‘সরকার হটাতে ঢাবিতে লাশ ফেলতে হবে’ -টেলিফোনে দুই শীর্ষ নেতার আলাপ!
- প্রকাশের সময় : ০৩:০৩:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ৬৮১ বার পঠিত
ঢাকা: সরকার হটাতে ঢাবিতে লাশ ফেলতে হবে, ঢাকার বাইরে আমাদের অবস্থান দুর্বল। ঢাবিতে দুই তিনটি হল দখল করে অবস্থান শক্ত করতে হবে। সরকারকে ফেলতে হলে পেট্রোল বোমার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গন্ডগোল পাকিয়ে ২/৩টি লাশ ফেলে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে যে ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা দরকার সেটাই করতে হবে। ঢাবির ২/৩টি হল দখল করে অবস্থান শক্ত করতে হবে। এমন পরিবেশ তৈরি করলে বিদেশীরা সরকারকে সংলাপে বসতে আরো চাপ সৃষ্টি করবে। এতে পরিস্থিতি আমাদের অনুকুলে চলে আসবে।
দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের এক শীর্ষ নেতা এবং একটি ছোট দলের এক শীর্ষ নেতার ২৭ মিনিটের টেলিফোন কথোপকথনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। টেলিফোনে আলোচনাকারী দুই নেতার একজন বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং অন্যজন দেশেই আছেন। একটি গোয়েন্দা সংস্থা অতি সম্প্রতি কথোপকথনটি রেকর্ড করেছে। ইতিমধ্যে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে রেকর্ডের কপি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কথোপকথনটি হুবহু তুলে ধরা হলো। পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে বড় দলটিকে ‘বি’ এবং ছোট দলটিকে ‘ঐ’ নাম দেয়া হয়েছে।
ঐ দলের নেতা: ওদিকের খবরতো পাইছেন। মাঝে একদিন কথাও বলেছি ওই জায়গায়।
বি দলের নেতা: হ্যাঁ, আমাকে ফোন করলো একটু আগে। আপনার সাথে কথা-টথা আমাকে জানানো…।
ঐ দলের নেতা: এখনো এখানের খবর হলো শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবে তাতো বলা যায় না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, কুটনীতিকরা ও অন্যান্যরা যথেষ্ট পরিমাণ ইনিশিয়েটিভ।
বি দলের নেতা: হ্যাঁ, ইনিশিয়েটিভ কিছুটা দেখা যাচ্ছে।
ঐ দলের নেতা: আবার প্রতিবেশিদেরও দৃষ্টিভঙ্গির বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। এই মুৃহুর্তে আসলে দরকারটা হলো মাঠে যাওয়া, আমি আপনাদের অসুবিধাটা বুঝতে পারছি, চেষ্টা করছেন আপনারা। আমি একটা প্রোগ্রাম করলাম সোহরাওয়ার্দীতে। চিন্তা করছি যে, এ প্রোগ্রামের একটা কন্টিউনিটি রাখতে হবে। কারণ বিদেশি কুটনৈতিকরা এটার উপর জোর দিচ্ছে যে, বিরোধীদেরকে সভা সমাবেশ করতে দিতে হবে। এটায় বাধা দেয়া যাবে না। সরকারের উপর একটা চাপও রয়েছে। আমি এটা করতে থাকব, দেখা যাক কতদূর কি করা যায।
বি দলের নেতা: একচুয়্যালি, আমাদের জেলা পর্যায়ে বা অন্যান্য দিকে নীচের দিকে যে নেতা-কর্মীরা আছে ওরাতো প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল। ওরাতো এক্সাইটেড হয়ে যাচ্ছে। এখন এটা কনটিনিউ করা যাবে। আবার না করেও তো কোন উপায় দেখছি না।
ঐ দলের নেতা: আরো কিছুদিনতো কনটিনিউ করতেই হবে।
বি দলের নেতা: আপনার মতামতটা…আরো কিছুদিন কনটিনিউ করি, নাকি?
ঐ দলের নেতা: হ্যাঁ, কিছুদিন কনটিনিউ করতে হবে। আমি আপনাকে যেটা বলতে ফোন করেছি, সেটা হলো যে মাঝখানে যে একটা গ্রে এরিয়া বা ওয়াইড আছে এই জায়গাতে এখন আমাদের নামা দরকার। আমাদের বলতে…সিপিবি বা ওদের পজিশন কিন্তু বেশ। অনেকটা ঐদিকে আর খানিকটা এইদিকে এই রকম। তারমানে আমরা যে কয়জন আছি এই কয়জনই। তার মধ্যে আবার দ্বিধা দ্বন্দ আছে। কিন্তু এখানে কাউকে টানতে হবে। আমার সোহরাওয়ার্দীর প্রোগ্রামটা চাঙ্গা হয়েছে। কারণ এটার পাবলিক রেসপন্সটা ভালো ছিল। আমাদের তুলনায় খুব ভালো ছিল।
বি দলের নেতা: আমরা কিছু বলেছিলাম যাওয়ার জন্য।
ঐ দলের নেতা: আমরা টিভি টকশোতে এটাই বলেছি যে, এই ক্রাইসিসের গোড়ায় তো ৫ জানুয়ারী। সেটা বাদ দিয়ে আলোচনা করেন আর এই আন্দোলনের মধ্যে যে সহিংসতা ঢুকেছে সেটাও আলোচনা করেন। বিদেশি কুটনীতিকরা বসেছিল ব্যবসায়ীদের সাথে। আপনি আজকের একটি দৈনিকের প্রথম পৃষ্টায় পড়ে দেখেন হুবহু একই কথা বলেছে তারা। আমার মনে হচ্ছে পরিস্থিতিটা বেশ ফেবারেবল আছে। পিএম এর আমার ব্যাপারে খুব এলার্জি হয়েছে। সে মনে করছে যে এই সব কাজ ভেতরে ভেতরে আমি করাচ্ছি। অপর এক শীর্ষ নেতা আর নাগরিকরা এগুলো করতে পারে নাকি…? আমি এগুলো করাচ্ছি। এটা তার ধারণা হয়েছে। আমি মনে করি আপনার ভাইবার ঠিক আছে। তাই কথা বলতেছি। তা না হলে তো কথা বলতেও ভয় লাগে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাকে বলে যে আপনি একটু সতর্ক থাকেন। যদি সুবিধাজনকভাবে আপনাকে ভয় পায় তবে ইউ আর ট্রাবল। আর আপনার যদি কোন পরামর্শ থাকে তবে সেটা বলুন।
বি দলের নেতা: আমি আপনাকে ফোন করতাম এই জন্য যে আমাদের প্রোগাম নিয়ে আমরা একটু দ্বিধাগ্রস্থ যে আসলে কি করা যায়।
ঐ দলের নেতা: আমি একটা কথা বলি। আই মে বি রং। আমি মনে করি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকান এম্বাসি এদের কথাবার্তা সুক্ষভাবে দেখলে আপনি বুঝবেন যে, মনে হচ্ছে তারা কিছু একটা বলতে চায়। তারা স্পষ্ট বলছে যে সংলাপ করতে হবে। অপোজিশনকে ডেমোক্রেটিক এটমোসফেয়ার দিতে হবে। সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। এটা তোমাদেরই কাজ। তোমাদেরকেই করতে হবে, না হলে তোমাদের ক্ষতি হবে। এইটার মধ্যে যদি ভারতীয়দের একটা যোগসাজেশ হয় তাহলে এইখানে একটা পরিবর্তনের বাতাস বয়ে যাবে। আমার নলেজ অনুযায়ী বন্ধনের পরিবর্তন হচ্ছে, এখন যদি আপনি এটা লস করেন তাহলে গ্রান্ডটা কিন্তু শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি না থাকে তবে তো হবেই না আমি নিশ্চিত। ঐটা না থাকলে ইউ আর জাস্ট ডিফিটেট। আপনাদের এটা স্থগিত উইড্রো করার জায়গা আর নেই। বরং ভালো করে করার চেষ্টা করতে পারেন। এটা যদি একটু দুর্বলও হয়। ধরেন পেট্রোল বোমায় এতগুলো মানুষ মারা যাবার প্রপাগান্ডার পরেও মানুষের আন্দোলন বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠে নাই। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, বিরক্ত হচ্ছে, ভালো লাগছে না। তারপরেও মানুষ বলছে না সব দমন করে ফেলো, বিএনপি খুব অন্যায় করছে।
বি দলের নেতা: আপনাদের মুভমেন্টে দেশি ও আন্তর্জাতিক তৎপরতা চলছে। তারপরও সরকারের অবস্থানের পরিবর্তন নাই। এখন এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের সাইড থেকে দলীয় প্রধানের কথা বলা ঠিক হবে এই স্টেজে? কেন আমাদের মুভমেন্ট কনটিনিউ করতে হচ্ছে?
ঐ দলের নেতা: আপনি যেটা বলতে চাচ্ছেন বলেন। বাট টোনটা হবে এরকম আমরা কোন সহিংসতার মধ্যে নেই। আমাদেরকে এই রকম আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এটা অবৈধ সরকার অনির্বাচিত সরকার। এখানে আরো এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের উদাহরণগুলো তুলে ধরেন। আরো বলেন যে এটা ন্যায্য আন্দোলন, এই আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার পথ আসে না। আপনি ক্লিয়ার করে বলেন। যে আপনি সহিংসতার পক্ষে না। এই সমস্যার সমাধান হতে পারে সরকার যদি সংলাপের উদ্যোগ নেয়। আপনার বেকফুটে যাওয়ার পথ নেই। জাস্ট আপনার বক্তব্যগুলো বলতে হবে। এটা বলতে হবে যে, আমরা আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছি। আর এটা কতক্ষণ ধরে রাখতে পারবেন সেটা আপনি বুঝবেন। তবে ভেঙ্গে পড়া যাবে না।
বি দলের নেতা: ভেঙ্গে পড়া না, তবে কিছু কিছু জেলা থেকে বিরক্ত। মানে প্রতিদিন একটা কর্মকাল হয়। এতো মানুষ জেল জুলুম, পালাইয়া থাকা, একটিভিটিজ করা আবার যোগান দেয়া।
ঐ দলের নেতা: এটা সহসাই আপনাদেরকে দিবে না। এর মধ্যে আমরা যদি ১টা/ ২টা বড় প্রোগ্রাম করতে পারি তাহলে একটা ব্রেক থ্রু হয়ে যাবে। আর গত ৪/৫ দিনে পেট্রোল বোমায় মৃত্যুর ঘটনা কিন্তু নেই।
বি দলের নেতা: সরকারের অপপ্রচার। আমরা কন্ট্রোল করে ফেলেছি।
ঐ দলের নেতা: না অপপ্রচার এখনও করে নাই। তবে করবে। এটা না হোক তবে আন্দোলন চালাতে হবে।
বি দলের নেতা: এখন আপনার প্রোগ্রাম ২৩ তারিখে।
ঐ দলের নেতা: ২৩ তারিখ বিকেলে গণমিছিল করবো। পরবর্তীতে এটা কনটিনিউ করবো। লোক ১ হাজার হোক কিন্তু ঢাকার মানুষকে জানাতে হবে এটা হচ্ছে। নামলেই খালি গুলি করে এটা বলে চুপ থাকা যাবে না। টিম করে শহরে কোথায় নামা যায় এটা ভাবতে হবে। এটা আপনি বাইরে থেকে বললে হবে না। নিজেদেরকে অনুভব করতে হবে। কোনভাবে ইউনিভার্সিটি বন্ধ করা যায় নাকি এটা ভাবেন। ইট স্যুড বি এনি কজ। এটা আরো মাস তিনেক আগে করা উচিত ছিল। ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল হলো, মারামারি হলো ভিতরে। মারা গেলো ২/৩ টা। কি করা যাবে? কিন্তু হলো। তারপরে এটা স্যাক করে ফেলবে সরকারকে। আমি আগে বলেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২/৩টা হল দখল করার জন্য। সরকার সুতার উপর ঝুলছে এখন। আমি জানি না কেরির সাথে কি কথা হচ্ছে ওখানে।
বি দলের নেতা: আমি ও আমার দলের অপর এক শীর্ষ নেতা এখানে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা করছি। (বিডিনিউজ২৪.কম)