নিউইয়র্ক ১১:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

স্মৃতিতে চিরভাস্বর সাংবাদিক হাফিজুর রহমান

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:২৮:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৫ বার পঠিত

মোহাম্মদ আলী বোখারী: আমেরিকান লেখিকা হেলেন কেলার-এর একটি অমর উক্তি হচ্ছে- “Death is no more than passing from one room into another. But there’s a difference for me, you know. Because in that other room I shall be able to see.” অর্থাৎ মৃত্যু এমন কোনো ঘটনা নয় যে এক কামরা থেকে অন্য কামরায় চলে যাওয়া। বোধ করি, ওই পার্থক্যটা আমার ক্ষেত্রে রয়েছে। কারণ অবশ্যই সেই অন্য কামরাটি আমার দৃষ্টি সীমায় আবর্তিত। বস্তুত লেখিকা এখানে তার অন্ধত্ব ও বধিরতাকে কল্পনায় অতিক্রম করেছেন। এই উক্তিটি একই সঙ্গে মৃত্যু সম্পর্কে লেখিকার আলোকিত দৃষ্টিভঙ্গীকে তুলে ধরেছে। এতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, মৃত্যুই কোনো কিছুর পরিসমাপ্তি নয়, বরং সেটা একটা ভিন্ন অধ্যায়, যা তিনি বিশ্বাসে অবলোকন করেন। একই সঙ্গে যা মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে এক ধরণের স্বস্তি ও আশার সঞ্চার ঘটায়। তথাপি এই উক্তিটির সঙ্গে প্রাত্যহিক জীবনের কোনো সাদৃশ্যতা খুঁজে পাওয়া না গেলেও মৃত্যু সম্পর্কে বিশ্বাসে একটি সান্ত¡না জাগে, যা মৃত্যুর পরও বহমান।
তদ্রæপ ইসলাম ধর্মে রয়েছে- আজরাঈল কর্তৃক প্রাণ সংহারের পর মুসলমানেরা বিশ্বাস করে তাদের আত্মা সৃষ্টিকর্তার নিয়ন্ত্রণে বিচার দিনের অপেক্ষায় ‘বারজাকে’ প্রবেশ করে। তাই ইসলামের অনুসারীরা সান্ত¡না খুঁজে পান- প্রাণ সংহারের পর সুনির্দিষ্ট দুই ফেরেশতার যথোপযুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে পূণ্যার্থী আত্মাগুলো বারজাকে একত্রে ঘুমিয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে সঠিক উত্তর দিতে না পারা আত্মাগুলো নিদারুন নির্যাতনে নিপতিত হয়। এটি একটি ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঈমানের অঙ্গ।
এই ভূমিকার পর যে মানুষটির কথা এই লেখিনীতে তুলে ধরতে চাচ্ছি তিনি আর কেউ নন, তিনি আমাদের অতি প্রিয় টাঙ্গাইলের প্রয়াত সাংবাদিক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান। আমাদের কাছে ‘হাফিজ ভাই’ যার পরিচিতি। ধর্মীয় অনুশাসনে আল্লাহর প্রতি অসীম আনুগত্যসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাশের পাশাপাশি তার চিত্তাকর্ষক ঝকঝকে পরিপাটি দিকটি ছিল অত্যুৎজ্জ্বল। যারা তাঁর কাছের মানুষ তারা জানেন, তিনি ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের জ্যামাইকা এলাকায় মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় শেষে স্কুল থেকে বাচ্চাদের তুলে নিয়ে বাসায় ফেরার পর আকষ্মিক হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুমুখে ঢলে পড়েন। তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স এলে তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর বেশ কয়েক বার ওই শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে কানাডার টরন্টো থেকে গিয়ে সপরিবারে দেখা করে আসলেও সর্বশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিলে নিউইয়র্কে একা গিয়ে দেখে এসেছি- তার বড় ছেলে তাহমিদ রহমান বাবার অবয়বে হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সিটি কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়ছে। ভবিষ্যতে সে আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হতে আগ্রহী। হফিজ ভাই’র মেঝো ছেলে তানজিদ রহমান এইট গ্রেড়ে আর ছোট মেয়ে তাসনিয়া সিক্সে গ্রেড়ে পড়ছে। তাহমিদকে বুকে জড়িয়ে আদর করে এসেছি। সবটাই ঘটেছে টাইম টেলিভিশনের উপস্থাপক অনুজপ্রতীম সাংবাদিক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদের পারিবারিক আন্তরিকতায়। এক সময় তারা দু’জনে মিলে একটি ইংরেজি ষান্মসিক ‘দ্য ইনফরমেশন’ নামে বাই-উইকলি’র পাশাপাশি বাংলা সাপ্তাহিক হককথা বের করেন। বর্তমানে সালাহউদ্দিন নিজস্ব উদ্যোগে ওই হককথা পত্রিকাটি অনলাইন এডিশন প্রকাশের পাশাপাশি নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা ‘ইউনাইটেড নিউজ অব আমেরিকা (ইউএনএ)-এর পরিচালনা করছেন। বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন হাফিজুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল ও আশেক খন্দকার শামীম- এই তিনজন ছিলেন আমার গুরুজন ও কথোপকথনের মানুষ, এখন অপর দু’জন থাকলেও কেবল হাফিজ ভাই নেই!
আশির দশকে হাফিজ ভাই দৈনিক দেশ পত্রিকার টাঙ্গাইল প্রতিনিধি হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার চমৎকৃত নিউজ ও সৃষ্টিধর্মী ফিচার নিবন্ধগুলো ছিল শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয়। তিনি আপন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে এবং মেধা ও মননে ছিলেন উজ্জ্বীবিত। আমার সৌভাগ্য হয়েছে অন্তত দুটো ফিচার ভিন্ন আঙ্গিকে একত্রে লেখার। তার প্রথমটি টাঙ্গাইলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তদানীন্তন পুলিশ প্যারেড মাঠ রক্ষার্থে ‘শিশু-কিশোরদের কল-কাকলী ও পদধ্বনিতে এই মাঠটি আর মুখরিত হবে না’ এই প্রাণের দাবিটি তুলে ধরা এবং দ্বিতীয়টি মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্মরণে প্রতিষ্ঠিত ‘ভাসানী হল’-এ জেলা প্রশাসনের তহবিল সংগ্রহের নিমিত্তে মাসাধিককাল ইজারাভিত্তিক যাত্রামঞ্চ বানিয়ে সামাজিক অবক্ষয় উস্কে দেয়ার বিরুদ্ধে ভাসানী পতœী আলেমা ভাসানীর সাক্ষাতকারভিত্তিক দাবিটি তুলে ধরা। উভয় ক্ষেত্রেই তার চমকিত ভাবনাগুলো আমাকে আজও নিমিষে হাতছানি দিয়ে যায়; আমি পুলকিত ও উদ্বেলিত হই।
কিন্তু এই হাফিজ ভাইয়ের প্রাণের সংগঠন ও আমাদের অনেকেরই প্রেরণার শিশু-কিশোর সংগঠন ‘বাংলাদেশ নজরুল সেনা’, সংক্ষেপে ‘বানসে’ ছিল প্রাণসঞ্জীবনী স্ফূরণ। পর্যায়ক্রমিক তিনি এই বানসে’র অগ্নিবীণার ক্যাপ্টেন, সামগ্রিক গ্রæপ ক্যাপ্টেন ও পুরো গ্রæপের কমান্ডার-ইন-চিফ হয়েছিলেন। গর্বভরে বলতেন, যখন ঢাকার বাইরে একমাত্র ওই পুলিশ প্যারেড মাঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মার্চপাস্টের মাধ্যমে অভিবাদন জানানো হয়, তখন তার নেতৃত্বে ‘আইজ রাইট’ বলার সঙ্গে সঙ্গে সচকিত দৃষ্টিতে ক্ষণিকের জন্য ভাবলেশহীন কবি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখেছিলেন। আরও বলতেন, কি করে জাতীয় দিবসগুলোতে ঢাকা স্টেডিয়ামে গিয়ে ভারতেশ্বরী হোমসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমাদের সকলের অবতীর্ণ ও অ্যাওয়ার্ড জয়ের কথা। এছাড়াও নানা সময়ে নজরুলের গীতি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করার কথা, এমনকি সেই গীতি নৃত্যনাট্য চাক্ষুষ দর্শনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কতোটা অভিভূত হয়েছিলেন। আজ সেই স্মৃতিচারণ করার অদম্য ক্ষিপ্রতার চিত্তাকর্ষক কর্মস্পৃহার মানুষটিকে বড় বেশি মনে পড়ে। কেননা যে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য এক সময় ভয়েস অব আামেরিকা শুনে এবং তার প্রয়াত সম্পাদক ইকবাল আহমেদকে টাঙ্গাইল পাবলিক লাইব্রেরিতে সংবর্ধনা জানিয়ে আমি, হাফিজ ভাই ও মুকুল ভাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, সেখানে জ্যামাইকার ওয়েক্সফোর্ড টেরেসের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে এক সময় আমাদের সকলেরই ঠাঁই হয়েছিল এবং আমি সেখানে কাকতালীয়ভাবে ১৯৯১ সালে প্রথম পদার্পণের কয়েক দিন পরই তাকে নিয়ে জাতিসংঘ ভবন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম।
আল্লাহ হাফিজ ভাইকে বেহেস্ত নসীব করুন এবং মনিরা ভাবীসহ তার সন্তানদের এবং আমাদের সকলের সন্তানকে জাগতিক ও পারলৌলিক সাফল্যের পাণে এগিয়ে যেতে সাহায্য করুন, আমিন!
টরন্টো, কানাডা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

স্মৃতিতে চিরভাস্বর সাংবাদিক হাফিজুর রহমান

প্রকাশের সময় : ১১:২৮:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

মোহাম্মদ আলী বোখারী: আমেরিকান লেখিকা হেলেন কেলার-এর একটি অমর উক্তি হচ্ছে- “Death is no more than passing from one room into another. But there’s a difference for me, you know. Because in that other room I shall be able to see.” অর্থাৎ মৃত্যু এমন কোনো ঘটনা নয় যে এক কামরা থেকে অন্য কামরায় চলে যাওয়া। বোধ করি, ওই পার্থক্যটা আমার ক্ষেত্রে রয়েছে। কারণ অবশ্যই সেই অন্য কামরাটি আমার দৃষ্টি সীমায় আবর্তিত। বস্তুত লেখিকা এখানে তার অন্ধত্ব ও বধিরতাকে কল্পনায় অতিক্রম করেছেন। এই উক্তিটি একই সঙ্গে মৃত্যু সম্পর্কে লেখিকার আলোকিত দৃষ্টিভঙ্গীকে তুলে ধরেছে। এতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, মৃত্যুই কোনো কিছুর পরিসমাপ্তি নয়, বরং সেটা একটা ভিন্ন অধ্যায়, যা তিনি বিশ্বাসে অবলোকন করেন। একই সঙ্গে যা মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে এক ধরণের স্বস্তি ও আশার সঞ্চার ঘটায়। তথাপি এই উক্তিটির সঙ্গে প্রাত্যহিক জীবনের কোনো সাদৃশ্যতা খুঁজে পাওয়া না গেলেও মৃত্যু সম্পর্কে বিশ্বাসে একটি সান্ত¡না জাগে, যা মৃত্যুর পরও বহমান।
তদ্রæপ ইসলাম ধর্মে রয়েছে- আজরাঈল কর্তৃক প্রাণ সংহারের পর মুসলমানেরা বিশ্বাস করে তাদের আত্মা সৃষ্টিকর্তার নিয়ন্ত্রণে বিচার দিনের অপেক্ষায় ‘বারজাকে’ প্রবেশ করে। তাই ইসলামের অনুসারীরা সান্ত¡না খুঁজে পান- প্রাণ সংহারের পর সুনির্দিষ্ট দুই ফেরেশতার যথোপযুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে পূণ্যার্থী আত্মাগুলো বারজাকে একত্রে ঘুমিয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে সঠিক উত্তর দিতে না পারা আত্মাগুলো নিদারুন নির্যাতনে নিপতিত হয়। এটি একটি ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঈমানের অঙ্গ।
এই ভূমিকার পর যে মানুষটির কথা এই লেখিনীতে তুলে ধরতে চাচ্ছি তিনি আর কেউ নন, তিনি আমাদের অতি প্রিয় টাঙ্গাইলের প্রয়াত সাংবাদিক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান। আমাদের কাছে ‘হাফিজ ভাই’ যার পরিচিতি। ধর্মীয় অনুশাসনে আল্লাহর প্রতি অসীম আনুগত্যসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাশের পাশাপাশি তার চিত্তাকর্ষক ঝকঝকে পরিপাটি দিকটি ছিল অত্যুৎজ্জ্বল। যারা তাঁর কাছের মানুষ তারা জানেন, তিনি ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের জ্যামাইকা এলাকায় মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় শেষে স্কুল থেকে বাচ্চাদের তুলে নিয়ে বাসায় ফেরার পর আকষ্মিক হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুমুখে ঢলে পড়েন। তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স এলে তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর বেশ কয়েক বার ওই শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে কানাডার টরন্টো থেকে গিয়ে সপরিবারে দেখা করে আসলেও সর্বশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিলে নিউইয়র্কে একা গিয়ে দেখে এসেছি- তার বড় ছেলে তাহমিদ রহমান বাবার অবয়বে হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সিটি কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়ছে। ভবিষ্যতে সে আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হতে আগ্রহী। হফিজ ভাই’র মেঝো ছেলে তানজিদ রহমান এইট গ্রেড়ে আর ছোট মেয়ে তাসনিয়া সিক্সে গ্রেড়ে পড়ছে। তাহমিদকে বুকে জড়িয়ে আদর করে এসেছি। সবটাই ঘটেছে টাইম টেলিভিশনের উপস্থাপক অনুজপ্রতীম সাংবাদিক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদের পারিবারিক আন্তরিকতায়। এক সময় তারা দু’জনে মিলে একটি ইংরেজি ষান্মসিক ‘দ্য ইনফরমেশন’ নামে বাই-উইকলি’র পাশাপাশি বাংলা সাপ্তাহিক হককথা বের করেন। বর্তমানে সালাহউদ্দিন নিজস্ব উদ্যোগে ওই হককথা পত্রিকাটি অনলাইন এডিশন প্রকাশের পাশাপাশি নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা ‘ইউনাইটেড নিউজ অব আমেরিকা (ইউএনএ)-এর পরিচালনা করছেন। বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন হাফিজুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল ও আশেক খন্দকার শামীম- এই তিনজন ছিলেন আমার গুরুজন ও কথোপকথনের মানুষ, এখন অপর দু’জন থাকলেও কেবল হাফিজ ভাই নেই!
আশির দশকে হাফিজ ভাই দৈনিক দেশ পত্রিকার টাঙ্গাইল প্রতিনিধি হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার চমৎকৃত নিউজ ও সৃষ্টিধর্মী ফিচার নিবন্ধগুলো ছিল শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয়। তিনি আপন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে এবং মেধা ও মননে ছিলেন উজ্জ্বীবিত। আমার সৌভাগ্য হয়েছে অন্তত দুটো ফিচার ভিন্ন আঙ্গিকে একত্রে লেখার। তার প্রথমটি টাঙ্গাইলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তদানীন্তন পুলিশ প্যারেড মাঠ রক্ষার্থে ‘শিশু-কিশোরদের কল-কাকলী ও পদধ্বনিতে এই মাঠটি আর মুখরিত হবে না’ এই প্রাণের দাবিটি তুলে ধরা এবং দ্বিতীয়টি মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্মরণে প্রতিষ্ঠিত ‘ভাসানী হল’-এ জেলা প্রশাসনের তহবিল সংগ্রহের নিমিত্তে মাসাধিককাল ইজারাভিত্তিক যাত্রামঞ্চ বানিয়ে সামাজিক অবক্ষয় উস্কে দেয়ার বিরুদ্ধে ভাসানী পতœী আলেমা ভাসানীর সাক্ষাতকারভিত্তিক দাবিটি তুলে ধরা। উভয় ক্ষেত্রেই তার চমকিত ভাবনাগুলো আমাকে আজও নিমিষে হাতছানি দিয়ে যায়; আমি পুলকিত ও উদ্বেলিত হই।
কিন্তু এই হাফিজ ভাইয়ের প্রাণের সংগঠন ও আমাদের অনেকেরই প্রেরণার শিশু-কিশোর সংগঠন ‘বাংলাদেশ নজরুল সেনা’, সংক্ষেপে ‘বানসে’ ছিল প্রাণসঞ্জীবনী স্ফূরণ। পর্যায়ক্রমিক তিনি এই বানসে’র অগ্নিবীণার ক্যাপ্টেন, সামগ্রিক গ্রæপ ক্যাপ্টেন ও পুরো গ্রæপের কমান্ডার-ইন-চিফ হয়েছিলেন। গর্বভরে বলতেন, যখন ঢাকার বাইরে একমাত্র ওই পুলিশ প্যারেড মাঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মার্চপাস্টের মাধ্যমে অভিবাদন জানানো হয়, তখন তার নেতৃত্বে ‘আইজ রাইট’ বলার সঙ্গে সঙ্গে সচকিত দৃষ্টিতে ক্ষণিকের জন্য ভাবলেশহীন কবি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখেছিলেন। আরও বলতেন, কি করে জাতীয় দিবসগুলোতে ঢাকা স্টেডিয়ামে গিয়ে ভারতেশ্বরী হোমসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমাদের সকলের অবতীর্ণ ও অ্যাওয়ার্ড জয়ের কথা। এছাড়াও নানা সময়ে নজরুলের গীতি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করার কথা, এমনকি সেই গীতি নৃত্যনাট্য চাক্ষুষ দর্শনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কতোটা অভিভূত হয়েছিলেন। আজ সেই স্মৃতিচারণ করার অদম্য ক্ষিপ্রতার চিত্তাকর্ষক কর্মস্পৃহার মানুষটিকে বড় বেশি মনে পড়ে। কেননা যে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য এক সময় ভয়েস অব আামেরিকা শুনে এবং তার প্রয়াত সম্পাদক ইকবাল আহমেদকে টাঙ্গাইল পাবলিক লাইব্রেরিতে সংবর্ধনা জানিয়ে আমি, হাফিজ ভাই ও মুকুল ভাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, সেখানে জ্যামাইকার ওয়েক্সফোর্ড টেরেসের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে এক সময় আমাদের সকলেরই ঠাঁই হয়েছিল এবং আমি সেখানে কাকতালীয়ভাবে ১৯৯১ সালে প্রথম পদার্পণের কয়েক দিন পরই তাকে নিয়ে জাতিসংঘ ভবন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম।
আল্লাহ হাফিজ ভাইকে বেহেস্ত নসীব করুন এবং মনিরা ভাবীসহ তার সন্তানদের এবং আমাদের সকলের সন্তানকে জাগতিক ও পারলৌলিক সাফল্যের পাণে এগিয়ে যেতে সাহায্য করুন, আমিন!
টরন্টো, কানাডা।