বুধবার, জুলাই ৬, ২০২২
No Result
View All Result
হককথা
  • প্রচ্ছদ
  • নিউইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • তথ্য প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • প্রবাস
  • এক স্লিপ
  • লাইফ স্টাইল
  • আরো
    • যুক্তরাষ্ট্র
    • স্বাস্থ্য
    • মুক্তাঙ্গন
    • সাহিত্য
    • সাক্ষাতকার
    • সম্পাদকীয়
    • মিডিয়া
    • জাতিসংঘ
    • ইউএস প্রেসিডেন্ট ইলেকশন
    • স্মরণ
    • বিশ্বকাপ ক্রিকেট
    • বিশ্বকাপ ফুটবল
    • ক্লাসিফাইড
  • প্রচ্ছদ
  • নিউইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • তথ্য প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • প্রবাস
  • এক স্লিপ
  • লাইফ স্টাইল
  • আরো
    • যুক্তরাষ্ট্র
    • স্বাস্থ্য
    • মুক্তাঙ্গন
    • সাহিত্য
    • সাক্ষাতকার
    • সম্পাদকীয়
    • মিডিয়া
    • জাতিসংঘ
    • ইউএস প্রেসিডেন্ট ইলেকশন
    • স্মরণ
    • বিশ্বকাপ ক্রিকেট
    • বিশ্বকাপ ফুটবল
    • ক্লাসিফাইড
হককথা
No Result
View All Result
Home মুক্তাঙ্গন

সংকট পেরুবো কিভাবে?

হক কথা by হক কথা
মার্চ ৭, ২০১৫
in মুক্তাঙ্গন
0

ফরহাদ মাজহার: অন্ধ হয়ে রাজনৈতিক বিভাজন ও বিভক্তি রেখা যেভাবে আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে টেনে দিচ্ছি এবং ভিন্ন চিন্তাকে দুষমন গণ্য করে তাকে নির্মূল ও কতল করবার জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছি, তার পরিণতি সহিংস ও আত্মঘাতী হতে বাধ্য। বাংলাদেশের জন্য সেটা ইতোমধ্যেই মারাত্মক হয়ে উঠেছে। শুনতে অনেকের ভাল নাও লাগতে পারে- এই বিভাজন ও বিভক্তি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে বিলয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অবশ্য বিশ্বে আমরা এখন টিকে আছি শুধু সস্তা দাসের দেশ হিসাবে। সেটা এক দিকে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জীবনের বিনিময়ে; তাদের পুড়িয়ে কিম্বা জ্যান্ত কবর দিয়ে আমরা জিডিপি বৃদ্ধির বড়াই করি। আর অন্য দিকে আনন্দের সঙ্গে নিজের দেশের নাগরিকদের নিজেরা দাস বানিয়ে অন্য দেশে চালান করে দিয়ে তাদের রেমিটেন্সের ওপর উচ্চবিত্ত ও ধনীদের একটি গণবিচ্ছিন্ন শ্রেণীকে টিকিয়ে রাখাই আমাদের প্রধান জাতীয় কর্তব্য হয়ে উঠেছে। গত দেড় দশক ধরে আমি বিভাজন, বিভক্তি ও নির্মূলের রাজনীতির বিপদের কথাগুলোই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলবার চেষ্টা করেছি। কোথাও জাতীয় ঐক্যের কোন ক্ষেত্র তৈয়ার করা যায় কি না সেটাই আমি সন্ধান করেছি। আমি বিশেষভাবে জোর দিয়েছি দুটো ক্ষেত্রে। এক. মুক্তিযুদ্ধ;
কারণ, একাত্তর হচ্ছে সেই সন্ধিবিন্দু, যাকে বাদ দিলে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসাবে আমাদের কোন অস্তত্ব আর থাকে না। দুই. ইসলাম প্রশ্ন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রশ্ন বাদ দিয়ে যেমন বাংলাদেশের কথা ভাবা যায় না, ঠিক তেমনি ইসলাম প্রশ্ন বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মানসিক ও সাংস্কৃতিক ভূগোলের কোন কূলকিনারা পাওয়া যাবে না। একে উপেক্ষা করার অর্থ বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বাইরে ইসলামকে একটি প্রতিপক্ষ শক্তি হিসাবে দাঁড়াতে বাধ্য করা, যার ফল বিভক্তি ও বিভাজনের মধ্যেই নিরন্তর খাবি খেতে থাকবে। আমি সফল হয়েছি দাবি করি না। কারণ, এখন টের পাচ্ছি আমরা সেই স্তরে পৌঁছে গিয়েছি যার পরে রয়েছে বড় ও বিশাল একটি খাদ বা গহ্বর। এই গহ্বরে বাংলাদেশের পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। আমার এখনকার লেখালেখির উদ্দেশ্য একটাই- এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার শেষ চেষ্টাটা চালিয়ে যাওয়া। লেখালেখির মধ্য দিয়ে সেই ধরনের মানুষগুলোর কাছে প্রাণপণ পৌঁছানোর চেষ্টা করা, যারা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণকে একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসাবে জানপ্রাণ রক্ষা করবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে। ঐক্য ও সন্ধির ক্ষেত্রগুলো দ্রুত চিহ্নিত করতে পারে এবং চূড়ান্ত পতনের আগে বাস্তবোচিত পদপে গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশের
বর্তমান বিভাজন ও বিভক্তির মধ্যে এই কাজ রীতিমতো জীবন বাজি রেখে করবার মতোই কাজ। কারণ, বিভাজনের দুই তরফ থেকেই হামলার সম্ভাবনা প্রচুর। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো কোন একটা জায়গা থেকে কাজটি করতেই হবে।
দুই
বাংলাদেশের জন্মের গোড়ায় রয়েছে বিভাজন ও বিভক্তির রক্তাক্ত চিহ্ন। তবে গত দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশের রূপান্তর বীভৎস রূপ নিয়েছে। এটা ঠিক যে এই রূপান্তরের সঙ্গে বিশ্বব্যবস্থার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের সম্পর্ক আছে। একে অনেক সময় নিউ-লিবারেলিজম বলা হয়। এই ধারণাটি দিয়ে বিশ্বব্যবস্থার রূপান্তরের ঠিক কোন দিকটির ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয় সে বিষয়ে বাংলাদেশে আমরা যথেষ্ট আলোচনা করি নি। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা কিভাবে বিশ্বব্যবস্থার নৈর্ব্যক্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও বদ্ধমূল চিন্তাচেতনার আধিপত্যের কারণে ঘটেছে সে সম্পর্কে সমাজে কোন তর্কবিতর্ক বা স্পষ্ট ধারণা গড়ে ওঠে নি। এই ধরনের প্রভাব বা আধিপত্যের প্রসঙ্গ এলে আমরা একে ষড়যন্ত্র আকারেই গণ্য করি। এ কথা ভেবে আমরা হা-হুতাশ করি যে বাংলাদেশ একটি দুর্বল দেশ। গরিবের বউ সকলের ভাবী। আমাদের নিয়ে আঞ্চলিক আর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা খুবই ভালো, এতো নির্দোষ যে ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে জানি না। বিদেশিদের ষড়যন্ত্রের কারণেই বাংলাদেশের এই দুর্দশা। নইলে আমরা ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ… ইত্যাদি।
আসলে এই ব্লাহ ব্লাহ ঠিক না। বাংলাদেশ যদি কিছু আসলেই করতে চায় সেটা বাংলাদেশকেই করতে হবে, বাইরের কেউই সেটা করে দেবে না। ওপরের মনস্তত্ত্বের উল্টা পিঠ হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সংকট থেকে মুক্তির জন্য আমাদের কোন চেষ্টা নাই। আমরা ভাবছি ওয়াশিংটন কি করল, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কি করছে? যুক্তরাজ্যের কি অবস্থা? তারা কেন শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়ে একটি নির্বাচন করিয়ে দিচ্ছে না আমাদের। এই যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, তা বন্ধ করবার জন্য কোন হিউমেনিটারিয়ান ইন্টারভেনশন হচ্ছে না কেন? ইন্টারেস্টিং দিক হোল নিজেদের দুর্দশার জন্য আমরা বিদেশিদের দোষ দেই। আবার সেই দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য আমরা আবার বিদেশিদের হস্তপেই কামনা করি। নিজেদের ভাগ্য নিজেরা নির্ণয় করবার জন্য যে আত্মমর্যাদা বোধ ও হিম্মত দরকার সেটা আমরা অনেক আগেই সম্ভবত হারিয়েছি।
তাহলে আমাদের দুটো কর্তব্য রয়েছে। এক. বিভাজন ও বিভক্তির রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে একটা ঐক্যের রাজনীতি গড়ে তুলবার চেষ্টা করা; দুই. নিজেদের হীনম্মন্যতা কাটিয়ে উঠে নিজেদের আত্মমর্যাদা উপলব্ধি ও নিজেদের হিম্মতে নতুন ধরনের রাজনীতির সম্ভাবনা তৈরি করা। আমি কোন তৃতীয় ধারার রাজনীতির কথা বলছি না। সমাজের দ্বন্দ্বসংঘাত নিজের অন্তর্গত প্রক্রিয়ার কারণেই দুটো প্রধান রাজনৈতিক ধারা হিসাবে হাজির হয়। বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিও দুটি ধারায় বিভক্ত। এই দুই অধিপতি ধারাকে মেনে ও তাদের পরিমন্ডলে থেকে মাঝখানে কোন তৃতীয় ধারা গড়ে তোলা যায় বলে আমি মনে করি না। যা গড়ে উঠবে তা বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিমন্ডলের বদ্ধমূল ধ্যানধারণাকে ভেঙ্গে নিজেই জাতীয় হয়ে উঠবে। অর্থাৎ জনগণের মধ্যে নতুন চিন্তা এবং দেশ ও রাষ্ট্রকে গড়ে তুলবার নতুন পরিকল্পনা ও ছক কিঞ্চিত দানা বেঁধে উঠতে থাকলেই তা রাজনীতির প্রধান জাতীয় ধারা হিসাবে দানা বাঁধতে শুরু করবে। তাকে ঠেকানোর শক্তি কারুরই থাকবে না। এর আগে আমি আমার একটি লেখায় বলেছি, যারা আমার এই পর্যালোচনা মানতে রাজি নন, তারা তৃতীয় ধারা বা তৃতীয় শক্তি বলতে মূলত রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকাই বুঝিয়ে থাকেন। তাদের বাসনা রাজনীতির প্রধান দুই পক্ষ ছেড়ে সেনাবাহিনী তাদের সমর্থন করুক, তারা ক্ষমতায় যাক। রাজনীতির কঠিন ও বিপদসংকুল পথকে সংক্ষেপে করবার জন্যই তারা এভাবে ভাবেন। এটা ভুল পথ ও বিপজ্জনক। রাজনীতিতে বল প্রয়োগের ভূমিকা আছে। সমাজের শক্তিশালী শ্রেণিগুলো তাদের প্রতিপ শ্রেণি ও শক্তিকে দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ, আইন আদালত ও সশস্ত্র বল প্রয়োগের প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এই তত্ত্ব নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্র শ্রেণি শোষণের হাতিয়ার- লেনিনের এই বাক্য শুধু বামপন্থীদের মুখস্থ তা নয়, ধনী শ্রেণিও মনে করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমর্থন থাকে বলেই তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে পারে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই মৌলিক তত্ত্ব মেনেই শোষক যেমন শোষণব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে, একইভাবে সমাজের বৈপ্লবিক রূপান্তরের পথও ভিন্ন কিছু হয় না। লেনিন সহজেই বুঝেছিলেন বিপ্লবী গণ-অভ্যুত্থানের রাজনীতির কাজ সশস্ত্রতার বন্দনা গাওয়া নয়, কিম্বা সেনাবাহিনীর সমর্থনে মতায় যাওয়া নয়। মজলুম সব সময়ই তার হাতের কাছে যা আছে তাই দিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে লড়ে। মজলুমের লড়াই হাতে ইট বা লাঠি থাকলেও তা সব সময়ই সশস্ত্র। এর সঙ্গে সৈনিকের কাঁধে ঝোলানো বন্দুকের সঙ্গে গুণগত ফারাক থাকলেও চরিত্রগত পার্থক্য নাই। কিন্তু লাঠি আর বন্দুক তো এক নয়। সেনাবাহিনী সমাজ ও জনগণেরই অংশ, তারা আকাশ থেকে প্যারাসুট দিয়ে নেমে আসেনি। সমাজ ও রাষ্ট্রের দুঃখ-কষ্টে তারাও আন্দোলিত হয়। অতএব বিপ্লবী রাজনীতির প্রধান কাজ হচ্ছে বন্দুকের নল উল্টা দিকে ফিরিয়ে দেওয়া। শোষক এই নল তাক করে রাখে জনগণের দিকে, হত্যা করে সাধারণ মানুষকে। তাহলে সেই রাজনৈতিক সচেতনতা ও উপলব্ধি জনগণের মধ্যে সঞ্চারিত করা দরকার, যাতে সেই নল শোষকের পাহারাদার না হয়ে জনগণের মুক্তির হাতিয়ার হয়ে ওঠে এবং নিমেষে গণশক্তির রূপ পরিগ্রহণ করে। শুধু ক্ষমতার হাত বদল নয়, সেই শক্তিকেই গড়ে তোলা দরকার, যাতে বন্দুকের সেই নল- এত দিন যা শোষককে রা করেছে, তা জনগণকে রক্ষা করবার জন্য শোষকের বিরুদ্ধেই উল্টে যায়। ষড়যন্ত্র নয়, রাজনীতি ও গণসচেতনতাই এখানে প্রধান কাজ। ইতিহাসের যে কোন বৈপ্লবিক রূপান্তরের সারকথা হচ্ছে, সৈনিক ও জনগণের বৈপ্লবিক মৈত্রী। এই মৈত্রীই যুগে যুগে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশেও সাতই নভেম্বর খানিক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসাবে দেখা দিয়ে হারিয়ে গিয়েছে। আমরা এই মৈত্রীর রাজনীতির সুফল পরিপূর্ণভাবে ভোগ করতে পারি নি। কারণ, সৈনিক আবার শোষকের পাহারাদারিতে নিয়োজিত হতে বাধ্য হয়েছে। ফলে শোষক শ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান চেষ্টা থাকে বলপ্রয়োগের প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে যে কোন মূল্যে নিজেদের হুকুম তামিল করবার অবস্থায় রাখা। সেখানে গড়বড় হয়ে গেলে ক্ষমতা চলে যাওয়া মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এ ধরনের পরিবর্তনে সমাজ, রাজনীতি বা সংস্কৃতির মৌলিক কোন পরিবর্তন ঘটায় না। সমাজের কাঠামোতে বা চিন্তাচেতনায় পরিবর্তন ঘটাতে পারে না বলে ক্ষমতার হাত বদল সমাজের দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে আরো দীর্ঘস্থায়ী করে মাত্র। তা যদি সমাধানের অতীত অবস্থায় চলে যায় তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে।
সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কেন ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, সেই বাস্তব সত্য আমাদের মনে রাখা দরকার। ঠিক যে তার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। কিন্তু গণ-আন্দোলনের বিজয় হয়েছে বলে তিনি মতা ছেড়েছেন, সেটা সত্যি নয়। তিনি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, কারণ, প্রতিষ্ঠান হিসাবে সেনাবাহিনী তার পেছনে থাকতে আর রাজি ছিল না। রাজনৈতিক মতার পেছনে বলপ্রয়োগের হিম্মত না থাকলে সেটা মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়ে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ট্রাজেডি তার ভাল উদাহরণ। দীর্ঘকাল সেনাশাসন একটি দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না, এই বিবেচনাটুকু সৈনিক ও সেনাপতি সকলের মধ্যে কাজ করেছে। তবে রাজনীতির এই বাস্তব সত্যকে আমরা কিশে মার্কা কথাবার্তা বা নীতিকথার ভাঁড়ামি দিয়ে আড়াল করতে পারি না। এটা সত্যি যে, সেনাবাহিনী এক-এগারোর ঘটনাবলির জন্য চরমভাবে নিন্দিত হলেও বিএনপির ক্ষমতাচ্যুতি এবং বর্তমান অবস্থাকে আমরা একই ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি। জাতীয় পর্যায়ের দুটি প্রধান দলের ক্ষমতায় থাকা না থাকা একান্তই সেনাবাহিনীর সমর্থন দেওয়া না দেওয়ার ওপর এখন নির্ভর করছে। এর জন্য বিশাল রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হবার প্রয়োজন নাই। কান্ডজ্ঞানই যথেষ্ট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট যতোই তীব্র হচ্ছে সেনাবাহিনীর প্রশ্ন ততোটাই স্পর্শকাতর বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। শেখ হাসিনা খামাখাই ‘উত্তরপাড়া’ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কটাক্ষ করেছেন। পরিস্থিতিই তাকে এই ধরনের মন্তব্য করতে বাধ্য করেছে। তিনি খেয়াল করেন নি, তার তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য খুবই স্পর্শকাতর হয়েছে, কারণ, তা সেনাবাহিনীর মর্যাদাকেও হেয় করেছে।
তিন
গুম-খুন, আইনবহির্ভূত হত্যাসহ নাগরিক ও মানবিক অধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রের ভেঙ্গে পড়ার লক্ষণগুলো আমাদের ভাঙ্গনের বাহ্যিক বা দৃশ্যমান দিক। ভেতরের দিক হচ্ছে প্রগতি, আধুনিকতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের নানান মনগড়া অনুমান ও ধারণা। আধুনিক হওয়া বলতে আমরা পাশ্চাত্যের অর্জন ও তার বাছবিচারের মধ্য দিয়ে গ্রহণ-বর্জন বুঝি না। পাশ্চাত্যের নির্বিচার গ্রহণ করাই বুঝি। যে কারণে আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার নামে ইসলামবিদ্বেষ বা ইসলামোফোবিয়াই আমরা চর্চা করি। প্রগতির নামে যা রেসিজম বা বর্ণবাদ ছাড়া কিছুই না। এ কালে ইসলামসহ ধর্মের কোন পর্যালোচনা বা গঠনমূলক ভূমিকা থাকতে পারে আমরা তা মনে করি না। আমি সব সময়ই এই রাজনীতির বিরোধিতা করে এসেছি। এর জন্য কাউকে ইসলামি মোজাদ্দিদ হবার প্রয়োজন পড়ে না। এই কান্ডজ্ঞানই যথেষ্ট যে ‘রাজনীতি’ বা রাজনীতির পরিসর বলতে বোঝায় অন্যের বা অপরের কণ্ঠস্বরকে অন্তর্ভুক্ত করা, অপরের কথা শোনা এবং তার সঙ্গে কথোপকথনে নিযুক্ত হওয়া। যারা রাজনীতির পরিসর থেকে ভিন্ন চিন্তা ও তার নিজের আদর্শের বিরোধী মানুষগুলোর কণ্ঠস্বর নীরব করে দেয়, তারা রাজনীতির জন্য বিপদ ডেকে আনে এবং সমাজকে এমন এক বিভাজন ও বিভক্তির দিকে ঠেলে দেয়, যা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক গৃহযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহণ করে। বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে পাশ্চাত্যে খবর হচ্ছে। তার জন্য প্রগতি ও আধুনিকতার নামে নির্মূলের রাজনীতিই দায়ী। ইসলাম প্রশ্ন মীমাংসার কাজ সহজ বা সরল বলে আমি মনে করি না। কিন্তু রাজনৈতিক পরিসর থেকে জনগণের বিশাল একটি অংশকে বাদ দেবার ধারণাটাই অবাস্তব ও বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের বড় একটি কারণ। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য লড়াইয়ে জয়ী হওয়া এক কথা আর জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় ধারণ করতে সম একটি রাষ্ট্র গঠন করার ঐতিহাসিক কর্তব্য আলাদা। কিন্তু এই ফারাক আমরা অনুধাবন করতে পারি না। জনগণের অভিপ্রায় ধারণ করা গঠনতন্ত্র বা কনস্টিটিউশন ছাড়া কোন গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র গঠন করা যায় না। অথচ এখনও আমরা বলি বাংলাদেশের সংবিধান জনগণ নয়, এর প্রণেতা ডক্টর কামাল হোসেন। একই মুখে বলি সংবিধান হচ্ছে- ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’। সংবিধানে শেষের কথাটাই লিখা আছে, কামাল হোসেন সংবিধান লিখেছেন সে কথা লেখা নাই। সংবিধানে কারো নাম লেখা থাকে না। সংবিধান প্রণেতা হিসাবে ডক্টর কামাল হোসেন নিজের নাম এভাবে উচ্চারিত হওয়া এনজয় করেন কি না জানি না, কিন্তু টেলিভিশনে তাকে যখন এভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তিনি কখনো প্রতিবাদ করেন নি। সংবিধান প্রণেতা হিসাবে ডক্টর কামাল হোসেনের অবদান থাকতেই পারে। কিন্তু তার লেখনীতে ‘জনগণের পরম অভিপ্রায়’ ব্যক্ত হয়েছিল সেটা ঠিক না। ফলে গোড়ার প্রশ্ন আজও থেকে গিয়েছে যে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ করেছি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে, এই রকম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাহলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সংবিধানে কোন যুক্তিতে যুক্ত করা হয়েছিল? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে দলীয় কর্মসূচি সংবিধানে যুক্ত হোল কেন? আইনের দিক থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা গাঠনিক বা ফাউন্ডেশনাল হলেও পরবর্তীতে সংবিধান প্রণয়নের সময় তাকে অস্বীকার করা হোল কেন?
এই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা একটি ঐক্যের ক্ষেত্র চিহ্নিত করবার জন্য বলতে পারি স্বাধীনতার ঘোষণা এমন একটি ঐতিহাসিক দলিল, যাকে আশ্রয় করে আমরা বিভাজন ও বিভক্তির রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার একটা শেষ চেষ্টা করতে পারি। যদি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ কায়েম করা যায় এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের কর্তব্য সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে সঞ্চারিত করা যায়, তাহলে জাতীয় রাজনীতির প্রধান দুই ধারাকে অক্ষুন্ন রেখে মাঝখানে আমাদের কোন দুর্বল তৃতীয় ধারা তৈয়ারির বেগার খাটতে হবে না। নতুন বাংলাদেশ গঠনের কর্তব্য পালনের অভিপ্রায়ই রাজনীতির পরম অভিব্যক্তি হিসাবে হাজির হবে। এটাই রাজনীতির প্রধান ধারা হতে বাধ্য। সামরিক কিম্বা বেসামরিক, সৈনিক কিম্বা নাগরিক সকলের মনের ইচ্ছার কথা যদি আমরা জাতীয় ইচ্ছায় রূপ দিতে পারি তাহলে কারো সমর্থন স্কাইপে বা ভাইবারে কাউকে চাইতে হবে না। জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের গুণে তারা আপনাতেই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। ইতিহাস তো তাই বলে। এই ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। জনগণের ইচ্ছা বা অভিপ্রায়ই নিজের শক্তি ও গতির কারণে সকলকে ভাসিয়ে নিতে সম। এই বিশ্বাসটুকুই আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি দরকার।

Tags: Farhad Mazhar_Cricis
Previous Post

ঘৃণা ও বমনের অরুচি

Next Post

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে আলোড়িত হন জয়

Related Posts

‘পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার’
মুক্তাঙ্গন

‘পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার’

by হক কথা
জুন ২৩, ২০২২
জো বাইডেন কি পারবেন ট্রাম্প যুগের অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে
মুক্তাঙ্গন

শ্রদ্ধেয়, আবদুল গাফফার চৌধুরী

by হক কথা
নভেম্বর ২৪, ২০২১
দেশ বনাম রাষ্ট্র
মুক্তাঙ্গন

দেশ বনাম রাষ্ট্র

by হক কথা
অক্টোবর ৯, ২০২১
নেতৃত্বের জন্য বিখ্যাত যেই পরিবার
মুক্তাঙ্গন

নেতৃত্বের জন্য বিখ্যাত যেই পরিবার

by হক কথা
অক্টোবর ১, ২০২১
পঞ্চাশ বছরেও এমন দেখিনি
মুক্তাঙ্গন

এ কোন ডিপ্লোম্যাসি!

by হক কথা
আগস্ট ২১, ২০২১
Next Post

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে আলোড়িত হন জয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ মার্চ-এর পূর্ণাঙ্গ ভাষণ

সর্বশেষ খবর

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে কে জিতছে?

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে কে জিতছে?

জুলাই ৫, ২০২২
পুলিশের ডিসএসপি হলেন শাহিন আফ্রিদি

পুলিশের ডিসএসপি হলেন শাহিন আফ্রিদি

জুলাই ৫, ২০২২
আগামী ২ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানি

আগামী ২ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানি

জুলাই ৫, ২০২২
রাশিয়া-চিনের অস্ত্র ব্রিকস, চিন্তা ভারতের

রাশিয়া-চিনের অস্ত্র ব্রিকস, চিন্তা ভারতের

জুলাই ৫, ২০২২
কীভাবে ফেসবুক আপনার মনের কথা জানে

কীভাবে ফেসবুক আপনার মনের কথা জানে

জুলাই ৫, ২০২২
‘গঠনমূলক আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তরিক ও নমনীয় হতে হবে’

‘গঠনমূলক আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তরিক ও নমনীয় হতে হবে’

জুলাই ৫, ২০২২
কর্মকর্তারাই ঘুষচক্রের হোতা

কর্মকর্তারাই ঘুষচক্রের হোতা

জুলাই ৫, ২০২২
হজে সেলফি প্রবণতা : নষ্ট করছে ইবাদতের মাহাত্ম্য

হজে সেলফি প্রবণতা : নষ্ট করছে ইবাদতের মাহাত্ম্য

জুলাই ৫, ২০২২
ADVERTISEMENT
হককথা

Editor: ABM Salahuddin Ahmed
Ass. Editor: Samiul Islam

Mailing Address: 87-50 Kingston Pl,
Apt #5H, Jamaica, NY 11432
Contact: +1 347-848-3834
E-mail: hakkathany@gmail.com
Published by WEEKLY HAKKATHA Inc.

আজকের দিন-তারিখ

  • বুধবার (রাত ২:০৮)
  • ৬ই জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
  • ৬ই জিলহজ, ১৪৪৩ হিজরি
  • ২২শে আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 ১২৩
৪৫৬৭৮৯১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

হককথা বিশেষ সংখ্যা

  • Terms
  • Policy
  • Contact Us

© 2021 Hakkatha - Develop by Tech Avalon.

No Result
View All Result
  • হক কথা
  • নিউইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • প্রবাস
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • তথ্য প্রযুক্তি
  • ক্লাসিফাইড
  • এক স্লিপ
  • আরো খবর
    • ইউএস প্রেসিডেন্ট ইলেকশন
    • ইতিহাসের এই দিনে
    • জাতিসংঘ
    • বিশ্বকাপ ক্রিকেট
    • বিশ্বকাপ ফুটবল
    • মিডিয়া
    • মুক্তাঙ্গন
    • লাইফ স্টাইল
    • সম্পাদকীয়
    • সাক্ষাতকার
    • সাহিত্য
    • স্বাস্থ্য
    • স্মরণ

© 2021 Hakkatha - Develop by Tech Avalon.