বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘৯০-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (ডাকসু) এবং তৎকালীন সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের’ উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা ১০ মিনিটের কিছু পরে তিনি এ কনভেনশনে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমি বলবো আপনিও ভালো থাকুন, রাজনীতি করুন। তবে মুখের ভাষা সংযত করুন। জনগনের আন্দোলনে বাধা দেবেন না।’
নিজ দলের নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমাদের দায়িত্ব হলো তোমরা জনগণের কাছে যাবে। ’৯০-এর ছাত্র অভ্যুত্থানের মতো রাস্তায় নেমে আসতে হবে।’
ক্ষমতানসীনদের উদ্দেশে বলেন, ‘সাহস থাকলে বালুর ট্রাক দিয়ে বাসা আটকে রাখবেন না। দেখুন কী করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের উপর জনগণ অতিষ্ট। এরা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের নামটা থাকবে কি না সেটা সন্দেহ।’
গুলি চালালে জবাব
পুলিশবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা জনগণের সেবক। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আওয়ামী লীগ বলতে পারে গুলি করতে কিন্তু আপনি গুলি করছেন কাকে? কী করে দেশের মানুষকে গুলি করেন, এরা তো বিদেশি কেউ না। আপনাদেরও ছেলে-মা-ভাই-বোন আছে। আপনাদের বিবেক আছে। শেখ হাসিনা আপনাদের সারা জীবন আগলে রাখবেন না। তাই গুলি চালানো বন্ধ করুন।’
‘এই বাহিনীতে বেশিরভাগ পুলিশ ভালো। একটি বিশেষ জেলা ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এদের দিয়ে এসব কাজ করাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘উনার পিতা বলেছিলেন একটা গুলি চললে পাল্টা গুলি চলবে। আমরা তা বলবো না। আমরা বলবো গুলি চালাবেন না। গুলি চালানো চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে রাজপথে নামিয়ে আমাদের অধিকার আদায় করবো। সেখনে গুলি চালাবেন না। সেখানে গুলি চালালে জনগণ এর জবাব দিতে প্রস্তুত।’
বিএনপির গন্ধ পেলেই ‘চাকরিচ্যুতি’
বিএনপির গন্ধ পেলেই চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিডিআর, প্রশাসন, পুলিশ বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপির গন্ধ পেলেই চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে। এমনকি সেনাবাহিনী থেকেও একই অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। বিএনপির সমর্থক হলে চাকরিচ্যুত আর আওয়ামী লীগ হলে প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। অযোগ্যদের প্রমোশন দেয়ায় প্রশাসনে অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে।’
গোয়েন্দারা ‘ভুয়া’ তথ্য দিচ্ছে
গোয়েন্দারা ভুয়া তথ্য দিচ্ছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘যখন সময় ফুরিয়ে আসে তখন গোয়েন্দারা ভুয়া তথ্য দেয়। আর সময় বুঝে কেটে পড়ে। আমার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা দেখা করেছে এ তথ্য ভুয়া।’
‘আপনার সঙ্গে বিডিআর হত্যাকারীরা দেখা করলো, তাদের চা খাওয়াতে পারেন। যা খুশি করতে পারেন। আর আমার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা দেখা করলেই দোষ। দোষের কিছু আছে? দেখা করা তো বেআইনি কিছু নয়।
সুইস ব্যাংকে টাকা ‘আওয়ামী লীগের লোকজনের’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘২০১১, ’১২, ’১৩ সালে সুইস ব্যাংকে বহু কোটি টাকা জমা পড়েছে। এই টাকা জনগণের। এই সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। তাই এইসব টাকা আওয়ামী লীগের লোকজনের।’
শেখ হাসিনার মামলা পুনরুজ্জীবিত করার দাবি
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা দুর্নীতির কথা বলছেন অথচ আওয়ামী লীগ করলে সব মাফ। আমরা দুর্নীতির বিপক্ষে। আমাদের মামলা চলবে আর শেখ হাসিনার সব মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। দুরকম নীতি চলতে পারে না। শেখ হাসিনার মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। মিগ-২৯ দ্বিগুন দামে কেনা হয়েছিল। সেই মামলায় তার সাজা হতো। আঁতাত করে তা তুলে নেয়া হয়েছে। বহু টাকা দিয়ে যে ব্রিগেড কেনা হয়েছিল সেটা কোনো ব্রিগেড ছিল না। জাহাজ জোড়াতালি দিয়ে ব্রিগেড বানানো হয়েছিল।’
সোনা চোরাচালানে বিমান চেয়ারম্যান ‘জড়িত’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে মিগ-২৯ দুর্নীতির মামলা ছিলেন। তাকে বিমান বাহিনীর প্রধান বানানো হয়েছে। কেন? সে ছাড়া কি দেশে কোনো অফিসার নেই? বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত চোরাচালান হচ্ছে। এর সঙ্গে বিমান চেয়ারম্যান ও বড় বড় লোক জড়িত। এর সঙ্গে আপনারা যে জড়িত জনগণ তা বোঝে। তাহলে কেন আপনাদের বিচার হবে না?’
শিক্ষা ব্যবস্থা ‘ধ্বংস’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশটাকে খেতে বসেছে। তারা ক্ষমতায় এসে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। নকলের মহোৎসব শুরু হয়। তারা চায় না জনগণ শিক্ষিত হয়ে দেশের নেতৃত্ব দিক। এজন্য তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেয়। শিক্ষকদের নির্দেশ দেয় বেশি নম্বর দিয়ে পাসের হার বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। ফলে ছেলে মেয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না। আওয়ামী লীগ স্বাস্থ্যখাতেও ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করেছে।’
র্যাব বাতিলে দাবি
আবারো র্যাব বাতিলে দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘র্যাব এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। র্যাব খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এই জিয়াকে ধরলে সব ক্লু বেরিয়ে আসবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করলে বলবেন, আপনি চাকরি করেন, আপনাকে হুকুম দেয়া হয়েছে। কে আপনাকে হুকুম দিয়েছে? কার হুকুম তামিল করেছেন? কার জন্য জনগনকে গুম, খুন করা হলো তা জনগন জানতে চায়।’
সংসদের বিরোধী দলের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে এতো সমস্যা। কিন্তু বিরোধী দল কোনো কথা বলে না। তারা বলে, তারা ক্ষমতার ভাগ নেবে, গুম, খুনের ভাগ নেবে না। আমি বলবো গুম খুনের ভাগও নিতে হবে।’
‘রামপালের জন্য সুন্দরবন ধ্বংস, ট্যাঙ্কারের মালিক তোফায়েলের আত্নীয়’
রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য পরিকল্পিতভাবে সুন্দর বন ধ্বংস করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশটাকে খেতে বসেছে। সুন্দরবনকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। যেই তেলের ট্যাংকার ডুবেছে সেটা বালু বহনের কাজে ব্যবহার করা হতো। আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েলের আত্নীয় হওয়ায় ট্যাঙ্কারের মালিককে ধরা হচ্ছে না।