নিউইয়র্ক ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সংলাপের বিপক্ষে নেতারা ॥ প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার : আ.লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় প্রধানমন্ত্রী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:২৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
  • / ৯৮৭ বার পঠিত

ঢাকা: বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধে নাশকতার সমুচিত জবাব দিতে প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হবে। তবু বিএনপি জোটের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। গত ৬ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের এক সভায় দলীয় নেতাদের কাছে এমন মনোভাব জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপরদিকে বৈঠকে দলীয় নেতারা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। তাই এই মুহুর্তে বিরোধী জোটের সঙ্গে সংলাপে যেতে চায় না ক্ষমতাসীন দল। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সংলাপের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। হরতাল-অবরোধে সহিংসতার কড়া সমালোচনা করে তারা বলেছেন, যারা আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করে তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে মহিলা নিজের ছেলের মৃত্যুর পর স্বাভাবিক থাকতে পারেন, ছেলের লাশ বাসার নিচে অপেক্ষায় রেখে তা দেখতে আধঘণ্টা পরে নিচে নামেন, তাঁকে সুস্থ মানুষ বলা যায় না। তাঁর মানুষ মারার এসব কর্মসূচীও স্বাভাবিক কোনো কর্মসূচী নয়। তাঁদের অব্যাহত নাশকতার সমুচিত জবাব দেওয়া দরকার। প্রয়োজন হলে ওনাকে (খালেদা) গ্রেপ্তার করা হবে। তবু ডায়ালগ (সংলাপ) নামের অন্যায় দাবির কাছে মাথানত করব না।’
সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চান আবদুল মতিন খসরু। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, খালেদার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আপনি জায়গামতো বলে দেন। এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বলতে হবে কেন? আপনি আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। আপনিই উদ্যোগ নিন। আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু করুন।
জানা যায়, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহারের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এসএসসি ও সমমানের ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে এবার একটু ক্ষান্ত দেন, পরীক্ষার পর আবার শুরু করেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করবেন না। পরীক্ষার্থীদের যেন আতঙ্ক নিয়ে পরীক্ষা দিতে না হয়। তারা শান্তি মতো পরীক্ষা দিক। পরীক্ষার সময় ডিস্টার্ব করবেন না।’
সভার শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও জামায়াতের কর্মকান্ড এবং আইএসের কর্মকান্ডে কোনো পার্থক্য দেখি না।’ আইএস জঙ্গি কর্তৃক জর্দানের এক পাইলটকে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় আগুন দিয়ে হত্যা করার বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘পেট্রলবোমা তৈরি করতে অনেক টাকা লাগে। খালেদা জিয়া কেন এত টাকা খরচ করে মানুষ মারছেন?’ খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওনার হিতাহিত জ্ঞান চলে গেছে। উনি উন্মাদের পর্যায়ে চলে গেছেন।’
এক মাস ধরে চলা সহিংসতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা বাংলাদেশকে জল্লাদখানা বানাচ্ছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণকে সোচ্চার থাকতে হবে। পেট্রলবোমা মেরে, মানুষ মেরে বিএনপি চেয়ারপারসন কী পাবেন? মানুষ মারা কি আন্দোলন? কত লাশ তাঁর চাই?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণের জীবন রক্ষায়, জনগণের নিরাপত্তায়, দেশের কল্যাণের জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা নেওয়া হবে।’
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিসের আশায় উনি একটার পর একটা লাশ ফেলছেন? বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেওয়া যেন তাঁর একটা ইচ্ছা। কী অদ্ভুত ব্যাপার!’
গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে ফোন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংলাপের জন্য নিজে টেলিফোন করেছি। করে কী পেয়েছি, কী অপমানিত হয়েছি, মানুষ জানে। আঁতেলরা, যাঁরা এত কথা বলেন, টক শোতে কথা বলেন, তাঁদের নিজেদের সঙ্গে এমন আচরণ হলে বুঝতেন। ১৯৭৫ সালে আমার মা-বাবা হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আমাকে হত্যাচেষ্টায় খালেদার মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ও তাঁর ছেলে জড়িত, তা তো জানি। আমি তো নিজের মা-বাবা হারিয়েছি। সব জেনেও দেশের স্বার্থে আমি তাঁকে ফোন করেছি। ফোন করে যা শুনেছি, তা তো মানুষ জানে। আমরা তো এগুলো শুনে অভ্যস্ত না।’
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবরে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি গেলাম শোক জানাতে; কিন্তু গেট বন্ধ করে আমাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হলো না। ওনাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে; কিন্তু সেখানে কি একটা ভদ্রলোকও ছিল না যে গেট খুলে দিতে পারত?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর (খালেদা) ছেলে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়ে মরেছে। আর যাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে তাদের মায়েদের কী অবস্থা সেটা কি তিনি উপলব্ধি করতে পারেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুত্রশোকও তাঁকে টলাতে পারেনি। এমনই মা তিনি। তাঁকে সাধারণ মানুষের করুণ মৃত্যু কিভাবে টলাবে? তাঁর পুত্রের মৃত্যুর পর ড. কামাল হোসেন, মান্না, সুলতানরা শোক জানাতে গেলেন। ছবিতে দেখলাম, তিনি গঙ্গা-যমুনা শাড়ি পরে হিরোইনের মতো সেজে বসে আছেন।’
বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল দল ফাইনালে ওঠায় খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। চলমান সংকট মোকাবিলা করার জন্য তিনি দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বৈঠকে নাশকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে না পারলে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে মত দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিএনপি জোটের চলমান কর্মসূচী আন্দোলন নয়, এটি সন্ত্রাস। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে এটি ঘটলেও এর শিকড় আছে অনেক দূরে। বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এখানে একটি গোষ্ঠী আইএসের মতো সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরির চেষ্টা করছে। ফলে তাদের প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারে, যারা খুনি, তাদের সঙ্গে সরকার কিভাবে আলোচনা করবে। যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে বলব কঠোর হাতে নাশকতাকারীদের দমন করতে। দেশের বর্তমান সংকট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনের জন্য না। লক্ষ্য করুন, বিশ্বে কী হচ্ছে? জর্দানের পাইলটকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। যারা এগুলো ঘটাচ্ছে, যেভাবেই হোক তাদেরকে সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা হবে।’
বৈঠকে ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের খসড়া কর্মসূচী অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বৈঠকে আজমত উল্লাহকে সভাপতি করে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, কার্যনির্বাহী সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। (দৈনিক কালের কন্ঠ/মানবজমিন)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

সংলাপের বিপক্ষে নেতারা ॥ প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার : আ.লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১০:২৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

ঢাকা: বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধে নাশকতার সমুচিত জবাব দিতে প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হবে। তবু বিএনপি জোটের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। গত ৬ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের এক সভায় দলীয় নেতাদের কাছে এমন মনোভাব জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপরদিকে বৈঠকে দলীয় নেতারা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। তাই এই মুহুর্তে বিরোধী জোটের সঙ্গে সংলাপে যেতে চায় না ক্ষমতাসীন দল। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সংলাপের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। হরতাল-অবরোধে সহিংসতার কড়া সমালোচনা করে তারা বলেছেন, যারা আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করে তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে মহিলা নিজের ছেলের মৃত্যুর পর স্বাভাবিক থাকতে পারেন, ছেলের লাশ বাসার নিচে অপেক্ষায় রেখে তা দেখতে আধঘণ্টা পরে নিচে নামেন, তাঁকে সুস্থ মানুষ বলা যায় না। তাঁর মানুষ মারার এসব কর্মসূচীও স্বাভাবিক কোনো কর্মসূচী নয়। তাঁদের অব্যাহত নাশকতার সমুচিত জবাব দেওয়া দরকার। প্রয়োজন হলে ওনাকে (খালেদা) গ্রেপ্তার করা হবে। তবু ডায়ালগ (সংলাপ) নামের অন্যায় দাবির কাছে মাথানত করব না।’
সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চান আবদুল মতিন খসরু। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, খালেদার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আপনি জায়গামতো বলে দেন। এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বলতে হবে কেন? আপনি আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। আপনিই উদ্যোগ নিন। আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু করুন।
জানা যায়, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহারের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এসএসসি ও সমমানের ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে এবার একটু ক্ষান্ত দেন, পরীক্ষার পর আবার শুরু করেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করবেন না। পরীক্ষার্থীদের যেন আতঙ্ক নিয়ে পরীক্ষা দিতে না হয়। তারা শান্তি মতো পরীক্ষা দিক। পরীক্ষার সময় ডিস্টার্ব করবেন না।’
সভার শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও জামায়াতের কর্মকান্ড এবং আইএসের কর্মকান্ডে কোনো পার্থক্য দেখি না।’ আইএস জঙ্গি কর্তৃক জর্দানের এক পাইলটকে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় আগুন দিয়ে হত্যা করার বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘পেট্রলবোমা তৈরি করতে অনেক টাকা লাগে। খালেদা জিয়া কেন এত টাকা খরচ করে মানুষ মারছেন?’ খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওনার হিতাহিত জ্ঞান চলে গেছে। উনি উন্মাদের পর্যায়ে চলে গেছেন।’
এক মাস ধরে চলা সহিংসতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা বাংলাদেশকে জল্লাদখানা বানাচ্ছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণকে সোচ্চার থাকতে হবে। পেট্রলবোমা মেরে, মানুষ মেরে বিএনপি চেয়ারপারসন কী পাবেন? মানুষ মারা কি আন্দোলন? কত লাশ তাঁর চাই?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণের জীবন রক্ষায়, জনগণের নিরাপত্তায়, দেশের কল্যাণের জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা নেওয়া হবে।’
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিসের আশায় উনি একটার পর একটা লাশ ফেলছেন? বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেওয়া যেন তাঁর একটা ইচ্ছা। কী অদ্ভুত ব্যাপার!’
গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে ফোন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংলাপের জন্য নিজে টেলিফোন করেছি। করে কী পেয়েছি, কী অপমানিত হয়েছি, মানুষ জানে। আঁতেলরা, যাঁরা এত কথা বলেন, টক শোতে কথা বলেন, তাঁদের নিজেদের সঙ্গে এমন আচরণ হলে বুঝতেন। ১৯৭৫ সালে আমার মা-বাবা হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আমাকে হত্যাচেষ্টায় খালেদার মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ও তাঁর ছেলে জড়িত, তা তো জানি। আমি তো নিজের মা-বাবা হারিয়েছি। সব জেনেও দেশের স্বার্থে আমি তাঁকে ফোন করেছি। ফোন করে যা শুনেছি, তা তো মানুষ জানে। আমরা তো এগুলো শুনে অভ্যস্ত না।’
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবরে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি গেলাম শোক জানাতে; কিন্তু গেট বন্ধ করে আমাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হলো না। ওনাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে; কিন্তু সেখানে কি একটা ভদ্রলোকও ছিল না যে গেট খুলে দিতে পারত?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর (খালেদা) ছেলে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়ে মরেছে। আর যাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে তাদের মায়েদের কী অবস্থা সেটা কি তিনি উপলব্ধি করতে পারেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুত্রশোকও তাঁকে টলাতে পারেনি। এমনই মা তিনি। তাঁকে সাধারণ মানুষের করুণ মৃত্যু কিভাবে টলাবে? তাঁর পুত্রের মৃত্যুর পর ড. কামাল হোসেন, মান্না, সুলতানরা শোক জানাতে গেলেন। ছবিতে দেখলাম, তিনি গঙ্গা-যমুনা শাড়ি পরে হিরোইনের মতো সেজে বসে আছেন।’
বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল দল ফাইনালে ওঠায় খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। চলমান সংকট মোকাবিলা করার জন্য তিনি দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বৈঠকে নাশকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে না পারলে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে মত দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিএনপি জোটের চলমান কর্মসূচী আন্দোলন নয়, এটি সন্ত্রাস। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে এটি ঘটলেও এর শিকড় আছে অনেক দূরে। বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এখানে একটি গোষ্ঠী আইএসের মতো সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরির চেষ্টা করছে। ফলে তাদের প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারে, যারা খুনি, তাদের সঙ্গে সরকার কিভাবে আলোচনা করবে। যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে বলব কঠোর হাতে নাশকতাকারীদের দমন করতে। দেশের বর্তমান সংকট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনের জন্য না। লক্ষ্য করুন, বিশ্বে কী হচ্ছে? জর্দানের পাইলটকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। যারা এগুলো ঘটাচ্ছে, যেভাবেই হোক তাদেরকে সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা হবে।’
বৈঠকে ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের খসড়া কর্মসূচী অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বৈঠকে আজমত উল্লাহকে সভাপতি করে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, কার্যনির্বাহী সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। (দৈনিক কালের কন্ঠ/মানবজমিন)