নিউইয়র্ক ০৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মাওলানা সুবহানের মৃত্যুদন্ড

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:২২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
  • / ৯৫১ বার পঠিত

ঢাকা: একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির প্রবীন জননেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান মাওলানা আবদুস সুবহানের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ১৮ ফেব্রুয়ারী বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। অপর দুই বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। মাওলানা সুবহানের বিরুদ্ধে আনিত নয়টি অভিযোগের ছয়টি প্রমাণিত মর্মে প্রদত্ত রায়ে ১, ৩ ও ৬ নং অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২ এবং ৭ নং অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন এবং ৩ নং অভিযোগে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে প্রথম তিন অভিযোগ কার্যকর করার ক্ষেত্রে পরবর্তী তিন অভিযোগে কারাদন্ড কার্যকর হবে না। বাকি ৫, ৮ ও ৯ নং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে মাওলানা সুবহানকে। বর্তমানে তার বয়স ৮৬ বছর হলেও তা বিবেচনায় না নিয়ে ১৯৭১ সালে তার বয়স কত ছিল তা বিবেচনায় নিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে বলে রায়ের সারমর্মে বলা হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আবারো জামায়াতে ইসলামীকে ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন (অপরাধী সংগঠন) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাওলানা সুবহানের বিরুদ্ধে ১৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের সংক্ষিপ্তসার পাঠ করা হয় যার পুরোটাই পড়েন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাসকক্ষে এই রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-২। রায় প্রদানকালে প্রবীন এই নেতা এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তিনি মনোযোগ দিয়ে রায় শোনেন তবে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। রায়ের পর পরই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নীচতলার হাজতখানায়। হাটা-চলা করতে অক্ষম এই বয়োবৃদ্ধ নেতা দুই পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে এজলাসকক্ষে আসেন এবং একইভাবে হাজতখানায় যান। এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বুধবার সকাল ৯টায় মাওলানা সুবহানকে নিয়ে আসা হয় ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়। রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে তার ২জন আইনজীবী হাজতখানায় তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। বাসা থেকে আনা খাবার খাওয়ান তার ছেলে। দুপুরে তাকে আবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সুবহানের পক্ষে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, শিশির মোহাম্মদ মনির, শাহজাহান কবির, সাইফুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, রায়হান উদ্দিন, আসাদ উদ্দিনসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী এবং মাওলানা সুবহানের ছেলে নেছার আহমদ নান্নু ও মুজাহিদুল উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে সরকারপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, হায়দার আলি, জেয়াদ আল মালুম, রানা দাস গুপ্ত, সুলতান মাহমুদ সীমন, তুরিন আফরোজ, রেজিয়া সুলতানা চমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত থাকলেও গণজাগরণ মঞ্চের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ড. আনোয়ার হোসেন ছাড়া তেমন কোনো উপস্থিতি বুধবারের আগের মতো ছিল না।
মাওলানা সুবহানকে যে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তা হলো ১, ৪ ও ৬। ১ নং অভিযোগ হলো- ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে তেলডিপো থেকে মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ১৮ এপ্রিল ঈশ্বরদী জামে মসজিদে আশ্রয় নেয়া মোতালেব খানকে মাওলানা আবদুস সোবহানের নির্দেশে অপহরণ ও হত্যা। অভিযোগ ৪ : মাওলানা আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে ঈশ্বরদীর শাহপুর গ্রামে পাকিস্তান আর্মির অপারেশন পরিচালনা। এ সময় বিভিন্ন বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে গণহত্যা পরিচালনা করা হয়। এ ঘটনায় সাতজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ ৬ : ১৯৭১ সালের ১২ মে পাকিস্তান আর্মির ৩০০ সৈন্য নিয়ে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অভিযান। এ সময় বাড়িঘর লুটপাট করে আগুন দেয়া। এ সময় পরিচালিত গণহত্যায় কয়েকশ’ লোক নিহত। তাদের মধ্যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।
২ ও ৭ নং অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন করাদন্ড দেয়া হয়। অভিযোগ ২ : ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল ঈশ্বরদীর গোপালপুর ওযুক্তিতলা গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে মাওলানা আবদুস সুবহানের নেতৃত্বে লুটপাট ও হামলা। এ ঘটনায় আটজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ ৭ : পাবনার আটঘরিয়া ইউনিয়নে ২১ মে পাকিস্তান আর্মি অপারেশন পরিচালনা করে ১৯ জনকে হত্যা করে। আর্মিদের পথ দেখিয়ে দেয়া এবং তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন মর্মে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ৩নং অভিযোগে তাকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। অভিযোগ ৩ : ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে আলাউদ্দিন ও রিয়াজউদ্দিন মেম্বারের বাড়ি লুট। এ ছাড়া জয়নুদ্দিন, নুরু, আনসার কমান্ডারসহ অনেককে অপরহরণ ও নির্যাতন। এ অভিযোগে দুজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রমাণিত হয়নি মর্মে যে তিনটি অভিযোগে প্রবীন এই পার্লামেন্টারিয়ানকে খালাস দেয়া হয়েছে তা হলো ৫, ৮ ও ৯। অভিযোগ ৫ : মাওলানা আবদুস সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তান আর্মি পাবনা সদরের কুলনিয়া এবং দোগাছি গ্রামে অভিযান। এ সময় পাকিস্তন আর্মি স্বাধীনতাপন্থী অনেককে গুলী করে হত্যা করে। বাড়িঘরে আগুন দেয়। এ ঘটনায় সাতজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ ৮ : সাবেক পাবনা সদর বর্তমানে আতাকুলা থানার দুবলিয়া বাজার থেকে দুজন স্বাধীনতাপন্থীকে ধরে নিয়ে হত্যা। অভিযোগ ৯ : ১৯৭১ সালের ২১ নবেম্বর পাবনার বেতবাড়িয়া গ্রামে পরিচালিত অপারেশনে বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন দেয়া। এ সময় চারজনকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়।
গত বুধবার সকাল ১১টা ২ মিনিটে তিন বিচারক এজলাসে বসেন। অন্য একটি মামলার উপর সিদ্ধান্ত দেয়ার পর বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে রায় পাঠ শুরু করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ১৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সংক্ষিপ্ত আকারে পাঠ করছেন তিনি।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখে দেন।
২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকালে টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে মাওলানা সুবহানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই রাতেই তাকে পাবনা কারাগারে নেয়া হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর পাবনা কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানাস্তর করা হয় তাকে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশনের আবেদন আমলে নিয়ে মাওলানা সুবহানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। (দৈনিক সংগ্রাম)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

মাওলানা সুবহানের মৃত্যুদন্ড

প্রকাশের সময় : ০২:২২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

ঢাকা: একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির প্রবীন জননেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান মাওলানা আবদুস সুবহানের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ১৮ ফেব্রুয়ারী বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। অপর দুই বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। মাওলানা সুবহানের বিরুদ্ধে আনিত নয়টি অভিযোগের ছয়টি প্রমাণিত মর্মে প্রদত্ত রায়ে ১, ৩ ও ৬ নং অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২ এবং ৭ নং অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন এবং ৩ নং অভিযোগে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে প্রথম তিন অভিযোগ কার্যকর করার ক্ষেত্রে পরবর্তী তিন অভিযোগে কারাদন্ড কার্যকর হবে না। বাকি ৫, ৮ ও ৯ নং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে মাওলানা সুবহানকে। বর্তমানে তার বয়স ৮৬ বছর হলেও তা বিবেচনায় না নিয়ে ১৯৭১ সালে তার বয়স কত ছিল তা বিবেচনায় নিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে বলে রায়ের সারমর্মে বলা হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আবারো জামায়াতে ইসলামীকে ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন (অপরাধী সংগঠন) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাওলানা সুবহানের বিরুদ্ধে ১৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের সংক্ষিপ্তসার পাঠ করা হয় যার পুরোটাই পড়েন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাসকক্ষে এই রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-২। রায় প্রদানকালে প্রবীন এই নেতা এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তিনি মনোযোগ দিয়ে রায় শোনেন তবে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। রায়ের পর পরই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নীচতলার হাজতখানায়। হাটা-চলা করতে অক্ষম এই বয়োবৃদ্ধ নেতা দুই পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে এজলাসকক্ষে আসেন এবং একইভাবে হাজতখানায় যান। এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বুধবার সকাল ৯টায় মাওলানা সুবহানকে নিয়ে আসা হয় ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়। রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে তার ২জন আইনজীবী হাজতখানায় তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। বাসা থেকে আনা খাবার খাওয়ান তার ছেলে। দুপুরে তাকে আবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সুবহানের পক্ষে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, শিশির মোহাম্মদ মনির, শাহজাহান কবির, সাইফুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, রায়হান উদ্দিন, আসাদ উদ্দিনসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী এবং মাওলানা সুবহানের ছেলে নেছার আহমদ নান্নু ও মুজাহিদুল উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে সরকারপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, হায়দার আলি, জেয়াদ আল মালুম, রানা দাস গুপ্ত, সুলতান মাহমুদ সীমন, তুরিন আফরোজ, রেজিয়া সুলতানা চমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত থাকলেও গণজাগরণ মঞ্চের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ড. আনোয়ার হোসেন ছাড়া তেমন কোনো উপস্থিতি বুধবারের আগের মতো ছিল না।
মাওলানা সুবহানকে যে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তা হলো ১, ৪ ও ৬। ১ নং অভিযোগ হলো- ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে তেলডিপো থেকে মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ১৮ এপ্রিল ঈশ্বরদী জামে মসজিদে আশ্রয় নেয়া মোতালেব খানকে মাওলানা আবদুস সোবহানের নির্দেশে অপহরণ ও হত্যা। অভিযোগ ৪ : মাওলানা আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে ঈশ্বরদীর শাহপুর গ্রামে পাকিস্তান আর্মির অপারেশন পরিচালনা। এ সময় বিভিন্ন বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে গণহত্যা পরিচালনা করা হয়। এ ঘটনায় সাতজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ ৬ : ১৯৭১ সালের ১২ মে পাকিস্তান আর্মির ৩০০ সৈন্য নিয়ে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অভিযান। এ সময় বাড়িঘর লুটপাট করে আগুন দেয়া। এ সময় পরিচালিত গণহত্যায় কয়েকশ’ লোক নিহত। তাদের মধ্যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।
২ ও ৭ নং অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন করাদন্ড দেয়া হয়। অভিযোগ ২ : ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল ঈশ্বরদীর গোপালপুর ওযুক্তিতলা গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে মাওলানা আবদুস সুবহানের নেতৃত্বে লুটপাট ও হামলা। এ ঘটনায় আটজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ ৭ : পাবনার আটঘরিয়া ইউনিয়নে ২১ মে পাকিস্তান আর্মি অপারেশন পরিচালনা করে ১৯ জনকে হত্যা করে। আর্মিদের পথ দেখিয়ে দেয়া এবং তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন মর্মে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ৩নং অভিযোগে তাকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। অভিযোগ ৩ : ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে আলাউদ্দিন ও রিয়াজউদ্দিন মেম্বারের বাড়ি লুট। এ ছাড়া জয়নুদ্দিন, নুরু, আনসার কমান্ডারসহ অনেককে অপরহরণ ও নির্যাতন। এ অভিযোগে দুজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রমাণিত হয়নি মর্মে যে তিনটি অভিযোগে প্রবীন এই পার্লামেন্টারিয়ানকে খালাস দেয়া হয়েছে তা হলো ৫, ৮ ও ৯। অভিযোগ ৫ : মাওলানা আবদুস সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তান আর্মি পাবনা সদরের কুলনিয়া এবং দোগাছি গ্রামে অভিযান। এ সময় পাকিস্তন আর্মি স্বাধীনতাপন্থী অনেককে গুলী করে হত্যা করে। বাড়িঘরে আগুন দেয়। এ ঘটনায় সাতজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ ৮ : সাবেক পাবনা সদর বর্তমানে আতাকুলা থানার দুবলিয়া বাজার থেকে দুজন স্বাধীনতাপন্থীকে ধরে নিয়ে হত্যা। অভিযোগ ৯ : ১৯৭১ সালের ২১ নবেম্বর পাবনার বেতবাড়িয়া গ্রামে পরিচালিত অপারেশনে বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন দেয়া। এ সময় চারজনকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়।
গত বুধবার সকাল ১১টা ২ মিনিটে তিন বিচারক এজলাসে বসেন। অন্য একটি মামলার উপর সিদ্ধান্ত দেয়ার পর বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে রায় পাঠ শুরু করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ১৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সংক্ষিপ্ত আকারে পাঠ করছেন তিনি।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখে দেন।
২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকালে টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে মাওলানা সুবহানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই রাতেই তাকে পাবনা কারাগারে নেয়া হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর পাবনা কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানাস্তর করা হয় তাকে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশনের আবেদন আমলে নিয়ে মাওলানা সুবহানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। (দৈনিক সংগ্রাম)