তিন মাস পর অবশেষে তালা খুলল বিএনপি’র
- প্রকাশের সময় : ১০:২৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ এপ্রিল ২০১৫
- / ১০৩১ বার পঠিত
ঢাকা: তিন মাস পর প্রাণের সঞ্চার হল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। ৪ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যার পর তালা ভেঙে নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। দীর্ঘদিন পর তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পল্টন অফিস। এতদিন পুলিশ কার্যালয়টিতে তালা ঝুলিয়ে রেখেছিল।
এদিন সন্ধ্যায় শেষ চৈত্রের ঝড় মাথায় নিয়ে নেতারা দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছান। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা প্রথমে তালা খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তারা তালা ভেঙে ফেলেন। এ সময় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন। তারা একসঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ না থাকায় এ সময় কার্যালয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছিল। মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর জমে থাকা ধুলোবালি এবং ময়লা-আবর্জনার স্তর পরিষ্কারে নেমে পড়েন নেতা-কর্মী এবং অফিস স্টাফরা। কার্যালয়ের পাশাপাশি নিচ তলার দোকানটিও খুলে দেয়া হয়। পল্টন অফিসের সামনে কোনো পুলিশ না থাকলেও পাশের মিডওয়ে হোটেলের সামনে কয়েকজন পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। কার্যালয়ের বিপরীত রাস্তায়ও পুলিশ ছিল।
গত ৩ জানুয়ারী রাত থেকে কার্যালয়ের মূল গেটে তালা ঝুলতে থাকে। ওই রাতে কার্যালয়ের ভেতর থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আটক করে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। একই সময় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করা সব নেতা-কর্মী এবং কর্মচারীদের বের করে গেটে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে যায় পুলিশ। কার্যালয়ের সামনে বসানো হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরপর থেকে গ্রেফতারের ভয়ে নেতা-কর্মীরা কার্যালয়মুখী হননি।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তালা খুলে দেয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দলটির নীতিনির্ধারকরাও। বেশ কিছুদিন ধরে তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জোটের সব অফিস খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেন তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের অফিস খুলে দেয়ার দাবি জানান। এরপর শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেয়া হয়। তবে সারা দেশের অফিসে আগের চিত্র বিরাজ করছে।
এদিকে রোববার (৫ এপ্রিল) দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা শেষে ফেরার পথে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নামতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তবে এই ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে আসাদুল করিম শাহীন বলেন, মূল গেটে অন্য একটি তালা থাকায় তা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। সম্ভবত তালাটা পাল্টে দিয়েছে। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশেই তিনি কার্যালয়ে আসেন। তালা খোলার সময় তাকে কেউ বাধা দেননি। খালেদা জিয়া কার্যালয়ে আসবেন কিনা জানতে চাইলে শাহীন বলেন, কার্যালয়টি এখনও পরিষ্কার করা হয়নি।
সরেজমিন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় কার্যালয়ের গেটে লাগানো তালা খোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কিছুতেই তা খোলা সম্ভব হয়নি। ওই মুহূর্তে প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়। পরে মিস্ত্রি এনে কার্যালয়ের তালা ভেঙে রাত প্রায় ৮টার দিকে ভেতরে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের মূল গেটের কাছেই এলামেলোভাবে পড়ে রয়েছে দৈনিক পত্রিকাগুলো। পত্রিকার ওপরে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। তিন তলায় অবস্থিত দফতরে সবক’টি কক্ষ যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কর্মরত অফিস সহকারীরা রাতেই কার্যালয়ের সবক’টি কক্ষের ময়লা পরিষ্কার করেন। গোছগাছ করা হয় এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা আসবাবপত্র। অনেকদিন অযতেœ থাকায় ফোন-ফ্যাক্স, কম্পিউটার সবই প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। সেগুলো ঠিক করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের পরই কার্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জোরালো হতে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে এই বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিএনপি নেতারা। শনিবার সকালে অফিস কর্মচারী দলিল উদ্দিন পল্টন থানায় যান। থানার ওসি (তদন্ত) তাকে এ ব্যাপারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। দুপুরে তারা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি পরে জানানো হবে বলে আশ্বাস দেন। সন্ধ্যার দিকে পুলিশের সবুজ সংকেত পেয়ে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে উপস্থিত হতে থাকেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় তারা তালা খুলে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, খালেদ এনাম মুন্না, শাহাবুদ্দিন রেজা, মহিউদ্দিন শাহজাহান প্রমুখ।
এর আগে শনিবার সকাল থেকেই কার্যালয় খুলে দেয়া হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। কারণ শুক্রবার রাত থেকেই কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা তুলে নেয়া হয়। শনিবার সারা দিন সেখানে অতিরিক্ত কোনো পুলিশ দেখা যায়নি। কার্যালয় খোলা হচ্ছে এমন খবরে সকাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, রফিক হাওলাদার, আমজাদ হোসেনসসহ অঙ্গসংগঠনের প্রায় ২০-২৫ নেতা-কর্মী কার্যালয়ের সামনে যান। তখনও কার্যালয়ে তালা ছিল। তারা সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যান। তবে আইনশৃংখলা বাহিনীর কেউ তাদের হয়রানি বা আটকের চেষ্টা করেনি।
নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালার ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে তালা দেয়নি। তাই পুলিশের খুলে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। কেউ বিএনপি অফিসের তালা খুলতে গিয়ে ফিরে এসেছে এমন তথ্যও তার কাছে নেই।(দৈনিক যুগান্তর)