নিউইয়র্ক ১২:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

২০৬ জন যাত্রী নিয়ে বিমানের ঢাকায় জরুরী অবতরণ : অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন এরশাদ, বাবলু ও আনিসুল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:০১:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মার্চ ২০১৫
  • / ৮১৮ বার পঠিত

ঢাকা: বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ২০৬ জন যাত্রীসহ ২২১ আরোহী। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রায় ৫ ঘণ্টা আকাশে কাটানোর পর অবশেষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হয় বিমানটি। বিমানটির যাত্রী ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। বিমানে যে আগুন ধরে গিয়েছিল তা বুঝতেই পারিনি। ভেতরে প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম। তবে সেটা মাথায় ছিল না। চেয়ারম্যান স্যার (হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আর আমি আলাপে ব্যস্ত ছিলাম। বিমানটি আকাশে এতক্ষণ কেন চক্কর দিচ্ছিল সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশের পর অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি দেখে বুঝেছিলাম ‘সামথিং রং’।
তিনি আরো বলেন, বিমানটি সিঙ্গাপুর থেকে উড্ডয়নের পরেই ত্রুটি দেখা দেয়। ৪৫ মিনিট পর আবার সিঙ্গাপুরে ফিরে যায় বিমানটি। একঘণ্টা পর ফের সিঙ্গাপুর থেকে ছাড়ে। তখন বলা হয়েছিল কম্পিউটারে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। সেটা মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু আকাশে উড়ার পর ফের ইঞ্জিনের ত্রুটি দেখা দেয়। বিমানটি বাংলাদেশের আকাশে ঢোকার পর যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে আমাদের বসে থাকতে বলেন বিমানকর্মীরা। অকেনসময় আকাশে চক্কর দেয় এয়ারবাসটি। মাঝে মাঝেই জোরে ঝাকুনি দিচ্ছিল। আমরা ভেবেছিলাম আবহাওয়ার কারণে। ঘণ্টা দেড়েক আকাশে চক্কর দিয়ে বিমানবন্দরে অনেকটা আছড়ে পড়ার মতো অবতরণ করে এয়ারবাসটি। এতজোরে ঝাকুনি খায় যে যাত্রীরা একে অন্যের উপর গিয়ে পড়ে। অবতরণের পর বিমানের দরজা খুলছিল না। এ অবস্থায় ভেতরে যাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করেন। এত বছরের পুরনো এয়ারবাস কীভাবে চলে সেটাই বুঝি না।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাস ৩১০ ফ্লাইট নং বিজি ০৮৫ সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় শনিবার (২৮ মার্চ) বিকেল ৪টায় উড্ডয়ন করে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে এয়ারবাসটি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটির দ্বিতীয় ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। এসময় যাত্রীরা সবাই আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকেন। এরপর পাইলট বিমান থেকে প্রায় সব জ্বালানি তেল সাগরে ফেলে আড়াই ঘণ্টা আকাশে চক্কর দেন। অবশেষে রাত পৌনে ৯টায় এয়ারবাসটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে উড্ডয়নের ৪৫ মিনিট পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গী বিমানবন্দরে ফিরে যায় ওই এয়ারবাসটি। দ্বিতীয় দফা উড্ডয়নের ঘণ্টা দেড়েক পর বিমানের দ্বিতীয় ইঞ্জিনে আবারও আগুন ধরে যায়। পাইলটরা বিমানে থাকা স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে আকাশেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। আগুনে বিমানটির ভেতরে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুমে খবর দেয়া হয়। এ খবরে পুরো বিমানবন্দরে রেড-অ্যালার্ট জারি করা হয়। রানওয়েতে নেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে। অ্যাম্বুলেন্সসহ যাবতীয় উদ্ধারকারী দলকে প্রস্তুত রাখা হয়। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমেও খবর দেয়া হয়।
২২১ আসনের বিমানটিতে যাত্রী ছিলেন মোট ২০৬ জন। বাকিরা পাইলট ও কেবিন ক্রু। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমানের তেল না ফেলা হলে অবতরণের সময় বিমানটি বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
এদিকে অল্পের জন্য ভয়াবহ দুঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া বিমানের যাত্রীরা টের পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগ থেকে আজ পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, বিমানে যান্ত্রিক ক্রুটি ধরা পড়লেও যাত্রীরা কোনোকিছু টের পাননি। শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করার পরই পাইলটের কাছ থেকে যাত্রীরা ককপিটের মনিটরে ভুল সিগন্যালিংয়ের বিষয়টি জানতে পারেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক তাছমিন আকতার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর-ঢাকা সেক্টরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি-০৮৫) ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত ও ক্ষেত্রবিশেষে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ ৩১০ উড়োজাহাজটি সিঙ্গাপুর স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় ঢাকার উদ্দেশে বিমানবন্দর ত্যাগ করে। উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজের ককপিট মনিটর-এ ‘ফ্লাইট ওয়ার্নিং ইনডিকেশন’ পরিলক্ষিত হলে উড্ডয়নের প্রায় এক ঘণ্টা পর এয়ারক্রাফট সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে ক্রুটি সারানোর পর উড়োজাহাজটি পুনরায় স্থানীয় সময় ৬টা ৩০ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহাজালালের উদ্দেশে যাত্রা করে। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা নিরাপদে উড্ডয়নের পর ঢাকায় অবতরণের ৩০ মিনিট আগে ককপিট মনিটরে ২ নম্বর ইঞ্জিনে ফায়ার ওয়ার্নিং-এর সঙ্কেত পাওয়া যায়। এ অবস্থায় পাইলট চেক-লিস্ট অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঢাকাস্থ কন্ট্রোল টাওয়ারকে ‘জরুরি অবতরণের’ বার্তা পাঠান। যথাসময়ে পাইলট বিমানটিকে সম্পূর্ণ নিরাপদে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করান। উড়োজাহাজটির অবতরণ ছিল স্বাভাবিক। অবতরণকালে ফ্লাইটের যাত্রী, ক্রু এবং উড়োজাহাজের কোনোরূপ ক্ষতি হয়নি বা কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হননি। ঢাকা অবতরণের পর উড়োজাহাজটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ইঞ্জিনে কোনো প্রকার আগুনের সৃষ্টি হয়নি। ফায়ার ওয়ার্নিং সিস্টেমের ‘ভুল সঙ্কেত’ পাঠানোর কারণে ওই ঘটনার সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, সিঙ্গাপুরে ক্রুটি এবং ঢাকা অবতরণের আগ-মুহূর্তে প্রাপ্ত ফায়ার ওয়ার্নিং সিগন্যাল-দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠিত করা হয়েছে।
রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগের ঊর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের সীমানায় ঢোকার মুহূর্তে এয়ারবাসের দুটি ইঞ্জিনই চালু ছিল। ফায়ার অ্যালার্মিংয়ের বিষয়টি পাইলট বিষয়টি বুঝতে পেরে একটি ইঞ্জিন শার্টডাউন করে ইমারজেন্সি ল্যান্ডিংয়ের জন্য ঢাকার কন্ট্রোল টাওয়ারকে প্রস্তুত থাকার নিদের্শনা দেন। নির্ধারিত সময়ে বিমানটি শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে ট্যাক্সিওয়েতে থামে। যাত্রীরাও যথারীতি এয়ারক্রাফট থেকে নেমে পড়েন। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর বিমানের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা ইঞ্জিনের পরীক্ষা নীরিক্ষা শুরু করেন। কিন্তু ইঞ্জিনের স্টার্ট বন্ধ করার পরও ফায়ার ওয়ার্নিং জ্বলে থাকে।
তিনি বলেন, শর্টসার্কিট থেকে ফায়ার এ্যালার্মিং হচ্ছে বলে প্রকৌশলীরা নিশ্চিত হন। পরে একটি লুপ ডিক্টেটর পাল্টানোর পর সমস্যা কেটে যায়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওই ফ্লাইটে এরশাদ স্যার থাকলেও তিনি নিজেও কোনো ধরনের ঝাকুনি বুঝেননি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এয়ারক্রাফট পরীক্ষা নীরিক্ষার পর ফ্লাইট উড্ডয়নের জন্য এখন প্রস্তÍুত রয়েছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ক্লিয়ারেন্স দিলেই আবারো এয়ারবাসটি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হবে। (দৈনিক নয়া দিগন্ত)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

২০৬ জন যাত্রী নিয়ে বিমানের ঢাকায় জরুরী অবতরণ : অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন এরশাদ, বাবলু ও আনিসুল

প্রকাশের সময় : ১১:০১:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মার্চ ২০১৫

ঢাকা: বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ২০৬ জন যাত্রীসহ ২২১ আরোহী। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রায় ৫ ঘণ্টা আকাশে কাটানোর পর অবশেষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হয় বিমানটি। বিমানটির যাত্রী ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। বিমানে যে আগুন ধরে গিয়েছিল তা বুঝতেই পারিনি। ভেতরে প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম। তবে সেটা মাথায় ছিল না। চেয়ারম্যান স্যার (হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আর আমি আলাপে ব্যস্ত ছিলাম। বিমানটি আকাশে এতক্ষণ কেন চক্কর দিচ্ছিল সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশের পর অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি দেখে বুঝেছিলাম ‘সামথিং রং’।
তিনি আরো বলেন, বিমানটি সিঙ্গাপুর থেকে উড্ডয়নের পরেই ত্রুটি দেখা দেয়। ৪৫ মিনিট পর আবার সিঙ্গাপুরে ফিরে যায় বিমানটি। একঘণ্টা পর ফের সিঙ্গাপুর থেকে ছাড়ে। তখন বলা হয়েছিল কম্পিউটারে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। সেটা মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু আকাশে উড়ার পর ফের ইঞ্জিনের ত্রুটি দেখা দেয়। বিমানটি বাংলাদেশের আকাশে ঢোকার পর যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে আমাদের বসে থাকতে বলেন বিমানকর্মীরা। অকেনসময় আকাশে চক্কর দেয় এয়ারবাসটি। মাঝে মাঝেই জোরে ঝাকুনি দিচ্ছিল। আমরা ভেবেছিলাম আবহাওয়ার কারণে। ঘণ্টা দেড়েক আকাশে চক্কর দিয়ে বিমানবন্দরে অনেকটা আছড়ে পড়ার মতো অবতরণ করে এয়ারবাসটি। এতজোরে ঝাকুনি খায় যে যাত্রীরা একে অন্যের উপর গিয়ে পড়ে। অবতরণের পর বিমানের দরজা খুলছিল না। এ অবস্থায় ভেতরে যাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করেন। এত বছরের পুরনো এয়ারবাস কীভাবে চলে সেটাই বুঝি না।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাস ৩১০ ফ্লাইট নং বিজি ০৮৫ সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় শনিবার (২৮ মার্চ) বিকেল ৪টায় উড্ডয়ন করে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে এয়ারবাসটি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটির দ্বিতীয় ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। এসময় যাত্রীরা সবাই আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকেন। এরপর পাইলট বিমান থেকে প্রায় সব জ্বালানি তেল সাগরে ফেলে আড়াই ঘণ্টা আকাশে চক্কর দেন। অবশেষে রাত পৌনে ৯টায় এয়ারবাসটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে উড্ডয়নের ৪৫ মিনিট পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গী বিমানবন্দরে ফিরে যায় ওই এয়ারবাসটি। দ্বিতীয় দফা উড্ডয়নের ঘণ্টা দেড়েক পর বিমানের দ্বিতীয় ইঞ্জিনে আবারও আগুন ধরে যায়। পাইলটরা বিমানে থাকা স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে আকাশেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। আগুনে বিমানটির ভেতরে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুমে খবর দেয়া হয়। এ খবরে পুরো বিমানবন্দরে রেড-অ্যালার্ট জারি করা হয়। রানওয়েতে নেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে। অ্যাম্বুলেন্সসহ যাবতীয় উদ্ধারকারী দলকে প্রস্তুত রাখা হয়। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমেও খবর দেয়া হয়।
২২১ আসনের বিমানটিতে যাত্রী ছিলেন মোট ২০৬ জন। বাকিরা পাইলট ও কেবিন ক্রু। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমানের তেল না ফেলা হলে অবতরণের সময় বিমানটি বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
এদিকে অল্পের জন্য ভয়াবহ দুঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া বিমানের যাত্রীরা টের পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগ থেকে আজ পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, বিমানে যান্ত্রিক ক্রুটি ধরা পড়লেও যাত্রীরা কোনোকিছু টের পাননি। শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করার পরই পাইলটের কাছ থেকে যাত্রীরা ককপিটের মনিটরে ভুল সিগন্যালিংয়ের বিষয়টি জানতে পারেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক তাছমিন আকতার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর-ঢাকা সেক্টরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি-০৮৫) ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত ও ক্ষেত্রবিশেষে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ ৩১০ উড়োজাহাজটি সিঙ্গাপুর স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় ঢাকার উদ্দেশে বিমানবন্দর ত্যাগ করে। উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজের ককপিট মনিটর-এ ‘ফ্লাইট ওয়ার্নিং ইনডিকেশন’ পরিলক্ষিত হলে উড্ডয়নের প্রায় এক ঘণ্টা পর এয়ারক্রাফট সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে ক্রুটি সারানোর পর উড়োজাহাজটি পুনরায় স্থানীয় সময় ৬টা ৩০ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহাজালালের উদ্দেশে যাত্রা করে। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা নিরাপদে উড্ডয়নের পর ঢাকায় অবতরণের ৩০ মিনিট আগে ককপিট মনিটরে ২ নম্বর ইঞ্জিনে ফায়ার ওয়ার্নিং-এর সঙ্কেত পাওয়া যায়। এ অবস্থায় পাইলট চেক-লিস্ট অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঢাকাস্থ কন্ট্রোল টাওয়ারকে ‘জরুরি অবতরণের’ বার্তা পাঠান। যথাসময়ে পাইলট বিমানটিকে সম্পূর্ণ নিরাপদে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করান। উড়োজাহাজটির অবতরণ ছিল স্বাভাবিক। অবতরণকালে ফ্লাইটের যাত্রী, ক্রু এবং উড়োজাহাজের কোনোরূপ ক্ষতি হয়নি বা কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হননি। ঢাকা অবতরণের পর উড়োজাহাজটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ইঞ্জিনে কোনো প্রকার আগুনের সৃষ্টি হয়নি। ফায়ার ওয়ার্নিং সিস্টেমের ‘ভুল সঙ্কেত’ পাঠানোর কারণে ওই ঘটনার সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, সিঙ্গাপুরে ক্রুটি এবং ঢাকা অবতরণের আগ-মুহূর্তে প্রাপ্ত ফায়ার ওয়ার্নিং সিগন্যাল-দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠিত করা হয়েছে।
রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগের ঊর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের সীমানায় ঢোকার মুহূর্তে এয়ারবাসের দুটি ইঞ্জিনই চালু ছিল। ফায়ার অ্যালার্মিংয়ের বিষয়টি পাইলট বিষয়টি বুঝতে পেরে একটি ইঞ্জিন শার্টডাউন করে ইমারজেন্সি ল্যান্ডিংয়ের জন্য ঢাকার কন্ট্রোল টাওয়ারকে প্রস্তুত থাকার নিদের্শনা দেন। নির্ধারিত সময়ে বিমানটি শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে ট্যাক্সিওয়েতে থামে। যাত্রীরাও যথারীতি এয়ারক্রাফট থেকে নেমে পড়েন। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর বিমানের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা ইঞ্জিনের পরীক্ষা নীরিক্ষা শুরু করেন। কিন্তু ইঞ্জিনের স্টার্ট বন্ধ করার পরও ফায়ার ওয়ার্নিং জ্বলে থাকে।
তিনি বলেন, শর্টসার্কিট থেকে ফায়ার এ্যালার্মিং হচ্ছে বলে প্রকৌশলীরা নিশ্চিত হন। পরে একটি লুপ ডিক্টেটর পাল্টানোর পর সমস্যা কেটে যায়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওই ফ্লাইটে এরশাদ স্যার থাকলেও তিনি নিজেও কোনো ধরনের ঝাকুনি বুঝেননি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এয়ারক্রাফট পরীক্ষা নীরিক্ষার পর ফ্লাইট উড্ডয়নের জন্য এখন প্রস্তÍুত রয়েছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ক্লিয়ারেন্স দিলেই আবারো এয়ারবাসটি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হবে। (দৈনিক নয়া দিগন্ত)