নিউইয়র্ক ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশের নোংরামী আমেরিকার রাজনীতিতে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৫৮:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৭৬৬ বার পঠিত

মনোয়ারুল ইসলাম: হামলা, মামলা, নারী কেলেঙ্কারি ও হুমকিতে বাংলাদেশের রাজনীতিকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। গণতন্ত্রের সূতিকাগার, সারাবিশ্বের মডেল, আব্রাহাম লিংকনের ডেমক্র্যাসি কী আজ পর্যুদস্ত? রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র কিংবা কমিউনিজমের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রে ‘গর্বিত গণতন্ত্র’ আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। যে আমেরিকা সারাবিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ফেরি করে বেড়ায়, সে দেশেই নির্বাচন নিয়ে এসব কী হচ্ছে? বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স ৪৫ বছর। এর মধ্যে ১৫টি বছর দেশে নামে-বেনামে সামরিক শাসন চলেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর হাতেই ’৭৫ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্রের শিশুটির পায়ে শিকল পড়ানো হয়েছিল। পতিত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রথম সামরিক লেবাস পড়ে গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরেন। ফখরুদ্দিন-মঈনদের আমলে ২ বছর গণতন্ত্র ছিল নির্বাসিত। এখনও ভোটারবিহীন নির্বাচনের ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার ক্ষমতায়। গণতন্ত্রের অমিয় বাণী এখনও নির্বাসিত।
আমেরিকায় বৈধ ও কাগজপপত্রবিহীন প্রায় ৫ লক্ষাধিক বাংলাদেশী বসবাস করেন। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আত্মীয়-স্বজনদের হাজার-হাজার মাইল দূরে ফেলে এসে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি, দুর্নীতি, খুন-রাহাজানি ইত্যাদি নিয়ে প্রবাসীরা সরগরম। প্রতিদিন আমেরিকায় নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, বস্টন কিংবা মায়ামী শহরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা এসব নিয়ে সভা-সমাবেশ করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রবাসীরা বিস্মিত। বাংলাদেশের মতোই এখানে এখন নোংরা রাজনীতির বেহায়া নৃত্য চলছে।
আগামী ৮ নভেম্বর, ২০১৬ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে সম্মুখ যুদ্ধে ডেমক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন এবং রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প। একজন পেশাদার রাজনীতিক, অন্যজন পেশায় ব্যবসায়ী ও রিয়েলেটি শো’র উপস্থাপক। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করেই আমেরিকার রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ যাবত ১১ জন মহিলা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। অবশ্য তার দাবি- এসব মহিলা বিখ্যাত হবার প্রত্যাশায় কিংবা প্রতিপক্ষ হিলারি এদেরকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে এসব করাচ্ছেন। ট্রাম্পের জনসভায় ভিন্নমতালম্বীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের মধ্যেই প্রতিপক্ষকে নির্বাচনে জেতার পর জেলখানায় ঢুকানোর হুমকি দিয়েছেন। অভিযোগ উত্থাপনকারী নারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের পর মামলা করবেন বলেও ঘোষণা এসেছে তার মুখ থেকেই। সংবাদপত্র ও মিডিয়ার বিরুদ্ধেও তার অভিযোগ বিস্তর। আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রশংসা সারা বিশ্বময়। এ ব্যবস্থা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, নির্বাচনী সিস্টমেই ‘রিগড’। মৃত ব্যক্তিদের ভোট কারচুপি করে হিলারিকে জয়ী করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এটা অনস্বীকার্য যে, হোয়াইট আমেরিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে (৫১%-৩৯%)।
এন্টি ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প হোয়াইট আমেরিকানদের মধ্যে একটি ভীত তৈরি করে ফেলেছেন। পশ্চিমের স্টেটগুলোতে তা এক ধরনের মুভমেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। এন্টি ইমিগ্র্যান্ট বর্ণ বৈষম্য ও মুসলিম ইস্যুতে আমেরিকানরা কিছুটা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যার রেশ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্টেটে। হেইট ক্রাইমের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে।
হুমকি, হামলা, মামলা, প্রতিপক্ষকে অযথা ঘায়েল করা গণতন্ত্রের ভাষা নয়। নির্বাচনে যুক্তি-তর্ক ও ইস্যুভিত্তিক বিষয়ই প্রাধান্য পেয়ে থাকে আমেরিকায়। নির্বাচনের পরপরই পরাজিত প্রার্থী বিজয়ীকে স্বাগত জানান। এটাই আমেরিকান গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজয় আঁচ করতে পেরেই ‘হার’ মেনে নেবেন না বলেই ঘোষণা দিয়েছেন। কারচুপির অভিযোগ এনে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। ঠিক যেন বাংলাদেশের এপিঠ-ওপিঠ।
১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে হেরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সুক্ষ্ম’ কারচুপির অভিযোগ এনেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রশাসন ও জনতার মঞ্চের ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিযোগ আনেন। আর ২০০৮ সালে বলেন, ফখরুদ্দিন-মঈন চক্র হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।
নারী কেলেংকারী নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরাও সরস! এরশাদের বিয়ে-বহির্ভূত কর্মকান্ড অনেকেই জানেন। জিনাত-মেরির ঘটনা কে না জানেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ‘টিপ্পনী’ কাটতে স্বয়ং শেখ হাসিনাও কম যাননি। আমেরিকার নির্বাচনে নোংরা নৃত্য দেখে দেশের প্রখ্যাত ও সিনিয়র সাংবাদিক প্রভাষ আমিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘যুক্তরাষ্ট্রে এসব ঘটলে, বাংলাদেশের কী দোষ!’
রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রতিপক্ষ হিলারিকে ঘায়েল করতে তার স্বামী বিল ক্লিন্টনের নারী কেলেংকারি সামনে তুলে এনেছেন। হুমকি দিয়েছেন হিলারিকে ই-মেইল ঘটনায় জেলে ঢুকানোর। এ যেন বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি! যেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির সেই চিরাচরিত ঝগড়া! যারাই ক্ষমতায় যান, প্রতিপক্ষকে হামলা-মামলায় জেলখানায় ঢুকিয়ে দেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফ্লোরিডায় এক সমাবেশে বলেছেন, যে গণতন্ত্র নিয়ে আমেরিকা গর্ব করে, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার দেশ অবদান রাখে, কিন্তু ট্রাম্পের গণতন্ত্র বিরোধী মন্তব্য শত্রুদের উৎসাহিত করবে। যারা গণতন্ত্রের শত্রু, তারা খুশি হবে। বিশ্বব্যাপী ভুল বার্তা পৌঁছাবে।
বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলেই দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের খ নেমে আসতো। এবার রিপালিকান ট্রাম্প জয়ী হলে আমেরিকাতে সংখ্যালঘুদের (বিশেষ করে ইমিগ্র্যান্ট) ওপর হামলা-নির্যাতনের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এসবের পরেও আমেরিকান জনগণ সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেবেন। সর্বশেষ জনমত জরিপে হিলারি ক্লিন্টনের জয়-জয়কার। গত ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত জরিপে হিলারি ৫০% ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। পক্ষান্তরে ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৮%। ভোটের আর মাত্র দু’সপ্তাহ বাকি। মিরাকুলাস কিছু না ঘটলে এ ব্যবধান পূরণ করা ট্রাম্পের পক্ষে অসম্ভব। ইমিগ্র্যান্ট-বান্ধব হিলারিই আমেরিকার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হবেন। (সাপ্তাহিক ঠিকানা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বাংলাদেশের নোংরামী আমেরিকার রাজনীতিতে

প্রকাশের সময় : ০৬:৫৮:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

মনোয়ারুল ইসলাম: হামলা, মামলা, নারী কেলেঙ্কারি ও হুমকিতে বাংলাদেশের রাজনীতিকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। গণতন্ত্রের সূতিকাগার, সারাবিশ্বের মডেল, আব্রাহাম লিংকনের ডেমক্র্যাসি কী আজ পর্যুদস্ত? রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র কিংবা কমিউনিজমের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রে ‘গর্বিত গণতন্ত্র’ আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। যে আমেরিকা সারাবিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ফেরি করে বেড়ায়, সে দেশেই নির্বাচন নিয়ে এসব কী হচ্ছে? বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স ৪৫ বছর। এর মধ্যে ১৫টি বছর দেশে নামে-বেনামে সামরিক শাসন চলেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর হাতেই ’৭৫ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্রের শিশুটির পায়ে শিকল পড়ানো হয়েছিল। পতিত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রথম সামরিক লেবাস পড়ে গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরেন। ফখরুদ্দিন-মঈনদের আমলে ২ বছর গণতন্ত্র ছিল নির্বাসিত। এখনও ভোটারবিহীন নির্বাচনের ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার ক্ষমতায়। গণতন্ত্রের অমিয় বাণী এখনও নির্বাসিত।
আমেরিকায় বৈধ ও কাগজপপত্রবিহীন প্রায় ৫ লক্ষাধিক বাংলাদেশী বসবাস করেন। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আত্মীয়-স্বজনদের হাজার-হাজার মাইল দূরে ফেলে এসে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি, দুর্নীতি, খুন-রাহাজানি ইত্যাদি নিয়ে প্রবাসীরা সরগরম। প্রতিদিন আমেরিকায় নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, বস্টন কিংবা মায়ামী শহরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা এসব নিয়ে সভা-সমাবেশ করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রবাসীরা বিস্মিত। বাংলাদেশের মতোই এখানে এখন নোংরা রাজনীতির বেহায়া নৃত্য চলছে।
আগামী ৮ নভেম্বর, ২০১৬ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে সম্মুখ যুদ্ধে ডেমক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন এবং রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প। একজন পেশাদার রাজনীতিক, অন্যজন পেশায় ব্যবসায়ী ও রিয়েলেটি শো’র উপস্থাপক। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করেই আমেরিকার রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ যাবত ১১ জন মহিলা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। অবশ্য তার দাবি- এসব মহিলা বিখ্যাত হবার প্রত্যাশায় কিংবা প্রতিপক্ষ হিলারি এদেরকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে এসব করাচ্ছেন। ট্রাম্পের জনসভায় ভিন্নমতালম্বীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের মধ্যেই প্রতিপক্ষকে নির্বাচনে জেতার পর জেলখানায় ঢুকানোর হুমকি দিয়েছেন। অভিযোগ উত্থাপনকারী নারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের পর মামলা করবেন বলেও ঘোষণা এসেছে তার মুখ থেকেই। সংবাদপত্র ও মিডিয়ার বিরুদ্ধেও তার অভিযোগ বিস্তর। আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রশংসা সারা বিশ্বময়। এ ব্যবস্থা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, নির্বাচনী সিস্টমেই ‘রিগড’। মৃত ব্যক্তিদের ভোট কারচুপি করে হিলারিকে জয়ী করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এটা অনস্বীকার্য যে, হোয়াইট আমেরিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে (৫১%-৩৯%)।
এন্টি ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প হোয়াইট আমেরিকানদের মধ্যে একটি ভীত তৈরি করে ফেলেছেন। পশ্চিমের স্টেটগুলোতে তা এক ধরনের মুভমেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। এন্টি ইমিগ্র্যান্ট বর্ণ বৈষম্য ও মুসলিম ইস্যুতে আমেরিকানরা কিছুটা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যার রেশ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্টেটে। হেইট ক্রাইমের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে।
হুমকি, হামলা, মামলা, প্রতিপক্ষকে অযথা ঘায়েল করা গণতন্ত্রের ভাষা নয়। নির্বাচনে যুক্তি-তর্ক ও ইস্যুভিত্তিক বিষয়ই প্রাধান্য পেয়ে থাকে আমেরিকায়। নির্বাচনের পরপরই পরাজিত প্রার্থী বিজয়ীকে স্বাগত জানান। এটাই আমেরিকান গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজয় আঁচ করতে পেরেই ‘হার’ মেনে নেবেন না বলেই ঘোষণা দিয়েছেন। কারচুপির অভিযোগ এনে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। ঠিক যেন বাংলাদেশের এপিঠ-ওপিঠ।
১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে হেরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সুক্ষ্ম’ কারচুপির অভিযোগ এনেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রশাসন ও জনতার মঞ্চের ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিযোগ আনেন। আর ২০০৮ সালে বলেন, ফখরুদ্দিন-মঈন চক্র হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।
নারী কেলেংকারী নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরাও সরস! এরশাদের বিয়ে-বহির্ভূত কর্মকান্ড অনেকেই জানেন। জিনাত-মেরির ঘটনা কে না জানেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ‘টিপ্পনী’ কাটতে স্বয়ং শেখ হাসিনাও কম যাননি। আমেরিকার নির্বাচনে নোংরা নৃত্য দেখে দেশের প্রখ্যাত ও সিনিয়র সাংবাদিক প্রভাষ আমিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘যুক্তরাষ্ট্রে এসব ঘটলে, বাংলাদেশের কী দোষ!’
রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রতিপক্ষ হিলারিকে ঘায়েল করতে তার স্বামী বিল ক্লিন্টনের নারী কেলেংকারি সামনে তুলে এনেছেন। হুমকি দিয়েছেন হিলারিকে ই-মেইল ঘটনায় জেলে ঢুকানোর। এ যেন বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি! যেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির সেই চিরাচরিত ঝগড়া! যারাই ক্ষমতায় যান, প্রতিপক্ষকে হামলা-মামলায় জেলখানায় ঢুকিয়ে দেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফ্লোরিডায় এক সমাবেশে বলেছেন, যে গণতন্ত্র নিয়ে আমেরিকা গর্ব করে, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার দেশ অবদান রাখে, কিন্তু ট্রাম্পের গণতন্ত্র বিরোধী মন্তব্য শত্রুদের উৎসাহিত করবে। যারা গণতন্ত্রের শত্রু, তারা খুশি হবে। বিশ্বব্যাপী ভুল বার্তা পৌঁছাবে।
বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলেই দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের খ নেমে আসতো। এবার রিপালিকান ট্রাম্প জয়ী হলে আমেরিকাতে সংখ্যালঘুদের (বিশেষ করে ইমিগ্র্যান্ট) ওপর হামলা-নির্যাতনের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এসবের পরেও আমেরিকান জনগণ সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেবেন। সর্বশেষ জনমত জরিপে হিলারি ক্লিন্টনের জয়-জয়কার। গত ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত জরিপে হিলারি ৫০% ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। পক্ষান্তরে ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৮%। ভোটের আর মাত্র দু’সপ্তাহ বাকি। মিরাকুলাস কিছু না ঘটলে এ ব্যবধান পূরণ করা ট্রাম্পের পক্ষে অসম্ভব। ইমিগ্র্যান্ট-বান্ধব হিলারিই আমেরিকার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হবেন। (সাপ্তাহিক ঠিকানা)