নিউইয়র্ক ০৯:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাসায় দুজনকে কুপিয়ে হত্যা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩৪:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৬
  • / ৬২৬ বার পঠিত

ঢাকা: রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাধা দেওয়ায় ওই বাড়ির প্রহরীকেও কুপিয়েছে তারা। পালানোর সময় এলাকার লোকজন পিছু নিলে তারা গুলি ছোড়ে। আটকের চেষ্টা করায় এক পুলিশ সদস্যকেও কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি হয়। কলাবাগান থানাধীন উত্তর ধানমন্ডির তেঁতুলতলা মাঠ-সংলগ্ন ৩৫ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের একজন জুলহাজ মান্নান যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা। এর আগে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী রূপবান-এর সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। একই বাসায় নিহত হন তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয়, তিনি মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাত ১২টার দিকে দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এটি অন্য রকম ঘটনা। আমরা কিছু আলামত পেয়েছি। আশা করছি, খুনিদের ধরে ফেলতে পারব। হামলায় আহত ওই বাড়ির প্রহরী পারভেজ মোল্লাকে প্রথমে শমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পারভেজ মোল্লা রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরপর তিন যুবক পার্সেল দেওয়ার কথা বলে জুলহাজ মান্নানের বাসায় যেতে চায়। আমি তাদের বলি, আপনারা নিচে থাকেন। কিন্তু তারা বলে, চলেন একসঙ্গে ঢুকি। এরপর ওই তিনজন আমার পেছনে পেছনে দোতলায় যায়। দরজায় নক করলে জুলহাজ স্যার দরজা খোলেন। তখন তারা জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে জুলহাজ স্যার দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করেন।’
পারভেজ মোল্লা বলেন, ‘আমি তখন তাদের বলি, স্যার যেহেতু ঢুকতে দিতে চান না, আপনারা চলে যান। এ কথা বলার পরই আমাকে আঘাত করে। আমি লুটিয়ে পড়লে যুবকেরা জোর করে ঘরে ঢুকে জুলহাজ ও তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যজনকে (তনয়) কোপাতে থাকে। আমি চিৎকার করি, স্যারও চিৎকার করেন। তখন বাসার নিচে কয়েকটি গুলির শব্দ পাই। তখন তিন যুবক দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।’
স্থানীয় লোকজন বলেন, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হঠাৎ করে ওই বাড়ি থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পান তাঁরা। পরে বাড়িটি থেকে নীল গেঞ্জি পরা অন্তত পাঁচ যুবককে দ্রুত বের হয়ে যেতে দেখেন। তাঁদের হাতে পিস্তল ও চাপাতি ছিল। লোকজন ডাকাত সন্দেহে তাঁদের পিছু নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কলেজছাত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, তেঁতুলতলা মাঠের কাছেই পাঁচ যুবককে তিনি নীল গেঞ্জি পাল্টাতে দেখেন। নিচে ছিল কালো গেঞ্জি। প্রত্যেকের কাঁধে ফিতা ঝোলানো ব্যাগ ছিল। দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মনে হচ্ছিল। এই ছেলেদের পেছনে এলাকার ২০-২৫ জন তাড়া করছিল। পথে পাঁচ-ছয়জন পুলিশ তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করে। ওই যুবকেরা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। এক পুলিশ সদস্যকে চাপাতি দিয়ে কোপান তাঁরা। ওই যুবকদের ধাওয়া করা একজন দোকানদার বলেন, ‘আমি ওই বাড়ির কিছুটা দূরে ছিলাম। হঠাৎ বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডের চিৎকার শুনি। এ সময় চার-পাঁচজন যুবক অস্ত্র হাতে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছিল। পরে আমিসহ কয়েকজন তাদের ধাওয়া দিই। দুর্বৃত্তরা অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।’
আহত ওই পুলিশ সদস্য কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মমতাজ। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর হাতে তিনটি সেলাই লেগেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গেঞ্জি পরা ও কাঁধে ব্যাগ থাকা ওই ছেলেদের একজন গুলি করছিল। দুজন বোমা ছুড়ছিল। আমি শটগান দিয়ে তাদের দিকে গুলি করি। এ সময় একজন আমাকে চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। আমার হাতে কোপ লাগে। আমি তাদের একজনের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছি। ব্যাগে বিস্ফোরক ছিল।’ ঘটনাস্থলের পাশের এক বাড়ির গৃহবধূ বলেন, ওই ছেলেরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ‘আল্লাহ আকবর’ স্লোগান দেয়।
সন্ধ্যায় ওই বাড়ির সামনে গিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেখা যায়। আশপাশে মানুষের ভিড়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকতে চাইলেও ফটকে থাকা একজন আটকে দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তখন ওই বাড়িতে ছিলেন। সাড়ে সাতটায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিও ওই বাড়িতে যান। জুলহাজ দীপু মনির আত্মীয়।
ডিএমপি কমিশনার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীরা পাঁচ মিনিট সময় নেয় এবং হত্যাকাণ্ড শেষে ডলফিন গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যায় অংশ নেওয়া একজনের মুঠোফোন ও ব্যাগসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে। শিগগিরই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। হত্যায় উগ্রপন্থী কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। তবে কারা, কী উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। (প্রথম আলো)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বাসায় দুজনকে কুপিয়ে হত্যা

প্রকাশের সময় : ১০:৩৪:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

ঢাকা: রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাধা দেওয়ায় ওই বাড়ির প্রহরীকেও কুপিয়েছে তারা। পালানোর সময় এলাকার লোকজন পিছু নিলে তারা গুলি ছোড়ে। আটকের চেষ্টা করায় এক পুলিশ সদস্যকেও কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি হয়। কলাবাগান থানাধীন উত্তর ধানমন্ডির তেঁতুলতলা মাঠ-সংলগ্ন ৩৫ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের একজন জুলহাজ মান্নান যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা। এর আগে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী রূপবান-এর সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। একই বাসায় নিহত হন তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয়, তিনি মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাত ১২টার দিকে দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এটি অন্য রকম ঘটনা। আমরা কিছু আলামত পেয়েছি। আশা করছি, খুনিদের ধরে ফেলতে পারব। হামলায় আহত ওই বাড়ির প্রহরী পারভেজ মোল্লাকে প্রথমে শমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পারভেজ মোল্লা রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরপর তিন যুবক পার্সেল দেওয়ার কথা বলে জুলহাজ মান্নানের বাসায় যেতে চায়। আমি তাদের বলি, আপনারা নিচে থাকেন। কিন্তু তারা বলে, চলেন একসঙ্গে ঢুকি। এরপর ওই তিনজন আমার পেছনে পেছনে দোতলায় যায়। দরজায় নক করলে জুলহাজ স্যার দরজা খোলেন। তখন তারা জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে জুলহাজ স্যার দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করেন।’
পারভেজ মোল্লা বলেন, ‘আমি তখন তাদের বলি, স্যার যেহেতু ঢুকতে দিতে চান না, আপনারা চলে যান। এ কথা বলার পরই আমাকে আঘাত করে। আমি লুটিয়ে পড়লে যুবকেরা জোর করে ঘরে ঢুকে জুলহাজ ও তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যজনকে (তনয়) কোপাতে থাকে। আমি চিৎকার করি, স্যারও চিৎকার করেন। তখন বাসার নিচে কয়েকটি গুলির শব্দ পাই। তখন তিন যুবক দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।’
স্থানীয় লোকজন বলেন, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হঠাৎ করে ওই বাড়ি থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পান তাঁরা। পরে বাড়িটি থেকে নীল গেঞ্জি পরা অন্তত পাঁচ যুবককে দ্রুত বের হয়ে যেতে দেখেন। তাঁদের হাতে পিস্তল ও চাপাতি ছিল। লোকজন ডাকাত সন্দেহে তাঁদের পিছু নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কলেজছাত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, তেঁতুলতলা মাঠের কাছেই পাঁচ যুবককে তিনি নীল গেঞ্জি পাল্টাতে দেখেন। নিচে ছিল কালো গেঞ্জি। প্রত্যেকের কাঁধে ফিতা ঝোলানো ব্যাগ ছিল। দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মনে হচ্ছিল। এই ছেলেদের পেছনে এলাকার ২০-২৫ জন তাড়া করছিল। পথে পাঁচ-ছয়জন পুলিশ তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করে। ওই যুবকেরা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। এক পুলিশ সদস্যকে চাপাতি দিয়ে কোপান তাঁরা। ওই যুবকদের ধাওয়া করা একজন দোকানদার বলেন, ‘আমি ওই বাড়ির কিছুটা দূরে ছিলাম। হঠাৎ বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডের চিৎকার শুনি। এ সময় চার-পাঁচজন যুবক অস্ত্র হাতে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছিল। পরে আমিসহ কয়েকজন তাদের ধাওয়া দিই। দুর্বৃত্তরা অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।’
আহত ওই পুলিশ সদস্য কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মমতাজ। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর হাতে তিনটি সেলাই লেগেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গেঞ্জি পরা ও কাঁধে ব্যাগ থাকা ওই ছেলেদের একজন গুলি করছিল। দুজন বোমা ছুড়ছিল। আমি শটগান দিয়ে তাদের দিকে গুলি করি। এ সময় একজন আমাকে চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। আমার হাতে কোপ লাগে। আমি তাদের একজনের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছি। ব্যাগে বিস্ফোরক ছিল।’ ঘটনাস্থলের পাশের এক বাড়ির গৃহবধূ বলেন, ওই ছেলেরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ‘আল্লাহ আকবর’ স্লোগান দেয়।
সন্ধ্যায় ওই বাড়ির সামনে গিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেখা যায়। আশপাশে মানুষের ভিড়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকতে চাইলেও ফটকে থাকা একজন আটকে দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তখন ওই বাড়িতে ছিলেন। সাড়ে সাতটায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিও ওই বাড়িতে যান। জুলহাজ দীপু মনির আত্মীয়।
ডিএমপি কমিশনার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীরা পাঁচ মিনিট সময় নেয় এবং হত্যাকাণ্ড শেষে ডলফিন গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যায় অংশ নেওয়া একজনের মুঠোফোন ও ব্যাগসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে। শিগগিরই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। হত্যায় উগ্রপন্থী কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। তবে কারা, কী উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। (প্রথম আলো)