নিউইয়র্ক ১২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মাহমুদুর রহমান ও প্রবাসী মিল্টন ভূঁইয়া জড়িত-রিমান্ডে শফিক রেহমান

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:০০:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৬
  • / ৭৯২ বার পঠিত

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। পরিকল্পনার সঙ্গে আমার দেশ সম্পাদক কারাবন্দি মাহমুদুর রহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক মিল্টন ভূঁইয়াও জড়িত। রিমান্ডের প্রথম দিন সাংবাদিক শফিক রেহমান এমন তথ্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন বলে ডিবি সূত্র দাবি করে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাশরুক খালেদ বলেন, মার্কিন প্রবাসী মিল্টন ভূঁইয়ার তথ্য ইন্টারপোল ও এফবিআইকে দেয়া হবে। তার বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে সোমবার এ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইতিমধ্যে সাংবাদিক শফিক রেহমানের মুখ থেকে এ দু’জনের নাম জানা গেছে। আরও তথ্য জানার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়া প্রবাসী ব্যবসায়ী মিল্টন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করতে এফবিআই ও ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে ডিবি কর্মকর্তাদের তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। সদা হাস্যোজ্জ্বল সাংবাদিক শফিক রেহমান তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে প্রথমদিনেই অনেক কিছুই খুলে বলেন। জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, শফিক রেহমান স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছেন জয় হত্যা পরিকল্পনায় মাহমুদুর রহমান (কারাবন্দি) ও প্রবাসী মিল্টন ভূঁইয়া জড়িত। এছাড়া এ পরিকল্পনার কয়েকটি বৈঠকে তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তারা আশা করছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান তাদের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন। এজন্য তাকে কিছুটা সময়ও দেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, পরিকল্পনাকারীদের টার্গেট ছিল জয়কে শেষ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুক খালি করা। আর এতে অর্থ ব্যয়ের হিসাব নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। টাকার জোগান যথেষ্ট ছিল। সেজন্য তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল যে কোনো নিরাপদ কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে জয় হত্যার মিশন সফল করা। তবে রাখে আল্লাহ মারে কে! পরিকল্পনাকারীদের কেউ কেউ নিয়তির কাছে ধরা পড়ে যান। আজ যারা আটক হয়েছেন এটাও তাদের সেই নিয়তি। তিনি জানান, এ হত্যা পরিকল্পনার পেছনে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী, অর্থদাতা ও মদদদাতার বিষয়ে ইতিমধ্যে তারা অনেক তথ্য পেয়েছেন। এখন জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে আনার পর কিছু প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব পেতে তাকে শফিক রেহমানের মুখোমুখি করা হবে। জানতে চাওয়া হবে মিল্টন ভূঁইয়ার সঙ্গে মাহমুদুর রহমান কিভাবে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এ হত্যা পরিকল্পনায় এজেন্ট নিয়োগ করতে মিল্টন ও মাহমুদুর রহমানের মধ্যে অনেকবার যোগাযোগ হয়। এ বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য আছে। এসব তথ্য অনুযায়ী হত্যা পরিকল্পনার সময় সজীব ওয়াজেদ জয়ের গতিবিধি, তার অবস্থানের ছক, কোথায় কখন কিভাবে হত্যা করা হবে, এ হত্যায় কে থাকবে এসব বিষয় নিয়ে মাহমুদুর রহমান ও মিল্টনের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে। এ বিষয়ে আদ্যোপান্ত খুলে বলেছেন শফিক রেহমান। তিনি (শফিক রেহমান) ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে তারও বৈঠক হয়েছিল।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রবাসী মিল্টনের সঙ্গে শফিক রেহমানেরও একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। জয়কে হত্যার পরিকল্পনা সফল হলে আগামীতে এই প্রবাসী ভালো পদ পেতেন। বিশেষ করে বিএনপি ক্ষমতায় এলে মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমান তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ এনে দিতেন বলেও কথা দিয়ে আসেন। জানা গেছে, প্রবাসী মিল্টন ভূঁইয়ার বাড়ি চট্টগ্রামে। তিনি জয় হত্যা পরিকল্পনায় ঢাকায় ও যুক্তরাষ্ট্রের লিংকে মাহমুদুর রহমানকে নানাভাবে দিকনির্দেশনাও দেন। আর ঢাকায় এসে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমান নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। জয় হত্যা পরিকল্পনার কিছু তথ্য-উপাত্ত, কাগজপত্র ও সর্বশেষ শফিক রেহমানের রোববারের (১৭ এপ্রিল) দেয়া জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের সঙ্গে অনেক মিল পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে জয়কে হত্যার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দন্ডিত এক বিএনপি নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার ও মাহমুদুর রহমানের মাঝে প্রধানমন্ত্রী পুত্রের ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদান হয়েছিল। ওই সময় গ্রেফতার সিজার তার বন্ধু মিল্টন ভূঁইয়ার মাধ্যমে কিছু তথ্য ঢাকায় মাহমুদুরকে পাঠিয়েছিলেন। আর ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে শফিক রেহমান এ চক্রের সঙ্গে বৈঠক করেন। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

মাহমুদুর রহমান ও প্রবাসী মিল্টন ভূঁইয়া জড়িত-রিমান্ডে শফিক রেহমান

প্রকাশের সময় : ০১:০০:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৬

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। পরিকল্পনার সঙ্গে আমার দেশ সম্পাদক কারাবন্দি মাহমুদুর রহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক মিল্টন ভূঁইয়াও জড়িত। রিমান্ডের প্রথম দিন সাংবাদিক শফিক রেহমান এমন তথ্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন বলে ডিবি সূত্র দাবি করে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাশরুক খালেদ বলেন, মার্কিন প্রবাসী মিল্টন ভূঁইয়ার তথ্য ইন্টারপোল ও এফবিআইকে দেয়া হবে। তার বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে সোমবার এ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইতিমধ্যে সাংবাদিক শফিক রেহমানের মুখ থেকে এ দু’জনের নাম জানা গেছে। আরও তথ্য জানার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়া প্রবাসী ব্যবসায়ী মিল্টন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করতে এফবিআই ও ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে ডিবি কর্মকর্তাদের তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। সদা হাস্যোজ্জ্বল সাংবাদিক শফিক রেহমান তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে প্রথমদিনেই অনেক কিছুই খুলে বলেন। জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, শফিক রেহমান স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছেন জয় হত্যা পরিকল্পনায় মাহমুদুর রহমান (কারাবন্দি) ও প্রবাসী মিল্টন ভূঁইয়া জড়িত। এছাড়া এ পরিকল্পনার কয়েকটি বৈঠকে তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তারা আশা করছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান তাদের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন। এজন্য তাকে কিছুটা সময়ও দেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, পরিকল্পনাকারীদের টার্গেট ছিল জয়কে শেষ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুক খালি করা। আর এতে অর্থ ব্যয়ের হিসাব নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। টাকার জোগান যথেষ্ট ছিল। সেজন্য তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল যে কোনো নিরাপদ কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে জয় হত্যার মিশন সফল করা। তবে রাখে আল্লাহ মারে কে! পরিকল্পনাকারীদের কেউ কেউ নিয়তির কাছে ধরা পড়ে যান। আজ যারা আটক হয়েছেন এটাও তাদের সেই নিয়তি। তিনি জানান, এ হত্যা পরিকল্পনার পেছনে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী, অর্থদাতা ও মদদদাতার বিষয়ে ইতিমধ্যে তারা অনেক তথ্য পেয়েছেন। এখন জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে আনার পর কিছু প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব পেতে তাকে শফিক রেহমানের মুখোমুখি করা হবে। জানতে চাওয়া হবে মিল্টন ভূঁইয়ার সঙ্গে মাহমুদুর রহমান কিভাবে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এ হত্যা পরিকল্পনায় এজেন্ট নিয়োগ করতে মিল্টন ও মাহমুদুর রহমানের মধ্যে অনেকবার যোগাযোগ হয়। এ বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য আছে। এসব তথ্য অনুযায়ী হত্যা পরিকল্পনার সময় সজীব ওয়াজেদ জয়ের গতিবিধি, তার অবস্থানের ছক, কোথায় কখন কিভাবে হত্যা করা হবে, এ হত্যায় কে থাকবে এসব বিষয় নিয়ে মাহমুদুর রহমান ও মিল্টনের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে। এ বিষয়ে আদ্যোপান্ত খুলে বলেছেন শফিক রেহমান। তিনি (শফিক রেহমান) ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে তারও বৈঠক হয়েছিল।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রবাসী মিল্টনের সঙ্গে শফিক রেহমানেরও একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। জয়কে হত্যার পরিকল্পনা সফল হলে আগামীতে এই প্রবাসী ভালো পদ পেতেন। বিশেষ করে বিএনপি ক্ষমতায় এলে মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমান তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ এনে দিতেন বলেও কথা দিয়ে আসেন। জানা গেছে, প্রবাসী মিল্টন ভূঁইয়ার বাড়ি চট্টগ্রামে। তিনি জয় হত্যা পরিকল্পনায় ঢাকায় ও যুক্তরাষ্ট্রের লিংকে মাহমুদুর রহমানকে নানাভাবে দিকনির্দেশনাও দেন। আর ঢাকায় এসে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমান নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। জয় হত্যা পরিকল্পনার কিছু তথ্য-উপাত্ত, কাগজপত্র ও সর্বশেষ শফিক রেহমানের রোববারের (১৭ এপ্রিল) দেয়া জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের সঙ্গে অনেক মিল পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে জয়কে হত্যার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দন্ডিত এক বিএনপি নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার ও মাহমুদুর রহমানের মাঝে প্রধানমন্ত্রী পুত্রের ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদান হয়েছিল। ওই সময় গ্রেফতার সিজার তার বন্ধু মিল্টন ভূঁইয়ার মাধ্যমে কিছু তথ্য ঢাকায় মাহমুদুরকে পাঠিয়েছিলেন। আর ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে শফিক রেহমান এ চক্রের সঙ্গে বৈঠক করেন। (দৈনিক যুগান্তর)