। তিনি আমৃত্যু কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সন্তোষে মানুষের ঢল : ‘দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে মওলানা ভাসানীর মতো দেশপ্রেমিক ও সাহসী হতে হবে’

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৫

টাঙ্গাইল: স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, আফ্রা-এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার অবিসংবাদিত নেতা, সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদ বিরোধী সোচ্চার কন্ঠস্বর, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় নানা মত ও পথের মানুষের মিলনমেলা। এছাড়া রাজধানীতে ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে ভাসানীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগঠন। একই সাথে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনেতিক দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন এক দুঃসাহসী রাজনীতিবিদ। দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে মওলানা ভাসানীর মতো দেশপ্রেমিক ও সাহসী নাগরিক হতে হবে।
জাতীয় রাজনীতির এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তার মাজার প্রাঙ্গনে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মানুষের ঢল নামে। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় ভাসানীর মাজার। দুই দিন আগে থেকেই ভাসানাীর ভক্ত-মুরিদানরা সন্তোষে আসতে শুরু করেন। ভক্ত-অনুরাগীদের মিলন মেলায় পরিণত হয় গোটা সন্তোষ। বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল কুরআনখানি, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও ভাসানী মেলা। দিনের শুরুতে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মওলানা ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা করেন। এরপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের পক্ষ থেকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এরপর থেকেই মাজারে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মরহুমের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে শুরু করে। যেসব সংগঠন মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাদের মধ্যে রয়েছে বিএনপি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ), জাতীয় পার্টি (জেপি), জেলা আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাগপা, ভাসানী ন্যাপ, টাঙ্গাইল পৌরসভা, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব, ভাসানী ফাউন্ডেশন, ভাসানীর পরিবার, ভাসানী একাডেমি, ভাসানী কলেজ, জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, প্রকৌশল শ্রমিক ইউনিয়ন, বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়ন ইত্যাদি।
কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষে মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। এসময় জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষে মওলানা ভাসানীর মাজারে ফুল দেন দলের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম, জাতীয় পাটির (জেপি) পক্ষে মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দলের অতিরিক্ত মহাসচিব সাদেক সিদ্দিকী।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি, সাবেক এমপি ফজলুর রহমান ফারুক ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা মওলানা ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, মওলানা ভাসানী বৃটিশ শাসন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমান কর্তৃত্ববাদি রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থায় আজ ভাসানী বেঁচে থাকলে ‘খামোশ’ বলে প্রতিবাদ করতেন।
Vasani Pic-1ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল মাওলানা ভাসানীর মাজারে সকাল ৭টায় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন-এর নেতৃত্বে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের পক্ষ থেকেও পুস্পস্তবক অর্পণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল ‘মাওলানা ভাসানীর সংস্কৃতি-ভাবনা‘ শীর্ষক সেমিনার, দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। মূখ্য আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। বিশিষ্ট আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কবি বুলবুল খান মাহবুব। মাওলানা ভাসানী রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মহিউদ্দিন, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মোছা. নুরজাহান খাতুন প্রমুখ আলোচনা করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী স্টাডিজ কোর্সের কোর্স টিচার সৈয়দ ইরফানুল বারী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ মতিউর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসতিয়াক আহম্মেদ।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, এদিন দুপুরে রাজধানীর পল্টনস্থ ফটোর্জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির ব্যানারে আয়োজিত স্মরণসভায় জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আমাদের জাতীয় রাজনীতির অহংকার মওলানা ভাসানী নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে কঠোর সংগ্রামের মধ্যদিয়েই অতিক্রম করেছেন সারাটা জীবন। তিনি যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন তা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪৭ পূর্বে বৃটিশ বিরোধী আযাদি আন্দোলন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার অধিকার আদায়, ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, ভারতীয় পানি আগ্রাসন বিরোধী লংমার্চে নেতৃত্ব দিয়েছেন মওলানা ভাসানী। আমৃত্যু তিনি সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ বিরোধী লড়াই আর সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবতীর্ণ ছিলেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি: বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি‘র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপি’র যুব বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, কল্যাণ পার্টি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম. এম. আমিনুর রহমান, জাতীয় পার্টি (জাফর) যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামিম, এনডিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, জাতীয় দল চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাপ যুগ্ম মহাসচিব যুগ্ম মহাসচিব স্বপন কুমার সাহা প্রমুখ।
সভায় শফিউল আলম প্রধান বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের মানবতাবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে রাজনীতির মাধ্যদিয়ে বিদ্রোহের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন মওলানা ভাসানী। তিনি স্পষ্টত বলতেন উৎপীড়িতের কান্না না থামা পর্যন্ত, সা¤্রাজ্যবাদী ও লুটেরা শক্তির অত্যাচার স্তব্ধ না হওয়া অবধি তার সংগ্রাম চলবে।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, মওলানা ভাসানী রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাননি বটে, তবে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের অনুঘটক ছিলেন। আজ মওলানা ভাসানীকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা জানে না যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মওলানা ভাসানী দেশপ্রেমিক মানুষের হৃদয়ে থাকবেন।
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আপোষহীন রাজনীতি ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো অত্যাচারী শাসকশ্রেণির। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও সাহসী করে তুলেছিলো সাধারণ মানুষকে। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল মানুষকেই অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ করার সংগ্রাম করেছেন আজীবন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে জেবেল রহমান গাণি বলেন, রাজনীতি আর সংগ্রামের মাধ্যমে একটি জাতিকে জাগিয়ে তোলেন যিনি, তিনিই ভাসানী। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে এক প্রবলপ্রাণ বিদ্রোহীর নাম মওলানা ভাসানী। স্বাধীনতা-মুক্তির জন্য দেশবাসীকে জাগিয়েছেন যিনি, মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন যিনি আর সাম্প্রদায়িক শক্তির বিপক্ষে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন যিনি-তিনিই ভাসানী।
উল্লেখ্য, ৯৬ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেশ বরেণ্য নেতা মওলানা ভাসানী মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে দাফন করা হয়। তিনি ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম হাজী শরাফত আলী খান। তিনি আমৃত্যু কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন।