এবার খালেদা জিয়ার কার্যালয় তল্লাশির পরোয়ানা
![](https://hakkatha.com/wp-content/uploads/2024/05/hakkathafav.png)
- প্রকাশের সময় : ১০:৫২:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ মার্চ ২০১৫
- / ৫৭১ বার পঠিত
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গুলশান থানা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ মার্চ রোববার সিএমএম কোর্ট এ সংক্রান্ত সার্চ ওয়ারেন্ট (তল্লাশি পরোয়ানা) জারি করেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়াসহ কিছু নেতাকর্মী ওই কার্যালয়ে অবস্থান করছেন।
১৬ ফেব্রুয়ারী গুলশান-২ নম্বরে নৌপরিবহনমন্ত্রীর নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে যায় শ্রমিক লীগ নেতা-কর্মীরা। ওই মিছিলে হাতবোমা হামলার ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা হয়। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) ফিরোজ জামান এই কার্যালয়ে তল্লাশির আবেদন জানান। পুলিশের আবেদনে বলা হয়, ওই কার্যালয়ে বিস্ফোরক থাকতে পারে এবং পলাতক আসামিরা সেখানে থাকতে পারেন।
সার্চ ওয়ারেন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার সন্ধ্যায় গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, সার্চ ওয়ারেন্ট হাতে পেয়েছি। এটা মামলা হওয়ার পর একটি রুটিন কার্যক্রম। তবে কবে তল্লাশি করা হবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলেননি এই কর্মকর্তা।
রোববার সার্চ ওয়ারেন্ট জারির পর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টির জন্যই সরকার আদালত থেকে এ আদেশ নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমাদের আশংকা হচ্ছে যারা তল্লাশি চালাতে যাবেন তারা সেখানে অবৈধ জিনিস নিয়ে ঢুকতে পারেন। পরে বেরিয়ে আসার সময় ওইসব অবৈধ জিনিস উদ্ধার হয়েছে বলে প্রচার চালাতে পারেন। তিনি বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এবং খালেদা জিয়াকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যই এ ধরনের কাজ করা হতে পারে বলে আমরা মনে করি।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘তাই আমরা দাবি করছি, তল্লাশি যদি করতেই হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩ ধারা অনুযায়ী তল্লাশির যে বিধান আছে সেটা অনুসরণ করতে হবে। এ বিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ লোক যারা সাক্ষী থাকবেন, তারা প্রথমে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের দেহ তল্লাশি করবেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সামনেই এ তল্লাশি চালাতে হবে। তারা সঙ্গে কোনো বেআইনি জিনিসপত্র নিয়ে ঢুকছেন কিনা এটা দেখবেন আইনজীবীরা। অন্যথায় ধরে নেয়া হবে খালেদা জিয়াকে জনসম্মুখে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ওই তল্লাশির একটি নাটক সাজানো হয়েছে। আর এই নাটকে অস্ত্র উদ্ধার, অবৈধ মালপত্র উদ্ধার ইত্যাদি ঘটতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।’
সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আদালতের বিষয়ে সবকিছু না জেনে মন্তব্য করা দুরূহ। বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিবিদদের মতো ঢালাও মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আশা করি, আদালত বা আইনশৃংখলা বাহিনী যা কিছু করবে তা যেন আইনসিদ্ধ হয়। রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশ্যে যেন কোনো কিছু না করা হয়।
দশম সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ৩ জানুয়ারী পুলিশের বাধায় কার্যালয় থেকে বের হতে না পেরে সেখানে অবস্থান নেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর খালেদা জিয়া প্রায় ২ মাস ধরে গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৮৬ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন। কয়েকজন নেতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে অর্ধশত ব্যক্তি তার সঙ্গে রয়েছেন। অন্যদিকে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে বেশ কিছু সংগঠন তার কার্যালয়ের পাশে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে।
১৬ ফেব্রুয়ারী নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন। ওইদিনই ঢাকা জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাচ্চু গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শিরিন সুলতানা, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মারুফ কামাল খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, হাফিজ উদ্দিন, হুমায়ুন কবির, এমএ কাইয়ুম, দেওয়ান সালাউদ্দিন, মোস্তফা মামুন ও মানিক।
এজাহারে বলা হয়, ১৬ ফেব্রুয়ারী হরতাল ও অবরোধে সহিংসতা বন্ধে খালেদা জিয়ার কার্যালয় অবরোধ করতে যায় শ্রমিক লীগ নেতা-কর্মীরা। এ সময় মিছিলে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে মোট ১৭ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশংকাজনক।
এদিকে ২৫ ফেব্রুয়ারী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তার কারণে আদালতে হাজির না হওয়ায় এ আদেশ জারি করা হয়। একই সঙ্গে আরেক আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৪ মার্চ আদালতে হাজির করতে তার আইনজীবীকে নির্দেশ দেন। (দৈনিক যুগান্তর)