নজিরবিহীন কারচুপি ও অনিয়মসহ নানা অভিযোগে তিন সিটির নির্বাচন বর্জন বিএনপির : রাজনীতি থেকে বিদায় ঘোষণা মনজুর আলমের
- প্রকাশের সময় : ০২:৩৮:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৫
- / ৭৬৭ বার পঠিত
ঢাকা: নজিরবিহীন কারচুপি ও অনিয়মসহ নানা অভিযোগে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জ করেছে বিএনপি। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলম নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে রাজনীতি থেকেই বিদায় নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে নির্বাচনে বিজয়ের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিন প্রার্থী আনিসুল হক, সাঈদ খোকন ও আ জ ম নাসির উদ্দিন। নির্বাচন থেকে মনজুর আলমের সরে যাওয়া প্রসঙ্গে নাসির বলেছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরাই তাকে বর্জন করায় তিনি (মনজুর আলম) নির্বাচন কর্জন করেছেন।
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগের পাশাপাশি কোন কোন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশেরও বাধা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেক কেন্দ্র থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় সাংবাদিকসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। ঢাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নাজেহাল হয়েছেন শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ। লাঞ্ছিত হয়েছেন মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল।
ঢাকায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরী সাংবাদিক সম্মেলনে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘোষণা দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস সহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, র্যাব-পুলিশ এবং সরকারি দলের লোকজন আমাদের সব এজেন্টকে বের করে দিয়েছে। এটা কোন নির্বাচন হয়নি। এটা একটি ভোট বিহীন নির্বাচন। এ নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি। এই মুহূর্ত থেকে আমরা এ নির্বাচন বর্জন করছি। এর আগে চট্টগ্রামে মনজুর আলম ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও র্যাব সরকারের ইচ্ছাপূরণ করতে গিয়ে আমাদের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। দক্ষিণে ৫৮টি ওয়ার্ডে দু’একটি কেন্দ্র ছাড়া সব কেন্দ্রেই সকাল ৯টার মধ্যে ভোট শেষ হয়ে গেছে। সরকারি দলের লোকজন কেন্দ্র দখল করে সিল মেরেছে। উত্তরের প্রায় সব ওয়ার্ডেই একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। শুধু সরকারি দলের লোকজনকেই কেন্দ্রে প্রবেশ করে দেয়া হয়েছে। প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমেদ ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেয়ার জন্য গেলে তাকে লাঞ্চিত করা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, আপনি কেন ভোট দিতে এসেছেন। আপনার ভোট দেয়ার কোন অধিকার নেই।
সাংবাদিক সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, কোন ভোট হয়নি। ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। ভোটের নামে ডাকাতি হয়েছে। এরপর উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, যা হয়েছে তাকে কিছুতেই ভোট বলা উচিত হবে না। গতকালই (সোমবার) আমাদের সব ক্যাম্প ভেঙে ফেলা হয়।
নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা মনজুর আলমের: বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম সকাল সোয়া ১১টায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ারও ঘোষণা দেন। তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর দেওয়ান হাট নির্বাচনী অফিসে জরুরী সাংবাদিক সম্মেলনে এ ঘোষনা দেন। এ সময় তার দল সমর্থক প্রার্থী এম মনজুর আলম বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে মনজুর আলম আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, আমি কাউন্সিল ছিলাম। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি আর রাজনীতি করবো না। এখন থেকে সমাজসেবা করবো।
এদিকে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক প্রবাসী প্রফেসর এহতেশামুল হক এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি তার ভোট দিতে পারেনি। তবে স্বচক্ষে নির্বাচন দেখার সুযোগ হলো।