নিউইয়র্ক ১১:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রেকর্ড খেলাপি ঋণ, সংশয়ে আইএমএফের শর্তপূরণ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
  • / ২ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : নানা ছাড়ের পরও দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন (জানুয়ারি-মার্চ) মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। আর এক বছরের ব্যবধানে এই অঙ্ক ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ব্যাংক খাতের মোট ঋণের মধ্যে ৮.৮০ শতাংশই খেলাপি। এতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণ আরো কঠিন হবে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত মার্চ প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।

সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। আর দুই বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৬ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণকে ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অন্যদিকে আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে তাতে অন্যতম শর্ত ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ কমাতে বিশেষ তাগিদ দেয় আইএমএফ, যাতে দেশের ব্যাংক খাত বড় ধরনের কোনো ঝুঁকিতে না পড়ে। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশ বলেছে, ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮.৮০ শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। কারণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত সহনীয় বলে ধরা হয়। করোনার প্রভাব মোকাবেলায় ঋণ পরিশোধে দফায় দফায় ছাড় এবং ঋণ পুনঃ তফশিলের নতুন নীতিমালা করে খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলপ্রসূ হয়নি। ঋণ পরিশোধে সব ধরনের সুবিধা তুলে নেওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

আরোও পড়ুন । ন্যায্য অর্থনীতির জন্য সম্মিলিত উদ্যোগের এখনই সময়, ধনী দেশগুলোকে প্রধানমন্ত্রী

২০২৩ সালের মার্চ শেষে সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৯১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা বা ১৯.৮৭ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে। বেসরকারি ব্যাংকে আলোচিত সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১১ লাখ পাঁচ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে আছে ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫.৯৬ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকে আলোচিত সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১১ লাখ পাঁচ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে আছে ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫.৯৬ শতাংশ। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ২৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে তিন হাজার ৪১ কোটি টাকা বা ৪.৯০ শতাংশ খেলাপি এবং বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১২.৮০ শতাংশ বা চার হাজার ৭৩২ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক রকমের। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ডলার সংকটে আমদানি ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। করোনার সময় দেওয়া ঋণগুলোও সময়মতো পরিশোধ না হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে, সেটাও খেলাপি ঋণ বাড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়া বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।

২০২০ সালে করোনার প্রভাব মোকাবেলা ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেয়। ২০২১ সালে বলা হয়, একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা কেউ তার মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি হবেন না। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কিস্তির ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করলে খেলাপি থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। পরে অবশ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই হার কমিয়ে ৫০ শতাংশ করে। এই সিদ্ধান্তের প্রভাবে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিয়েছিল, তা নিরীক্ষিত ছিল না। তাই পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কয়েকটি ব্যাংককে ঋণখেলাপি করে দেওয়া হয়। আবার কিছু ব্যাংক ঋণখেলাপি করার উপযুক্ত হলেও তা নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিন দিন বাড়ার অন্যতম কারণ হলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।’ তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধানে ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব (এমডি) ও ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আছেন, তাঁদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো এবং করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

বেলী/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

রেকর্ড খেলাপি ঋণ, সংশয়ে আইএমএফের শর্তপূরণ

প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : নানা ছাড়ের পরও দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন (জানুয়ারি-মার্চ) মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। আর এক বছরের ব্যবধানে এই অঙ্ক ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ব্যাংক খাতের মোট ঋণের মধ্যে ৮.৮০ শতাংশই খেলাপি। এতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণ আরো কঠিন হবে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত মার্চ প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।

সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। আর দুই বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৬ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণকে ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অন্যদিকে আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে তাতে অন্যতম শর্ত ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ কমাতে বিশেষ তাগিদ দেয় আইএমএফ, যাতে দেশের ব্যাংক খাত বড় ধরনের কোনো ঝুঁকিতে না পড়ে। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশ বলেছে, ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮.৮০ শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। কারণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত সহনীয় বলে ধরা হয়। করোনার প্রভাব মোকাবেলায় ঋণ পরিশোধে দফায় দফায় ছাড় এবং ঋণ পুনঃ তফশিলের নতুন নীতিমালা করে খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলপ্রসূ হয়নি। ঋণ পরিশোধে সব ধরনের সুবিধা তুলে নেওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

আরোও পড়ুন । ন্যায্য অর্থনীতির জন্য সম্মিলিত উদ্যোগের এখনই সময়, ধনী দেশগুলোকে প্রধানমন্ত্রী

২০২৩ সালের মার্চ শেষে সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৯১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা বা ১৯.৮৭ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে। বেসরকারি ব্যাংকে আলোচিত সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১১ লাখ পাঁচ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে আছে ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫.৯৬ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকে আলোচিত সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১১ লাখ পাঁচ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে আছে ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫.৯৬ শতাংশ। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ২৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে তিন হাজার ৪১ কোটি টাকা বা ৪.৯০ শতাংশ খেলাপি এবং বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১২.৮০ শতাংশ বা চার হাজার ৭৩২ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক রকমের। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ডলার সংকটে আমদানি ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। করোনার সময় দেওয়া ঋণগুলোও সময়মতো পরিশোধ না হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে, সেটাও খেলাপি ঋণ বাড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়া বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।

২০২০ সালে করোনার প্রভাব মোকাবেলা ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেয়। ২০২১ সালে বলা হয়, একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা কেউ তার মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি হবেন না। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কিস্তির ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করলে খেলাপি থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। পরে অবশ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই হার কমিয়ে ৫০ শতাংশ করে। এই সিদ্ধান্তের প্রভাবে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিয়েছিল, তা নিরীক্ষিত ছিল না। তাই পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কয়েকটি ব্যাংককে ঋণখেলাপি করে দেওয়া হয়। আবার কিছু ব্যাংক ঋণখেলাপি করার উপযুক্ত হলেও তা নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিন দিন বাড়ার অন্যতম কারণ হলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।’ তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধানে ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব (এমডি) ও ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আছেন, তাঁদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো এবং করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

বেলী/হককথা