নিউইয়র্ক ০১:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আইনস্টাইনের তত্ত্ব: গবেষক দলে বরগুনার দীপঙ্কর : গর্বিত সবাই

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৪৬:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • / ৮৪৯ বার পঠিত

বরগুনা: বরগুনা শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কের মৃত পরেশ তালুকদারের ছোট ছেলে। যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানীদের যে দলটি গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) মহাকর্ষীয় তরঙ্গসংকেত শনাক্ত করার আলোড়ন তোলা ঘোষণা দিয়েছে, দীপঙ্কর সেই দলেরই একজন। ছোট ভাইয়ের এই সাফল্যের খবরে গর্বিত বড় ভাই শংকর তালুকদার।
১৪ ফেব্রুয়ারী রোববার সকালে বরগুনা শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কে দীপঙ্করদের বাড়িতে কথা হয় তাঁর বড় ভাই শংকর তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘মানুষের সেবা করতে গিয়ে আমার বাবা ব্যবসা-বাণিজ্য-পুঁজি সব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন। আর্থিক অনটনের কারণে আমার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তিন বোন, দুই ভাইসহ সাতজনের সংসার। একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি আর পড়াশোনা করব না। পরিবারের জন্য কাজ করব। পরদিনই কিছু চাল ও আটা বাকিতে কিনে বসে যাই সাহাপট্টি এলাকার রাস্তার পাশে। শুরু করি ব্যবসা।’
কৃতী ভাইয়ের লেখাপড়া সম্পর্কে শংকর বলেন, ‘মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, আমার লেখাপড়া না হলেও ছোট ভাইকে যে করেই হোক পড়াশোনা করাতে হবে। এরপর দীপঙ্করকে প্রথমে শহরের আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। এরপর চতুর্থ শ্রেণিতে উঠলে ওকে জিলা স্কুল-সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাই। এরপর জিলা স্কুলে ওর পড়াশোনা। এসএসসিতে ভালো ফল করলেও অর্থাভাবে ঢাকার ভালো কলেজে ভর্তি করাতে পারিনি। বরগুনা সরকারি কলেজে ভর্তি হয় দীপঙ্কর। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়। সেখান থেকে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং স্নাতকোত্তরে (মাস্টার্সে) প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়।’
ভাইয়ের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে আনন্দে চকচক করে ওঠে শংকর তালুকদারের চোখ। তবে আক্ষেপও আছে তাঁর, বাবা-মা দেখে যেতে পারলেন না আদরের ছোট ছেলের সাফল্য। শংকর বলেন, ‘আজ আরও ভালো লাগত যদি বাবা ও মা এই সাফল্য দেখে যেতে পারতেন।’
গত বছর মা মারা গেলেও গবেষণায় ব্যস্ত দীপঙ্কর দেশে আসতে পারেননি। শংকরের মনে হয়েছিল, ‘কী এমন কাজ যে মায়ের মৃত্যুতেও ছুটি পায় না! কিন্তু ওর সাফল্যের খবরে আমার সেই ক্ষোভ জল হয়ে গেছে।’
দীপঙ্করের চাচাতো ভাই রানা তালুকদার বলেন, ‘দাদার এই সাফল্যের খবর প্রথম আলোতে প্রকাশের পর সকাল থেকে ফোনে ও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে বাড়িতে এসে আমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।’
বরগুনা জিলা স্কুলের গণিতের সাবেক শিক্ষক এবং বর্তমানে বরগুনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহম্মেদ বলেন, ‘দীপঙ্কর আমার ছাত্র। তাঁর এত বড় সাফল্যে আমার বুকটা ভরে গেছে।’
ছবি: বরগুনা শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কে দীপঙ্করদের বাড়ি (বাঁয়ে)। ঘরের মধ্যে ছোট্ট লাইব্রেরিতে দীপঙ্কর তালুকদারের সংগৃহীত বইপত্র দেখাচ্ছেন বড় ভাই শংকর তালুকদার। (প্রথম আলো)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

আইনস্টাইনের তত্ত্ব: গবেষক দলে বরগুনার দীপঙ্কর : গর্বিত সবাই

প্রকাশের সময় : ১১:৪৬:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

বরগুনা: বরগুনা শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কের মৃত পরেশ তালুকদারের ছোট ছেলে। যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানীদের যে দলটি গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) মহাকর্ষীয় তরঙ্গসংকেত শনাক্ত করার আলোড়ন তোলা ঘোষণা দিয়েছে, দীপঙ্কর সেই দলেরই একজন। ছোট ভাইয়ের এই সাফল্যের খবরে গর্বিত বড় ভাই শংকর তালুকদার।
১৪ ফেব্রুয়ারী রোববার সকালে বরগুনা শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কে দীপঙ্করদের বাড়িতে কথা হয় তাঁর বড় ভাই শংকর তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘মানুষের সেবা করতে গিয়ে আমার বাবা ব্যবসা-বাণিজ্য-পুঁজি সব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন। আর্থিক অনটনের কারণে আমার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তিন বোন, দুই ভাইসহ সাতজনের সংসার। একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি আর পড়াশোনা করব না। পরিবারের জন্য কাজ করব। পরদিনই কিছু চাল ও আটা বাকিতে কিনে বসে যাই সাহাপট্টি এলাকার রাস্তার পাশে। শুরু করি ব্যবসা।’
কৃতী ভাইয়ের লেখাপড়া সম্পর্কে শংকর বলেন, ‘মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, আমার লেখাপড়া না হলেও ছোট ভাইকে যে করেই হোক পড়াশোনা করাতে হবে। এরপর দীপঙ্করকে প্রথমে শহরের আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। এরপর চতুর্থ শ্রেণিতে উঠলে ওকে জিলা স্কুল-সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাই। এরপর জিলা স্কুলে ওর পড়াশোনা। এসএসসিতে ভালো ফল করলেও অর্থাভাবে ঢাকার ভালো কলেজে ভর্তি করাতে পারিনি। বরগুনা সরকারি কলেজে ভর্তি হয় দীপঙ্কর। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়। সেখান থেকে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং স্নাতকোত্তরে (মাস্টার্সে) প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়।’
ভাইয়ের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে আনন্দে চকচক করে ওঠে শংকর তালুকদারের চোখ। তবে আক্ষেপও আছে তাঁর, বাবা-মা দেখে যেতে পারলেন না আদরের ছোট ছেলের সাফল্য। শংকর বলেন, ‘আজ আরও ভালো লাগত যদি বাবা ও মা এই সাফল্য দেখে যেতে পারতেন।’
গত বছর মা মারা গেলেও গবেষণায় ব্যস্ত দীপঙ্কর দেশে আসতে পারেননি। শংকরের মনে হয়েছিল, ‘কী এমন কাজ যে মায়ের মৃত্যুতেও ছুটি পায় না! কিন্তু ওর সাফল্যের খবরে আমার সেই ক্ষোভ জল হয়ে গেছে।’
দীপঙ্করের চাচাতো ভাই রানা তালুকদার বলেন, ‘দাদার এই সাফল্যের খবর প্রথম আলোতে প্রকাশের পর সকাল থেকে ফোনে ও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে বাড়িতে এসে আমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।’
বরগুনা জিলা স্কুলের গণিতের সাবেক শিক্ষক এবং বর্তমানে বরগুনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহম্মেদ বলেন, ‘দীপঙ্কর আমার ছাত্র। তাঁর এত বড় সাফল্যে আমার বুকটা ভরে গেছে।’
ছবি: বরগুনা শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কে দীপঙ্করদের বাড়ি (বাঁয়ে)। ঘরের মধ্যে ছোট্ট লাইব্রেরিতে দীপঙ্কর তালুকদারের সংগৃহীত বইপত্র দেখাচ্ছেন বড় ভাই শংকর তালুকদার। (প্রথম আলো)