নিউইয়র্ক ০৮:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মহান মে দিবস : শ্রমজীবী মানুষের অধিকার সংগ্রামের দিন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:১৪:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ মে ২০১৫
  • / ২৩৪৪ বার পঠিত

মহান মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেও দিনটি পরিচিত। দিনটি মাঠে-ঘাটে, কল-কারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির দিন। বাংলাদেশে এবারের মে দিবসের সেøাগান হল ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’। মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১ মে জাতীয় ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও বেতারগুলো শ্রমজীবী মানুষের জীবনগাঁথাসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
ইতিহাস বলে: দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। এদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সে ডাকে শিকাগো শহরের তিন লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। এক লাখ পঁচাশি হাজার নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে আরও অসংখ্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝান্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলী চালালে ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান। অন্যদিকে ‘হে’ মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় মার্কিন সরকার। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে। এরপরও যে ‘ক্লেদমাখা’ পুঁজিবাদী অর্থনীতি ব্যবস্থায় শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে তা কিছুতেই বলা যায় না। তাই তো শ্রমিকদের সকল ন্যায়সঙ্গত দাবি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছেন অনেকেই।
এদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রামাণ্য তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমিকের সংখ্যা পৌনে ৫ কোটি। এর মধ্যে ৪৫টি আনুষ্ঠানিক খাতে (মাসিক বেতন) শ্রমিক রয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ও বাকি অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক। বর্তমান বাজার দরে উভয় খাতের শ্রমিকরাই জীবন যাত্রার খরচ নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে। অর্থনীতির সাধারণ হিসেবে দারিদ্র্য সীমার ঊর্ধ্বে বেঁচে থাকতে হলে দৈনিক দুই হাজার ১২২ কিলোক্যালরি খাদ্য দরকার। কঠিন বাস্তবতায় সেসব হিসেব-নিকেশ কেবলি ব্যঙ্গ করে শ্রমজীবী মানুষগুলোকে। শ্রমআইন পর্যন্ত শ্রমিকদের কল্যাণে নয়, বরং মালিক বান্ধব। শুধু তাই নয়, অর্থলোলুপ মালিকদের কারণে গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৃত্যুপুরী। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল যুবলীগ নেতা সোহেল রানার মালিকানাধীন সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সহস্রাধিক হতভাগ্য শ্রমিক মারা গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাড়গোর পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে তাজরিন, স্পেক্ট্রাম গার্মেন্টস বিপর্যয়েও বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে। বেসরকারি সংগঠন বিলস-এর হিসেবে গত এক দশকে প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক মারা গেছে।
এদিকে, মে দিবস উপলক্ষে গত বুধবার (২৯ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বিধিমালা সংশোধন করে কোনো শ্রমিককে এককালীন সহায়তার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হচ্ছে। বিধিমালাটিতে আইন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে আগামী এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে এ পর্যন্ত সাতচল্লিশটি প্রতিষ্ঠান ৮৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তহবিলের টাকা ব্যাংকে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করে রাখা হয়েছে। মুনাফাসহ মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ কোটি ৭৫ লাখ। তহবিল থেকে তিনশ’ শ্রমিককে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য করা যৌথ বীমায় প্রিমিয়াম হিসেবে ২৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালায় শ্রমিকদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে সহায়তা করার বিষয়টি থাকবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য শ্রমিকদের সন্তানদের সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

মহান মে দিবস : শ্রমজীবী মানুষের অধিকার সংগ্রামের দিন

প্রকাশের সময় : ১০:১৪:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ মে ২০১৫

মহান মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেও দিনটি পরিচিত। দিনটি মাঠে-ঘাটে, কল-কারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির দিন। বাংলাদেশে এবারের মে দিবসের সেøাগান হল ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’। মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১ মে জাতীয় ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও বেতারগুলো শ্রমজীবী মানুষের জীবনগাঁথাসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
ইতিহাস বলে: দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। এদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সে ডাকে শিকাগো শহরের তিন লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। এক লাখ পঁচাশি হাজার নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে আরও অসংখ্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝান্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলী চালালে ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান। অন্যদিকে ‘হে’ মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় মার্কিন সরকার। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে। এরপরও যে ‘ক্লেদমাখা’ পুঁজিবাদী অর্থনীতি ব্যবস্থায় শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে তা কিছুতেই বলা যায় না। তাই তো শ্রমিকদের সকল ন্যায়সঙ্গত দাবি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছেন অনেকেই।
এদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রামাণ্য তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমিকের সংখ্যা পৌনে ৫ কোটি। এর মধ্যে ৪৫টি আনুষ্ঠানিক খাতে (মাসিক বেতন) শ্রমিক রয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ও বাকি অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক। বর্তমান বাজার দরে উভয় খাতের শ্রমিকরাই জীবন যাত্রার খরচ নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে। অর্থনীতির সাধারণ হিসেবে দারিদ্র্য সীমার ঊর্ধ্বে বেঁচে থাকতে হলে দৈনিক দুই হাজার ১২২ কিলোক্যালরি খাদ্য দরকার। কঠিন বাস্তবতায় সেসব হিসেব-নিকেশ কেবলি ব্যঙ্গ করে শ্রমজীবী মানুষগুলোকে। শ্রমআইন পর্যন্ত শ্রমিকদের কল্যাণে নয়, বরং মালিক বান্ধব। শুধু তাই নয়, অর্থলোলুপ মালিকদের কারণে গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৃত্যুপুরী। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল যুবলীগ নেতা সোহেল রানার মালিকানাধীন সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সহস্রাধিক হতভাগ্য শ্রমিক মারা গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাড়গোর পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে তাজরিন, স্পেক্ট্রাম গার্মেন্টস বিপর্যয়েও বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে। বেসরকারি সংগঠন বিলস-এর হিসেবে গত এক দশকে প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক মারা গেছে।
এদিকে, মে দিবস উপলক্ষে গত বুধবার (২৯ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বিধিমালা সংশোধন করে কোনো শ্রমিককে এককালীন সহায়তার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হচ্ছে। বিধিমালাটিতে আইন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে আগামী এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে এ পর্যন্ত সাতচল্লিশটি প্রতিষ্ঠান ৮৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তহবিলের টাকা ব্যাংকে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করে রাখা হয়েছে। মুনাফাসহ মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ কোটি ৭৫ লাখ। তহবিল থেকে তিনশ’ শ্রমিককে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য করা যৌথ বীমায় প্রিমিয়াম হিসেবে ২৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালায় শ্রমিকদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে সহায়তা করার বিষয়টি থাকবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য শ্রমিকদের সন্তানদের সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।