নিউইয়র্ক ০৮:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

শফিক রেহমানকে কষ্ট দেবেন না

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৬
  • / ৯৪৬ বার পঠিত

সৈয়দ আবদাল আহমদ: রাতে পুরোপুরি ঘুম হয়নি। তাই ফজরের নামাজ পড়ে আরো কিছুটা সময় ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে জেগে মোবাইলে দেখি বেশ কয়েকটি মিস্ডকল। ডা. সায়ন্থ ফোন করেছেন। এত সকালে সায়ন্থের ফোনে অবাক হলাম। দেরি না করে কল ব্যাক করলে ফোন রিসিভ করেই সায়ন্থ বললেন, শফিক ভাইকে ডিবি তুলে নিয়ে গেছে। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। শফিক ভাই মানে শফিক রেহমান। খবরটি শুনে গা শিউরে উঠল। কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়ে পড়ি। এ কি শুনলাম! সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধুকে ফোন করে প্রকৃত অবস্থা জানার চেষ্টা করি। একজন সাংবাদিক বন্ধু জানালেন, শফিক রেহমান ডিবি অফিসে আছেন। প্রধানমন্ত্রীরপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা পরিকল্পনা ও অপহরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হয়েছে। দুপুরে কোর্টে তুলে পুলিশ তার রিমান্ড চাইবে।
হত্যা পরিকল্পনা ও অপহরণের অভিযোগ অথচ মামলাটি রাষ্ট্রদ্রোহ কেন বুঝতে পারছিলাম না। অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ ভাইকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, জয় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হওয়ায় এ মামলাটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। ইতোপূর্বে সরকার এ ধরনের একটি আইন করেছে। সানাউল্লাহ ভাই আরো জানান, দু’টার মধ্যে শফিক রেহমানকে আদালতে নেয়া হবে। তাই দেড়টার মধ্যেই তার কোর্ট কাচারির চেম্বারে পৌঁছি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জি-নাইনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানকেও সেখানে উপস্থিত দেখতে পাই। কী অবিশ্বাস্য কায়দায় শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বর্ণনায় জানতে পারি। ডিবি পুলিশ পরিচয় গোপন করে অর্থাৎ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক সেজে সাক্ষাৎকার গ্রহণের নামে শফিক রেহমানের বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর যথারীতি নাস্তা খেয়ে তাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। অনেকটা বোম্বের ফিল্মি স্টাইল।
আইনজীবীর চেম্বারে আমাদের আলাপের এক পর্যায়ে খবর আসে শফিক রেহমানকে কোর্টের হাজতখানা অর্থাৎ গারদে আনা হয়েছে। সিএমএম কোর্ট ভবনের ৭ তলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলামের কোর্টে তার রিমান্ড ও জামিনের আবেদনের শুনানি হবে। শনিবার ছুটির দিনে একটি এজলাশ খোলা রাখা হয়। এটি সেই কোর্ট। আদালত পাড়ায় অন্য দিনের মতো মানুষের গিজ গিজ করা ভিড় ছিল না। তবে শফিক রেহমানের গ্রেফতারের খবর পেয়ে তার শুভানুধ্যায়ীরা অনেকেই কোর্টে চলে আসেন। আইনজীবী এবং অসংখ্য সংবাদকর্মীও সেখানে ভিড় করেন। বিকেল ৩টায় কোর্টের এজলাসে বসবেন বিচারক। ১৫ মিনিট আগেই শফিক রেহমানকে গারদখানা থেকে নির্ধারিত কোর্ট কক্ষে নেয়া হচ্ছিল। সংবাদকর্মীরা ভালো ছবির জন্য হুড়োহুড়ি, দৌড়াদৌড়ি করছেন। কোর্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুঃখভরা মনে এ দৃশ্য দেখছিলাম। মনে হলো আলোকচিত্র সাংবাদিক ভাইয়েরা অযথাই হুড়োহুড়ি করছেন। যেকোনো এঙ্গেল কিংবা যেভাবেই ছবি তোলা হোক না কেন, সেটাই ভালো ছবি হতে বাধ্য। এর কারণ শফিক ভাইকে দেখছিলাম চরম বিপদের সময়েও অত্যন্ত দৃঢ়চেতা এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় এজলাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গাঢ় আকাশি রং ও সাদার মিশ্রণে হাফ শার্ট ছিল তার পরনে। মুখের হাসি, মাথায় শ্বেতশুভ্র ঝাঁকড়া চুল আর শার্টের সাথে মিলিয়ে আকাশি নীল রঙের ফ্রেমওয়ালা চশমায় তাকে তখনো অপূর্ব লাগছিল। মনে হলো তার বিশাল ব্যক্তিত্বের কাছে পুলিশের এই গ্রেফতার একটি তুচ্ছ বিষয়। গোলাপের মতোই উজ্জ্বল লাগছিল শফিক রেহমানকে।
কোর্টের নির্ধারিত কক্ষে এনে শফিক রেহমানকে লোহার খাঁচার মতো তৈরি ডকে তোলা হলো। আমাদের সেখানে উপস্থিত দেখে তিনি খুশি হন এবং কুশল জিজ্ঞাসা করেন। বললেন, তোমরা এসেছ এ জন্য ধন্যবাদ। তার পত্রিকা মৌচাকে ঢিলÑ এর সাংবাদিক সজীব ওনাসিস ও ডা. সায়ন্থকে ডেকে বললেন, হাতে যে কয়টি লেখা ছিল তা গত রাতেই তিনি দেখে দিয়েছেন। মধুদার ওপর ১২ এপ্রিলে শেষ করা একটি লেখা নয়া দিগন্তের আলফাজ আনামকে পৌঁছানোর কথা ছিল, সেটি যেন নিশ্চিত হয়। আরো বললেন, স্টাফদের বেতন যেন যথাসময়েই দেয়া হয়। একজন সাংবাদিক কতটা প্রফেশনাল হলে এ পরিস্থিতিতেও ছোটখাটো বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন শফিক রেহমান তার উদাহরণ। তাকে জানালাম সাংবাদিক ইউনিয়ন তার মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে এবং সমাবেশ করছে। তিনি কৃতজ্ঞতা জানালেন। এরই মধ্যে ভাবী এলেন। শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান। ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক। শফিক ভাই তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ‘হ্যালো…’ বলে লোহার শিকলের ফাঁক দিয়েই হাত বাড়িয়ে ভাবীর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলেন। প্রিয় মানুষটির এ অবস্থা দেখে ভাবী অনেকটা ভেঙে পড়েন। শফিক ভাই বললেন, তোমাকে শক্ত হতে হবে, মনোবল হারালে চলবে না।
অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার কোর্ট কক্ষে ঢোকে শফিক ভাইকে ডকের ভেতরে অন্য আরো ১০-১২ জন তরুণ কয়েদির সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ক্ষোভ জানান এবং তাকে বাইরে এনে বেঞ্চে বসাতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। আদালতের কাজ শুরু হলে প্রথমেই অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিচারকের কাছে প্রথিতযশা সম্পাদক শফিক রেহমানকে বেঞ্চে বসার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দিলে শফিক রেহমান ডক থেকে বেরিয়ে আইনজীবীদের সাথে বেঞ্চে বসেন। তার এক পাশে ভাবীও বসেন। মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বক্তব্য তুলে ধরা হয়। রিমান্ডে বিরোধিতা এবং জামিন প্রার্থনা করে আদালতে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান তাদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। প্রায় এক ঘণ্টা শুনানিকালে শফিক রেহমানকে দেখলাম একজন তরুণ রিপোর্টারের মতো কখনো দাঁড়িয়ে কখনো বসে পুরো শুনানি পর্যবেক্ষণ করছেন।
দুই.
Shafiq Rehman Picশফিক রেহমান এমন একটি নাম, যার আগে কোনো বিশেষণের প্রয়োজন হয় না। তার তুলনা শুধু তিনি।
যদি বলি শফিক রেহমান একজন সব্যসাচী সাংবাদিক, একটুও ভুল বলা হবে না। কারণ রিপোর্ট, সম্পাদকীয়, কলাম লেখা, সাক্ষাৎকার নেয়া থেকে শুরু করে সাংবাদিকতার এমন কিছু নেই যা তিনি লেখেননি। স্কুল জীবন থেকে তার লেখালেখি শুরু। স্কুলে থাকাকালেই নিজের সম্পাদনায় পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। রিপোর্টার হিসেবে দৈনিক ইনসাফ ও দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের সঙ্গে ‘দ্য এক্সপ্রেস’ নামে ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। সচিত্র সন্ধানীর সাথে যুক্ত হয়েছেন। বিবিসিতে সাংবাদিকতা করেছেন। লন্ডনে স্পেকট্রাম রেডিও চালু করেছেন। যায়যায়দিন ও মৌচাকে ঢিল পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। আশির দশকে যায়যায়দিনে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শফিক রেহমানকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
একজন লেখক হিসেবে তিনি গল্প লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন, প্রবন্ধ এমনকি ছড়া, কবিতাও লিখেছেন। তিনি একজন চলচ্চিত্র অনুরাগী। তরুণদের ফিল্ম বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য তিনি একাডেমি ফিল্ম সোসাইটি গড়ে তোলেন। তার সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন দেশের দশ হাজারেরও বেশি সৃজনশীল চলচ্চিত্র।
যদি বলি তিনি একজন টিভি ব্যক্তিত্ব, টকশোর জনপ্রিয় উপস্থাপনÑ কেউ দ্বিমত করবেন না। কারণ দেশের দর্শকরা দেখেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে তার ম্যাগাজিন সিরিজ। বলা বাহুল্য, সরাসরি, সোনার হরিণ, ইদানীং রচনা উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেছেন। প্রথমে বিটিভি এবং পরে বাংলাভিশন তার আর্ট শো ‘লাল গোলাপ’ কার না ভালো লাগে!
যদি বলি তিনি একজন প্রেমের জাদুকর, এক বাক্যে সবাই মেনে নেবে। কারণ তিনি একজন প্রেমিক মানুষ, ভালোবাসার মানুষ। স্বামী-স্ত্রী এবং প্রেমিক-প্রেমিকাই শুধু নয়, তিনি চান মানুষে মানুষে প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়–ক। ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস প্রবর্তনের ক্ষেত্রে তার বক্তব্য হচ্ছে অহিংসার বাণী ছড়িয়ে দিতেই তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কারণ কলকাতায় থাকাকালে সচক্ষে তিনি রায়ট দেখেছেন, মানুষ মানুষকে কী নৃশংসভাবে হত্যা করছে! হত্যাকান্ড এখনো চলছে। এমন হত্যাকান্ড, এমন সহিংসতা এবং রাজনৈতিক হানাহানি ও অস্থিরতা দিনের পর দিন চলতে থাকলে সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বাণী, পারস্পরিক মায়া-মমতা ও শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলাটা তিনি জরুরি মনে করেছেন।
শফিক রেহমান একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ও অর্থনীতিবিদ। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষাবিদ এবং রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিত্ব। একজন প্রতিবাদী এবং বিপ্লবী মানুষও শফিক রেহমান। আধুনিক ধ্যান-ধারণার সুন্দর মনের মানুষ তিনি। যেমন ফ্যাশন সচেতন, তেমনি স্টাইলিস্ট ব্যক্তিত্ব। তাকে মাল্টিমিডিয়া ব্যক্তিত্ব বললে আরো ভালো মানাবে। মিডিয়া জগতের আইকন বললেও যুৎসই বলা হবে। বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যের একজন জিনিয়াস এবং সৃজনশীল মানুষ শফিক রেহমান। তার নামটি উচ্চারিত হলে চোখের সামনে ভেসে উঠে আকাশের রংধনু। সত্যিই রংধনুর মতোই বর্ণাঢ্য তার জীবন।
সাপ্তাহিক যায়যায়দিন প্রকাশের পর থেকে তার লেখার সাথে পরিচিত। তাকে দেখেছি দু’হাতে লিখে যেতে। তার লেখায় থাকে শেখার বিষয়। অহিংসার বাণী, ভালোবাসার বাণী আর মানবিকতার ছোঁয়া। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, চরমপন্থার বিরুদ্ধে, চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন। সর্বশেষ তিনি মৃত্যুদন্ডবিরোধী জনমত তৈরিতে কাজ করছিলেন। মৃত্যুদন্ড দেশে বিদেশে যুগে যুগে শীর্ষক ধারাবাহিক নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। এটি বই আকারেও প্রকাশিত হয়েছে। এমন একজন গুণী মানুষ হত্যা পরিকল্পনা ও অপহরণের সাথে জড়িত হবেন এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ?
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও রয়েছে শফিক রেহমানের অবদান। বিবিসিতে তিনি একাত্তরে বাংলাদেশের গণহত্যার বিবরণ তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে কাজ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ফান্ড সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সরবরাহ করেছেন। তার পিতা প্রখ্যাত দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষক। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজের যে হোস্টেলে বঙ্গবন্ধু থাকতেন, তার সুপার ছিলেন অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান। সে কারণে বঙ্গবন্ধুও তাকে ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধু তাকে আদর ও স্নেহও করেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুনানির সময় শফিক রেহমান কোর্টে উপস্থিত থাকতেন।
শফিক রেহমান একজন মুক্ত ও গণতন্ত্রমনা মানুষ। স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার নিজস্ব মত থাকতেই পারে। এটা তার নাগরিক অধিকার। ভিন্নমতের কারণে ৮২ বছর বয়সের প্রবীণ এই গুণী সাংবাদিককে মামলায় জড়াতে হবে? গ্রেফতার করতে হবে? রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করতে হবে? ভিন্নমত হলেই দমন করার যে রাজনৈতিক অপকৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত। আশা করি সরকার বাক, ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। গুণীর কদর করবে। আমরা যদি গুণীর কদর করতে না পারি, তাহলে দেশে গুণী জন্মাবে কিভাবে?

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

শফিক রেহমানকে কষ্ট দেবেন না

প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

সৈয়দ আবদাল আহমদ: রাতে পুরোপুরি ঘুম হয়নি। তাই ফজরের নামাজ পড়ে আরো কিছুটা সময় ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে জেগে মোবাইলে দেখি বেশ কয়েকটি মিস্ডকল। ডা. সায়ন্থ ফোন করেছেন। এত সকালে সায়ন্থের ফোনে অবাক হলাম। দেরি না করে কল ব্যাক করলে ফোন রিসিভ করেই সায়ন্থ বললেন, শফিক ভাইকে ডিবি তুলে নিয়ে গেছে। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। শফিক ভাই মানে শফিক রেহমান। খবরটি শুনে গা শিউরে উঠল। কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়ে পড়ি। এ কি শুনলাম! সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধুকে ফোন করে প্রকৃত অবস্থা জানার চেষ্টা করি। একজন সাংবাদিক বন্ধু জানালেন, শফিক রেহমান ডিবি অফিসে আছেন। প্রধানমন্ত্রীরপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা পরিকল্পনা ও অপহরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হয়েছে। দুপুরে কোর্টে তুলে পুলিশ তার রিমান্ড চাইবে।
হত্যা পরিকল্পনা ও অপহরণের অভিযোগ অথচ মামলাটি রাষ্ট্রদ্রোহ কেন বুঝতে পারছিলাম না। অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ ভাইকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, জয় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হওয়ায় এ মামলাটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। ইতোপূর্বে সরকার এ ধরনের একটি আইন করেছে। সানাউল্লাহ ভাই আরো জানান, দু’টার মধ্যে শফিক রেহমানকে আদালতে নেয়া হবে। তাই দেড়টার মধ্যেই তার কোর্ট কাচারির চেম্বারে পৌঁছি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জি-নাইনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানকেও সেখানে উপস্থিত দেখতে পাই। কী অবিশ্বাস্য কায়দায় শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বর্ণনায় জানতে পারি। ডিবি পুলিশ পরিচয় গোপন করে অর্থাৎ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক সেজে সাক্ষাৎকার গ্রহণের নামে শফিক রেহমানের বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর যথারীতি নাস্তা খেয়ে তাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। অনেকটা বোম্বের ফিল্মি স্টাইল।
আইনজীবীর চেম্বারে আমাদের আলাপের এক পর্যায়ে খবর আসে শফিক রেহমানকে কোর্টের হাজতখানা অর্থাৎ গারদে আনা হয়েছে। সিএমএম কোর্ট ভবনের ৭ তলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলামের কোর্টে তার রিমান্ড ও জামিনের আবেদনের শুনানি হবে। শনিবার ছুটির দিনে একটি এজলাশ খোলা রাখা হয়। এটি সেই কোর্ট। আদালত পাড়ায় অন্য দিনের মতো মানুষের গিজ গিজ করা ভিড় ছিল না। তবে শফিক রেহমানের গ্রেফতারের খবর পেয়ে তার শুভানুধ্যায়ীরা অনেকেই কোর্টে চলে আসেন। আইনজীবী এবং অসংখ্য সংবাদকর্মীও সেখানে ভিড় করেন। বিকেল ৩টায় কোর্টের এজলাসে বসবেন বিচারক। ১৫ মিনিট আগেই শফিক রেহমানকে গারদখানা থেকে নির্ধারিত কোর্ট কক্ষে নেয়া হচ্ছিল। সংবাদকর্মীরা ভালো ছবির জন্য হুড়োহুড়ি, দৌড়াদৌড়ি করছেন। কোর্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুঃখভরা মনে এ দৃশ্য দেখছিলাম। মনে হলো আলোকচিত্র সাংবাদিক ভাইয়েরা অযথাই হুড়োহুড়ি করছেন। যেকোনো এঙ্গেল কিংবা যেভাবেই ছবি তোলা হোক না কেন, সেটাই ভালো ছবি হতে বাধ্য। এর কারণ শফিক ভাইকে দেখছিলাম চরম বিপদের সময়েও অত্যন্ত দৃঢ়চেতা এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় এজলাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গাঢ় আকাশি রং ও সাদার মিশ্রণে হাফ শার্ট ছিল তার পরনে। মুখের হাসি, মাথায় শ্বেতশুভ্র ঝাঁকড়া চুল আর শার্টের সাথে মিলিয়ে আকাশি নীল রঙের ফ্রেমওয়ালা চশমায় তাকে তখনো অপূর্ব লাগছিল। মনে হলো তার বিশাল ব্যক্তিত্বের কাছে পুলিশের এই গ্রেফতার একটি তুচ্ছ বিষয়। গোলাপের মতোই উজ্জ্বল লাগছিল শফিক রেহমানকে।
কোর্টের নির্ধারিত কক্ষে এনে শফিক রেহমানকে লোহার খাঁচার মতো তৈরি ডকে তোলা হলো। আমাদের সেখানে উপস্থিত দেখে তিনি খুশি হন এবং কুশল জিজ্ঞাসা করেন। বললেন, তোমরা এসেছ এ জন্য ধন্যবাদ। তার পত্রিকা মৌচাকে ঢিলÑ এর সাংবাদিক সজীব ওনাসিস ও ডা. সায়ন্থকে ডেকে বললেন, হাতে যে কয়টি লেখা ছিল তা গত রাতেই তিনি দেখে দিয়েছেন। মধুদার ওপর ১২ এপ্রিলে শেষ করা একটি লেখা নয়া দিগন্তের আলফাজ আনামকে পৌঁছানোর কথা ছিল, সেটি যেন নিশ্চিত হয়। আরো বললেন, স্টাফদের বেতন যেন যথাসময়েই দেয়া হয়। একজন সাংবাদিক কতটা প্রফেশনাল হলে এ পরিস্থিতিতেও ছোটখাটো বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন শফিক রেহমান তার উদাহরণ। তাকে জানালাম সাংবাদিক ইউনিয়ন তার মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে এবং সমাবেশ করছে। তিনি কৃতজ্ঞতা জানালেন। এরই মধ্যে ভাবী এলেন। শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান। ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক। শফিক ভাই তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ‘হ্যালো…’ বলে লোহার শিকলের ফাঁক দিয়েই হাত বাড়িয়ে ভাবীর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলেন। প্রিয় মানুষটির এ অবস্থা দেখে ভাবী অনেকটা ভেঙে পড়েন। শফিক ভাই বললেন, তোমাকে শক্ত হতে হবে, মনোবল হারালে চলবে না।
অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার কোর্ট কক্ষে ঢোকে শফিক ভাইকে ডকের ভেতরে অন্য আরো ১০-১২ জন তরুণ কয়েদির সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ক্ষোভ জানান এবং তাকে বাইরে এনে বেঞ্চে বসাতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। আদালতের কাজ শুরু হলে প্রথমেই অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিচারকের কাছে প্রথিতযশা সম্পাদক শফিক রেহমানকে বেঞ্চে বসার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দিলে শফিক রেহমান ডক থেকে বেরিয়ে আইনজীবীদের সাথে বেঞ্চে বসেন। তার এক পাশে ভাবীও বসেন। মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বক্তব্য তুলে ধরা হয়। রিমান্ডে বিরোধিতা এবং জামিন প্রার্থনা করে আদালতে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান তাদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। প্রায় এক ঘণ্টা শুনানিকালে শফিক রেহমানকে দেখলাম একজন তরুণ রিপোর্টারের মতো কখনো দাঁড়িয়ে কখনো বসে পুরো শুনানি পর্যবেক্ষণ করছেন।
দুই.
Shafiq Rehman Picশফিক রেহমান এমন একটি নাম, যার আগে কোনো বিশেষণের প্রয়োজন হয় না। তার তুলনা শুধু তিনি।
যদি বলি শফিক রেহমান একজন সব্যসাচী সাংবাদিক, একটুও ভুল বলা হবে না। কারণ রিপোর্ট, সম্পাদকীয়, কলাম লেখা, সাক্ষাৎকার নেয়া থেকে শুরু করে সাংবাদিকতার এমন কিছু নেই যা তিনি লেখেননি। স্কুল জীবন থেকে তার লেখালেখি শুরু। স্কুলে থাকাকালেই নিজের সম্পাদনায় পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। রিপোর্টার হিসেবে দৈনিক ইনসাফ ও দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের সঙ্গে ‘দ্য এক্সপ্রেস’ নামে ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। সচিত্র সন্ধানীর সাথে যুক্ত হয়েছেন। বিবিসিতে সাংবাদিকতা করেছেন। লন্ডনে স্পেকট্রাম রেডিও চালু করেছেন। যায়যায়দিন ও মৌচাকে ঢিল পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। আশির দশকে যায়যায়দিনে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শফিক রেহমানকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
একজন লেখক হিসেবে তিনি গল্প লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন, প্রবন্ধ এমনকি ছড়া, কবিতাও লিখেছেন। তিনি একজন চলচ্চিত্র অনুরাগী। তরুণদের ফিল্ম বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য তিনি একাডেমি ফিল্ম সোসাইটি গড়ে তোলেন। তার সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন দেশের দশ হাজারেরও বেশি সৃজনশীল চলচ্চিত্র।
যদি বলি তিনি একজন টিভি ব্যক্তিত্ব, টকশোর জনপ্রিয় উপস্থাপনÑ কেউ দ্বিমত করবেন না। কারণ দেশের দর্শকরা দেখেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে তার ম্যাগাজিন সিরিজ। বলা বাহুল্য, সরাসরি, সোনার হরিণ, ইদানীং রচনা উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেছেন। প্রথমে বিটিভি এবং পরে বাংলাভিশন তার আর্ট শো ‘লাল গোলাপ’ কার না ভালো লাগে!
যদি বলি তিনি একজন প্রেমের জাদুকর, এক বাক্যে সবাই মেনে নেবে। কারণ তিনি একজন প্রেমিক মানুষ, ভালোবাসার মানুষ। স্বামী-স্ত্রী এবং প্রেমিক-প্রেমিকাই শুধু নয়, তিনি চান মানুষে মানুষে প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়–ক। ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস প্রবর্তনের ক্ষেত্রে তার বক্তব্য হচ্ছে অহিংসার বাণী ছড়িয়ে দিতেই তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কারণ কলকাতায় থাকাকালে সচক্ষে তিনি রায়ট দেখেছেন, মানুষ মানুষকে কী নৃশংসভাবে হত্যা করছে! হত্যাকান্ড এখনো চলছে। এমন হত্যাকান্ড, এমন সহিংসতা এবং রাজনৈতিক হানাহানি ও অস্থিরতা দিনের পর দিন চলতে থাকলে সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বাণী, পারস্পরিক মায়া-মমতা ও শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলাটা তিনি জরুরি মনে করেছেন।
শফিক রেহমান একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ও অর্থনীতিবিদ। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষাবিদ এবং রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিত্ব। একজন প্রতিবাদী এবং বিপ্লবী মানুষও শফিক রেহমান। আধুনিক ধ্যান-ধারণার সুন্দর মনের মানুষ তিনি। যেমন ফ্যাশন সচেতন, তেমনি স্টাইলিস্ট ব্যক্তিত্ব। তাকে মাল্টিমিডিয়া ব্যক্তিত্ব বললে আরো ভালো মানাবে। মিডিয়া জগতের আইকন বললেও যুৎসই বলা হবে। বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যের একজন জিনিয়াস এবং সৃজনশীল মানুষ শফিক রেহমান। তার নামটি উচ্চারিত হলে চোখের সামনে ভেসে উঠে আকাশের রংধনু। সত্যিই রংধনুর মতোই বর্ণাঢ্য তার জীবন।
সাপ্তাহিক যায়যায়দিন প্রকাশের পর থেকে তার লেখার সাথে পরিচিত। তাকে দেখেছি দু’হাতে লিখে যেতে। তার লেখায় থাকে শেখার বিষয়। অহিংসার বাণী, ভালোবাসার বাণী আর মানবিকতার ছোঁয়া। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, চরমপন্থার বিরুদ্ধে, চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন। সর্বশেষ তিনি মৃত্যুদন্ডবিরোধী জনমত তৈরিতে কাজ করছিলেন। মৃত্যুদন্ড দেশে বিদেশে যুগে যুগে শীর্ষক ধারাবাহিক নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। এটি বই আকারেও প্রকাশিত হয়েছে। এমন একজন গুণী মানুষ হত্যা পরিকল্পনা ও অপহরণের সাথে জড়িত হবেন এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ?
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও রয়েছে শফিক রেহমানের অবদান। বিবিসিতে তিনি একাত্তরে বাংলাদেশের গণহত্যার বিবরণ তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে কাজ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ফান্ড সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সরবরাহ করেছেন। তার পিতা প্রখ্যাত দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষক। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজের যে হোস্টেলে বঙ্গবন্ধু থাকতেন, তার সুপার ছিলেন অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান। সে কারণে বঙ্গবন্ধুও তাকে ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধু তাকে আদর ও স্নেহও করেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুনানির সময় শফিক রেহমান কোর্টে উপস্থিত থাকতেন।
শফিক রেহমান একজন মুক্ত ও গণতন্ত্রমনা মানুষ। স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার নিজস্ব মত থাকতেই পারে। এটা তার নাগরিক অধিকার। ভিন্নমতের কারণে ৮২ বছর বয়সের প্রবীণ এই গুণী সাংবাদিককে মামলায় জড়াতে হবে? গ্রেফতার করতে হবে? রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করতে হবে? ভিন্নমত হলেই দমন করার যে রাজনৈতিক অপকৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত। আশা করি সরকার বাক, ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। গুণীর কদর করবে। আমরা যদি গুণীর কদর করতে না পারি, তাহলে দেশে গুণী জন্মাবে কিভাবে?

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক