নিউইয়র্ক ০৮:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

এ যুগের দ্রৌপদী কি বিচার পাবে?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৩১:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০১৫
  • / ৮৮৪ বার পঠিত

শিতাংশু গুহ: দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ ছিল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অন্যতম উপাদান এবং ওই কাহিনী আমাদের জানা। বাংলা নতুন বছরে আবার আমরা দেখলাম ঢাকা ভার্সিটি চত্বরে আর এক তরুণীর বস্ত্রহরণ। প্রায় হাজার পাঁচেক বছর ব্যবধানে সেই একই ঘটনা, নারীর অবমাননা। দেশে দেশে যুগে যুগে নারী বারংবার লাঞ্ছিত হয়েছে, কখনো বিচার পেয়েছে, কখনো পায়নি। পুরুষই জোয়ান অব আর্ককে ডাইনি অপবাদ দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। আবার এই পুরুষ রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড এক নারীর জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেছেন। এক নারীকে উদ্ধারের নিমিত্ত ট্রয় নগরী ধ্বংসের কাহিনীও আমাদের অজানা নয়। কতোকগুলো কাপুরুষ এক নারীকে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করেছে; আর একজন পুরুষই নিজের জামা খুলে ওই নারীর লজ্জা নিবারণ করেছে। সদ্য নিউইয়র্কে মধ্যরাতে এক পানশালায় এক নারী ধর্ষিতা হয়েছে, চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে পুলিশ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছে এবং সম্ভবত বাকি জীবনটা তাকে জেলেই কাটাতে হবে। ঢাকায় সদ্য ঘটে যাওয়া এই ঘটনার বিচার কি অভাগিনী পাবে? সম্প্রতি দিল্লতে বাসে তরুণী ধর্ষণের বহুল প্রচারিত ঘটনা আমরা জানি। এও জানি ওই সব ধর্ষক এখন জেলে পচছে। আমাদের অবস্থানটা কী? এ যুগের দ্রৌপদী কি বিচার পাবে?
এ ঘটনার জন্য দায়ী কে? আমরা আবারো সবাই একে অন্যের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে আমাদের দায়িত্ব শেষ করব? একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, এর জন্য যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করে আইন মাফিক বিচার করলেই তো হয়। সমস্যাটা ওখানেই! অপরাধকে আমরা অপরাধ হিসেবে দেখি না, দেখি অপরাধটি করল কে, তার রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজি, ভিকটিমের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাই এবং তারপর ব্যবস্থা নিতে সচেষ্ট হই বা পিছপা হই। এ ঘটনার জন্য শুধু অভিযোগ করে চুপ থাকলে চলবে না। প্রত্যেক অপরাধীকে চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা কি তা কখনো করি? প্রায়শ আমরা বলে থাকি, সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নেই! আসলে কি তাই? ধর্ষকের কি কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক পরিচয় থাকা উচিত?
ভিডিওতে একটি লজ্জাবনত ‘টপলেস’ মেয়েকে দেখেও পুলিশ নাকি কোনো অপরাধ খুঁজে পাচ্ছে না! ব্রাভো পুলিশ। লজ্জাহীনতার জন্য আমাদের পুলিশকে মেডেল দেয়া উচিত। ঘটনাস্থলে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় জাতি লজ্জিত। পুলিশ কি মানুষ! এই সমাজের অংশ? লাঞ্ছিত মেয়েটি যদি পুলিশের বড় কর্তার মেয়ে হত তাহলে পুলিশ কী করত? যদি ওই অভাগিনী রাষ্ট্র ও সরকারের উচ্চপদাধিকারী কারো মেয়ে হত তাহলে কি পুলিশ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকত? উচিত নয়, তবু আমার কিন্তু ওই মেয়েটির পরিচয় জানতে ইচ্ছে করছে। কারণ মেয়েটি যদি হিন্দু হয়, তাহলে অপরাধীদের সাতখুন মাফ। নইলে ২০০১ সালের লজ্জাজনক ধর্ষণের বিচার আজো ধর্ষিতারা পায়নি কেন? এরশাদ যেমন বলেছেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, স্পিকার বা অন্য বড় একটি দলের নেত্রী সবাই মহিলা সেই দেশে নারীর অপমান নারী হয়ে এরা সহ্য করছেন কী করে? পূর্র্ণিমা আজো বিচার পায়নি কেন? একরাতে একইস্থানে ২০০ নারী ধর্ষিত হলেও আমাদের নারী নেত্রীদের টনক নড়ে না কেন?
এই ঘটনায় ছাত্রদল ছাত্রলীগকে ধর্ষকদের সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ছাত্রদল ২০০১-এর ঘটনা স্মরণ করুন, আপনারাও কম যান না! ধর্ষকের পরিচয় ধর্ষক, তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই, থাকা উচিত নয়। ঢাকা ভার্সিটির এ ঘটনার পরপরই দেখলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আদিবাসী মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। একইসাথে দেখলাম ওই সব লম্পট বহিষ্কৃত হয়েছে। ঘটনার এখানেই শেষ হওয়া উচিত নয়, আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। ঢাকা ভার্সিটিতে আগেও এ ধরনের নারী নির্যাতন ঘটেছে। হল থেকে ছাত্রী লাফ দিয়ে পড়ার ঘটনা আমরা জানি। সাধারণত যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের কর্মীরাই এসব ঘটনার নায়ক। সরকার এর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না! আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, আমিও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম; আমরাও বান্ধবীদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছি কিন্তু নারীর অমর্যাদা! ‘কাম অন, গিভ আস এ ব্রেক!’ এরা কারা? এদের দায়িত্ব আমি নেব কেন, ছাত্রলীগ নেবে কেন? সরকার নেবে কেন? তবে আমাদের সবারই দায়িত্ব এদের বিচার করা। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা ভার্সিটিতে নারীর অবমাননার অনেক ঘটনাই ঘটেছে, হৈচৈ হয়েছে, পত্রিকায় হেডলাইন হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো অপরাধী শাস্তি পেয়েছে বলে শুনিনি!
আমাদের সমাজ কি ধর্ষকরা নিয়ন্ত্রণ করবে? না, তা করবে না, এই সমাজে লিটন নন্দীরাও আছে, ধন্যবাদ লিটন, তুমি আমাদের মান বাঁচিয়েছ! অনেকদিন আগেকার একটি ঘটনা মনে পড়ল। ২০০১-এর ন্যক্কারজনক সংখ্যালঘু নির্যাতনের পর নিউইয়র্কে এক প্রতিবাদ সভায় জগন্নাথ হলের আমাদের এক বন্ধু বিদ্যুৎ বেশ জোরালো ভাষায় বক্তৃতায় বলছিলেন, দাঁতের বদলে দাঁত, রক্তের বদলে রক্ত, ধর্ষণের বদলে ধর্ষণ, এ কথা বলে বিদ্যুৎ থামে এবং বলে, না, ওটা পারব না। পুরুষ ধর্ষণ করে না, ধর্ষকরা কাপুরুষ। টিএসসির ঘটনার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে আমি দেখেছি। দুর্ভাগা ওই নারীর উন্মুক্ত পৃষ্ঠদেশ আমাদের সভ্যতার মুখোশ খুলে দিয়েছে। ওই ছবি থেকে অন্তত এক ডজন অপরাধীকে ধরা পুলিশের পক্ষে মোটেই কষ্টকর নয়, অবশ্য পুলিশের যদি কোনো মান-মর্যাদা অবশিষ্ট থাকে! নেটে একজন আরিফুজ্জামান তুহিন লিখেছেন, ‘আসছে নববর্ষে নারী তুমি বহ্নিশিখা হও, দ্বিধাহীন কণ্ঠ উদগত কর, দেবী দুর্গার মতো দশ হাতে অসুর ধ্বংস কর’।
মেয়েরা তৈরি হোন আগামী দিনের জন্য। ধর্ষকদের শাস্তি কী তা আপনাদের অজানা নয়! ফেসবুকে একটি পোস্টিং-এ দেখলাম, দুই ধর্ষককে রাস্তায় বেঁধে রাখা হয়েছে আর নারীরা যাওয়ার সময় তাদের জুতা মেরে যাচ্ছে। ফেসবুকে আরো দেখলাম, কিছু ধর্মান্ধ চুরির জন্য চোরকে দায়ী না করে গৃহকর্তাকে দরজা খোলা রাখার জন্য দোষারোপ করছে। পশ্চিমা দেশে একটি পোস্টার বেশ জনপ্রিয়, তাহলো- ‘ডোন্ট ব্লেইম মি ফর মাই ড্রেস, কন্ট্রোল ইউওরসেল্ফ’। পহেলা বৈশাখে মেয়েরা শাড়ি পরবে না তো আলখেল্লা পরবে? অনেকে আবার উলঙ্গ চেতনার প্রতিরোধে ‘অধিকতর উলঙ্গ জঙ্গি সভ্যতার’ বিপ্লব আসার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। নারী জাগলে সবই ব্যর্থ হবে, নারীর দেবীশক্তি জাগ্রত হোক। ধরিত্রী নারীর অপমান বেশিদিন সহ্য করে না। লেখাটি শেষ করার ঠিক আগখান দিকে দুই সাহসী তরুণীর দুটি ছোট্ট প্রতিবাদী ভিডিও দেখলাম, স্বাগত জানাই ওদের। এরকম হাজারো ভিডিও হওয়া দরকার। জাগো নারী জাগো, তুমি জাগো। পুরুষরা তোমাদের পাশেই থাকবে।
নিউইয়ক

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

এ যুগের দ্রৌপদী কি বিচার পাবে?

প্রকাশের সময় : ০৮:৩১:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০১৫

শিতাংশু গুহ: দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ ছিল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অন্যতম উপাদান এবং ওই কাহিনী আমাদের জানা। বাংলা নতুন বছরে আবার আমরা দেখলাম ঢাকা ভার্সিটি চত্বরে আর এক তরুণীর বস্ত্রহরণ। প্রায় হাজার পাঁচেক বছর ব্যবধানে সেই একই ঘটনা, নারীর অবমাননা। দেশে দেশে যুগে যুগে নারী বারংবার লাঞ্ছিত হয়েছে, কখনো বিচার পেয়েছে, কখনো পায়নি। পুরুষই জোয়ান অব আর্ককে ডাইনি অপবাদ দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। আবার এই পুরুষ রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড এক নারীর জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেছেন। এক নারীকে উদ্ধারের নিমিত্ত ট্রয় নগরী ধ্বংসের কাহিনীও আমাদের অজানা নয়। কতোকগুলো কাপুরুষ এক নারীকে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করেছে; আর একজন পুরুষই নিজের জামা খুলে ওই নারীর লজ্জা নিবারণ করেছে। সদ্য নিউইয়র্কে মধ্যরাতে এক পানশালায় এক নারী ধর্ষিতা হয়েছে, চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে পুলিশ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছে এবং সম্ভবত বাকি জীবনটা তাকে জেলেই কাটাতে হবে। ঢাকায় সদ্য ঘটে যাওয়া এই ঘটনার বিচার কি অভাগিনী পাবে? সম্প্রতি দিল্লতে বাসে তরুণী ধর্ষণের বহুল প্রচারিত ঘটনা আমরা জানি। এও জানি ওই সব ধর্ষক এখন জেলে পচছে। আমাদের অবস্থানটা কী? এ যুগের দ্রৌপদী কি বিচার পাবে?
এ ঘটনার জন্য দায়ী কে? আমরা আবারো সবাই একে অন্যের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে আমাদের দায়িত্ব শেষ করব? একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, এর জন্য যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করে আইন মাফিক বিচার করলেই তো হয়। সমস্যাটা ওখানেই! অপরাধকে আমরা অপরাধ হিসেবে দেখি না, দেখি অপরাধটি করল কে, তার রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজি, ভিকটিমের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাই এবং তারপর ব্যবস্থা নিতে সচেষ্ট হই বা পিছপা হই। এ ঘটনার জন্য শুধু অভিযোগ করে চুপ থাকলে চলবে না। প্রত্যেক অপরাধীকে চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা কি তা কখনো করি? প্রায়শ আমরা বলে থাকি, সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নেই! আসলে কি তাই? ধর্ষকের কি কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক পরিচয় থাকা উচিত?
ভিডিওতে একটি লজ্জাবনত ‘টপলেস’ মেয়েকে দেখেও পুলিশ নাকি কোনো অপরাধ খুঁজে পাচ্ছে না! ব্রাভো পুলিশ। লজ্জাহীনতার জন্য আমাদের পুলিশকে মেডেল দেয়া উচিত। ঘটনাস্থলে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় জাতি লজ্জিত। পুলিশ কি মানুষ! এই সমাজের অংশ? লাঞ্ছিত মেয়েটি যদি পুলিশের বড় কর্তার মেয়ে হত তাহলে পুলিশ কী করত? যদি ওই অভাগিনী রাষ্ট্র ও সরকারের উচ্চপদাধিকারী কারো মেয়ে হত তাহলে কি পুলিশ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকত? উচিত নয়, তবু আমার কিন্তু ওই মেয়েটির পরিচয় জানতে ইচ্ছে করছে। কারণ মেয়েটি যদি হিন্দু হয়, তাহলে অপরাধীদের সাতখুন মাফ। নইলে ২০০১ সালের লজ্জাজনক ধর্ষণের বিচার আজো ধর্ষিতারা পায়নি কেন? এরশাদ যেমন বলেছেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, স্পিকার বা অন্য বড় একটি দলের নেত্রী সবাই মহিলা সেই দেশে নারীর অপমান নারী হয়ে এরা সহ্য করছেন কী করে? পূর্র্ণিমা আজো বিচার পায়নি কেন? একরাতে একইস্থানে ২০০ নারী ধর্ষিত হলেও আমাদের নারী নেত্রীদের টনক নড়ে না কেন?
এই ঘটনায় ছাত্রদল ছাত্রলীগকে ধর্ষকদের সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ছাত্রদল ২০০১-এর ঘটনা স্মরণ করুন, আপনারাও কম যান না! ধর্ষকের পরিচয় ধর্ষক, তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই, থাকা উচিত নয়। ঢাকা ভার্সিটির এ ঘটনার পরপরই দেখলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আদিবাসী মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। একইসাথে দেখলাম ওই সব লম্পট বহিষ্কৃত হয়েছে। ঘটনার এখানেই শেষ হওয়া উচিত নয়, আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। ঢাকা ভার্সিটিতে আগেও এ ধরনের নারী নির্যাতন ঘটেছে। হল থেকে ছাত্রী লাফ দিয়ে পড়ার ঘটনা আমরা জানি। সাধারণত যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের কর্মীরাই এসব ঘটনার নায়ক। সরকার এর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না! আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, আমিও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম; আমরাও বান্ধবীদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছি কিন্তু নারীর অমর্যাদা! ‘কাম অন, গিভ আস এ ব্রেক!’ এরা কারা? এদের দায়িত্ব আমি নেব কেন, ছাত্রলীগ নেবে কেন? সরকার নেবে কেন? তবে আমাদের সবারই দায়িত্ব এদের বিচার করা। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা ভার্সিটিতে নারীর অবমাননার অনেক ঘটনাই ঘটেছে, হৈচৈ হয়েছে, পত্রিকায় হেডলাইন হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো অপরাধী শাস্তি পেয়েছে বলে শুনিনি!
আমাদের সমাজ কি ধর্ষকরা নিয়ন্ত্রণ করবে? না, তা করবে না, এই সমাজে লিটন নন্দীরাও আছে, ধন্যবাদ লিটন, তুমি আমাদের মান বাঁচিয়েছ! অনেকদিন আগেকার একটি ঘটনা মনে পড়ল। ২০০১-এর ন্যক্কারজনক সংখ্যালঘু নির্যাতনের পর নিউইয়র্কে এক প্রতিবাদ সভায় জগন্নাথ হলের আমাদের এক বন্ধু বিদ্যুৎ বেশ জোরালো ভাষায় বক্তৃতায় বলছিলেন, দাঁতের বদলে দাঁত, রক্তের বদলে রক্ত, ধর্ষণের বদলে ধর্ষণ, এ কথা বলে বিদ্যুৎ থামে এবং বলে, না, ওটা পারব না। পুরুষ ধর্ষণ করে না, ধর্ষকরা কাপুরুষ। টিএসসির ঘটনার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে আমি দেখেছি। দুর্ভাগা ওই নারীর উন্মুক্ত পৃষ্ঠদেশ আমাদের সভ্যতার মুখোশ খুলে দিয়েছে। ওই ছবি থেকে অন্তত এক ডজন অপরাধীকে ধরা পুলিশের পক্ষে মোটেই কষ্টকর নয়, অবশ্য পুলিশের যদি কোনো মান-মর্যাদা অবশিষ্ট থাকে! নেটে একজন আরিফুজ্জামান তুহিন লিখেছেন, ‘আসছে নববর্ষে নারী তুমি বহ্নিশিখা হও, দ্বিধাহীন কণ্ঠ উদগত কর, দেবী দুর্গার মতো দশ হাতে অসুর ধ্বংস কর’।
মেয়েরা তৈরি হোন আগামী দিনের জন্য। ধর্ষকদের শাস্তি কী তা আপনাদের অজানা নয়! ফেসবুকে একটি পোস্টিং-এ দেখলাম, দুই ধর্ষককে রাস্তায় বেঁধে রাখা হয়েছে আর নারীরা যাওয়ার সময় তাদের জুতা মেরে যাচ্ছে। ফেসবুকে আরো দেখলাম, কিছু ধর্মান্ধ চুরির জন্য চোরকে দায়ী না করে গৃহকর্তাকে দরজা খোলা রাখার জন্য দোষারোপ করছে। পশ্চিমা দেশে একটি পোস্টার বেশ জনপ্রিয়, তাহলো- ‘ডোন্ট ব্লেইম মি ফর মাই ড্রেস, কন্ট্রোল ইউওরসেল্ফ’। পহেলা বৈশাখে মেয়েরা শাড়ি পরবে না তো আলখেল্লা পরবে? অনেকে আবার উলঙ্গ চেতনার প্রতিরোধে ‘অধিকতর উলঙ্গ জঙ্গি সভ্যতার’ বিপ্লব আসার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। নারী জাগলে সবই ব্যর্থ হবে, নারীর দেবীশক্তি জাগ্রত হোক। ধরিত্রী নারীর অপমান বেশিদিন সহ্য করে না। লেখাটি শেষ করার ঠিক আগখান দিকে দুই সাহসী তরুণীর দুটি ছোট্ট প্রতিবাদী ভিডিও দেখলাম, স্বাগত জানাই ওদের। এরকম হাজারো ভিডিও হওয়া দরকার। জাগো নারী জাগো, তুমি জাগো। পুরুষরা তোমাদের পাশেই থাকবে।
নিউইয়ক