পাঠক-শ্রোতারাই মিডিয়ার প্রাণ ॥ লন্ডন-নিউইয়র্ক’র মধ্যে সেতু বন্ধনের উপর গুরুত্বারোপ
- প্রকাশের সময় : ০১:৫৬:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
- / ৯৯৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বৃটিশ-বাংলাদেশী সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সম্মানে টাইম টিভি ও বাংলা পত্রিকা’র মতবিনিময় সভায় লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশী সম্পাদকগণ বলেছেন প্রিন্ট মিডিয়ার প্রাণ হচ্ছেন পাঠক আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রাণ হচ্ছেন তার দর্শক-শ্রোতা। যে মিডিয়া তার পরিবেশনার মাধ্যমে পাঠক আর দর্শক-শ্রোতার মন জয় করতে পারবে সেই মিডিয়াই টিকে থাকবে। এক্ষেত্রে তারা লন্ডন থেকে প্রকাশিত বৃটেনে বহুল প্রচারিত ও প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিক ‘জনমত’ পত্রিকার উদারণ তুলে ধরে বলেন, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জনমত প্রতি সপ্তাহে একটানা প্রকাশিত হয়ে আজ ৪৮ বছওে পদার্পণ করেছে। আর মাত্র দুই বছর পর জনমত পঞ্চাশ বছওে পদার্পণ করবে। বাংলাদেশের বাইরে বহিবির্শ্বে ‘জনমত’ই একমাত্র বাংলা ভাষার পত্রিকা যার এই গৌরবের মূল শক্তি হচ্ছে তার পাঠক। সম্পাদকবৃন্দ বলেন, বৃটেনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভত চতুর্থ প্রজন্ম সকল স্তরে সাফল্যেও সাথে অবস্থান করার পরও পাঠকদের মন জয় করে জনমত ঠিকে রয়েছে। তারা বলেন, জনমত ছাড়াও লন্ডনের বাংলা ভাষার পত্রিকাগুলো বৃটেনের মূলধারায় প্রভাব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বিগত নির্বাচরে আমরা তিনজন বৃটিশ-বাংলাদেশীকে এমপি নির্বাচিত করা সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জনপ্রিতিনিধি নির্বাচিত করতে পারছি। সভায় বক্তারা লন্ডন-নিউইয়র্ক-এর মধ্যে সেতু বন্ধনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন এক্ষেত্রে উভয় শহরের বাংলা মিডিয়া আর সাংবাদিকরা যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে।
সিটির এস্টোরিয়াস্থ টাইম টিভি ও সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র বার্তা কক্ষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় লন্ডন ও নিউইয়র্কের সম্পাদক-সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। লন্ডন থেকে আগত সম্পাদক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের ছিলেন সাপ্তাহিক জনমত-এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাশ পাশা, জনমত সম্পাদক ও লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি নবাব উদ্দিন, সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট সম্পাদক ব্যারিষ্টার তারেক চৌধুরী, জনমত-এর রাজনৈতিক সম্পাদক ইশহাক কাজল, টাওয়ার হ্যামিলটনের কমিউনিকেশন এডভাইজন শাহবুব রহমান, বৃটিশ বাংলাদেশী ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিবিসিএ)-এর সাধারণ সম্পাদক শাহানুর খান, বৃটিশ-বাংলাদেশী পাওয়ার এন্ড ইন্সপিরেশন (বিবিপিই) ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আবদাল উল্লাহ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কলাম্বাস এজেন্সীর স্বত্তাধিকারী বাবলুল হক।
টাইম টিভি’র সিইও এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক আবু তাহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় লন্ডন থেকে আগত সম্পাদক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ ছাড়াও নিউইয়কের্বর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি তাসের মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটির ইন্্ক’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম হাওলাদার, বিএফইউজে’র সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইমরান আনসারী প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। খবর ইউএনএ’র।
সভায় নিউইয়র্কের অন্যান্য সাংবাদিকদের মধ্যে সময় টিভি’র যুক্তরাষ্ট্র ব্যুরো প্রধান শিহাব উদ্দীন কিসলু, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ, লেখক-কলামিস্ট ও দি অপ্টিমিস্ট-এর সভাপতি মিনহাজ আহমেদ সাম্মু, টাইম টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি শিবলী চৌধুরী কায়েস, টাইম টিভি ও বাংলা পত্রিকা’র বিশেষ প্রতিনিধি শাহাব উদ্দিন সাগর, চ্যানেল আই’র আবিদুর রহমান, যমুনা টিভি’র যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান সাকী, সাংবাদিক সোহেল মাহমুদ, টাইম টিভি’র আউটরীচ ডিরেক্টর সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, টাইম টিভি’র বিজনেস কনসালটেন্ট ইকবাল ফেরদৌস, সমীক্ষা’র রশীদ আহমেদ সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় অতিথি সম্পাদকগণ বলেন, লন্ডন থেকে বাংলা পত্রিকা প্রকাশনার ইতিহাস শত বছরের উপর। তার জানান, ১৯১৪ সালে লন্ডন থেকে ‘সত্য যুগ’ নামে প্রথম বাংলা ভাষায় পত্রিকা প্রকাশিত হয়। আমরা লন্ডনের সাংবাদকর্মীরা ‘বৃটেনে বাংলা পত্রিকার শত বছর অনুষ্ঠান’ আয়োজনের চেষ্টা করছি। আর দুই বছর পর আয়োজিত হবে জনমত পত্রিকার পঞ্চাশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। নিউইয়র্কের মতো লন্ডন থেকে একাধিক ফ্রি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। তবে জনমত সহ তিনটি পত্রিকা এখনো বিক্রি হচ্ছে, পাঠক পত্রিকা তিনটি কিনেই পড়ছেন। অন্য পত্রিকা দুটি হলো সাপ্তাহিক সুরমা ও সাপ্তাহিক পত্রিকা। সম্পাদকবৃন্দ বলেন, ইন্টারন্টে, ফেসবুক, ফ্রি পত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রভৃতি প্রিন্ট মিডিয়ার উপর প্রভাব ফেললেও পত্রিকার চাহিদা কমবে না, প্রিন্ট মিডিয়া কখনো বন্ধ হবে না। তারা বলেন, বৃটেনে যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, বাঙালী থাকবে ততদিন বাংলা ভাষার পত্রিকাও থাকবে।
মতবিনিময় সভায় বৃটিশ-বাংলাদেশী সম্পাদকরা নিউইয়র্ক সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, বাংলাদেশের পরেই লন্ডন হচ্ছে আরেকটি বাংলাদেশ। আর লন্ডনের পর এখন দেখছি নিউইয়র্কও আরেকটি বাংলাদেশ। তারা নিউইয়র্কেও প্রবাসী বাংলাদেশীদেও আতিথিয়তার প্রশংসা করেন।
সভায় বৃটিশ বাংলাদেশী ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিবিসিএ)-এর সাধারণ সম্পাদক শাহানুর খান বলেন, বাংলাদেশী-বৃটিশদের কারি ব্যবসা (হোটেল রেষ্টুরেন্ট) এখন বৃটেনের অন্যতম শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বৃটেনে প্রায় ঙ১২ হাজারের মতো কারি ব্যবসা রয়েছে। যার অধিকাংশই বাংলাদেশী-বৃটিশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। আমাদের রেষ্টুরেন্টগুলোর মেনুর কারণে বৃটিশদের খাবারেও পরিবর্তন এসেছে। এখন বৃটিশদের সকালের নাস্তা হয় বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টের খাবার দিয়ে।
বৃটিশ-বাংলাদেশী পাওয়ার এন্ড ইন্সপিরেশন (বিবিপিই) ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আবদাল উল্লাহ ৯/১১-এর পর একজন বৃটিশ প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যে বাঙালীদেও অনেক গৌরবের ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশী বৃটিশ-আমেরিকানদের এসব গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে। এজনই আমরা বিবিপিই প্রতিষ্ঠা করেছি। তিনি এব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা লন্ডন ও নিউইয়র্কের বাংলাদেশী সম্পাদক-সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভার আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং এমন উদ্যোগের মাধ্যমে বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সাংবাদিক তথা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যকার সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি আরো জোরদার করার আহ্বান জানালে নিউইয়র্কের সম্পাদক-সাংবাদিকরা স্বাগত জানান।
……………………………………………………………
ছবি ক্যাপশান
ছবি-১
নিউইয়র্ক: বৃটিশ-বাংলাদেশী সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সম্মানে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন সৈয়দ নাহাশ পাশা। ছবি: ইউএনএ
ছবি-২
নিউইয়র্ক: বৃটিশ-বাংলাদেশী সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সম্মানে আয়োজিত মতবিনিময় লন্ডন ও নিউইয়র্কের মিডিয়াকর্মী এবং সুধীদের একাংশ। ছবি: ইউএনএ
ছবি-৩
নিউইয়র্ক: বৃটিশ-বাংলাদেশী সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সম্মানে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। ছবি: ইউএনএ
ছবি-৪
নিউইয়র্ক: বৃটিশ-বাংলাদেশী সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সম্মানে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নিউইয়র্কের মিডিয়া কর্মী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দেও একাংশ। ছবি: ইউএনএ