নিউইয়র্ক ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মিডিয়া প্রভাব ফেলে বিচারে: দিল্লির হাইকোর্ট

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:০০:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মার্চ ২০১৫
  • / ৪২৫ বার পঠিত

নয়াদিল্লি: সংবাদমাধ্যম কোনও অপরাধ বিশ্লেষণের দায়িত্ব নিলে বিচারপতিরাও প্রভাবিত হন। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’ তথ্যচিত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার মামলায় এমনই মন্তব্য করলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি বি ডি আহমেদ ও বিচারপতি সঞ্জীব সচদেব। তাঁদের যুক্তি, তথ্যচিত্রটি দেখানো হলে তা নির্ভয়ার ধর্ষকদের বিচার ও শাস্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এখন নিষেধাজ্ঞা তোলা উচিত নয়। এ দিন কোনও অন্তবর্তী নির্দেশও জারি করেননি তাঁরা।
ব্রিটিশ পরিচালক লেসলি উডউইনের তৈরি ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’ তথ্যচিত্র কিছু দিন ধরেই শিরোনামে। সেখানে নির্ভয়া-কান্ডে অন্যতম দোষী মুকেশ সিংহের সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ আলোড়ন ফেলে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিতর্ক শুরু হয় দেশ জুড়ে। তথ্যচিত্রটির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল বিশেষ আদালত। বিভিন্ন চ্যানেলকে এই মর্মে নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকও। কিন্তু এতে ‘বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ খর্ব হয়েছে বলে হাইকোর্টে আর্জি জানান তিন আইন-পড়ুয়া। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এ দিনের মন্তব্য।
কী বলেছে দিল্লি হাইকোর্ট? বিচারপতিদের ব্যাখ্যা, এমনিতে ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচারের বিরোধী নন তাঁরা। তবে সুপ্রিম কোর্ট নির্ভয়ার দোষীদের শাস্তি ঘোষণা করার আগে ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’-এর সম্প্রচার হওয়া অনুচিত। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, “মিডিয়ার বিচার বিচারপতিদেরও প্রভাবিত করে। অবচেতনে কোথাও চাপ তৈরি করে। তার জেরে অভিযুক্ত ও দোষীদের বিচারও পপ্রভাবিত হয়।” মুকেশকে নিয়ে বিচারপতিদের মত, “ওর অনুশোচনা হয়েছে, কি হয়নি, সেটা শাস্তি দেওয়ার সময় ভাবা হবে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের জন্য কেন অপেক্ষা করা হবে না?”
অন্তর্বর্তী নির্দেশও জারি করেনি হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এই বিষয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। মিডিয়াকেও তোপ দাগে দিল্লি হাইকোর্ট। বিচারপতিরা জানান, আগে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে খবর করার ব্যাপারে স্ব-আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলত মিডিয়া। এখন নিজেদেরই সেই নিয়ম ভুলেছে তারা। তার জেরে প্রভাবিত হচ্ছে বিচার। হাইকোর্টের বয়ানে, “বিচারপতিরা তো ভিন্ন গ্রহের প্রাণী নন। মিডিয়ার আবেগপ্রবণ শুনানি তাঁদেরও প্রভাবিত করে।”
দিন কয়েক আগে ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’-এর পরিচালিকা বলেছিলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা বেশি দিন থাকতে পারে না।” দিল্লি হাইকোর্টের আজকের পর্যবেক্ষণের পর তাঁর সে বিশ্বাসে ধাক্কা লেগেছে কি না, জানা নেই। শুধু এটুকু জানা যে কোনও ভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যুক্তিগুলো মানবেন না উডউইন। এক সময় বলা হচ্ছিল, নিছক আর্থিক লাভের কথা মাথায় রেখে তথ্যচিত্রটি বানান তিনি। এ দিন জবাবে তিনি বলেন, “ধর্ষণ বিষয়টা আমাকে ভাবায়। ছবিটার জন্য বিরাট ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে।” বিষয়টিতে নিজের দেশের সরকারের যে আহামরি সমর্থন পাচ্ছেন লেসলি, তা নয়। বরং ব্রিটেন জানায়, তথ্যচিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিতর্কের বিষয়টি ছবির নির্মাতা ও সম্প্রচারকের ‘ব্যক্তিগত।’ ব্রিটিশ সরকার কোনও ভাবেই সেই বিতর্কের অংশ নয়, জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড।
জবাবি তথ্যচিত্র: ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’ তথ্যচিত্রের জবাব দিতে ‘ব্রিটেনস ডটার’ নামে একটি পাল্টা তথ্যচিত্র বানিয়েছেন হরবিন্দ্র সিংহ নামে এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, ভারত ধর্ষকদের দেশ নয়। যে কোনও দেশে, যে কোনও সময়ে ধর্ষণের ঘটনা এবং তাতে অভিযুক্তদের মানসিকতায় বিশেষ তফাত নেই। ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’ তথ্যচিত্রে যে ভাবে মূল অভিযুক্ত মুকেশ দাবি করেছে, মহিলারাই ধর্ষণের জন্য দায়ী, একই ভাবে হরবিন্দ্রের ছবিটিতে দেখানো হয়েছে, ব্রিটেনবাসীদের এক তৃতীয়াংশই মনে করেন, ধর্ষণের জন্য মহিলারাও সমান দায়ী। ব্রিটেনে ধর্ষণের অপরাধীদের মধ্যে দশ শতাংশের বেশি শাস্তিও পায় না। (দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

মিডিয়া প্রভাব ফেলে বিচারে: দিল্লির হাইকোর্ট

প্রকাশের সময় : ১২:০০:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মার্চ ২০১৫

নয়াদিল্লি: সংবাদমাধ্যম কোনও অপরাধ বিশ্লেষণের দায়িত্ব নিলে বিচারপতিরাও প্রভাবিত হন। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’ তথ্যচিত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার মামলায় এমনই মন্তব্য করলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি বি ডি আহমেদ ও বিচারপতি সঞ্জীব সচদেব। তাঁদের যুক্তি, তথ্যচিত্রটি দেখানো হলে তা নির্ভয়ার ধর্ষকদের বিচার ও শাস্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এখন নিষেধাজ্ঞা তোলা উচিত নয়। এ দিন কোনও অন্তবর্তী নির্দেশও জারি করেননি তাঁরা।
ব্রিটিশ পরিচালক লেসলি উডউইনের তৈরি ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’ তথ্যচিত্র কিছু দিন ধরেই শিরোনামে। সেখানে নির্ভয়া-কান্ডে অন্যতম দোষী মুকেশ সিংহের সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ আলোড়ন ফেলে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিতর্ক শুরু হয় দেশ জুড়ে। তথ্যচিত্রটির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল বিশেষ আদালত। বিভিন্ন চ্যানেলকে এই মর্মে নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকও। কিন্তু এতে ‘বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ খর্ব হয়েছে বলে হাইকোর্টে আর্জি জানান তিন আইন-পড়ুয়া। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এ দিনের মন্তব্য।
কী বলেছে দিল্লি হাইকোর্ট? বিচারপতিদের ব্যাখ্যা, এমনিতে ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচারের বিরোধী নন তাঁরা। তবে সুপ্রিম কোর্ট নির্ভয়ার দোষীদের শাস্তি ঘোষণা করার আগে ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’-এর সম্প্রচার হওয়া অনুচিত। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, “মিডিয়ার বিচার বিচারপতিদেরও প্রভাবিত করে। অবচেতনে কোথাও চাপ তৈরি করে। তার জেরে অভিযুক্ত ও দোষীদের বিচারও পপ্রভাবিত হয়।” মুকেশকে নিয়ে বিচারপতিদের মত, “ওর অনুশোচনা হয়েছে, কি হয়নি, সেটা শাস্তি দেওয়ার সময় ভাবা হবে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের জন্য কেন অপেক্ষা করা হবে না?”
অন্তর্বর্তী নির্দেশও জারি করেনি হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এই বিষয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। মিডিয়াকেও তোপ দাগে দিল্লি হাইকোর্ট। বিচারপতিরা জানান, আগে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে খবর করার ব্যাপারে স্ব-আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলত মিডিয়া। এখন নিজেদেরই সেই নিয়ম ভুলেছে তারা। তার জেরে প্রভাবিত হচ্ছে বিচার। হাইকোর্টের বয়ানে, “বিচারপতিরা তো ভিন্ন গ্রহের প্রাণী নন। মিডিয়ার আবেগপ্রবণ শুনানি তাঁদেরও প্রভাবিত করে।”
দিন কয়েক আগে ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’-এর পরিচালিকা বলেছিলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা বেশি দিন থাকতে পারে না।” দিল্লি হাইকোর্টের আজকের পর্যবেক্ষণের পর তাঁর সে বিশ্বাসে ধাক্কা লেগেছে কি না, জানা নেই। শুধু এটুকু জানা যে কোনও ভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যুক্তিগুলো মানবেন না উডউইন। এক সময় বলা হচ্ছিল, নিছক আর্থিক লাভের কথা মাথায় রেখে তথ্যচিত্রটি বানান তিনি। এ দিন জবাবে তিনি বলেন, “ধর্ষণ বিষয়টা আমাকে ভাবায়। ছবিটার জন্য বিরাট ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে।” বিষয়টিতে নিজের দেশের সরকারের যে আহামরি সমর্থন পাচ্ছেন লেসলি, তা নয়। বরং ব্রিটেন জানায়, তথ্যচিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিতর্কের বিষয়টি ছবির নির্মাতা ও সম্প্রচারকের ‘ব্যক্তিগত।’ ব্রিটিশ সরকার কোনও ভাবেই সেই বিতর্কের অংশ নয়, জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড।
জবাবি তথ্যচিত্র: ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’ তথ্যচিত্রের জবাব দিতে ‘ব্রিটেনস ডটার’ নামে একটি পাল্টা তথ্যচিত্র বানিয়েছেন হরবিন্দ্র সিংহ নামে এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, ভারত ধর্ষকদের দেশ নয়। যে কোনও দেশে, যে কোনও সময়ে ধর্ষণের ঘটনা এবং তাতে অভিযুক্তদের মানসিকতায় বিশেষ তফাত নেই। ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’ তথ্যচিত্রে যে ভাবে মূল অভিযুক্ত মুকেশ দাবি করেছে, মহিলারাই ধর্ষণের জন্য দায়ী, একই ভাবে হরবিন্দ্রের ছবিটিতে দেখানো হয়েছে, ব্রিটেনবাসীদের এক তৃতীয়াংশই মনে করেন, ধর্ষণের জন্য মহিলারাও সমান দায়ী। ব্রিটেনে ধর্ষণের অপরাধীদের মধ্যে দশ শতাংশের বেশি শাস্তিও পায় না। (দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা)