শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতারা এক মঞ্চে
- প্রকাশের সময় : ১০:০১:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৪
- / ১০৫৬ বার পঠিত
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর ১৮তম আসরের পর্দা উঠছে ২৬ নভেম্বর বুধবার। হিমালয় কন্যা নেপালে বসছে ওই আসর। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা (রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান) কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন। শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে কেবল নেপালের রাজধানী শহরই নয়, বর্ণাঢ্য ওই আয়োজনকে ঘিরে পুরো দেশজুড়ে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। সার্কের ৮ সদস্য রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে প্রত্যেক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা জড়ো হয়েছেন।
‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’-এই আহ্বানে শুরু হওয়া সার্কের শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রগুলোর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও অংশ নিচ্ছেন। দু’দিনের ওই শীর্ষ সম্মেলন কাভার করতে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের হাজারও সংবাদকর্মী এখন কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছেন। সার্ক শীর্ষ নেতারা নতুন কি অঙ্গীকার করেন, পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়নে কতটা তাগিদ অনুধাবন করেন- সেদিকেই দৃষ্টি সবার। কেবল সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা নয়, ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কোন বৈঠক হয় কিনা সেদিকেও নজর রয়েছে অনেকের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের একটি আলোচনা ছিল। সম্মেলনের সাইড লাইনে বৈঠকটি হবে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে নেপাল, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের তারিখ, সময় ও স্থানের সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের কোন উল্লেখ নেই। এত অনিশ্চয়তার মধ্যেও কাঠমান্ডুতে থাকা ঢাকার কূটনীতিকরা আশা জিইয়ে রেখেছেন। তারা বলছেন, চেষ্টা চলছে শেষ মুহূর্তে হলেও দুই নেতার মধ্যে সংক্ষিপ্ত একটি বৈঠক আয়োজনের।
হাসিনাসহ সার্ক নেতারা কাঠমান্ডুতে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপাল পৌঁছান মঙ্গলবার বিকালে। বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে নেপালের স্থানীয় সময় চারটা পাঁচ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী বামদেব গৌতম ও দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। নেপাল সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেন। এ সময় উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর মধ্য দিয়ে সার্কের ৭ দেশের শীর্ষ প্রতিনিধিকে বরণ করে নেয় স্বাগতিক নেপাল। একই দিন হলেও সবার শেষে দেশটিতে পৌঁছান শেখ হাসিনা। আর সবার আগে পৌঁছান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহেন্দ্র রাজা পাকসে। সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি পৌঁছান। এরপর একে একে কাঠমান্ডু পৌঁছান আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিন তোবগে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা: সার্কের সব শীর্ষ নেতাকে বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। হাজার হাজার নেপালি রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী নেপালি পোশাক পরিহিত অবস্থায় ঢাকঢোল পিটিয়ে তাদের স্বাগত জানায়। নেতাদের যাতায়াত পথ ও সড়ক দ্বীপগুলোকে সদস্য দেশগুলোর পতাকা ও ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রত্যেক দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানগুলো যাতে নির্বিঘেœ নেপালের একমাত্র আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দরে নামতে পারে সেজন্য ২৫-২৭শে নভেম্বর তিনদিন দেশটির অভ্যন্তরীণ সব উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা দেশকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা ও যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে কাঠমান্ডুর সম্মেলন কেন্দ্রের কাঠমান্ডুর সিটি হল (রাষ্ট্রীয় সভাগৃহ) ভ্রিকুটি ম-পের আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চারদিনের সাধারণ ছুটি এবং দু’দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আজকের উদ্বোধনী অধিবেশনে শেখ হাসিনাসহ সব নেতা ভাষণ দেবেন। উল্লেখ্য, নেপালে এবার তৃতীয়বারের মতো বসেছে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। এর আগে ১৯৮৭ ও ২০০২ সালে দেশটি আরও দু’টি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করে। আরো উল্লেখ্য, সার্কের রীতি অনুযায়ী বিদায়ী চেয়ারম্যান মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি আব্দুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম সার্কের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে স্বাগতিক নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার নাম প্রস্তাব করবেন। সার্কের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা সেই প্রস্তাব সমর্থন করার পর উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন কৈরালা। সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী কৈরালা বক্তব্যের জন্য আহ্বান জানাবেন সার্কের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের। সেখানে সার্ক মহাসচিব অর্জুন বাহাদুর থাপা ও পর্যবেক্ষক দেশের প্রতিনিধিরাও বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ পাবেন। পর্যবেক্ষক দেশ ও সংস্থাগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলীয় চীন, ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মরিশাস ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
কোন চুক্তি হচ্ছে না: প্রোগ্রামিং কমিটি ও স্ট্যান্ডিং কমিটি বৈঠকে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে প্রস্তাবিত ৩টি চুক্তি বিশেষ করে সার্ক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের বিষয়টি উঠেছিল। কিন্তু কোন ইতিবাচক অগ্রগতি হয়নি। এ বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ার এটি রেখে বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়েছেন সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
কাঠমান্ডুতে প্রধানমন্ত্রীর যত কর্মসূচি: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্যাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুমের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সৌজন্যে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এর আগে সার্ক দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্প্রতিবার সকালে সার্ক নেতাদের সঙ্গে ধুলিখেলের দাওরিকা রিসোর্টে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে ধুলিখেল থেকে ফিরে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। সন্ধ্যায় নেপালের রাষ্ট্রপতি রামবরণ যাদবের সঙ্গে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের যৌথসভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। পরে সার্ক নেতাদের সম্মানে নেপালের রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন তিনি। ২৮ নভেম্বর শুক্রবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
বৈঠক হচ্ছে না মোদি-নওয়াজের: আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে বৈঠক হচ্ছে না ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও নওয়াজ শরিফের মধ্যে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, নেপালের কাঠমান্ডুর সার্ক শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে কোন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা নেই। এ খবর দিয়েছে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
তবে সারতাজ আজিজ বলেন, দুই নেতার মধ্যে সাক্ষাৎ হতে পারে যদি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরনের কোন অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়টি সমর্পূর্ণই ভারতের ওপর নির্ভর করে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশ দু’টির মধ্যে সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সীমান্তে গোলাগুলিসহ অন্যান্য ঘটনা নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করে আসছিল ভারত ও পাকিস্তান। তাই সার্ক সম্মেলনে দেশ দু’টির নেতাদের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু তারা বৈঠকের ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এক্সপ্রেস ট্রিবিউন কিছু বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বৈঠকের বিষয়টি এখন পর্যন্ত কেবলই সম্ভাবনা। এর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, সার্ক সম্মেলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ অন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন। তবে তখন নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি, দ্বিপক্ষীয় বৈঠক মোদির সঙ্গেও হবে কি না। যোগাযোগ করা হলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তান এখনও ভারতের কাছ থেকে বৈঠকের ক্ষেত্রে কোন ধরনের অনুরোধ পায়নি। অপরদিকে দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন ইঙ্গিত দেয়নি। এদিকে বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দীন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য হচ্ছে যত বেশি সম্ভব প্রতিবেশী দেশসমূহের নেতাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ সংলাপ করা। আমাদের সম্পর্কের সকল দিক এখানে বিবেচনায় নেয়া হবে। (দৈনিক মানবজমিন)