অর্জন আমার একার নয় পুরো বাংলাদেশের
- প্রকাশের সময় : ০৪:১১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ মার্চ ২০১৫
- / ৮৫২ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইন্টারন্যাশনাল ‘উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড- আইডব্লিউওসি বা ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারীর পুরস্কার’ পাওয়া বাংলাদেশের নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন নিউইয়র্ক থেকে সম্প্রচারিত টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকা অফিসে আসেন। এখানে তার কর্মজীবনের কয়েকজন সহকর্মীর সাথে কুশল বিনিময় করেন। অংশ নেন টাইম টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান টাইম টকে। আবিদুর রহিমের সঞ্চালনায় ‘টাইম টকে’ নাদিয়া তার পুরস্কার প্রাপ্তি এবং আগামীর কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এরপর মুখোমুখি হন বাংলা পত্রিকার। সেখানেও তিনি নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার বিভিন্ন স্বপ্নের কথা জানান। আলেমদের বিরুদ্ধে তার কোন অবস্থান নয়; বরং একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবেই হেফাজত ইসলামের সমাবেশ কাভার করতে গিয়েছেন বলেও জানান নাদিয়া।
তিনি বলেন, “আমি একুশে টেলিভিশনে কাজ করেছি দীর্ঘদিন। সেখানে থাকাবস্থায় আমি হামলার শিকার হই। আমাকে অনেক সহকর্মী সহযোগিতা করে। বিশেষ করে পল্টনে দিগন্ত টেলিভিশনের সামনে রাস্তায় হামলার ঘটনায় দিগন্ত টিভির বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ভাই, ক্যামেরাম্যান’সহ আমাদের খুব কাছের সহকর্মীরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে আমাকে ভর্তি করান। এছাড়াও গাজি টিভির কয়েকজনও ছিলেন। আমি ঐদিনটি কখনো ভুলবো না।”
নাদিয়া বলেন, “ঐ ঘটনায় আমি এতটুকু বিচলিত হইনি। বরং আরো নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি। দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ্য থাকায় আমার সহকর্মীরা মনে সাহস জুগিয়েছেন। অপরাধ বিষয়ক সংবাদ সংগ্রহে আমি আনন্দ পাই। তাই আজকে যে পুরস্কার আমাকে দেয়া হয়েছে এটা শুধু আমার একার নয়; পুরো বাংলাদেশের। আমি আমার সহকর্মীদের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।”
তিনি জানান, “যুক্তরাষ্ট্র সফরেও আমি অনেক সম্মান পেয়েছি। নিউ ইয়র্কে এসে তো বুঝতেই পারিনি বাংলাদেশের বাইরে আছি। এত সহকর্মী এখানেও। মাত্র দু’বছর আগেও যারা বাংলাদেশে আমার সাথে কাজ করেছেন, সাহস জুগিয়েছেন তারাও এখন এখানে কাজ করছে। আমাকে সংবর্ধিত করেছেন। আমি ভীষন হ্যাপি।”
উল্লেখ্য, ১ মার্চ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন নাদিয়া শারমিন। গেল ৬ মার্চ শুক্রবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিগিনবটম নাদিয়া শারমিনসহ আরো ৯ সাহসী নারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আইডব্লিউওসি নারীদের সাহসিকতার জন্য এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। এর আগেও আরেকজন বাংলাদেশী নারী এ পুরস্কার পেয়েছেন। নাদিয়া শারমিন দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী, যিনি তার সাহসিকতার জন্য এ পুরস্কার পেলেন। পুরস্কার গ্রহনের পর নাদিয়া শারমিন অংশগ্রহণ করেন পররাষ্ট্র দফতরের বিভিন্ন কর্মসূচিতে। যুক্তরাষ্ট্রের নারী সাংবাদিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি। জাতিসংঘের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ’৫৯তম কমিশন অব দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেন’ সম্মেলনেও যোগ দেন নাদিয়া। ঐ সম্মেলনে সারাবিশ্বের নারী অধিকারকর্মীরা অংশ নেন। সুন্দর বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সাংবাদিক নাদিয়া। এছাড়াও নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আয়োজিত ‘সাউথ এশিয়ান এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ক’ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশের সাহসী এই নারী সাংবাদিক। যাতে অংশ নেন নিউইয়র্কের বিভিন্ন নারী সাংবাদিক’সহ গণমাধ্যম ব্যক্তি ও বিশিষ্টিজনেরা। একই দিন সকালে ম্যানহাটনের নিউইয়র্ক ফরেন প্রেস সেন্টার আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেন নাদিয়া শারমিন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট এবং টাইম ম্যাগাজিনের সাবেক ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক রিচার্ড স্ট্যাঞ্জেল। নারীর অধিকারই মানবাধিকার রক্ষায় এ প্রজন্মের নারীদের ভূয়শী প্রসংশা করেন রিচার্ড।
টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকা পরিদর্শন শেষে ১৪ মার্চ সোজা চলে যান বিমানবন্দরে। বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার আগে সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।(সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)