কামারুজ্জামানের দন্ডাদেশের কপি কারাগারে ॥ আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাৎ বৃহস্প্রতিবার ॥ প্রতিবাদে হরতাল ॥ গ্রেফতার ছয় শতাধিক
- প্রকাশের সময় : ০৯:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ এপ্রিল ২০১৫
- / ৫৩২ বার পঠিত
ঢাকা: জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজের কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে। এদিকে ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাৎ করবেন তার আইনজীবীরা।
বিচারকদের সইয়ের পর কারাগারে রিভিউ রায়: বুধবার (৮ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারির পর আদেশের অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে যাত্রা করে। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে ৩৬ পৃষ্ঠার আদেশের অনুলিপিতে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন-বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। আদেশে বলা হয়েছে, ‘আমরা রিভিউ আবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখলাম যে আপিল বিভাগের রায়ের বিষয়ে আপাত কোন ভুল সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে মি. খন্দকার মাহবুব তার বক্তব্যে রিভিউ আবেদনের সীমাবদ্ধতা অকপটে স্বীকার করেছেন। ফলে তাৎক্ষণিক রিভিউ আবেদনটি খারিজ (ডিসমিসড) করা হলো।’ তাদের স্বাক্ষর শেষে বিকাল ৩টার দিকে ৩৬ পৃষ্ঠার আদেশটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে আসে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিকাল ৪টা ৪৬ মিনিটে আদেশের অনুলিপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেন সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান। আদেশের অনুলিপি গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান। তিনি ওই নথি ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকদের কাছে উপস্থাপন করেন। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তা পৌঁছে দেন পৌনে ৬টায়। পরে ট্রাইব্যুনাল থেকে আদেশের অনুলিপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট থেকেই আদেশের অনুলিপি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এবং এটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে।
বিকেল ৫টা ৪৪ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আফতাবুজ্জামানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম সাদা মাইক্রোবাসে করে (ঢাকা মেট্টো-চ-৫৩-৮১৮২) রায়ের কপিটি কারাগারে নিয়ে যান। এ সময় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পারভেজ আহমেদ সাথে ছিলেন। সেখানে তিনি সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীর কাছে রায়ের কপিটি প্রদান করেন। এরপর কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে রিভিউয়ের রায় পড়ে শোনান। এ সময় সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী, জেলার নেছার আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ৬টা ৫ মিনিটে সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী, জেলার নেছার আলম ও ডেপুটি জেলার আরিফুর রহমান কারাগার থেকে বের হয়ে আইজি প্রিজন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইফতেখারুজ্জামানের সাথে দেখা করতে যান। ৬টা ৩০ মিনিটে তারা কারাগারে ফিরে আসেন। কারা সূত্র জানায়, আইজি প্রিজনের সাথে সিনিয়র জেল সুপারসহ কয়েকজন কারা কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পর্বটি ছিল কামারুজ্জামানকে রিভিউ রায় পড়ে শুনানো এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ বিষয়। ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী কারাগার থেকে বের হয়ে বাসায় চলে যান। এ সময় তিনি জানান, আমি বাসায় যাচ্ছি, আমাকে যেতে দিন। এদিকে বুধবার দুপুরের পর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাৎ বৃস্প্রতিবার: কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না, সেই প্রশ্নে আজ আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১১টায় কারা কর্তৃপক্ষ আইনজীবীদের সাক্ষাতের ওই সময় দিয়েছেন। কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মনির এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ডেপুটি জেলার লাভলু বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করার সময় দিয়েছেন।
সাক্ষাতের ডাক পায়নি কামারুজ্জামানের পরিবার: মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের পরিবার তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি। বুধবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছেন তার বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী। তিনি জানান, আমরা কারা কর্তৃপক্ষের ডাকের অপেক্ষায় আছি। এর আগে বিকেলেই কারা কর্তৃপক্ষের একজন ডেপুটি জেলারের সাথে পরিবারের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাওয়া হয়। তখন কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, রায়ের কপি পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদেরকে সাক্ষাতের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে। বুধবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি মেলেনি।
এর আগে রাত সোয়া ৭টার দিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, তাকে (কামারুজ্জামানকে) রায়ের কপি পড়ে শোনানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করার সময় চেয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তাকে সময় দেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে আইনজীবীদের দেখা করতে অনুমতি দেয়া হবে কি না, সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার।’
রিভিউ আবেদন খারিজ: ৬ এপ্রিল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন খারিজ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেছেন ‘ডিসমিসড’। এর ফলে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগ আগে যে রায় দিয়েছিল তা বহাল থাকে। পাশাপাশি শেষ হয় মামলার বিচার কার্যক্রমও। সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অন্তত সাত দিনের সুযোগ থাকলেও ওইদিনই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি কয়েক ঘণ্টারমাত্র। অথচ অন্যান্য মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে কারা আইনে ‘৭ দিনের আগে না, আবার ২১ দিনের পরে না’-এমন বিধান আছে। এ মামলার ক্ষেত্রে ওই আইন প্রযোজ্য হবে না বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। আগের দিন রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষে আদালত সোমবার (৬ এপ্রিল) আদেশের জন্য নির্ধারণ করেছিলেন।
গত সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ আদেশ দিয়ে বলেন, রিভিউ আবেদন ‘ডিসমিসড’। মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদনের শুনানি করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি সিনিয়র এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহায়তা করেন এডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির।
রিভিউ আবেদনের শুনানি: খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রধানত চারটি পয়েন্টে তার বক্তব্য উপস্থাপন করে আপিল বিভাগের কাছে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। অন্যদিকে, সরকার পক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কামারুজ্জামান আল বদর কমান্ডার ছিলেন। আল বদর বাহিনী পাকিস্তানী সেনাদের চেয়েও জঘন্য অপরাধে জড়িত ছিল। কামারুজ্জামান কোন ধরনের অনুকম্পা পেতে পারেন না।
ট্রাইব্যুনাল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল। এর মধ্যে সোহাগপুর গণহত্যা ৩ নম্বর অভিযোগ এবং গোলাম মোস্তফা ৪ নম্বর অভিযোগ। আপিল বিভাগের রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে সোহাগপুর হত্যাকান্ডে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। আর গোলাম মোস্তফা হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করা হয়।
রিভিউর শুনানিতে গত রোববার খন্দকার মাহবুব হোসেন সোহাগপুর গণহত্যার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে বলেছিলেন, তিনজন সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে অভিযোগটিতে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। এ তিনজন সাক্ষী হলো প্রসিকিউশনের ১১, ১২ এবং ১৩ নম্বর সাক্ষী। এর মধ্যে ১১ নম্বর সাক্ষী হাসনা বেগম শোনা কথার ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন স্বাধীনতার পর তিনি মুরুব্বীদের কাছে শুনেছেন সোহাগপুর গণহত্যার সাথে কামারুজ্জামান জড়িত ছিল।
১২ নম্বর সাক্ষী হাফিজা বেওয়া নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন। তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি জেরায় বলেছেন স্বাধীনতার আগে তিনি কামারুজ্জামানকে চিনতেন না। স্বাধীনতার তিন-চার মাস পরে তিনি কামারুজ্জামানকে টিভিতে দেখেছেন।
১৩ নম্বর সাক্ষী করফুলি বেওয়া। তিনিও বলেছেন তার স্বামী হত্যার সাথে কামারুজ্জামান জড়িত। কিন্তু জেরায় তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার পর তিনি কামারুজ্জামানকে তাদের বাড়ির উঠানে দেখেছেন। আগে চিনতেন না।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাক্ষীরা যদি আসামীকে আগে না চিনে থাকে তাহলে তারা ঘটনাস্থলে আসামীকে শনাক্ত করলো কিভাবে? এখন আমরা ফরিদা আখতারের লেখা, মহিলা মুক্তিযোদ্ধা-নামক একটি বই দাখিল করছি। যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। পরে ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে এই বইয়ের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এ বইয়ে এ মামলার ১৩ নম্বর সাক্ষী করফুলি বেওয়ার সাক্ষাৎকার রয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, তার স্বামীকে হত্যা করেছে পাকিস্তানী আর্মি। এজন্য তিনি বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার জন্য আদালতের আরজি জানান।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যে যুক্তিতে ৪ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডকে যাবজ্জীবন করা হয়েছে সে যুক্তিতে তিন নম্বর অভিযোগ তথা সোহাগপুর গণহত্যার অভিযোগের সাজাও পরিবর্তনযোগ্য। তিনি বলেন, সারা পৃথিবী এখন মৃত্যুদন্ড থেকে সরে যাচ্ছে। একমাত্র ন্যুরেমবার্গ ও টোকিও ট্রায়াল ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডের বিধান ছিল না। আন্তর্জাতিক আইনের এ পরিবর্তন বিবেচনায় নেয়ার জন্যও তিনি আপিল বিভাগে আবেদন জানান।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন, ১৯৭২ সালে প্রকাশিত পত্রিকায় ও এরপর বিভিন্ন ডকুমেন্টে আল বদর কমান্ডার হিসেবে কামারুজ্জামানের নাম প্রকাশিত হয়েছে। তিনজন সাক্ষী যদি সাক্ষ্য নাও দিতেন তবুও কামারুজ্জামানের আল বদর পরিচয় মুছে যায় না। তিনি যেসব বর্বর অপরাধ করেছেন সে অপরাধে কোন অনুকম্পা হয় না। শুনানি শেষে আদালত সোমবার রায় দেয়ার কথা জানায়।
মৃত্যু পরোয়ানা জারি: গত ১৮ ফেব্রুয়ারী বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীসহ চারজন কামারুজ্জামানকে পরোয়ানা পড়ে শোনান। আপিল বিভাগের আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের রায় অনুযায়ী, দন্ডিতদের জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পান। এই রায়ের ভিত্তিতে গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগের দেয়া মৃত্যুদন্ডের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তার আইনজীবীরা ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে রিভিউ আবেদনটি দায়ের করেন। ৪৫ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে মোট ৭০৪ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট ছিল।
ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম: ২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক মোহাম্মদ শাহিনুর ইসলাম মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদন্ডের রায় দেয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গত বছরের ৬ জুন আপিল করেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। চলতি বছরের ৫ জুন এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের পক্ষে আপিলের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন তার আইনজীবীরা।
২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারী প্রসিকিউশন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পুনরায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর ১৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়। ১৬ মে ডিফেন্সপক্ষ এবং ২০ মে প্রসিকিউশনের আইনজীবীরা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেন। এর পর ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১২ সালের ১৫ জুলাই থেকে এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আব্দুর রাজ্জাক খানসহ প্রসিকিউশনের ১৮ জন সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে কামারুজ্জামানের পক্ষে গত ২০১৩ সালের ৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৫ জন ডিফেন্স সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন মো. আরশেদ আলী, আশকর আলী, কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল, বড় ভাই কফিল উদ্দিন এবং আব্দুর রহিম।
জামায়াতের হরতালের দ্বিতীয় দিনে গ্রেফতার ৩ শতাধিক: জামায়াতে ইসলামীর ডাকে দেশব্যাপী দুই দিনের হরতালের শেষ দিনে বুধবার সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী। ব্যবসা বাণিজ্যের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। রাজধানীসহ সারা দেশেই গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনী। গ্রেফতার করেছে ৩ শতাধিক নেতা-কর্মী। এ নিয়ে দুই দিনে গ্রেফতার হয়েছে ৬ শতাধিক নেতা-কর্মী। হরতালের সমর্থনে রাজধানীসহ সারা দেশেই মিছিল সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির।
জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল, সাংবাদিক, লেখক, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যার সরকারি ষড়যন্ত্রের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং তিনিসহ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে দুই দিনের হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী। গত সোমবার দেয়া বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। (দৈনিক সংগ্রাম)