নিউইয়র্ক ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সাংবাদিক কন্যার হাত পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:১৩:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৫
  • / ৭৭৮ বার পঠিত

ঢাকা: রহস্যজনক মৃত্যু। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ পড়ে আছে মেঝের উপর। রাজধানীর রামপুরার একটি বাসা থেকে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আখতার-উল-আলমের মেয়ে ফাহমিদা আক্তার নিপুণ-এর লাশ এ অবস্থায়ই উদ্ধার করে পুলিশ। রামপুরা মহানগর প্রকল্পের একটি বাড়ির পঞ্চম তলার ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি। তাকে ২৯ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার যে কোন সময় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। কারা-কেন তাকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক রেজোয়ান-উল-আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
এ ঘটনায় বাসার গৃহপরিচারিকা ও ওই বাড়ির প্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। গৃহপরিচারিকা সাবিহা আক্তার জানান, গত ৩০ জানুয়ারী শুক্রবার সকাল ৯টায় বাসার কলিংবেল চাপ দেন তিনি। কয়েক বার কলিংবেল চাপার পর ভেতর থেকে দরজা খুলে না দিলে ফাহমিদার মোবাইল ফোনে প্রতিবেশীর নম্বর থেকে কল দিলেও তা রিসিভ করেননি তিনি। পরে বাড়ির প্রহরী আবদুর রবকে ডেনে আনেন সাবিহা। আবদুর রব জোরে দরজায় ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়। এ সময় ভেতরে মেজেতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফাহমিদার লাশ দেখে তারা চিৎকার করেন। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে যায়। ফাহমিদার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ফোনে তাদের খবর দিলে উত্তরা থেকে ফাহমিদার ভাই রেজোয়ান-উল-আলমসহ তারা ছুটে যান ওই বাসায়। এ সময় ফাহমিদার হাতে-পায়ে ও গলায় কাপড় প্যাঁচানো অবস্থায় দেখতে পান।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বাসার কাপড়চোপড় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। আলামত সংরক্ষণ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। স্বজন ছাড়া কাউকে বাসার ভেতরে ঢুকতে দেননি নিহতের ভাই রেজোয়ান-উল-আলম। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে জানান কেন, কারা তার বোনকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে তিনি কোন ধারণা করতে পারছেন না। এমনকি বৃহস্পতিবার ওই বাসায় কেউ এসেছিল কি-না তাও জানাতে পারেননি তিনি। তিনি জানান, তিন কক্ষের ওই বাসায় ফাহমিদা ছাড়া আর কেউ থাকতেন না। ফাহমিদা আক্তারের স্বামী ও একমাত্র সন্তান দেশের বাইরে থাকেন।
জানা গেছে, প্রায় চার বছর ধরে রামপুরার ওই বাসায় থাকেন ফাহমিদা আক্তার। তিনি একজন আইনজীবী হলেও আদালতে নিয়মতি যেতেন না। তবে আইনজীবী হওয়ার সুবাধে আত্মীয় ছাড়াও ফাহমিদার পরিচিতদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে তার বাসায় যেতেন। কিন্তু তাদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। স্বামী ও সন্তান দেশের বাইরে থাকায় দীর্ঘদিন থেকেই বাসায় একা থাকছিলেন তিনি। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া গত কয়েক মাসে তাকে বাইরে যেতে দেখেননি আশপাশের লোকজন। বাসার প্রহরী আবদুর রব জানান, তিন মাস আগে তিনি ওই বাড়ির প্রহরীর দায়িত্ব নেন। এই তিন মাসে মাত্র একবার ফাহমিদা আক্তারকে বাসার বাইরে যেতে দেখেছেন তিনি। নিজের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা তিনি গৃহপরিচারিকা সাবিহাকে দিয়ে করাতেন। সাবিহা প্রায় তিন বছর ধরে ফাহমিদা আক্তারের বাসায় কাজ করছিলেন।
ফাহমিদার চাচাতো ভাই ফাহাদ জানান, তাদের জানামতে ফাহমিদার কোন শত্রু নেই। এছাড়া ওই ঘটনার পর বাসা থেকে কোন জিনিস খোয়া যায়নি বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
এ অবস্থায় কেন, কারা ফাহমিদা আক্তারকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে পুলিশও নিশ্চিত হতে পারেনি। এ বিষয়ে খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) নূর আলম বলেন, কেন এবং কারা তাকে হত্যা করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আলামত দেখে মনে হয়েছে এটি ডাকাতির কোন ঘটনা না। এজন্য নিহতের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গৃহপরিচারিকা সাবিহা আক্তার ও বাড়ির প্রহরী আবদুর রবকে আটক করেছে পুলিশ। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান তরফদার জানান, ফাহমিদা আক্তারের লাশ মেঝের উপর উপুড় হয়ে পড়েছিল। গলায় মাফলার প্যাঁচানো ছিল, তার হাত-পা ছিল বাঁধা। এ বিষয়ে গৃহপরিচারিকা ও প্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ফাহমিদার স্বামী গোলাম রব্বানী হেলাল বাহরাইনের মানামায় নেক্সাস নামে একটি আর্থিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। গোলাম রব্বানী ও ফাহমিদা দম্পতির একমাত্র সন্তান সিরাতুল মোস্তাকিম ‘ও’ লেভেল শেষ করে আমেরিকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার বন্দরকান্দি গ্রামে। ফাহমিদা আক্তারের পিতা প্রয়াত আখতার-উল-আলম আশির দশকের শেষ দিকে ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯১ সাল থেকে দুই বছর ব্রনাইয়ের রাষ্ট্রদূতেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। (দৈনিক মানবজমিন)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

সাংবাদিক কন্যার হাত পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

প্রকাশের সময় : ০৯:১৩:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৫

ঢাকা: রহস্যজনক মৃত্যু। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ পড়ে আছে মেঝের উপর। রাজধানীর রামপুরার একটি বাসা থেকে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আখতার-উল-আলমের মেয়ে ফাহমিদা আক্তার নিপুণ-এর লাশ এ অবস্থায়ই উদ্ধার করে পুলিশ। রামপুরা মহানগর প্রকল্পের একটি বাড়ির পঞ্চম তলার ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি। তাকে ২৯ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার যে কোন সময় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। কারা-কেন তাকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক রেজোয়ান-উল-আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
এ ঘটনায় বাসার গৃহপরিচারিকা ও ওই বাড়ির প্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। গৃহপরিচারিকা সাবিহা আক্তার জানান, গত ৩০ জানুয়ারী শুক্রবার সকাল ৯টায় বাসার কলিংবেল চাপ দেন তিনি। কয়েক বার কলিংবেল চাপার পর ভেতর থেকে দরজা খুলে না দিলে ফাহমিদার মোবাইল ফোনে প্রতিবেশীর নম্বর থেকে কল দিলেও তা রিসিভ করেননি তিনি। পরে বাড়ির প্রহরী আবদুর রবকে ডেনে আনেন সাবিহা। আবদুর রব জোরে দরজায় ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়। এ সময় ভেতরে মেজেতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফাহমিদার লাশ দেখে তারা চিৎকার করেন। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে যায়। ফাহমিদার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ফোনে তাদের খবর দিলে উত্তরা থেকে ফাহমিদার ভাই রেজোয়ান-উল-আলমসহ তারা ছুটে যান ওই বাসায়। এ সময় ফাহমিদার হাতে-পায়ে ও গলায় কাপড় প্যাঁচানো অবস্থায় দেখতে পান।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বাসার কাপড়চোপড় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। আলামত সংরক্ষণ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। স্বজন ছাড়া কাউকে বাসার ভেতরে ঢুকতে দেননি নিহতের ভাই রেজোয়ান-উল-আলম। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে জানান কেন, কারা তার বোনকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে তিনি কোন ধারণা করতে পারছেন না। এমনকি বৃহস্পতিবার ওই বাসায় কেউ এসেছিল কি-না তাও জানাতে পারেননি তিনি। তিনি জানান, তিন কক্ষের ওই বাসায় ফাহমিদা ছাড়া আর কেউ থাকতেন না। ফাহমিদা আক্তারের স্বামী ও একমাত্র সন্তান দেশের বাইরে থাকেন।
জানা গেছে, প্রায় চার বছর ধরে রামপুরার ওই বাসায় থাকেন ফাহমিদা আক্তার। তিনি একজন আইনজীবী হলেও আদালতে নিয়মতি যেতেন না। তবে আইনজীবী হওয়ার সুবাধে আত্মীয় ছাড়াও ফাহমিদার পরিচিতদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে তার বাসায় যেতেন। কিন্তু তাদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। স্বামী ও সন্তান দেশের বাইরে থাকায় দীর্ঘদিন থেকেই বাসায় একা থাকছিলেন তিনি। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া গত কয়েক মাসে তাকে বাইরে যেতে দেখেননি আশপাশের লোকজন। বাসার প্রহরী আবদুর রব জানান, তিন মাস আগে তিনি ওই বাড়ির প্রহরীর দায়িত্ব নেন। এই তিন মাসে মাত্র একবার ফাহমিদা আক্তারকে বাসার বাইরে যেতে দেখেছেন তিনি। নিজের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা তিনি গৃহপরিচারিকা সাবিহাকে দিয়ে করাতেন। সাবিহা প্রায় তিন বছর ধরে ফাহমিদা আক্তারের বাসায় কাজ করছিলেন।
ফাহমিদার চাচাতো ভাই ফাহাদ জানান, তাদের জানামতে ফাহমিদার কোন শত্রু নেই। এছাড়া ওই ঘটনার পর বাসা থেকে কোন জিনিস খোয়া যায়নি বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
এ অবস্থায় কেন, কারা ফাহমিদা আক্তারকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে পুলিশও নিশ্চিত হতে পারেনি। এ বিষয়ে খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) নূর আলম বলেন, কেন এবং কারা তাকে হত্যা করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আলামত দেখে মনে হয়েছে এটি ডাকাতির কোন ঘটনা না। এজন্য নিহতের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গৃহপরিচারিকা সাবিহা আক্তার ও বাড়ির প্রহরী আবদুর রবকে আটক করেছে পুলিশ। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান তরফদার জানান, ফাহমিদা আক্তারের লাশ মেঝের উপর উপুড় হয়ে পড়েছিল। গলায় মাফলার প্যাঁচানো ছিল, তার হাত-পা ছিল বাঁধা। এ বিষয়ে গৃহপরিচারিকা ও প্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ফাহমিদার স্বামী গোলাম রব্বানী হেলাল বাহরাইনের মানামায় নেক্সাস নামে একটি আর্থিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। গোলাম রব্বানী ও ফাহমিদা দম্পতির একমাত্র সন্তান সিরাতুল মোস্তাকিম ‘ও’ লেভেল শেষ করে আমেরিকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার বন্দরকান্দি গ্রামে। ফাহমিদা আক্তারের পিতা প্রয়াত আখতার-উল-আলম আশির দশকের শেষ দিকে ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯১ সাল থেকে দুই বছর ব্রনাইয়ের রাষ্ট্রদূতেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। (দৈনিক মানবজমিন)