নিউইয়র্ক ১১:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নর্থ সাউথের অধ্যাপকসহ তিনজন গ্রেপ্তার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:১৩:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০১৬
  • / ৫৮৭ বার পঠিত

ঢাকা: গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলাকারী জঙ্গিদের বাসা ভাড়া দেওয়া এবং তথ্য গোপন করার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গতকাল শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে এঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম গিয়াস উদ্দিন আহসান, তাঁর ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান এবং ওই অধ্যাপকের ভাগনে আলম চৌধুরী। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে জঙ্গিরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ওই অধ্যাপকের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল। গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলার পর হামলাকারীদের সহযোগীরা দ্রুত ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যায়। ওই বাসা থেকে বালুভর্তি কার্টন, তাদের পোশাকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এসব কার্টনে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ।
অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন পরিবার নিয়ে থাকেন মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে। গতকাল রাতে ইকবাল রোডের বাসায় গিয়ে তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। গতকাল রাতে গিয়াস উদ্দিনের ইকবাল রোডের বাসায় গেলে বাড়ির ফটক থেকে নিরাপত্তাকর্মীরা বাসায় কেউ নেই বলে জানিয়ে দেন। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁর এক স্বজন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে ভবনের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমানকে গোয়েন্দারা মঙ্গলবার ভোরে বসুন্ধরার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যান। আলম চৌধুরীকে পরদিন রাত ৮ থেকে ১০টার মধ্যে ওই ভবনের ফ্ল্যাট মালিকদের সভা চলাকালে ধরে নেওয়া হয়।
ওই স্বজন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ গিয়াস উদ্দিনকে মুঠোফোনে ওই ফ্ল্যাটে যেতে বলে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি সেখানে যান। এরপর গোয়েন্দারা তাঁকে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে পরিবারের মুঠোফোনে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি তখন তাদের বলেছেন, তাঁকে একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কিছুই জিজ্ঞেস করছে না।
ওই স্বজন বলেন, বসুন্ধরার ফ্ল্যাটটি গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রীর। ফ্ল্যাটটি মূলত দেখাশোনা করতেন ভাগনে আলম চৌধুরী। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফ্ল্যাটটি কয়েকজন ব্যাচেলরকে ভাড়া দেওয়া হয়। কাদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে, সেটা আলম চৌধুরী ও মাহবুবুর রহমানই জানেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঙ্গিদের এক সহযোগী আলমের মাধ্যমে ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। মাসিক ভাড়া নির্ধারিত হয় ২২ হাজার টাকা। তারা দুই মাসের অগ্রিম ভাড়া হিসেবে ৪০ হাজার টাকাও দেয়। তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, ভাড়া নেওয়ার পর ওই ফ্ল্যাটে অনেক মানুষ যাতায়াত করত। গোয়েন্দাদের ধারণা, গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলাকারীরা ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করে ছিল।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুলশান হামলায় যারা যারা জড়িত, যারা যারা মদদ দিয়েছে, পুলিশ তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে। আমরা মনে করছি, আমরা সঠিক পথে চলছি। যারা জড়িত তাদের ঠিকমতো চিহ্নিত করেছি।’
দেশীয় জঙ্গিদের কোনো আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের মধ্যেই তাদের রিক্রুট করা হয়েছে। এখানেই তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবং এটি সুদূরপ্রসারী আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় একটি চক্র থাকতে পারে, সেটির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিইনি।…আমরা কোনো কিছুরই কিন্তু সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছি না।’
অন্যদিকে, গুলশান হামলার ঘটনা তদন্তে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজকে গুরুত্ব দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যে জব্দ করা সিসিটিভির অস্পষ্ট ফুটেজগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে হামলার সময় তিন যুবককে ওই রেস্তোরাঁর সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে ইউনাইটেড হাসপাতালের দিকে যেতে দেখা গেছে। এঁদের গতিবিধি সন্দেহজনক। এঁদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান হামলার ঘটনার তদন্ত তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে উচ্চপর্যায়ের একটি সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান এই কমিটির প্রধান। এ কমিটিতে এনএসআই ছাড়াও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, র‍্যাব, এসবি, সিআইডি ও মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা আছেন। কমিটি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে এবং তদন্ত সংস্থাকে পরামর্শ দিচ্ছে। গুলশানের ঘটনার তদন্ত এ কমিটির পরামর্শেই হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হামলার পর বিভিন্ন স্থানে অভিযান হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সূত্রমতে, তদন্তকারীরা জানতে পারেন, রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল। এসব কেন্দ্রে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রতিটি কেন্দ্রে সাত-আটজন করে তরুণকে থাকতে দেওয়া হতো। এঁরা মেসের মতো করে সেখানে অবস্থান করতেন এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে। গত এক সপ্তাহে এ রকম বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। তবে কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় মূল হামলাকারী জঙ্গিরা কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়। তবে তাদের পেছনে সহযোগী হিসেবে আরও একটি জঙ্গি গ্রুপ ছিল। ওই গ্রুপটির বেশ কয়েক সদস্যকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়েছে। বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা নজরে আছে।
গুলশান হামলা মামলার তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করা যায় না, যেটা মামলার তদন্তের অগ্রগতি ব্যাহত করে। তদন্ত চলছে। অনেককেই জিজ্ঞাসা করেছি। অনেক সূত্রের তথ্য ইতিমধ্যে হাতে এসেছে। আমরা শুধুমাত্র আমাদের সাফল্য যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে কারণে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারছি না।’
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনাটি পাঁচ-ছয়জন করেনি। তারা রিক্রুট হয়েছে, প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের বাসায় কেউ আশ্রয় দিয়েছে। কেউ অস্ত্র দিয়েছে। কেউ মদদ দিয়েছে। এসবই তদন্তকারী দল ও গোয়েন্দারা খুঁজে বের করছে। এখানে অনেক ধরনের মদদ আছে। তিনি বলেন, ‘এরা কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। কারা কোথায় ছিল, কীভাবে ছিল—সবকিছু আমাদের গোয়েন্দা জালে আছে। সবকিছু সমন্বিত করে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।’
গুলশানের ঘটনায় জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হাসনাত করিম ও তাহমিদ পুলিশের কাছে আছেন কি না, জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের তদন্তকারী দল বলতে পারবে। তাদের জিজ্ঞেস করুন।’ এ ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটি এখনো জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে যুক্তিসংগতভাবে যাদের সন্দেহ হবে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করেই কার বিরুদ্ধে কতটুকু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিনা কারণে কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না। (প্রথম আলো)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

নর্থ সাউথের অধ্যাপকসহ তিনজন গ্রেপ্তার

প্রকাশের সময় : ১১:১৩:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০১৬

ঢাকা: গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলাকারী জঙ্গিদের বাসা ভাড়া দেওয়া এবং তথ্য গোপন করার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গতকাল শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে এঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম গিয়াস উদ্দিন আহসান, তাঁর ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান এবং ওই অধ্যাপকের ভাগনে আলম চৌধুরী। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে জঙ্গিরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ওই অধ্যাপকের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল। গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলার পর হামলাকারীদের সহযোগীরা দ্রুত ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যায়। ওই বাসা থেকে বালুভর্তি কার্টন, তাদের পোশাকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এসব কার্টনে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ।
অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন পরিবার নিয়ে থাকেন মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে। গতকাল রাতে ইকবাল রোডের বাসায় গিয়ে তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। গতকাল রাতে গিয়াস উদ্দিনের ইকবাল রোডের বাসায় গেলে বাড়ির ফটক থেকে নিরাপত্তাকর্মীরা বাসায় কেউ নেই বলে জানিয়ে দেন। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁর এক স্বজন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে ভবনের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমানকে গোয়েন্দারা মঙ্গলবার ভোরে বসুন্ধরার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যান। আলম চৌধুরীকে পরদিন রাত ৮ থেকে ১০টার মধ্যে ওই ভবনের ফ্ল্যাট মালিকদের সভা চলাকালে ধরে নেওয়া হয়।
ওই স্বজন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ গিয়াস উদ্দিনকে মুঠোফোনে ওই ফ্ল্যাটে যেতে বলে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি সেখানে যান। এরপর গোয়েন্দারা তাঁকে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে পরিবারের মুঠোফোনে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি তখন তাদের বলেছেন, তাঁকে একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কিছুই জিজ্ঞেস করছে না।
ওই স্বজন বলেন, বসুন্ধরার ফ্ল্যাটটি গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রীর। ফ্ল্যাটটি মূলত দেখাশোনা করতেন ভাগনে আলম চৌধুরী। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফ্ল্যাটটি কয়েকজন ব্যাচেলরকে ভাড়া দেওয়া হয়। কাদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে, সেটা আলম চৌধুরী ও মাহবুবুর রহমানই জানেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঙ্গিদের এক সহযোগী আলমের মাধ্যমে ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। মাসিক ভাড়া নির্ধারিত হয় ২২ হাজার টাকা। তারা দুই মাসের অগ্রিম ভাড়া হিসেবে ৪০ হাজার টাকাও দেয়। তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, ভাড়া নেওয়ার পর ওই ফ্ল্যাটে অনেক মানুষ যাতায়াত করত। গোয়েন্দাদের ধারণা, গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলাকারীরা ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করে ছিল।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুলশান হামলায় যারা যারা জড়িত, যারা যারা মদদ দিয়েছে, পুলিশ তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে। আমরা মনে করছি, আমরা সঠিক পথে চলছি। যারা জড়িত তাদের ঠিকমতো চিহ্নিত করেছি।’
দেশীয় জঙ্গিদের কোনো আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের মধ্যেই তাদের রিক্রুট করা হয়েছে। এখানেই তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবং এটি সুদূরপ্রসারী আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় একটি চক্র থাকতে পারে, সেটির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিইনি।…আমরা কোনো কিছুরই কিন্তু সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছি না।’
অন্যদিকে, গুলশান হামলার ঘটনা তদন্তে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজকে গুরুত্ব দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যে জব্দ করা সিসিটিভির অস্পষ্ট ফুটেজগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে হামলার সময় তিন যুবককে ওই রেস্তোরাঁর সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে ইউনাইটেড হাসপাতালের দিকে যেতে দেখা গেছে। এঁদের গতিবিধি সন্দেহজনক। এঁদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান হামলার ঘটনার তদন্ত তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে উচ্চপর্যায়ের একটি সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান এই কমিটির প্রধান। এ কমিটিতে এনএসআই ছাড়াও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, র‍্যাব, এসবি, সিআইডি ও মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা আছেন। কমিটি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে এবং তদন্ত সংস্থাকে পরামর্শ দিচ্ছে। গুলশানের ঘটনার তদন্ত এ কমিটির পরামর্শেই হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হামলার পর বিভিন্ন স্থানে অভিযান হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সূত্রমতে, তদন্তকারীরা জানতে পারেন, রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল। এসব কেন্দ্রে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রতিটি কেন্দ্রে সাত-আটজন করে তরুণকে থাকতে দেওয়া হতো। এঁরা মেসের মতো করে সেখানে অবস্থান করতেন এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে। গত এক সপ্তাহে এ রকম বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। তবে কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় মূল হামলাকারী জঙ্গিরা কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়। তবে তাদের পেছনে সহযোগী হিসেবে আরও একটি জঙ্গি গ্রুপ ছিল। ওই গ্রুপটির বেশ কয়েক সদস্যকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়েছে। বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা নজরে আছে।
গুলশান হামলা মামলার তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করা যায় না, যেটা মামলার তদন্তের অগ্রগতি ব্যাহত করে। তদন্ত চলছে। অনেককেই জিজ্ঞাসা করেছি। অনেক সূত্রের তথ্য ইতিমধ্যে হাতে এসেছে। আমরা শুধুমাত্র আমাদের সাফল্য যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে কারণে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারছি না।’
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনাটি পাঁচ-ছয়জন করেনি। তারা রিক্রুট হয়েছে, প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের বাসায় কেউ আশ্রয় দিয়েছে। কেউ অস্ত্র দিয়েছে। কেউ মদদ দিয়েছে। এসবই তদন্তকারী দল ও গোয়েন্দারা খুঁজে বের করছে। এখানে অনেক ধরনের মদদ আছে। তিনি বলেন, ‘এরা কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। কারা কোথায় ছিল, কীভাবে ছিল—সবকিছু আমাদের গোয়েন্দা জালে আছে। সবকিছু সমন্বিত করে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।’
গুলশানের ঘটনায় জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হাসনাত করিম ও তাহমিদ পুলিশের কাছে আছেন কি না, জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের তদন্তকারী দল বলতে পারবে। তাদের জিজ্ঞেস করুন।’ এ ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটি এখনো জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে যুক্তিসংগতভাবে যাদের সন্দেহ হবে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করেই কার বিরুদ্ধে কতটুকু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিনা কারণে কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না। (প্রথম আলো)