বিএনপির ১৬ পদে ১৪ নতুন মুখ
- প্রকাশের সময় : ১০:১১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৬
- / ৭৩৪ বার পঠিত
ঢাকা: ষষ্ঠ কাউন্সিলের ২১ দিন পর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ৯ এপ্রিল শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এই দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে ১৬ জনের নাম ঘোষণা করেন, যাঁদের মধ্যে ১৪ জনই নতুন। যুগ্ম মহাসচিব পদে এবার দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, হারুন-অর রশীদ ও আসলাম চৌধুরী। আর সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন ঢাকা বিভাগে ফজলুল হক মিলন, চট্টগ্রামে শাহাদাত হোসেন, সিলেটে ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীতে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বরিশালে বিলকিস শিরীন, রংপুরে আসাদুল হাবিব দুলু, ময়মনসিংহে এমরান সালেহ প্রিন্স ও ফরিদপুরে শামা ওবায়েদ। তাঁদের মধ্যে ফজলুল হক মিলন ও আসাদুল হাবিব দুলু পুরনো কমিটিতে একই পদে ছিলেন।
গত ১৯ মার্চ দলের জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলররা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কমিটি গঠনের সর্বময় ক্ষমতা দেন। সেই ক্ষমতাবলে তিনি এ মনোনয়ন দেন। এর আগে দলের মহাসচিব পদে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে রুহুল কবীর রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মিজানুর রহমান সিনহাকে মনোনয়ন দেন খালেদা জিয়া।
কমিটি ঘোষণার পর বিএনপিতে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারণ যাঁরা পদপদবীর দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন তাঁরা সফল হয়েছেন। কেউ কেউ প্রত্যাশার চেয়েও বড় পদ পেয়েছেন। দলে ভারসাম্য ফেরাতে খালেদা জিয়া এমনটি করেছেন বলে মনে করছেন অনেক সিনিয়র নেতা। যেমন বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার কারণে আগে থেকেই যুগ্ম মহাসচিব পদের দাবিদার ছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার। স্থানীয় রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয়। বরিশাল ও ঢাকার রাজনীতিতে সক্রিয় যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও পেয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব পদ। দলের এই সময়ে রাজপথে থাকার কারণে আলালকে পুরস্কৃত করেছেন চেয়ারপারসন। ফলে বরিশালের রাজনীতিতে ভারসাম্য ফিরবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সাবেক বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে দুই দফা প্রমোশন দিয়ে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে আসলাম চৌধুরীকে। এ নিয়ে দলে কিছুটা কানাঘুষা চলছে। বাকিদের মধ্যে হারুন-উর রশীদ আলোচনায় না থাকলেও রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে হয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব। আর ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে থাকায় তাঁকে পুরস্কৃত করেছেন খালেদা জিয়া। চলমান রাজনীতিতে অবদান রাখার কারণে হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকেও করা হয়েছে যুগ্ম মহাসচিব। দলের এই নেতা এখন তিনটি পদে রয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিবও।
গত কমিটির যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিষয়ে কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি। সাতজন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে আগের কমিটির ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনই শুধু রয়েছেন। বাকি সবাই নতুন। যদিও এ পদের দাবিদার ছিলেন দলের আরো কয়েকজন নেতা। তাঁদের মধ্যে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (বর্তমানে রাজশাহীর সাংগঠনিক সম্পাদক), চট্টগ্রাম বিভাগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, ঢাকার (আগের ও বর্তমান) বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন, খুলনার বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান, রাজশাহী বিভাগের বিশেষ সাংগঠনিক সম্পাদক নাদিম মোস্তফা প্রমুখ।
ফজলুল হক মিলন জানান, ‘একটু অবিচার হয়ে গেছে।’ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড যা ভালো মনে করেছেন সে অনুযায়ী নাম ঘোষিত হয়েছে। এ নিয়ে আর কী বলব।’ মসিউর রহমান বলেন, ‘একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলি।’
পদোন্নতি না পেয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকই থেকে গেলেন ফজলুল হক মিলন আর আসাদুল হাবিব দুলু। জানা গেছে, আন্দোলন সংগ্রামে তাঁদের অবদানে ঘাটতি ছিল বলে মনে করে দলটির হাইকমান্ড। আর বাকি ছয়জনই নতুন। গত কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেনকে স্থানীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখায় এ পদে আনা হয়েছে। আর সদ্য গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন দলের সাবেক সহ প্রচার সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স। সাম্প্রতিক পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের পক্ষে গুরুদায়িত্ব পালন করায় নতুন বিভাগে তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন খালেদা জিয়া।
তবে এবারই প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদকের নয়টির মধ্যে দুটি পদে নারীদের নেতৃত্বে এনেছেন বিএনপি প্রধান। বিলকিস শিরীন ও শামা ওবায়েদ এই পদে এসেছেন। প্রয়াত মহাসচিব ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামার এই পদে আসাটা চমক হিসেবে দেখছেন বিএনপি কর্মীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে তিনি সক্রিয়। তবে অতি অল্প সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসায় কেউ কেউ প্রশ্নও তুলেছেন। আর সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস শিরীন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সিলেট বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বিভাগের আগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ২০১১ সাল থেকে নিখোঁজ।
সার্বিক কমিটির বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দলে ভারসাম্য রাখতে এবং যা দলের জন্য শুভ হবে তাই করেছেন ম্যাডাম। অবশ্যই তিনি ভেবেচিন্তে কমিটি অনুমোদন করেছেন।’(দৈনিক কালের কন্ঠ)