বেতন বাড়ানোর পর কেন অসন্তোাষ ? উনার কত বড় দুঃসাহস! মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করেন : বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী
- প্রকাশের সময় : ০৮:৩৫:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ জানুয়ারী ২০১৬
- / ৮৬০ বার পঠিত
ঢাকা: দেশের উন্নয়ন কাজে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধির পরও কেন এ আন্দোলন? আন্দোলন না করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করবেন না। সোমবার (১১ জানুয়ারী) বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সমাবেশে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠের মাধ্যমে সমাবেশের কাজ শুরু হয়। ৩টা ২০ মিনিটে সমাবেশস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সমাবেশে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম যেন সুষ্ঠুভাবে চলে এটি আমরা চাই। শিক্ষকের মর্যাদা অনেক ওপরে। আমার শিক্ষক আনিসুজ্জামান স্যার, আমার শিক্ষক রফিক স্যার। তাদের সম্মান আমার কাছে তাদের মতোই। যদি কোনো অসুবিধা হয় আমরা তা দেখছি। কিন্তু আন্দোলন করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বন্ধ করবেন না। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে আন্দোলন মানায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষক সচিবের মর্যাদা চান কি করে? আর যদি সচিব হতে চান তাহলে বিসিএস দিয়ে সচিব হয়ে যান। তিনি বলেন, তারা তো এখন ৬৫ বছরে অবসরে যাচ্ছেন। তারা কী চান তাদের অবসরের বয়স অন্য চাকরিজীবীদের মতো ৫৯-এ নিয়ে আসি। তিনি বলেন, এত বেতন বাড়ানোর পরও কেন এত অসন্তোষ তা বোধগম্য নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মেট্রোরেল নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। একটি স্টেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে, যাতে উত্তরা, মিরপুরে থাকা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারে। এ মেট্রোরেলের মাধ্যমে বারডেম, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অল্প সময়ে কর্মস্থলে আসা যাওয়া করতে পারবেন। এ মেট্রোরেল আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হবে। কিন্তু এর বিরুদ্ধেও একেকজন আন্দোলনে নেমে গেছে। গ্রাম এলাকায় একটা কথা আছে, যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর। হঠাৎ এ আন্দোলন কিসের জন্য? বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬-এর ১৫ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনের পর কিছুদিনের মধ্যে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে ৬৮ জন মানুষকে নিয়ে নিজের অফিসে তিনি পড়ে থাকলেন। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা একাত্তরে মানুষ দেখেছিল। আবার দেখলো ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর। পৌরসভা নির্বাচন প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ জ্বালাও পোড়াও পছন্দ করেনি। তিনি বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) কত বড় দুঃসাহস! মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। মুক্তিযুদ্ধে এত মানুষ নাকি মারা যায়নি। আসলে ‘ওনার দিল মে হ্যায় পেয়ারে পাকিস্তান’। শহীদদের সংখ্যা নিয়ে পাকিস্তান যা বলবে তিনিও তাই বলবেন।
বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যারহস্য উদঘাটন করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার মাত্র দুই মাসের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহ হলো। খালেদা জিয়া বললেন, বিডিআর বিদ্রোহ নাকি আওয়ামী লীগ সরকারই ঘটিয়েছে। আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করেছি। আমরা কেন একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটাতে যাবো? তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল সকাল নয়টায়, তিনি কেন ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে সকাল সাতটায় বেরিয়ে গেলেন। তার ছেলে লন্ডন থেকে কেন ৪৫ বার ফোন করে তাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিল? এই জবাব বাংলাদেশের মানুষের কাছে দিতে হবে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলে তার নিজের থাকতে পারে। তিনি বলেন, এ ঘটনার বিচার উচ্চ আদালতে চলছে। ষড়যন্ত্রের রহস্য উদঘাটন করা হবে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন এবং আর্মি রেগুলেশন লঙ্ঘন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েছিল। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান আবার সেনাপ্রধান ছিলেন তিনি। জিয়া যা কিছু করেছে তার সবকিছু ছিল অবৈধ। মহামান্য আদালত এ ব্যাপারে রায় দিয়েছে। জিয়াকে যদি রাষ্ট্রপতি বলা হয় তাহলে হাইকোর্টের রায়কে অবমাননা করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু তার স্বামী হ্যাঁ না ভোট করেছিলেন। সেখানে ১১০ ভাগ ভোট পড়েছিল। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর দেশে কি হলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করা হলো। সেনাবাহিনীতে ১৯ বার ক্যু হলো। মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের হত্যা করা হলো। যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি এমনকি বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরও পুরস্কৃত করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ বন্ধ করে তাদের মুক্ত করে রাজনীতির সুযোগ করে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার জন্য এত মানুষ আত্মত্যাগ করেছিল, সেই ইতিহাস কয়েকটি প্রজন্মকে জানতে দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পরে আরও ৭ বছর, এই ২৯ বছর এদেশের মানুষ বঞ্চিত ছিল। আজকে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যদি কেউ ছিনিমিনি খেলতে চায় তা আমরা বরদাশত করবো না। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা দেশের মানুষের উন্নয়ন ও ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাই। আমরা চাই দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে। সমৃদ্ধশালী হবে। দেশের মানুষের মঙ্গল কিসে আর অসুবিধা কিসে এটুকু বোঝার মতো জ্ঞান আমার আছে। তাই দয়া করে আমাদের উন্নয়ন কাজে কেউ বাধা দেবেন না।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয় স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার প্রাণপ্রিয় দেশবাসীর কাছে যখন তিনি ফেরেন তখনি দেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। মাত্র ১০ মাসের মধ্যে তিনি একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। পৃথিবীর কোথাও দেশ স্বাধীনের পর মিত্রশক্তি স্বাধীন দেশ ত্যাগ করেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনচেতার কারণে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী কিছুদিনের মধ্যেই তাদের নিজের দেশে ফিরে যায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন। বাংলার মানুষ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান পাবে এটাই ছিল তার স্বপ্ন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই একটি বড় আঘাত এলো। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে। বঙ্গবন্ধুর সেই অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদ আমরা পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আজকের দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে, যেভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে গিয়েছিলাম, তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাবো। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, খালেদা জিয়া এখন লাইন বদলাইছেন। তিনি এখন মানুষ পোড়ান না, রিটার্নিং কর্মকর্তা, স্কুলও পোড়ান না। কিন্তু যারা আপনাকে (খালেদা জিয়া) জঙ্গিবাদ চালিয়েছে, অস্ত্র দিয়ে মানুষ মেরেছে, কই আপনি তো তাদের বিষয়ে একটা কথাও বললেন না। তাহলে আপনি কী লাইন বদলাইছেন? তিনি বলেন, আপনি বলেছেন দেশে রাজতন্ত্র চলছে। আপনি যদি রাজতন্ত্রের অধীনে থাকতেন তাহলে এক ঘণ্টা বক্তব্য দিলেন কিভাবে? এত মানুষ পুড়িয়েও আপনাকে জেলে যেতে হয়নি। রাজতন্ত্র থাকলে তো তা হতো না। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এক পাক সখী (খালেদা জিয়া) আছে, দেশের উন্নতি উনার ভালো লাগে না। উনার ভালো লাগে পোড়া মানুষের গন্ধ। মতিয়া বলেন, যতই চেষ্টাই করা হোক পাকিস্তানী খালেদা সফল হবেন না।
প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, তিনি ভোটারদের কুকুর বলেছেন। কত বড় স্পর্ধা দেখিয়েছেন! আপনি (খালেদা জিয়া) শেখ হাসিনার কাছে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও আপনি পরাজিত হবেন।
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব ও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও তার রাজনৈতিক জীবনে নির্যাতিত হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর মতো এত কষ্ট আর কোনো নেতা করেননি। তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লেই তা বোঝা যায়। তিনি বলেন, পাকিস্তানী কূটনীতিক অ্যাম্বাসিতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার প্রয়োজন নেই।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন, সুজিত রায় নন্দিসহ দলের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক সমাবেশে বক্তব্য দেন। (দৈনিক মানব জমিন)