নিউইয়র্ক ১১:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা আর নেই

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:১০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
  • / ৭২০ বার পঠিত

লন্ডন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনীতিক আমিনুল হক বাদশা (৭০) ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ৯ ফেব্রুয়ারী সোমবার লন্ডন স্থানীয় সময়ে রাত সাড়ে ১১ টায় কেন্টের অরপিংটন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নœাল্লিাহি……..রাজেউন)। লন্ডনে বাংলাদেশী কমিউনিটির কাছে তিনি ছিলেন ‘বাদশা ভাই’ নামে পরিচিত। সকলের কাছেই তিনি ছিলেন একজন প্রিয় মানুষ।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তারা সকলে লন্ডনের বাসিন্দা। তিনি বেশ কিছু দিন যাবত বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শয্যাসায়ী ছিলেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, লন্ডন প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, লন্ডন থেকে প্রাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মাদ বেলাল আহমেদ, সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ এমাদুল হক আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক পৃথক বিবৃতিতে সাংবাদিক আমিনুল হক বাদশার ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
আমিনুল হক বাদশা ১৯৪৪ সালের ২৪ অক্টোবর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খন্দকার লুতফুল ও মা সকিনা বেগমের ১০ সন্তানের মধ্যে বাদশা ছিলেন দ্বিতীয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের সাধারণ সম্পাদক বাদশা সামরিক শাসক আইয়ুববিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন সময় কারাভোগ করেন।
প্রাক-মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য আমিনুল হক বাদশা ছাত্রবন্দী হিসেবে কারাগারে থেকে স্নাতক পাস করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুজিবনগরে বাংলাদেশ মিশনের বহিঃপ্রচার বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সংবাদ পাঠক আমিনুল হক বাদশা বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-বিএলএফের সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আমিনুল হক বাদশা বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব নিযুক্ত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে সামরিক শাসনের কারণে তিনি লন্ডনে চলে যেতে বাধ্য হন। আমিনুল হক বাদশা ঢাকার ডেইলি ইন্ডিপেনডেন্ট, এটিএন বাংলা (ইউকে), লন্ডনের দৈনিক নতুন দিন, কলকাতার দৈনিক আজকাল পত্রিকায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
বাদশা’র শেষ যাত্রায় কাঁদলো লন্ডনের আকাশ!
এদিকে লন্ডন থেকে আ স ম মাসুম জানান: লন্ডনের আকাশে সকাল থেকে সুন্দর রোদ থাকলেও জুম্মার নামাজের আগে ঝমঝমিয়ে নামলো বৃষ্টি। এযেনো প্রকৃতি একান্ত হলো আমিনুল হক বাদশা এর শেষ যাত্রার সাথে। লন্ডনে শত শত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শেষ বিদায় নিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, বঙ্গবন্ধুর সহকারী প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা। প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী সবাই বলেছেন, ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন আমিনুল হক বাদশা। তার প্রয়ানের সাথে সাথে মৃত্যু ঘটলো ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশের।
১৫ ফেব্রুয়ারী রোববার তার মরদেহ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ১৩ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার জুম্মাহ নামাজের পর লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে আমিনুল হক বাদশা এর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রবাসের প্রগতিশীল মানুষের এক ভড়সাস্থল ছিলেন তিনি। বন্ধুপ্রতীম, সদা হাস্বোজ্জ্বল এই মানুষটির সাথে যাদো স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাদের কন্ঠে তাই ঝরে পড়লো বেদনার কথা।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, আমিনুল হক বাদশা একটি ইতিহাসের নাম। আজকে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশের শেষ যাত্রা হলো।
কবি শাহ শামীম এবং গল্পকার সাঈম চৌধুরী বলেন, প্রগতিশীল মানুষের ছায়াস্থল ছিলেন আমাদের বাদশা ভাই।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃদুল কান্তি দাশ বলেন, বাদশা ভাইয়ের মতো হাস্বোজ্জ্বল একজন মানুষ চলে যাওয়া মানে প্রগতিশীল মানুষের অভিভাবক চলে যাওয়া।
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি নবাব উদ্দিন বলেন, আমিনুল হক বাদশা বিলেতের সাংবাদিকদের বড়ভাই ছিলেন। তার মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে।
লন্ডনের সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ সবার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল হয়ে থাকবে আমিনুল হক বাদশার নাম। (দৈনিক ইত্তেফাক/বাংলাদেশ প্রতিদিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা আর নেই

প্রকাশের সময় : ০৩:১০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

লন্ডন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনীতিক আমিনুল হক বাদশা (৭০) ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ৯ ফেব্রুয়ারী সোমবার লন্ডন স্থানীয় সময়ে রাত সাড়ে ১১ টায় কেন্টের অরপিংটন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নœাল্লিাহি……..রাজেউন)। লন্ডনে বাংলাদেশী কমিউনিটির কাছে তিনি ছিলেন ‘বাদশা ভাই’ নামে পরিচিত। সকলের কাছেই তিনি ছিলেন একজন প্রিয় মানুষ।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তারা সকলে লন্ডনের বাসিন্দা। তিনি বেশ কিছু দিন যাবত বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শয্যাসায়ী ছিলেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, লন্ডন প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, লন্ডন থেকে প্রাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মাদ বেলাল আহমেদ, সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ এমাদুল হক আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক পৃথক বিবৃতিতে সাংবাদিক আমিনুল হক বাদশার ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
আমিনুল হক বাদশা ১৯৪৪ সালের ২৪ অক্টোবর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খন্দকার লুতফুল ও মা সকিনা বেগমের ১০ সন্তানের মধ্যে বাদশা ছিলেন দ্বিতীয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের সাধারণ সম্পাদক বাদশা সামরিক শাসক আইয়ুববিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন সময় কারাভোগ করেন।
প্রাক-মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য আমিনুল হক বাদশা ছাত্রবন্দী হিসেবে কারাগারে থেকে স্নাতক পাস করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুজিবনগরে বাংলাদেশ মিশনের বহিঃপ্রচার বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সংবাদ পাঠক আমিনুল হক বাদশা বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-বিএলএফের সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আমিনুল হক বাদশা বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব নিযুক্ত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে সামরিক শাসনের কারণে তিনি লন্ডনে চলে যেতে বাধ্য হন। আমিনুল হক বাদশা ঢাকার ডেইলি ইন্ডিপেনডেন্ট, এটিএন বাংলা (ইউকে), লন্ডনের দৈনিক নতুন দিন, কলকাতার দৈনিক আজকাল পত্রিকায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
বাদশা’র শেষ যাত্রায় কাঁদলো লন্ডনের আকাশ!
এদিকে লন্ডন থেকে আ স ম মাসুম জানান: লন্ডনের আকাশে সকাল থেকে সুন্দর রোদ থাকলেও জুম্মার নামাজের আগে ঝমঝমিয়ে নামলো বৃষ্টি। এযেনো প্রকৃতি একান্ত হলো আমিনুল হক বাদশা এর শেষ যাত্রার সাথে। লন্ডনে শত শত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শেষ বিদায় নিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, বঙ্গবন্ধুর সহকারী প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা। প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী সবাই বলেছেন, ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন আমিনুল হক বাদশা। তার প্রয়ানের সাথে সাথে মৃত্যু ঘটলো ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশের।
১৫ ফেব্রুয়ারী রোববার তার মরদেহ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ১৩ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার জুম্মাহ নামাজের পর লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে আমিনুল হক বাদশা এর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রবাসের প্রগতিশীল মানুষের এক ভড়সাস্থল ছিলেন তিনি। বন্ধুপ্রতীম, সদা হাস্বোজ্জ্বল এই মানুষটির সাথে যাদো স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাদের কন্ঠে তাই ঝরে পড়লো বেদনার কথা।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, আমিনুল হক বাদশা একটি ইতিহাসের নাম। আজকে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশের শেষ যাত্রা হলো।
কবি শাহ শামীম এবং গল্পকার সাঈম চৌধুরী বলেন, প্রগতিশীল মানুষের ছায়াস্থল ছিলেন আমাদের বাদশা ভাই।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃদুল কান্তি দাশ বলেন, বাদশা ভাইয়ের মতো হাস্বোজ্জ্বল একজন মানুষ চলে যাওয়া মানে প্রগতিশীল মানুষের অভিভাবক চলে যাওয়া।
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি নবাব উদ্দিন বলেন, আমিনুল হক বাদশা বিলেতের সাংবাদিকদের বড়ভাই ছিলেন। তার মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে।
লন্ডনের সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ সবার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল হয়ে থাকবে আমিনুল হক বাদশার নাম। (দৈনিক ইত্তেফাক/বাংলাদেশ প্রতিদিন)