এবার দশ হাজার নতুন বইয়ের সমাহার
নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা ২৪-২৭ মে
- প্রকাশের সময় : ০৭:১৩:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪
- / ১২৯ বার পঠিত
বিগত বছরগুলার মতো এবছরও নিউইয়র্ক বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪ থেকে ২৭ মে। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘যত বই তত প্রাণ’ শীর্ষক চারদিনের ৩৩তম বইমেলা বসবে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে। এবারের বইমেলা উদ্বোধন করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা। মেলা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারের মেলায় ১০ হাজার নতুন বই নিয়ে উপস্থিত থাকবে ঢাকা এবং কলকাতার ৪০টিরও বেশী প্রকাশনা সংস্থা। মেলায় বইয়ের প্রদর্শনী ছাড়াও থাকবে আলোচনা, সেমিনার, বই পরিচিতি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, তরুণদের অংশগ্রহণে বিশেষ পর্ব, বিতর্কসহ নানা আয়োজন। চলছে গানের মহড়া। বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে ‘মুক্তধারা আন্তর্জাতিক বইমেলা : ফিরে দেখা’ স্মারকগ্রন্থ।
জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে গত ১৪ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ও মতবিনিময় সভায় আয়োজকরা মেলার প্রস্তুুতি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এতে বইমেলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মেলার অহ্বায়ক লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস। সভায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বক্তব্য রাখেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী, কো-চেয়ারপার্সন নিনি ওয়াহিদ ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রধান বিশ্বজিৎ সাহা। এসময় বইমেলা কমিটির সাবেক আহবায়ক ফেরদৌস সাজেদীন, সউদ চৌধুরী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ষাট জন বাংলা বইপ্রেমী সভায় উপস্থিত ছিলেন বলেন আয়োজকরা জানান।
সভায় ড. নুরুন নবী জানান যে, এই মেলার ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে, তেমনীভাবে মেলাকে ঘিরে প্রবাসে লেখালেখির হাতও শানিত হয়েছে। এবারের বইমেলাকে ঘিরে প্রবাসী লেখকদের ২০টি বই প্রকাশিত হয়েছে- যা পাওয়া যাবে মেলায়। এছাড়া, এবারের মেলায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের কর্মসূচিও রয়েছে। প্রবাস প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জোরালোভাবে পৌছে দেয়ার অভিপ্রায়ে এ সংযোজন বলে জানান তিনি।
সভায় আয়োজকরা জানান, এবারই মেলায় প্রথম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর যুক্ত হয়েছে। থাকছে মুক্তিযুদ্ধের উপর বিশেষ কয়েকটি পর্ব অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের মধ্য থেকে সেরা প্রকাশক কে পুরস্কৃত করা হবে। দেয়া হবে সাহিত্যে অবদানের জন্য পুরস্কার ও সম্মাণনা। বইমেলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়বে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি। প্রবাসে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
বিশ্বজিৎ সাহা জানান, বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন, কানাডা, জার্মানী, অষ্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখকগণের সদ্য প্রকাশিত ১০ হাজার বই নিয়ে মেলায় থাকবে ৪০টি স্টল। বাংলাদেশ ও কলকাতার পর বাংলা বইমেলার এটি হচ্ছে তৃতীয় বৃহত্তম মেলা। ২৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় খোলামঞ্চে বৃন্দগান আর নৃত্যের মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত। পরদিন শনিবার সকাল ১১টা থেকে একইভাবে রাত ১১টা পর্যন্ত নানা কর্মসূচিতে মুখরিত থাকবে মেলা প্রাঙ্গন ও ভেতরের মূলমঞ্চ। এদিনের সেমিনারের বিষয় হচ্ছে ‘১৯৭১ এর জেনোসাইড কেন এখনো স্বীকৃত নয়’। ২৬ মে রোববার অনুষ্ঠিত কর্মসূচির অন্যতম থাকবে ‘প্রবাসের সাহিত্য মূল্যহীন’ শীর্ষক সেমিনার। কথোপকথনে থাকবে ‘বাংলা নাটকের এদিন-সেদিন। সমাপনী দিবসের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ‘কীভাবে পান্ডুলিপি প্রস্তত করবেন’ শীর্ষক আলোচনা।
আয়োজকরা আরো জানান, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সেমন্তী ওয়াহেদের নেতৃত্বে আমেরিকা তথা প্রবাসে জন্মগ্রহণকারী অথবা বেড়ে উঠা কবি, সাহিত্যিক-লেখক-সাংবাদিক-শিল্পী-অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসবেন। নিজ নিজ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বিশেষ অবস্থানে অধিষ্ঠিত হওয়া নতুন প্রজন্মের ৪ কবির কবিতা শুনবো, ৪ লেখকের বক্তব্য শুনবো, রান্না কীভাবে আন্তর্জাতিক ভাষা হয়ে উঠছে তা নিয়ে ৩ জন রন্ধন বিশেষজ্ঞ কথা বলবেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় ৩ জন ইনফ্লুয়েন্সার কথা বলবেন। মূলকথা হচ্ছে, তরুণদেরকে বিভিন্নভাবে সংযুক্ত করা। তরুণ শিল্পীদের গান তো থাকবেই। তাছাড়া তরুণ শিল্পীরা দ্বৈতকন্ঠেও গাইবেন। মেলার শেষ দিন ২৭ মে সোমবার বিকেল ৩টা থেকে খোলামঞ্চে নতুন প্রজন্মের বিবিধ পরিবেশনা থাকবে। ওপেন মাইকে কবিতা আবৃত্তি করবে, পড়বে, গান গাইবে, যা খুশি তাই করতে পারবে। এর আগে শিশুমঞ্চে শনি ও রোববারও অনুষ্ঠান থাকবে।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে বইমেলা আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতাকারী এবং কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা জিএফবি গ্রপের কর্ণধার গোলাম ফারুক ভুইয়ার বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতায় মেলায় লেখক, সাহিত্যিক ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। এর অন্যতম হচ্ছে মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার, যার অর্থমান তিন হাজার ডলার। এই পুরস্কার ইতিপূর্বে পেয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, শামসুজ্জামান খান, আসাদ চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, সেলিনা হোসেন প্রমুখ। আরেকটি পুরস্কার দেয়া হয় শ্রেষ্ঠ বইয়ের জন্যে এবং সেই পুরষ্কারের নাম হচ্ছে ‘কবি শহীদ কাদরী স্মৃতি গ্রন্থ পুরস্কার’। যার মূল্যমান এবার বাড়িয়ে ৫০০ ডলার থেকে এক হাজার ডলার করা হয়েছে। তৃতীয় পুরস্কার ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার’। এটি দেয়া হয় মেলায় অংশগ্রহণকারি স্টলসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্টলকে।
সংবাদ সম্মেলনে বিতরণ করা এক তালিকায় আমন্ত্রিত লেখক/বুদ্ধিজীবীগণের নাম জানানো হয়। অতিথির মধ্যে রয়েছেন- মুহম্মদ নূরুল হুদা (মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি), মোহাম্মদ ইমরান (বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটন ডিসি), মো. নাজমুল হুদা (কনসাল-জেনারেল, নিউইয়র্ক), ডা. সারোয়ার আলী ( ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা), সারা যাকের (ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা), ড. আরেফিন সিদ্দিকী ( প্রাক্তন উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ফরিদুর রেজা সাগর (কথাসাহিত্যিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চ্যানেল আই), সৌমিত্র শেখর দে (উপাচার্য, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়)। অতিথির তালিকায় আরো আছেন ড. মিল্টন বিশ্বাস (অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়), লুৎফর রহমান রিটন (একুশে পদকপ্রাপ্ত ছড়াকার, কানাডা), সালমা বাণী (কথাসাহিত্যিক, কানাডা), সাইফুল্লাহ মহমুদ দুলাল (কবি, কানাডা), জসীম মল্লিক (লেখক, কানাডা), মাসরুর আরেফিন (কথাসাহিত্যিক ও সিইও, সিটি ব্যাংক, ঢাকা), শিহাব শাহরিয়ার (কবি ও ফোকলোর গবেষক), ওমর কায়সার (কবি ও শিশু সাহিত্যিক), কবি আসাদ মান্নান এবং সৈয়দ আল ফারুক, ফারুক আহমদ (সাহিত্য সম্পাদক, প্রতিদিনের বাংলাদেশ), ড. প্রহ্লাদ রায় (অধ্যাপক, বিশ্ব ভারতী), রূপা মজুমদার (সম্পাদক, শুকতারা ও নবকল্লোল, কলকাতা), জাফর আহমদ রাশেদ (কবি ও প্রধান নির্বাহী, বাতিঘর), দীপঙ্কর দাস (বাতিঘর), মাহবুব আজিজ (বিভাগীয় সম্পাদক, দৈনিক সমকাল), কবি সজল আহমেদ, মোহাম্মদ শাকেরউল্লাহ (সম্পাদক- ঊষালোক)।
আমন্ত্রিত শিল্পী (গায়ক, অভিনেতা)’র মধ্যে আছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নিরূপমা রহমান (অস্ট্রেলিয়া, গবেষক ও কণ্ঠশিল্পী), আফজাল হোসেন (অভিনেতা ও পরিচালক), আহকাম উল্লাহ (আবৃত্তি শিল্পী), লিলি ইসলাম (সঙ্গীত শিল্পী), নাহিদ নাজিয়া (সঙ্গীত শিল্পী), আহমেদ হোসেন (আবৃত্তি শিল্পী, টরন্টো)। স্থানীয় শিল্পীর মধ্যে রয়েছেন- তাজুল ইমাম, শাহ মাহবুব, শবনম সায়েলা তনুকা, নাজু আখন্দ, শাহীন হক, জাফর বিল্লাহ, বন্যা মির্জা, অনিন্দিতা কাজী, শিরীন বকুল, আলভান খান, জি এইচ আরজু, ফারুক আজম, আবীর আলমগীর, সাবিনা নীরু, মুমু আনসারী, ন্যাস নাসরীন, প্রিয়তা সায়রা ইমাম ও মেহেদী ইমাম।
মেলায় অংশগ্রহণকারী সহযোগী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা, অন্য থিয়েটার (টরন্টো), জনকন্ঠে নজরুল (নিউজার্সী), বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতন, সঙ্গীত পরিষদ, উদীচী, আড্ডা, বাফা, আনন্দধ্বনি, আশিস (আমরা শিশুদের সঙ্গে), ছড়াটে, সাহিত্য একাডেমি, রাইটার্স ক্লাব এবং লেখকের অঙ্গন।