নিউইয়র্ক ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হত্যার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা রোধ করা যাবে না : নিউইয়র্ক টাইমস

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৪২:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মার্চ ২০১৫
  • / ৫৭১ বার পঠিত

ঢাকা: লেখকদের সুরক্ষায় আরও অনেক কিছু করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। একই সঙ্গে একটি পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে যে, হত্যা করার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক মেরুকরণ এ সঙ্কটের নেপথ্যে অবদান রাখছে। গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক সম্পাদকীয় তে এ কথা বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়। এ নিয়ে ‘এ মার্ডার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়- এটা ছিল একের ভেতরে দুই-এর মতো। ২৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার ঢাকায় অভিজিৎ রায়তে কুপিয়ে হত্যার পর টুইটারে বাংলাদেশী জঙ্গিবাদী ইসলামী গ্রুপ আনসার বাংলা-৭ টুইটারে লিখেছিল- ‘টার্গেট ছিল এক আমেরিকান নাগরিক। একের ভেতর দুই।’ একের ভেতর দুই- কারণ, লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় ছিলেন একাধারে স্বীকৃত নাস্তিক ও আমেরিকান নাগরিক। ওই টুইটে আরও লেখা ছিল #রিভেঞ্জ + #পানিশমেন্ট (প্রতিশোধ ও শাস্তি)। জঙ্গিদের মনোভাব অনুযায়ী-ছুরি দিয়ে এক লেখকের মস্তিষ্কে আঘাত করা এমন এক মতপ্রকাশের শান্তি যা তারা পছন্দ করে না। এছাড়া আফগানিস্তান ও সিরিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকলাপের এক ধরনের অসুস্থ প্রতিশোধস্বরূপ হত্যা করা হয় এই মার্কিনীকে। ২০১৩ সালে ব্লগার রাজিব হায়দারকেও ঢাকার এক সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। অভিজিৎ রায়ের মতো রাজিব হায়দারও ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু সমর্থন করেছিলেন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের অনেকেই ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর সদস্য।
বাংলাদেশের আইন তেমন একটা সহায়তা করে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ধর্ম অবমাননার দায়ে দেশটির ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন জনকে গ্রেপ্তার ও বিচার করেছে। ওই আইনে ‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে কিংবা করতে পারে অথবা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে’ এমন তথ্য প্রচার করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক মেরুকরণ এ সঙ্কটে অবদান রাখছে। জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ ৯ দেশের কূটনীতিকরা মঙ্গলবার সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
এবার সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় শফিউর রহমান ফারাবি নামের এক সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। ওই হামলার কিছুক্ষণ পরই সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি পোস্ট করেছিলেন ফারাবি। এছাড়া এ ঘটনার তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার একটি প্রস্তাবও মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। অভিজিৎ রায় দৃশ্যত খুন হয়েছেন শুধু একজন আমেরিকান নাগরিক হওয়ার কারণে। গত বছর, ফারাবি ফেসবুকে একটি বার্তা পোস্ট করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অভিজিৎ রায় আমেরিকায় বাস করেন। সুতরাং এখন তাকে হত্যা করা সম্ভব নয়। যখন তিনি দেশে আসবেন, তখন তাকে হত্যা করা হবে। লেখকদের সুরক্ষায় আরও অনেক কিছু করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। একই সঙ্গে একটি পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে যে, হত্যা করার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করা যাবে না।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

হত্যার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা রোধ করা যাবে না : নিউইয়র্ক টাইমস

প্রকাশের সময় : ০৮:৪২:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মার্চ ২০১৫

ঢাকা: লেখকদের সুরক্ষায় আরও অনেক কিছু করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। একই সঙ্গে একটি পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে যে, হত্যা করার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক মেরুকরণ এ সঙ্কটের নেপথ্যে অবদান রাখছে। গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক সম্পাদকীয় তে এ কথা বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়। এ নিয়ে ‘এ মার্ডার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়- এটা ছিল একের ভেতরে দুই-এর মতো। ২৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার ঢাকায় অভিজিৎ রায়তে কুপিয়ে হত্যার পর টুইটারে বাংলাদেশী জঙ্গিবাদী ইসলামী গ্রুপ আনসার বাংলা-৭ টুইটারে লিখেছিল- ‘টার্গেট ছিল এক আমেরিকান নাগরিক। একের ভেতর দুই।’ একের ভেতর দুই- কারণ, লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় ছিলেন একাধারে স্বীকৃত নাস্তিক ও আমেরিকান নাগরিক। ওই টুইটে আরও লেখা ছিল #রিভেঞ্জ + #পানিশমেন্ট (প্রতিশোধ ও শাস্তি)। জঙ্গিদের মনোভাব অনুযায়ী-ছুরি দিয়ে এক লেখকের মস্তিষ্কে আঘাত করা এমন এক মতপ্রকাশের শান্তি যা তারা পছন্দ করে না। এছাড়া আফগানিস্তান ও সিরিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকলাপের এক ধরনের অসুস্থ প্রতিশোধস্বরূপ হত্যা করা হয় এই মার্কিনীকে। ২০১৩ সালে ব্লগার রাজিব হায়দারকেও ঢাকার এক সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। অভিজিৎ রায়ের মতো রাজিব হায়দারও ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু সমর্থন করেছিলেন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের অনেকেই ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর সদস্য।
বাংলাদেশের আইন তেমন একটা সহায়তা করে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ধর্ম অবমাননার দায়ে দেশটির ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন জনকে গ্রেপ্তার ও বিচার করেছে। ওই আইনে ‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে কিংবা করতে পারে অথবা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে’ এমন তথ্য প্রচার করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক মেরুকরণ এ সঙ্কটে অবদান রাখছে। জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ ৯ দেশের কূটনীতিকরা মঙ্গলবার সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
এবার সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় শফিউর রহমান ফারাবি নামের এক সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। ওই হামলার কিছুক্ষণ পরই সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি পোস্ট করেছিলেন ফারাবি। এছাড়া এ ঘটনার তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার একটি প্রস্তাবও মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। অভিজিৎ রায় দৃশ্যত খুন হয়েছেন শুধু একজন আমেরিকান নাগরিক হওয়ার কারণে। গত বছর, ফারাবি ফেসবুকে একটি বার্তা পোস্ট করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অভিজিৎ রায় আমেরিকায় বাস করেন। সুতরাং এখন তাকে হত্যা করা সম্ভব নয়। যখন তিনি দেশে আসবেন, তখন তাকে হত্যা করা হবে। লেখকদের সুরক্ষায় আরও অনেক কিছু করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। একই সঙ্গে একটি পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে যে, হত্যা করার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করা যাবে না।